
দ্বিতীয়বারের মতো ‘রিটেইল এশিয়া অ্যাওয়ার্ডস’ জিতল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এপেক্স
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ‘রিটেইল এশিয়া অ্যাওয়ার্ডস’ জিতেছে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রেখে ফুটওয়্যার ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য এপেক্স পেয়েছে ‘ফুটওয়্যার রিটেইলার অব দ্য ইয়ার বাংলাদেশ’ এবং ‘সাসটেইনেবিলিটি ইনিশিয়েটিভ অব দ্য ইয়ার বাংলাদেশ’ পুরস্কার। গত বছরের রিটেইল এশিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এর আসরেও এপেক্স একই দুটি ক্যাটেগরিতে পুরস্কার লাভ করেছিল। প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে মাত্র ৪০০ স্কয়ার ফুটের একটি দোকান দিয়ে শুরু হয়ে এপেক্স এখন দেশজুড়ে ৫০০টিরও বেশি স্টোরের সাহায্যে লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে উন্নত মানের জুতা সরবরাহ করছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই আসরে নিজের অবস্থান তৈরি করে বাংলাদেশকেও বিশ্ব দরবারে ইতিবাচক পরিচিতি এনে দিয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড।
.png)
রূপালী ব্যাংকে ২০২৫ সালে ১ লক্ষ টাকায় কত মুনাফা পাওয়া যাবে?
রূপালী ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট বা এফডিআর বলতে বোঝায় গ্রাহকের টাকা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থায়ীভাবে জমা রেখে মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ মূলধন ফেরত পাওয়া। ২০২৫ সালে রূপালী ব্যাংকের এফডিআর বা ফিক্সড ডিপোজিটে মুনাফার হার কিছুটা বেড়েছে। রূপালী ব্যাংকের এই আকর্ষণীয় সঞ্চয় প্রকল্পটি গ্রাহকরা চাইলে ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর, ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩ বছরের মেয়াদে চালু করতে পারবেন। বর্তমানে ব্যাংকটি ফিক্সড ডিপোজিটে সর্বনিম্ন ৮.৫০% থেকে সর্বোচ্চ ৯% পর্যন্ত মুনাফা প্রদান করছে। অর্থাৎ ২০২৫ সালে রূপালী ব্যাংকের এফডিআর-এর সর্বোচ্চ মুনাফার হার ৯%। এই ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টটি গ্রাহক চাইলে রূপালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় একক বা যৌথ নামে খুলতে পারবেন। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী অটো রিনিউয়াল সুবিধা ছাড়াও মেয়াদ পূর্তির পূর্বেই টাকা উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও, বিপদকালীন সময়ে জমাকৃত টাকার বিপরীতে লোন সুবিধাও দেয় ব্যাংকটি। ২০২৫ সালে রূপালী ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটে ১ লক্ষ টাকায় সম্ভাব্য মুনাফা (ট্যাক্স কর্তনের পূর্বে): ৩ মাস মেয়াদে: ২,১২৫ টাকা ৬ মাস মেয়াদে: ৪,৩৭৫ টাকা ১ বছর মেয়াদে: ৯,০০০ টাকা আর যদি আপনি ১০ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেন, তবে ট্যাক্স কর্তনের পূর্বে মুনাফা পাবেন: ৩ মাস মেয়াদে: ২১,২৫০ টাকা ৬ মাস মেয়াদে: ৪৩,৭৫০ টাকা ১ বছর মেয়াদে: ৯০,০০০ টাকা তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মেয়াদ পূর্তির পর প্রাপ্ত মুনাফা থেকে সরকারের নির্ধারিত আয়কর (Tax) ও আবগারী শুল্ক কেটে রাখা হবে। এফডিআর একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি, যা পরিচিত ব্যক্তির (introducer) মাধ্যমে সত্যায়িত হতে হবে মনোনীত ব্যক্তির (nominee) NID/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি মনোনীত ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি যদি থাকে, TIN সার্টিফিকেট প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্টের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স আবশ্যক রূপালী ব্যাংকের এই স্থায়ী আমানত স্কিমটি মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের জন্য একটি নিরাপদ এবং লাভজনক মাধ্যম হতে পারে।

শনিবার থেকে বন্ধ অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা
অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা আগামিকাল শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। শুক্রবার (২০ জুন) জাতীয় সংবাদপত্রে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিষয়টি জানিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ জুন, শনিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অনিবার্যকারণে তাদের এজেন্ট পয়েন্ট থেকে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকবে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির যেকোনো শাখা থেকে ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন। এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছে ব্যাংকটি। অগ্রণী ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলায় অগ্রণী ব্যাংকের ৫৬৭টি এজেন্ট পয়েন্ট রয়েছে। যেখান থেকে গ্রাহকেরা বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা নিতে পারেন।

