
পবিত্র কাবা ঘর ধোয়ার বার্ষিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন, অংশ নেন মুসলিম বিশ্বের বিশিষ্টজনেরা
প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে সম্পন্ন হলো পবিত্র কাবা ঘর ধোয়ার বার্ষিক ঐতিহ্যবাহী আনুষ্ঠানিকতা। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর তত্ত্বাবধানকারী সাধারণ কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মক্কার ডেপুটি গভর্নর প্রিন্স সাউদ বিন মিশাল। এছাড়া মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও বিশিষ্ট অতিথিরাও এ আয়োজনে অংশ নেন। ধোয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রিন্স সাউদ কাবা ঘরের ভেতরে গিয়ে তাওয়াফের পর সুন্নত নামাজ আদায় করেন। তিন ধাপে চলে এই পবিত্র স্থান পরিষ্কারের কার্যক্রম। প্রথমে ৪০ লিটার জমজম পানি দুটি রূপার গ্যালনে ভাগ করে রাখা হয়, যার সঙ্গে তায়েফের গোলাপ জল ও সুগন্ধি তেল মেশানো হয়। এরপর এসব তরল দিয়ে কাবা ঘরের দেয়াল ও ভেতরের অংশ ধোয়া হয়। শেষ ধাপে থাকে সুগন্ধি ও ধূপ দেওয়ার কাজ, যেখানে ব্যবহৃত হয় কস্তুরী, তায়েফ গোলাপ তেল ও আউদ ধূপ। পরিষ্কারের সময় ব্যবহৃত বিশেষ সরঞ্জামের হাতল রৌপ্য দিয়ে তৈরি এবং তাতে জেনারেল প্রেসিডেন্সির লোগো খোদাই করা থাকে। পানি মোছার পর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ধীরে ও যত্নসহকারে। প্রসঙ্গত, রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর প্রথম কাবাঘর ধোয়ার ঐতিহ্য শুরু করেন। পরবর্তীতে খলিফাগণ এবং মুসলিম শাসকরা গুরুত্বসহকারে এই রীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।

পবিত্র হজ শেষে দেশে ফিরলেন ৬৪ হাজার ৮৬৪ হাজি
চলতি বছর সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন শেষে এখন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৬৮ হাজার ৮৬৪ জন বাংলাদেশি হাজি। আজ শুক্রবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ফেরত আসা যাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরেছেন ৫ হাজার ৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরেছেন ৫৯ হাজার ৮৫৭ জন। হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স নামে তিনটি বিমান সংস্থা যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফিরিয়ে এনেছে ২৯ হাজার ৮৬০ জন, সৌদি এয়ারলাইন্স ২৬ হাজার ২২৮ এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ৮ হাজার ৭৭৬ জন হাজিকে। এ পর্যন্ত ১৭৬টি ফিরতি হজ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৮২ ও সৌদি এয়ারলাইন্স ৭১টি ফ্লাইট চালিয়েছে, আর ফ্লাইনাস পরিচালনা করেছে ২৩টি ফ্লাইট। এ বছর হজ পালনে গিয়ে ৪২ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী। হজ অফিসের বুলেটিনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও অসুস্থতা ছিল প্রধান। ফিরতি হজ ফ্লাইট আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

ইমাম ও খতিবদের বেতন ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি, ইমাম ও খতিবদের বেতন যাতে ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী দেয়া হয় সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। রোববার (২৯ জুন) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় হিফজুল কোরআন ও সিরাত প্রতিযোগিতা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এ কথা জানান তিনি। উপদেষ্টা জানান, ওয়াক্ফে যে মসজিদগুলো আছে সেগুলোতেও ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী বেতন দেয়া হবে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে আমি চলে যাব তবে যাওয়ার আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ওয়াক্ফের সংস্কার করে দিয়ে যেতে চাই। ওয়াক্ফের মামলাগুলো খুব দ্রুত যাতে নিষ্পত্তি হয় সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওয়াক্ফের কার্যক্রম আমরা ডিজিটালাইজ করব। সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে হজের সহযোগী যারা যাবেন ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ফ্যাসিলিটিস কমিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছি। তাদের চিকিৎসা খাওয়া-দাওয়া পরিবহন ফ্রি আমরা দেবো তবে কোনো অ্যালায়েন্স আমরা দেবো না।

ইহকালীন সফলতার মূল সূত্র হচ্ছে হিজরতের চেতনা