মোংলা বন্দরে কমেছে গাড়ি আমদানি
কয়েক বছর আগেও গাড়ি আমদানিতে দেশের রেকর্ড গড়েছিল মোংলা বন্দর। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রামকেও ছাড়িয়ে এখানে ঢুকেছিল ২১ হাজারের বেশি গাড়ি। তখন সবাই তাকিয়ে ছিল মোংলার দিকে। কিন্তু সেই গতির ছন্দ এখন অনেকটাই ম্লান। টানা তিন অর্থবছর ধরে কমছে আমদানির সংখ্যা। ডলার-সংকট, দাম বেড়ে যাওয়া আর ক্রেতার আগ্রহ কমে যাওয়াই এই ভাটার মূল কারণ। বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) বলছে, ডলারের উচ্চমূল্য, এলসি খোলায় জটিলতা এবং বাজারে গাড়ির ক্রেতা হ্রাস পাওয়ায় আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে মোংলা বন্দরের গাড়ি আমদানির চিত্রও আগের মতো আর চাঙা নেই। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের ৩ জুন হক’স বে অটোমোবাইলস প্রথমবারের মতো মোংলা বন্দরে রিকন্ডিশন্ড ও নতুন মিলিয়ে ২৫৫টি গাড়ি আমদানি করে। ওই সময় বন্দরটির গতি ছিল শ্লথ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে গাড়ি আমদানি ছিল মাত্র ২৫৫টি, ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১১৯টিতে। এরপর দীর্ঘ সময়ে উন্নতি অব্যাহত থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা সর্বোচ্চে পৌঁছায়। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে গাড়ি আমদানি কমে নেমে আসে ১৩,৫৭৬টিতে। পরের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ কিছুটা বৃদ্ধিতে পৌঁছে ১৫ হাজার ৩৪০টি গাড়িতে। আর চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫-এর মে মাস পর্যন্ত মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি হয়েছে ১০ হাজার ৭৪২টি, যা আগের প্রবণতার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক পরিচালক মো. কামাল হোসেন এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমদানির সংখ্যা কমলেও বন্দরের সক্ষমতা বা সুযোগ-সুবিধার কোনো ঘাটতি হয়নি। আমদানিকারকদের জন্য আমরা সময়মতো গাড়ি খালাস, উন্নতমানের শেড ও ইয়ার্ড, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য সার্বক্ষণিক টহল, সিসি ক্যামেরা মনিটরিংসহ সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছি।’ তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। খুলনা কার জোনের স্বত্বাধিকারী পারভেজ হক জানান, গত দুই-তিন বছর ডলার-সংকটে এলসি খোলা যায়নি। তা ছাড়া ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গাড়ির দাম বেড়েছে। আগে যে এক্সিও গাড়ি ১৫-১৬ লাখে বিক্রি হতো, এখন তা ২৪-২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতা কমেছে, আর আমদানিও হ্রাস পেয়েছে। বারভিডা সভাপতি ও হক’স বে অটোমোবাইলসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার উৎসাহ দেওয়ার পর প্রথমবার তিনি মোংলা বন্দর ব্যবহার করে গাড়ি আমদানি শুরু করেন। তখনকার চ্যালেঞ্জ ছিল নাব্যতাসংকট ও জাহাজ না আসার অনীহা। ব্যক্তিগতভাবে অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা শুরু করেছিলাম। এরপর অনেকে আগ্রহী হন। তবে গত কয়েক বছরে ডলার-সংকট, মূল্যবৃদ্ধি, শুল্ক বাড়ানো এবং সর্বশেষ গত আগস্টে সরকারের রদবদলের পর অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে গাড়ি আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যাদের হাতে টাকা ছিল, তারাই বাজার থেকে গায়েব। এখন নতুন করে সক্ষমতা তৈরি হতে সময় লাগবে।’ আব্দুল হক জানান, বর্তমানে গাড়ি বিক্রি প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুতর চাপ তৈরি করছে। সরকারের উচিত একটি চাঁদাবাজি ও হয়রানিমুক্ত ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসচিব মাকরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মোংলা দিয়ে গাড়ি এনে মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এ কারণে আমদানিকারকেরা মোংলা বন্দরকেই বেছে নিচ্ছিলেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে গাড়ির বিক্রি কমে যাওয়ায় আমদানিতেও ভাটা পড়েছে। মাকরুজ্জামান জানান, বর্তমানে মোংলা বন্দরের অবকাঠামো ও সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক উন্নত, যা ভবিষ্যতের চাহিদা মেটানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মোংলায় গাড়ি আমদানির এই ভাটা সাময়িক নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংকেত, তা নির্ভর করছে মূলত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজার, ভোক্তাশ্রেণির পুনরুদ্ধার এবং সরকারের নীতিগত সহায়তার ওপর।

এবিবির নতুন চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন
দেশের শীর্ষ ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন। সম্প্রতি এবিবির বোর্ড অব গভর্নরসের এক সভায় তাকে সংগঠনটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি আগামী বার্ষিক সাধারণ সভা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে এ দায়িত্ব পালন করবেন। এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হুসেইন সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয় এবং নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সভায় পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী এবিবির নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মো. শিরীন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তার আগের দায়িত্ব পালন করে যাবেন। মাসরুর আরেফিন ১৯৯৫ সালে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে তার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। ৩০ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কাতার, এএনজেড ব্যাংকের মেলবোর্ন হেড অফিস, আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে কাজ করেন। গত ছয় বছর ধরে তিনি সিটি ব্যাংকের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবিবিতে প্রায় চার বছর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করার পর এবার তিনি সংগঠনটির নেতৃত্বে এলেন। ব্যাংকার পরিচয়ের বাইরে তিনি একজন লেখক ও অনুবাদক হিসেবেও সুপরিচিত। মোহাম্মদ আলী ২০০৮ সালে পূবালী ব্যাংকের চিফ টেকনোলজি অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০১৬ সালে তিনি ব্যাংকটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ২০২০ সালে অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে উন্নীত হন। এই ব্যাংকে তার দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি চিফ অপারেটিং অফিসার, চিফ অ্যান্টি মানিলন্ডারিং অফিসার, চিফ রিস্ক অফিসার এবং ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে পূবালী ব্যাংক মুনাফা ও সুনামের দিক থেকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এবিবিতে নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি সংগঠনটির গভর্নিং বডির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছিলেন।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বছর ২০২৪ সালে (১২ মাস) সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ। এতে ব্যাংকটিতে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। গত এক যুগ ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। যদিও নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করছে না ব্যাংকটি। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানত এখন ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ১৪৯ টাকা ৬৯ পয়সা হিসাব করলে ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। অথচ আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে এটি ছিল মাত্র এক কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলা টাকায় ২৬৪ কোটি টাকার মতো। এক বছরে আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ বা ৮ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। রিপোর্টে অবশ্য এই উলম্ফনের কোনো কারণ উল্লেখ নেই। ২০২১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে বাংলাদেশিদের আমানত। ২১ সালে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে। যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরপর নজিরবিহীন গতিতে অর্থ তুলে নেন বাংলাদেশিরা। দুই বছরে ১১ হাজার কোটি টাকা কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায় আমানত। দুই বছর টানা যে আমানত কমেছে, তা হঠাৎ এত বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উত্তর অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সামনে আসে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন এবং ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নিরাপদে অর্থ সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যদি কোনো বাংলাদেশি, নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন, তবে ওই টাকা এই হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মুল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি প্রতিবেদনে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইজারল্যান্ডে গোপনীয়তা কমতে থাকায়, অনেক ধনী এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য ঝুকছেন, লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা বারমুডার মতো ট্যাক্স হ্যাভেনের দিকে।

ব্যাংক খাতে লুটপাটের দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের: আইসিএবি
গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে, তা জানার পরও প্রকাশ করতে পারেননি নিরীক্ষকরা। কারণ, আইনের বাধা আর বিভিন্ন চাপের মুখে পড়ে নিরীক্ষকদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট (আইসিএবি)। তারা বলছে, বাধ্য হয়েই আন্তর্জাতিক মান ও নিয়ম উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত নিয়মে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত ও রিপোর্ট করতে হয়েছে। প্রকাশ্য প্রতিবেদনে প্রকৃত তথ্য না এলেও, অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে সব কিছুই লেখা থাকত। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর কাওরান বাজারে আইসিএবির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি মো. ফোরকান উল্লাহ। তার বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে উপস্থিত অন্যান্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরাও জানান, ব্যাংকের ইচ্ছামতো অডিট রিপোর্ট তৈরি করতে আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের কারো ঘাড়ে একাধিক মাথা নেই যে আমরা সব ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রকাশ করব। তারা অভিযোগ করেন, অনেক সময় বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই খেলাপি ঋণের হার নির্ধারণ করে দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি পাঠাত। এতে নিরীক্ষার স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হতো। আইসিএবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে একমাত্র আইসিএবিই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইএফএসি)-এর মানদণ্ড অনুসরণ করে। এই মানদণ্ড একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্বমানের অডিটর হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করে। ফলে আইসিএবির সদস্যরা সর্বাধুনিক শিক্ষা ও পেশাগত চর্চায় দক্ষ, এবং উচ্চমানের নিরীক্ষা সেবা দিতে সক্ষম। সংগঠনটি আরও জানায়, আইসিএবির কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স বোর্ড ও ডিপার্টমেন্ট নিয়মিতভাবে নিরীক্ষার গুণগত মান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে থাকে। পেশাগত অনিয়ম হলে, তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আছে স্বাধীন ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। এসব ব্যবস্থার কারণে আইসিএবির নিরীক্ষা চর্চা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটি এ-ও জানায়, কোম্পানি আইনের ২২০ ধারা অনুযায়ী কস্ট অডিটের সুযোগ থাকলেও আইসিএমএবি সদস্যদের মাধ্যমে এ অডিট কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ভবিষ্যতে কস্ট অডিট শক্তিশালী করতে আইসিএবি, আইসিএমএবিকে সব ধরনের পেশাগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত। পরিশেষে আইসিএবি স্পষ্টভাবে জানায়, ‘আমরা অপপ্রচার নয়, গঠনমূলক সমাধান চাই। দেশের অডিট পেশার গুণগত মান রক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলুন, পেশাকে রাজনীতিমুক্ত রাখি, এবং অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে একসঙ্গে কাজ করি।’

বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আজ বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সংস্কারে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। কিছু দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনার মধ্যে কম সুদের এ ঋণ অনুমোদন হলো। এডিবির ঋণ ব্যাংক খাত শক্তিশালী করতে কতটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। এডিবি জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান, কর্পোরেট সুশাসন, সম্পদের মান এবং স্থিতিশীলতা জোরদার করে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল ও সংস্কার করার জন্য নীতি-ভিত্তিক এ ঋণ অনুমোদন হয়েছে। ম্যানিলা থেকে পাঠানো এডিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার কর্মসূচি, উপ-প্রোগ্রাম ১ ব্যাংকিং খাতের সুশাসন বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে এ তহবিল ব্যয় করা হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধানের জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে আর্থিক খাতের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য নীতিগত সংস্কারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে। এডিবির কর্মসূচির আওতাধীন পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নিয়মগুলির সাথে পর্যায়ক্রমে সম্মতি সমর্থন করবে, যার ফলে সম্পদের মানে স্বচ্ছতা আসবে। এডিবির প্রধান আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব কৌশিক বলেন, “ব্যাংকিং খাতে মূল বাধ্যবাধকতাগুলির মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী সম্পদের মানের অভাব, তারল্যের অভাব এবং অপর্যাপ্ত আর্থিক মধ্যস্থতা। এসবের ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হার কম। এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রকের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের মূলধন বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থায়নের অ্যাক্সেস উন্নত করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মূল্য সংযোজন আনবে।” এডিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের কার্যকর আর্থিক মধ্যস্থতা প্রয়োজন, যা ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলিকে ঋণ পেতে এবং ব্যক্তিদের ব্যাংকিং খাত থেকে আর্থিক পরিষেবা পেতে সহায়তা করতে পারে। ব্যাংকিং খাত ঐতিহ্যগতভাবে শিল্প খাত এবং ঋণযোগ্য ঋণগ্রহীতাদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যেখানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। ডিজিটাল অবকাঠামো সহ ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করা দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস প্রদানে সহায়তা করবে এবং বৃহত্তর এবং ব্যয়-কার্যকর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সক্ষম করবে। এডিবি সম্পর্কেএডিবি একটি শীর্ষস্থানীয় বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করে। জটিল চ্যালেঞ্জগুলি সমাধানের জন্য তার সদস্য এবং অংশীদারদের সাথে একসাথে কাজ করে, এডিবি জীবনকে রূপান্তরিত করতে, মানসম্পন্ন অবকাঠামো তৈরি করতে এবং আমাদের গ্রহকে সুরক্ষিত করতে উদ্ভাবনী আর্থিক সরঞ্জাম এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব ব্যবহার করে। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত, এডিবি ৬৯ জন সদস্যের মালিকানাধীন - এই অঞ্চলের ৫০ জন সদস্য।