অনেকটা নিঃশব্দে নতুন আরেকটি হিজরি বছরে প্রবেশ করেছি আমরা। হিজরি বছর শুধুই একটি সন নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে হিজরত, আত্মত্যাগ ও ঈমান রক্ষার এক ঐশী চেতনা। হিজরি পঞ্জিকার সাথে জড়িয়ে আছে হিজরতের স্মৃতি। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবিরা ঈমানকে সুরক্ষিত করতে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। একই উদ্দেশ্যে ইবরাহিম (আ.) ইরাক থেকে ফিলিস্তিন ও মিশরে, ইউসুফ (আ.) কারাগারে, আসহাবে কাহাফের যুবকেরা গুহায় আত্মগোপন করেছিলেন।শুধু তাই নয়, অধিকাংশ নবী-রাসুলের জীবনের বিরাট জায়গাজুড়ে আছে হিজরতের বেদনাবিধূর ও প্রেরণাদীপ্ত অধ্যায়। দুঃখের ইতিহাস সবাই ভুলে থাকতে চায়, সুখের স্মৃতি বারবার স্মরণ করে আনন্দ পায়। খ্রিস্টানরা তাই ঈসা (আ.)-এর জন্মসাল থেকে খ্রিস্টীয় সন গণনা শুরু করেছে। সাহাবিগণ করেছেন তার উল্টো। তারা হিজরতের মতো বেদনাদায়ক ঘটনা থেকে হিজরি সন গণনা আরম্ভ করেছেন। কারণ, সেই ত্যাগই মুসলিমদের পরবর্তী উত্থানের পটভূমি তৈরি করেছে। যুগে যুগে মুসলিমরা যেন হিজরতের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দীন ও ঈমান রক্ষার সংগ্রামে সর্বাত্মক ত্যাগ ও সেক্রিফাইস করে, তবেই সাফল্য তাদের পদচুম্বন করবে। প্রতি বছর হিজরি সন সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়। রসুল (স.)-এর সমরনীতি আজও পৃথিবীর জন্য শান্তির অনুপম আদর্শ মানবতা ব্যর্থ, ইতিহাস মনে রাখবে : ফিলিস্তিন ইস্যুতে শায়খ আহমাদুল্লাহ কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও ত্যাগের এই শিক্ষা থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে সরে এসেছি। ঈমান রক্ষার জন্য নবী-রাসুলগণ প্রতিকূল পরিবেশ ত্যাগ করে অনুকূল পরিবেশে হিজরত করেছেন। আর আমরা একটুখানি বৈষয়িক সাফল্যের আশায় ঈমানের জন্য প্রতিকূল জীবন বেছে নিচ্ছি। হিজরতের চেতনা ধারণ শুধু পরকালীন সাফল্যেরই পূর্বশর্ত নয়, ইহকালীন সফলতারও মূল সূত্র। আগামীর পৃথিবী সংগ্রাম ও সংঘাতের পৃথিবী। আগামীর পৃথিবী যুদ্ধের পৃথিবী। চলমান এই নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিজরতের চেতনা হতে পারে সবর ও দৃঢ়তার এক মজবুত হাতিয়ার। লেখক: চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

নতুন গিলাফে সজ্জিত হলো পবিত্র কাবা
নতুন হিজরি বছরের সূচনায় কাবা শরীফের গিলাফ (কিসওয়া) পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবার আসরের নামাজের পর এই কাজ শুরু হয় এবং বৃহস্পতিবার সকালে তা সম্পূর্ণ হয়। সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, কিসওয়া একটি কাফেলার মাধ্যমে মসজিদুল হারামে আনা হয়। কাবার উপরের অংশে কিসওয়ার প্রতিটি অংশ আলাদাভাবে তোলা হয়, তারপর নিচে নামানো হয় এবং পুরনো গিলাফ সরানো হয়। এই প্রক্রিয়া চারবার পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্তি করা হয়, যতক্ষণ না নতুন গিলাফ পুরোপুরি বসানো হয় এবং পুরনোটি পুরোপুরি অপসারণ করা হয়। সর্বপ্রথম কাবা শরীফের দরজার পর্দা নামানো হয়, যার দৈর্ঘ্য ৬.৩৫ মিটার এবং প্রস্থ ৩.৩৩ মিটার। কিং আবদুল আজিজ কিসওয়া কমপ্লেক্সে কাবার গিলাফ প্রস্তুত করা হয়, যা সাতটি ধাপে সম্পন্ন হয়। গিলাফ তৈরিতে প্রায় ১১ মাস সময় লাগে। প্রথম ধাপে পানির ফিল্ট্রেশনের মাধ্যমে সুতোগুলো ধোয়া হয়। তারপর কাঁচা রেশমকে উন্নতমানের কালো রঙে রঙ করা হয় এবং কাপড় তৈরি করা হয়। এরপর কোরআনের আয়াত সূচিকর্মের জন্য বিশুদ্ধ সোনা ও রূপার সুতো তৈরি করা হয়। কিসওয়া ৪৭টি খাঁটি রেশমি অংশ নিয়ে গঠিত। এতে ৬৮টি কোরআনের আয়াত ২৪ ক্যারেট স্বর্ণপ্রলেপযুক্ত সুতো দিয়ে সূচিকর্ম করা হয়েছে। গিলাফের মোট ওজন ১,৪১৫ কেজি। তৈরির পর এই গিলাফ নির্ধারিত মোড়কে মুড়িয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কমপ্লেক্স থেকে মসজিদুল হারামে পাঠানো হয়।

দেশে ফিরেছেন ৮৬০৬ জন হাজি, ২৩ জনের মৃত্যু
পবিত্র হজ পালনের পর দুই দিনে ২২টি ফ্লাইটে আট হাজার ৬০৬ জন বাংলাদেশি হাজি দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে হজ পোর্টালের ‘পবিত্র হজ-২০২৫’ বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। দেশে ফেরা হাজিদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার ছিলেন ৮৩৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ছিলেন ৭ হাজার ৭৬৯ জন। এ বছর হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে এ পর্যন্ত ২৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও দুজন নারী। মক্কায় ১৫ জন, মদিনায় ৭ জন এবং আরাফাতের ময়দানে একজন মারা গেছেন বলে হজ পোর্টাল সূত্রে জানা গেছে। গত ৫ জুন সৌদি আরবে হজ অনুষ্ঠিত হয় এবং ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয় মঙ্গলবার (১০ জুন)। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪টি ফ্লাইটে এক হাজার ৪০৯ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮টি ফ্লাইটে তিন হাজার ১৮৫ জন এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ১০টি ফ্লাইটে ৪ হাজার ১২ জন হাজি দেশে ফিরেছেন। ফিরতি ফ্লাইট আগামী ১০ জুলাই শেষ হবে। উল্লেখ্য, এবারের হজ মৌসুমে মোট ৮৭ হাজার ১৫৭ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তিনটি এয়ারলাইন্সের মোট ২২৪টি ফ্লাইটে তারা যাত্রা সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০৮টি ফ্লাইটে ৪২ হাজার ৪০৪ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮৩টি ফ্লাইটে ৩১ হাজার ৬৭৬ জন এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ৩৩টি ফ্লাইটে ১৩ হাজার ৭৭ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছিলেন। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে ৩১ মে শেষ হয়েছিল। বর্তমানে সৌদি আরবের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ২৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৯৩ জন হজযাত্রী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে বাংলাদেশ হজ অফিস সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা
গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা অন্যান্য ধর্মের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অন্যান্য সব প্রধান ধর্মের সম্মিলিত প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে ইসলামের সম্প্রসারণ। ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ইসলাম এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। গবেষণাটি ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কাল ঘিরে পরিচালিত হয়েছে এবং এটি ‘গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। পিউ রিসার্চ জানিয়েছে, ইসলাম ধর্মে এই বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হলো প্রাকৃতিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ধর্মান্তরণের ভূমিকা এখানে খুবই সীমিত। মুসলিম পরিবারে গড় সন্তানসংখ্যা অন্য ধর্মের তুলনায় বেশি। বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি মুসলিম নারী গড়ে ২.৯ সন্তান জন্ম দিয়েছেন, যেখানে অমুসলিম নারীর ক্ষেত্রে এই হার ২.২। তাছাড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর গড় বয়স তুলনামূলকভাবে কম, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গবেষণা অনুযায়ী, খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম, যার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি। তবে ইসলাম দ্রুত বাড়তে থাকায় দুই ধর্মের মধ্যকার সংখ্যাগত ব্যবধান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীর সংখ্যা বিশ্বে গড়ে ১.৮ শতাংশ হারে কমেছে। এ সময়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারী বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি, যা খ্রিষ্টধর্মের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি। অঞ্চলভিত্তিক পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই ইসলাম ধর্মের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কাজাখস্তান, বেনিন ও লেবাননে ইসলাম ধর্মে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে ওমান ও তানজানিয়ায় মুসলমানদের অনুপাত কিছুটা কমেছে। ধর্মহীন মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। চীনে সবচেয়ে বেশি ধর্মহীন মানুষ বাস করেন, যাদের সংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ৯৭ শতাংশ। ধর্মত্যাগ ও ধর্মান্তর প্রবণতা গবেষণায় দেখা গেছে, খ্রিষ্টধর্ম, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মত্যাগের হার ধর্মান্তরের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে খ্রিষ্টধর্মে, প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক নতুন অনুসারীর বিপরীতে তিনজন ধর্ম ত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে, ধর্মহীনতায় প্রবেশের হারও বেশি—প্রতি একজন ধর্মহীনতা ছেড়েছেন, আর তিনজন নতুন করে ধর্মহীন হয়েছেন। তবে ইসলাম একমাত্র প্রধান ধর্ম, যেখানে ধর্মান্তরিত হয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ধর্মত্যাগীদের চেয়ে বেশি। বিশ্ব ধর্মের বর্তমান চিত্র ইসলাম :এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। খ্রিষ্টধর্ম :বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা ২৩০ কোটি। ধর্মহীন :সংখ্যা বেড়ে ২০০ কোটিতে, ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৭ কোটি। হিন্দুধর্ম :তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, এর ১২০ কোটি অনুসারী রয়েছে; গত এক দশকে বেড়েছে ১২.৬ কোটি, তবে বৈশ্বিক হারে অপরিবর্তিত। বৌদ্ধধর্ম :একমাত্র ধর্ম যার অনুসারীর সংখ্যা কমেছে — ১.৮৬ কোটি হ্রাস পেয়ে হার ৫% থেকে ৪%-এ নেমেছে। ইহুদি ধর্ম :গত এক দশকে এর মাত্র ১০ লাখ জনসংখ্যা বেড়েছে। অন্যান্য ধর্ম (শিখ, বাহাই ইত্যাদি) সম্মিলিতভাবে প্রায় ২০ কোটি অনুসারী, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.২ শতাংশ। এই গবেষণাটি পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, ইসলাম শুধু প্রাকৃতিকভাবে নয়, বৈশ্বিক ধর্মীয় পরিবর্তনের ধারাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি, ধর্মহীনতা ও ধর্মত্যাগের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আগামী দশকে বিশ্ব ধর্মীয় মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