এফবিসিসিআই নির্বাচন: ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে আহ্বান জানালেন জাকির-আতিক
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২ এবং তার আওতায় গঠিত বিধিমালা ২০২৩। এই আইনের ফলে দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর পরিচালনা পর্ষদে ব্যবসায়ীদের সরাসরি ভোটাধিকার সীমিত হয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট ভাষায় তাদের মতামত তুলে ধরেন। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নির্বাচনটি হবে। এই সম্মেলনের আয়োজন করে বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ, যা বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (FBCCI)-এর অনুমোদিত একটি প্ল্যাটফর্ম। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক এবং আসন্ন FBCCI সভাপতি পদপ্রার্থী জনাব জাকির হোসেন নয়ন, এবং মিডিয়া ও লিয়াজো কমিটির চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আতিকুর রহমান। ❝ব্যবসায়ীদের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই❞ আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন বলেন, “এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে, অথচ যারা এই অগ্রযাত্রার মূল চালিকাশক্তি — সেই ব্যবসায়ীরাই আজ নেতৃত্ব নির্বাচনে পিছিয়ে পড়েছেন। FBCCI নির্বাচনকে যদি অংশগ্রহণমূলক না রাখা হয়, তবে সেটা হবে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার জন্য এক বড় প্রতিবন্ধকতা।” তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২-এর বিধান অনুযায়ী, এখন নির্বাচিত পরিচালকদের মাধ্যমেই সভাপতি নির্বাচন হবে। এভাবে ভোটাধিকার হরণ করে যদি নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়, তবে ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে আস্থা ভঙ্গ হবে।” আতিকুর রহমান, যিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও FBCCI-এর বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের মিডিয়া ও লিয়াজো কমিটির চেয়ারম্যান, বলেন: “ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, নেতৃত্ব আসবে ভোটের মাধ্যমে। সরকার-নির্ধারিত প্রতিনিধি নয়, প্রকৃত ব্যবসায়ীরাই ঠিক করবেন কে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বর্তমান বিধিমালায় সেটার ঘাটতি রয়েছে।” তিনি যোগ করেন, “আমরা চেয়েছি একটি উদার, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভাজন নয়, দরকার ঐক্য। সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করছি, দেশজুড়ে আমরা একাধিক মতবিনিময় সভা ও সেমিনার করছি।” ❝এলডিসি উত্তরণ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তিশালী নেতৃত্ব জরুরি❞ নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তীর্ণ হবে। এই উত্তরণ একদিকে যেমন গৌরবের, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নানা চ্যালেঞ্জ। রপ্তানি ভর্তুকি বন্ধ হয়ে যাবে, ট্রিপস বাধ্যবাধকতা বাড়বে, বাজার প্রতিযোগিতা তীব্র হবে। জাকির হোসেন নয়ন বলেন, “এমন এক সন্ধিক্ষণে FBCCI-এর মতো সংগঠনের নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী, দূরদর্শী ও ব্যবসায়ী-স্বার্থনির্ভর হতে হবে। আমাদের নেতাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং স্বচ্ছভাবে নির্বাচিত হতে হবে।” ❝সংগঠনের দাবি ও সুপারিশসমূহ❞ প্রেস কনফারেন্সে নেতারা সরকারের কাছে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন:১. ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নির্বাচনে সরাসরি ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।২. সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন সরাসরি সাধারণ সদস্যদের ভোটে করতে হবে।৩. সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে সংগঠনগুলোর স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।৪. এলডিসি উত্তরণের পর বিশেষ সুবিধা অব্যাহত রাখতে সরকার-ব্যবসায়ী যৌথ ফোরাম গঠন করতে হবে। ❝ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা❞ বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা দেশব্যাপী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী প্যানেল গঠন করছেন। এই প্যানেলই আসন্ন FBCCI নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং একটি গণতান্ত্রিক, সমন্বিত নেতৃত্ব গঠনের লক্ষ্যে প্রচারণা চালাবে। পরিশেষে, আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন বলেন, “আমরা FBCCI-কে ব্যবসায়ীদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেটা হবে সবার অংশগ্রহণে, অবাধ ভোটের মাধ্যমে, কোন প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই। ব্যবসায়ীদের অধিকার ও সম্মান রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব।”

খেলাপির তথ্য গোপন করায় ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
তথ্য গোপন করে খেলাপি ঋণ লুকানো ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু ব্যাংক নয়, তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘যারা এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিথা তথ্য দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ একটি গুরুতর অপরাধ। লুকানো তথ্য বেরিয়ে আসার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। মোট ঋণের এক-চতুর্থাংশই এখন খেলাপি। ব্যাংক খাতের জন্য এমন সূচক ভয়াবহ সংকেত বহন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তথ্য গোপন করার ফলে এত দিন খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, নিয়ম-নীতি সঠিক পরিপালনের কারণে এখন তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বার্ষিক পরিদর্শনে ব্যাংকগুলোর অনিয়েমের প্রচুর তথ্য বেরিয়ে আসত বিগত সরকারের আমলে। কিন্তু চিঠি দিয়ে তাদের অনিয়মের কোনো উত্তর পাওয়া যেত না। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের মালিকপক্ষ সরকারের কাছের লোক ছিল তারা তো এসব চিঠি পাত্তাই দিত না। বছরের পর বছর তারা অনিয়ম করেছে, তথ্য গোপন করেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মিথ্যা তথ্য পাঠিয়েছে এবং ভুয়া ব্যালান্স শিট বানিয়েছে। কিন্তু আমরা বড় স্যারদের কারণে কিছুই করতে পারিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালীরা নানা অনিয়মে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছেন, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা শাসনামলে দেশের ব্যাংক খাত এক ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা অভিযোগ করছেন। ব্যাংকিং খাতজুড়ে এখন অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব, খেলাপি ঋণের লাগামহীনতা ও মালিকানার অপব্যবহার চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এটি আর শুধু একটি অর্থনৈতিক দুরবস্থা নয়, বরং একটি সুসংগঠিত আর্থিক ধ্বংসযজ্ঞ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪.১৩ শতাংশ)। এর মধ্যে শুধু ব্যাংক মালিকদের নিজের প্রতিষ্ঠানে নেওয়া ঋণের খেলাপিই প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৪৪ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে নিজেদেরই ঋণ দিয়ে যাচ্ছে, যা আদৌ ফেরতের কোনো ইচ্ছা নেই। ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা ঝুঁকি বিশ্লেষণ উপেক্ষিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বারবার ব্যাংক খাতে সংস্কারের তাগিদ দিলেও বাস্তবে তা উপেক্ষিত। দুর্বল তদারকি, স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাংক খাত দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক এটিকে ‘আর্থিক দুর্নীতির মহামারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। সময়মতো সংস্কার না হলে এর প্রভাব গোটা অর্থনীতিতে ভয়াবহভাবে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান ডিসিসিআই’র
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সভাপতি তাসকীন আহমেদ আজ শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সফর করে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর (ইজেড) অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রত্যক্ষ করার আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে উল্লেখ করে এই সুযোগ-সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদেরকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি। আজ বুধবার কলম্বোর ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলংকায় আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক বিজনেস প্লেনারি সেশনে বক্তৃতাকালে তিনি একথা বলেন। এ সেশনে শ্রীলঙ্কায় সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল। তিনি বলেন, এ অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের তৈরি পোষাক, ঔষধ, চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও হালকা প্রকৌশল এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তাবৃন্দ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, টেক্সটাইল ও তৈরি পোষাক, জ্বালানী ও অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে ৪৩৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তাসকীন আহমেদ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়নে প্রায় তিন দশক পূর্বে স্বাক্ষরিত ‘ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট’ যুগোপযোগীকরণের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি। ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলঙ্কার সভাপতি আনূরা ওয়ারনাকুলাসুরিয়া বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারষ্পারিক আস্থা ও বিশ্বাস জরুরী এবং দু’দেশের বেসরাকরি খাতের মধ্যকার এ ধরনের সমন্বয় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ বিজনেস কো-অপারেশন কাউন্সিলের সভাপতি আন্দ্রে ফার্নান্দো তার দেশের ঔষধ শিল্পের উন্নয়ন ও বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। শ্রীলঙ্কা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান মানগালা ওয়াইজেসিঙ্গহি বলেন, শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২০২৪ সালে মোট রপ্তানি ছিল ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা তার রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর অধিক হারে প্রধান্য দিচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ঔষধ, তৈরি পোষাক, ফেব্রিক্স ও কেমিক্যাল প্রভৃতি পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়াও সূতা ও টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স, মসলা, পশু খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বাদাম ও কৃষি পণ্য প্রভৃতি খাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। শ্রীলঙ্কার ঔষধ, প্যাকেজিং, লজিস্টিক ও রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট অফ শ্রীলংকা রেনুকা এম ওয়াইরাকুনে বলেন, দু’দেশের মধ্যকার এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেকাংশে বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাও নিরসন হবে। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কান ঔষধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও ফেব্রিক্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে। সেই সাথে অবকাঠামো, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি ও শিক্ষা প্রভৃতি খাত শ্রীলঙ্কায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ বোর্ড উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সকল সেবা সম্বলিত ১৫টি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল পরিচালনা করছে, যেখানে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য প্রদান করেন- শ্রীলংকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস ও বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকা হাইকমিশনার ধর্মপালা বীরাক্কোদি। হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অতিদ্রুত এফটিএ স্বাক্ষর জরুরী। ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে এফটিএ স্বাক্ষরে দু’দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও উভয় দেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুদেশের শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা নিরসনের পাশাপাশি নীতির যুগোপযোগী সংষ্কারের উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে, ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সাথে ৭০টি শ্রীলংকান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির মধ্যকার ১৫০টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দুদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন ৭ সেপ্টেম্বর
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন আগামী ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকল ভোটারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এফবিসিসিআই’র ২০২৫-২০২৬ ও ২০২৬-২০২৭ মেয়াদের জন্য সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং পরিচালক নির্বাচিত হবে। আজ বুধবার এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন (২০২৫-২০২৬ ও ২০২৬-২০২৭)-এর তফসিল প্রকাশ করেছে এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ড। বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২ এবং সর্বশেষ প্রণীত বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ২০২৫ অনুসরণ করে এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন পরিচালিত হবে। উক্ত বিধিমালায় এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদের আকার ৮০ থেকে কমিয়ে ৪৬ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, দুইজন সহ-সভাপতি থাকবেন। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ি আগামী ২ জুলাই বিকেল ৫টার মধ্যে সদস্যভুক্ত সয চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনকে এফবিসিসিআই’র সাধারণ পরিষদের জন্য মনোনীত প্রতিনিধিদের তালিকা প্রেরণ করতে হবে। ১৮ জুলাই, ২০২৫ এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৬ জুলাই। সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি ও পরিচালক পদের জন্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ৮ আগস্ট। তথ্য যাচাই- বাছাই ও বিশ্লেষণ শেষে ১৪ আগস্ট নির্বাচন বোর্ড এসব পদের প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে। কোন প্রার্থী নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে চাইলে ১৬ আগস্ট, ২০২৫ বেলা ২টার মধ্যে এ বিষয়ে নির্বাচন বোর্ডকে অবহিত করতে হবে। ওই দিনই এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন বোর্ড।