প্রথম ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন ৩৬৯ হাজি
পবিত্র হজ সম্পন্ন করে সৌদি আরব থেকে প্রথম ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ৩৬৯ জন হাজি। মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ‘এসভি-৩৮০৩’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এসময় বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজে হাজিদের স্বাগত জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি ফুল দিয়ে প্রথম ফিরতি ফ্লাইটের হাজিদের বরণ করে নেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আজ আরও সাতটি ফিরতি ফ্লাইটে আড়াই হাজারের বেশি হাজি দেশে ফিরবেন। ফিরতি হজ ফ্লাইট চলবে আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত। এ বছর হজ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছেন মোট ৮৫ হাজার ৩০২ জন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। এরমধ্যে প্রথম হজ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ২৯ এপ্রিল। এরপর প্রায় এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে হজযাত্রীদের বহন করে ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হয়। সর্বশেষ হজ ফ্লাইটটি যায় গত ১ জুন। পুরো এই সময়ে মোট ২২০টি হজ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৫ হাজার ৩০২ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে গেছেন। জানা গেছে, এবার হজ ফ্লাইট পরিচালনায় অংশ নেয় তিনটি এয়ারলাইনস। সেগুলো হচ্ছে —বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইনস এবং ফ্লাইনাস। ফিরতি যাত্রার ক্ষেত্রেও এসব এয়ারলাইনস প্রতিদিন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

১০২৩ পশু কোরবানি করল আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, চলছে সারা দেশে গোশত বিতরণ
ঈদুল আজহা উপলক্ষে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন এ বছর সারা দেশে মোট ১০২৩টি গরু ও ছাগল কোরবানি করেছে। শায়খ আহমাদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন এ সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরিব ও দুস্থ মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে নিবেদিতভাবে। শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বার্তায় বলেন- ‘আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে এ বছর সারা দেশে ১০২৩টি গরু ও ছাগল কোরবানি করল আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। যারা আমাদের ওপর আস্থা রেখে কোরবানির আমানত অর্পণ করেছেন, সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’ প্রতিটি কোরবানির পশুর জন্য আলাদা প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে। যার পক্ষ থেকে কোরবানি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তাকে ট্র্যাকিং ক্লু পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ডোনার নিজে জানতে পারবেন তার কোরবানি কোথায়, কখন এবং কীভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া আজ থেকেই প্রত্যেক পশুর গোশত বণ্টন সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট পর্যায়ক্রমে পাঠানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ডোনারদের কাছে। বার্তার শুরুতে শায়খ আহমাদুল্লাহ ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ বলে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। শেষে তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাদের কোরবানিকে কবুল করুন। নির্মল ধারায় সিক্ত হোক আমাদের সবার কোরবানি।’ আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বিগত বছরগুলোতেও ঈদুল আজহার সময় ব্যাপক কোরবানি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। এসব কোরবানির গোশত দেশের দুর্গম, গরিব ও প্রান্তিক অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। ২০২৫ সালেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগেভাগেই পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন শুরু করে ফাউন্ডেশনটি। গোশত বিতরণ থেকে শুরু করে রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। এই উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় প্রতিনিধিসহ শতাধিক ব্যক্তি অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্বও। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন সে দায়িত্ব পালন করেছে গোশত বিতরণের সুবিন্যস্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। এই উদ্যোগ যেন প্রতি বছর আরও বিস্তৃত হয়, এমনটিই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