হতাশার বাজেট, প্রত্যাশা বাস্তবায়ন হয়নি: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘হতাশার বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘বাজেটে যে প্রত্যাশা ছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার বদল হলেও বাজেটের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।’ বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: অবহেলিতরা কী পেয়েছে’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাজেটেও পরিবর্তনের প্রতিফলন দেখা যাবে। কিন্তু এটি হয়েছে পুরনো ধারার ধারাবাহিকতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে প্রত্যাশা নিয়ে গত ৫ আগস্ট পরিবর্তন এসেছিল এবং যারা পিছিয়ে ছিল, তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে প্রতিফলন দেখা যায়নি।’ সংলাপে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার বরাদ্দ বাস্তব মূল্যস্ফীতির তুলনায় কমে গেছে।’ ‘বয়স্ক ভাতা ৬০০ টাকা থেকে মাত্র ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে। অথচ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তা ৯০০ টাকার মতো হওয়া উচিত ছিল। ফলে প্রকৃত অর্থে সামাজিক নিরাপত্তার বলয় সংকুচিত হয়েছে।’ আইসিএমএবি’র সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাপিটাল মার্কেট আজ বিপর্যস্ত। সরকার বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এতে বাজারে আস্থা ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ছে।’ হিসাববিদ জিয়া হাসান বলেন, ‘বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমে গেছে। মূল্যস্ফীতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভোক্তাচাহিদায়। অথচ বাজেট প্রস্তাবে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয়নি।’ তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিত্বকারী সঞ্জিবনী সুধা বলেন, ‘বাজেটে আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় আমাদের রাস্তায় হাত পাততে হয়। এমনকি বৈষম্যের শিকার হয়ে আমি নিজেই ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছি। সরকার ও প্রতিষ্ঠান কেউই আমাদের পাশে দাঁড়ায় না।’ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বাজেট বিশ্লেষণে দেখান, অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বরাদ্দ যথেষ্ট নয় এবং এর বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে গভীর প্রশ্ন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, গবেষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অংশগ্রহণকারীরা বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আহ্বান জানান।

ডাচ বাংলায় ডিপিএসে মাসিক ৫ হাজার টাকা জমা রাখলে ৫ বছরে মুনাফাসহ কত সঞ্চয় রিটার্ন পাবেন?
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের জনপ্রিয় ডিপোজিট প্লাস স্কিম (ডিপিএস) সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত মাসিক সঞ্চয় করতে চান এবং ভবিষ্যতের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থ গড়ে তুলতে চান তাদের জন্য এই স্কিম উপযুক্ত। যদি আপনি প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে ৫ বছর ডিপিএস-এ জমা রাখেন, তাহলে আপনার মোট জমাকৃত অর্থ হবে ৩,০০,০০০ টাকা। মেয়াদ শেষে ব্যাংক থেকে আপনাকে প্রদান করা হবে মোট ৩,৫০,০০৯ টাকা, যার মধ্যে রয়েছে আপনার মূলধনসহ লাভ (মুনাফা)। অর্থাৎ, এই ৫ বছরের সময়ে আপনার মুনাফা দাঁড়াবে ৫০,০০৯ টাকা। এই মুনাফা আপনাকে ছোট ছোট কিস্তি জমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সুদসহ টাকা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। ডিপিএসের মাধ্যমে গ্রাহকরা বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা জীবনযাত্রার মানে কোনো প্রভাব ফেলে না। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এই স্কিমটি ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ সঞ্চয় পরিকল্পনা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ। বিশেষ করে সন্তানদের শিক্ষার জন্য টাকা জমাতে, বাড়ি কেনার জন্য তহবিল গড়ে তুলতে বা অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয় করার জন্য এটি উপযুক্ত। বিস্তারিত তথ্য ও আবেদন করতে গ্রাহকরা নিকটস্থ ডাচ-বাংলা ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন অথবা ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখতে পারেন। নিয়মিত মাসিক সঞ্চয় করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভালো রিটার্ন পেতে চাইলে ডিপিএস একটি লাভজনক ও নিরাপদ অপশন বলে অভিহিত হচ্ছে। তথ্যসূত্রঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক ওয়েবসাইট

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশার বাস্তবায়ন দেখছি না : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
প্রস্তাবিত বাজেট হতাশার বাজেটে রূপান্তর হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ অবহেলিতরা কী পেয়েছে’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে অনেক প্রত্যাশা ছিল। তা বাস্তবায়ন দেখতে পাইনি। এটি হতাশা বাজেটে পরিণত হয়েছে। এ সরকার সাধারণ সরকার নয়, কিন্তু বাজেটে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা গতানুগতিক। তিনি আরও বলেন, যে প্রত্যাশা থেকে ৫ আগস্ট হয়েছিল এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে প্রয়োজন সামনে এসেছিল, বাজেটে তা প্রতিফলিত হয়নি, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যে দাবি ছিল তা প্রতিফলিত হয়নি। সংলাপে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাকে সংকুচিত করা হয়েছে। এর ফলে প্রস্তাবিত বাজেট একদিক সংশ্লিষ্ট বছরের জন্য বাজেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, পাশাপাশি আগামী বছরের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, বয়স্ক ভাতা ৬০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করেছে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০০ টাকা হয়েছে। এতে বাজেটে প্রকৃত অর্থেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কমেছে। এর ফলে পরবর্তী যে সরকার আসবে এবং বাজেট প্রণয়ন করবে সে সরকারের কাছে থেকে আদায় করতে ন্যায্যতা হারাবে। হিসাববিদ জিয়া হাসান বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি কমে গেছে, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এটা হয়েছে। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে মূল্যস্ফীতির এ চিত্র প্রতিফলিত হয়নি। ক্যাপিটাল মার্কেট একেবারে শেষ হয়ে গেছে। কারণ, সরকার বাজেটে ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য কিছু করেনি বলে মন্তব্য করেন আইসিএমএবি’র সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ। তৃতীয় লিঙ্গের সঞ্জিবনী সুধা বলেন, বাজেটে বরাদ্দ থাকে কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। ফলে তৃতীয় লিঙ্গের জীবন মানের উন্নতি হয় না, কর্মসংস্থান হয় না। ফলে আয় নেই। তাই জীবন ধারণের জন্য পথে পথে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। বাজেটে এই শ্রেণির মানুষের জন্য বাজেটে আগেও থাকতো না, এবারও তাই হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের কারণে বৈষম্যের শিকার হয়ে ব্যাংক থেকে নিজে চাকরিচ্যুত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলধারাতে আসার ক্ষেত্রে সরকার যেমন পাশে দাঁড়ায় না, আবার প্রতিষ্ঠানগুলোও সহায়ক ও মানবিক না। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে যুক্তরাজ্য: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আজ বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দ্বারা পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে যুক্তরাজ্য। তিনি বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য যুক্তরাজ্যের সাথে নিবিড় আলোচনা করছে সরকার। তারা নথিপত্র তৈরিতেও আমাদের সহায়তা করছে।’ প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে ১০ জুন থেকে ১৩ জুন লন্ডন সফরের পর তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মনসুর বলেন, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের কাছ থেকে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাচারকারীদের সম্পত্তি এবং লুট করা অর্থ সম্পর্কে তথ্য হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়।’ সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের যুক্তরাজ্যে ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। গত মাসে বেক্সিমকো গ্রুপের শায়ান রহমান এবং শাহরিয়ার রহমানের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করা হয়। মনসুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য দেশের সাথেও আলোচনা করছি। আশা করছি একটি ভালো পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মামলা-মোকদ্দমায় দক্ষ আইনি সংস্থাগুলো সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য ৫০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। মামলার তহবিলদাতা হলেন একজন তৃতীয় পক্ষ যা মামলার সাথে সম্পর্কিত আইনি খরচ মেটাতে মামলা থেকে সম্ভাব্য অর্থ পুনরুদ্ধারের একটি অংশের বিনিময়ে মামলাকারীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে একটি তহবিল গঠনের কথা বিবেচনা করবে, পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী আইনি সংস্থাগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে। তিনি আরো বলেন, ‘তারা (আইনি সংস্থাগুলো) উদ্ধারকৃত অর্থের ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পাবে। তবে কি পরিমাণ অর্থ উদ্ধার হবে তার ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত হবে।