ঈদের নামাজের রাকাত ছুটে গেলে কী করবেন
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি ঈদুল আজহা। রাত পোহালেই ঈদ। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। দিনটি শুরু হবে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। অন্যান্য নামাজের মতো ঈদের নামাজেও রাকাত ছুটে যেতে পারে। তখন আমাদের করণীয় কী? ছুটে যাওয়া নামাজ কীভাবে আদায় করব আমরা? ঈদের নামাজে যদি কেউ প্রথম রাকাতে ইমামের কেরাত পড়াকালীন নামাজে শরিক হয় তাহলে প্রথমে তিনি তাকবিরে তাহরিমা এবং অতিরিক্ত ৩টি তাকবির বলে ইমামের অনুসরণ করবেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক : ৫৭১৪)। আবার, কেউ ইমামকে রুকুতে পেল। এখন যদি দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলেও ইমামকে রুকুতে ধরতে পারবে বলে মনে হয় তাহলে তাই করতে হবে। আর যদি দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবির বলে ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে না বলে মনে হয় তাহলে শুধু তাকবিরে তাহরিমা বলে রুকুতে চলে যাবে। রুকুতে গিয়ে হাত না উঠিয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলবে। এরপর সময় থাকলে রুকুর তাসবিহ আদায় করবে। (আলবাহরুর রায়েক : ১/১৬১)। কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতে ইমামের সঙ্গে শরিক হয় তাহলে ইমাম সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে প্রথমে সূরা-কেরাত পড়বে এবং রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তাকবির বলবে। অর্থাৎ ছুটে যাওয়া ১ম রাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতের মতো রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবির বলবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৫৮১৩)। কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর বা তাশাহুদের পর জামাতে শরিক হয় তার করণীয় হলো-এমন ব্যক্তি ইমামের সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে সূরা কেরাতের আগেই অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতের কেরাতের পর অতিরিক্ত তাকবির বলে নামাজ শেষ করবেন। (ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৫)।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
বাংলাদেশের আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল ৭ জুন (জিলহজ মাসের ১০ তারিখ) পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। ঈদুল আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। এ দিনটিতে মুসলিম সম্প্রদায় ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘অতএব তোমার রবের উদ্দেশেই নামাজ পড়ো এবং নহর করো।’ (সুরা আল কাউছার, আয়াত : ২) ঈদের নামাজের পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ছাদবিহীন খোলা জায়গায় আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করতেন। যদি খোলা স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যাবে।বছরে দুবার ঈদের নামাজ পড়ার কারণে অনেকেই নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যান। তাই ঈদের নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হলো- ঈদের নামাজের নিয়ত نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার। অর্থ : আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- ‘আল্লাহু আকবার’। ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ইমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত বাঁধা। তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়া- ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’ এরপর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া। ‘তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়। আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া। সুরা ফাতেহা পড়া। সুরা মিলানো। এরপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।’ এরপর দ্বিতীয় রাকাতে বিসমিল্লাহ পড়া। সুরা ফাতেহা পড়া। সুরা মিলানো। সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া। তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়। এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া। সেজদা আদায় করা। বৈঠকে বসা, তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা। ঈদের নামাজের তাকবির اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুইটি খুতবা দেওয়া। ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে। ঈদের দিনের সুন্নত ও মোস্তাহাব এক. মিসওয়াক করা সুন্নত। দুই. গোসল করা সুন্নত। তিন. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। চার. ঈদুল আজহায় কিছু না