রিজার্ভ বেড়ে ২৬.১৫ বিলিয়ন ডলার
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার (১৫ জুন) পর্যন্ত দেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬১৫ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশিত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী, এ সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৮৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বা ২০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ২৭ মে পর্যন্ত দেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ ছিল প্রায় ২ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার বা ২৫.৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশিত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী, এ সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৬ কোটি ২২ লাখ ডলার বা ২০.৫৬ বিলিয়ন ডলার। তার আগে গত ২২ মে পর্যন্ত দেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৬৪ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার বা ২৫.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বিপিএম৬ অনুযায়ী, এ সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার বা ২০.২৭ বিলিয়ন ডলার। দেশের নিট (প্রকৃত রিজার্ভ) রিজার্ভ নির্ধারণ করা হয় বিপিএম৬ মানদণ্ড অনুসারে। যেখানে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিয়ে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। এদিকে চলতি জুন মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ১১৫ কোটি (১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে জুন মাসের ১৪ দিন পর্যন্ত মোট ২৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৮৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা তার আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৩০২ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স।

খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ছাড়াল
লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসায় আরও বেড়েছে খেলাপি ঋণ। মার্চে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। তিন মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়। মোট ঋণের যা ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খেলাপি ঋণের কোনো তথ্য আমরা লুকিয়ে রাখব না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এটা আদায় জোরদারের মাধ্যমে কমানো হবে। নতুন করে বিতরণ করা ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য বিভিন্ন আইনি কঠোরতা আনার কথা জানান তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কয়েকটি গ্রুপ ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করে নিয়েছে। যাদের বেশিরভাগই এখন পলাতক। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। গত ৫ আগস্টের আগে ঋণ পরিশোধ না করেও বিভিন্ন উপায়ে নিয়মিত দেখানোর সুযোগ ছিল। তবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এখন সেই সুযোগ বন্ধ হওয়ায় এখন তারা খেলাপি। এরই মধ্যে এস আলম, বেক্সিমকোসহ শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবে না কর্মীরা
বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে খুব শীঘ্রই একীভূত করা হবে। একত্রিত হলেও এসব ব্যাংকের কর্মীরা চাকরি হারাবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। রোববার (১৪ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। ব্যাংকগুলোর একীভূত করার বিষয়ে গভর্নর বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে ব্যাংক মার্জারের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করব পরবর্তী সরকার এসে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মার্জার করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে প্রয়োজনে শাখাগুলো স্থানান্তর করা হবে। যেসব ব্যাংকের শাখা শহরে বেশি, সেসব ব্যাংককে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারের প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া কোনো সম্পদ উদ্ধার সম্ভব নয়। এজন্য আগে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আইনি নথিপত্র তৈরি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আদালতের মাধ্যমে যাচাই হোক আমাদের দাবি যথাযথ কি না। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই অর্থ উদ্ধার সম্ভব হবে। ড. আহসান এইচ মনসুর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থাও রয়েছে। এই পদ্ধতিতেও একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যেখানে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আলোচনা করে সমাধান খুঁজবেন। তিনি জানান, কোন পথে এগোনো হবে, আদালত নাকি এডিআর, সেটি নির্ধারণ করবে সরকার। সরকারের নির্দেশনা পেলেই বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে। গভর্নর বলেন, দেশীয় সম্পদের জন্য দেশের আদালতে এবং বিদেশি সম্পদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা পরিচালনা করতে হবে। এই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি চলছে।

সোনার দাম আরও বাড়লো
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২ হাজার ১৮২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা। দেশের বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা বা পিওর গোল্ড) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল রোববার (১৫ জুন) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আজ শনিবার (১৪ জুন) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির বৈঠকে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে, সবশেষ গত ৫ জুন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ভরিতে ২ হাজার ৪১৫ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এদিকে সোনার দাম বাড়ানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।

বিজিএমইএর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদ হাসান বাবু
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু)। শনিবার (১৪ জুন) নির্বাচনী বোর্ড বিজিএমইএ পর্ষদ ২০২৫-২৭ সেশনের জন্য কার্যনির্বাহী পদ বণ্টন সম্পন্ন করে। নির্বাচিত পরিচালকরা বিজিএমইএর সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। গত ৩১ মে পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিজিএমইএ ২০২৫-২৭ মেয়াদের জন্য সহ-সভাপতি (প্রথম) নির্বাচিত হয়েছেন সেলিম রহমান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইনামুল হক খান। এছাড়া সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মো. রেজওয়ান সেলিম, সহ-সভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমনা, সহ-সভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান, সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে বিজিএমইএ ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে ‘ফোরাম’ জোট। ঢাকায় ২৬টি পরিচালক পদের মধ্যে তারা জয়ী হয়েছে ২৫টিতে এবং চট্টগ্রামের ৯টি পদের মধ্যে জয় পেয়েছে ছয়টিতে। অর্থাৎ জয়ী ৩৫ জনের মধ্যে ৩১ জনই ফোরামের সম্মিলিত পরিষদ থেকে জিতেছেন মাত্র চারজন। এবারের বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নেন মোট ৭৬ জন প্রার্থী। নির্বাচনে ‘ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত পরিষদ’ উভয় জোটই ৩৫টি পরিচালক পদের জন্য প্রার্থী দেয়। তাছাড়া ‘ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে আরও ছয়জন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচিত পরিচালকরা বিজিএমইএর সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনের জন্য ভোট দেন।

এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো: আনু মুহাম্মদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো। আইএমএফের প্রভাবে বাজেটে স্থানীয় শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাস পেয়েছে। ট্রাম্প সাহেবকে খুশি করার চেষ্টা ছিলো এই বাজেটে। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, বাজেটে আয়ের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু মার্কিন কোম্পানির কাছে আমাদের যে ক্ষতিপূরণ তা আদায় করতে হবে। মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণে সম্পদ ও প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোন সরকারই চেষ্টা করেনি। এই ক্ষতিপূরণ আদায় অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ডিপি ওয়ার্লডের কাছে ছেড়ে দেওয়া তো শেখ হাসিনার প্রকল্প ছিল। ড. ইউনুস কেন তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইছেন? গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের বাজেটে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটানোর কথা নেই। সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের কাছ থেকে গিয়ে কিছু মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হয়। এবারের বাজেটেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে প্রতারণা ও অস্বচ্ছতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, সেটা অব্যাহত থাকুক আমরা চাই না। আগামী ২২ জুন বাজেট অনুমোদনের আগে এর ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা সৃষ্টির ন্যূনতম উদ্যোগ নিতে হবে। সভায় আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ার ড. গোলাম রসুল বলেন, সত্যিকার অর্থে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই বাজেটে তেমন কিছু নেই। কৃষিক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। কৃষিকে আমরা নানাভাবে আন্ডার ভ্যালু করে দিচ্ছি। স্বাস্থ্যখাতে এবার জনপ্রতি বাজেট বেড়েছে ২২ টাকা। ট্রাম্পের পালটা শুল্ক বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার বুঝেও না বুঝার ভান করছে। এটা আমাদের বিশাল বিপদে ফেলবে। সভায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহা মির্জা, চিকিৎসক ডা. হারুণ অর রশীদ, লেখক-গবেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ও মাহতাব উদ্দীন আহমেদ।

বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
সরকারি পাঁচ সংস্থার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে বাংলাদেশের জন্য ২৫ কোটি ডলারের অর্থায়ন অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড এ অর্থায়ন অনুমোদন করে। বিশ্ব ব্যাংক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে কবে এ অর্থায়ন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে, তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টাবিলিটি (সিটা)’ বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শক্তিশালীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের নামে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। বিশ্বব্যাংক জানায়, প্রকল্পটির আওতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনা বিভাগ, সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ (বিপিপিএ) এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কার্যক্রমকে আধুনিক ও ডিজিটাল রূপ দেওয়া হবে। এতে তথ্যের স্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, ক্রয় প্রক্রিয়া এবং আর্থিক নিরীক্ষায় জবাবদিহিতা ও দক্ষতা বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, এই বিনিয়োগ ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। উদীয়মান অর্থনীতির প্রয়োজনে সক্ষম সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে এটি সহায়ক হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা সরবরাহে গতি আসবে এবং নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যানে নাগরিকদের প্রবেশাধিকারে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি আধুনিক কর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এবং কর আদায় বাড়িয়ে রাজস্ব সংগ্রহ ও আর্থিক স্থিতিশীলতাও জোরদার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক জানায়, সিটা প্রকল্পের অধীনে উল্লেখিত পাঁচ সংস্থায় দ্বিতীয় প্রজন্মের ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) চালুর পাশাপাশি এর আওতা বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে সরকারি নিরীক্ষা ব্যবস্থাও ডিজিটাল মাধ্যমে শক্তিশালী করা হবে। বিশ্বব্যাংক আরও জানিয়েছে, সিটা প্রকল্পের পাশাপাশি একটি উন্নয়ন নীতিগত ঋণ (ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট) নিয়েও কাজ করছে তারা, যা এই মাসেই বোর্ড সভায় তোলা হবে। ওই ঋণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়, ব্যাংক খাত, তথ্য উৎপাদন ও প্রকাশ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ক্রয়, নিরীক্ষা এবং সামাজিক সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে সহায়তা দেওয়া হবে। সিটা প্রকল্প এই কার্যক্রমগুলোকে পরিপূরকভাবে সহায়তা করবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। বিশ্বব্যাংকের লিড কান্ট্রি ইকোনমিস্ট এবং প্রকল্পটির টিম লিডার সুলেমানে কুলিবালি বলেন, পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের সামগ্রিক দক্ষতা বাড়বে, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন সহযোগী। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাংকের ছাড়কৃত আইডিএ (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন) ঋণপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।

যমুনা সেতু দিয়ে এক দিনে পারাপার ৩৮ হাজার যান, টোল আদায় ২.৮ কোটি টাকা
ঈদুল আজহার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। যমুনা সেতু হয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী যানবাহন চলাচলে তৈরি হয়েছে বাড়তি ভিড়। এরই প্রেক্ষাপটে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত) যমুনা সেতু দিয়ে ৩৮ হাজার ৫৩৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ সময় টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা। শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গগামী লেনে (সেতুর পূর্ব প্রান্ত) ১৬ হাজার ৩৮০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে, যাতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা। অন্যদিকে, ঢাকাগামী লেনে (সেতুর পশ্চিম প্রান্ত) পারাপার হয়েছে ২২ হাজার ১৫৯টি যানবাহন, যার টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫০ টাকা। সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, এ সময় প্রতি মিনিটে গড়ে ২৬টি যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে।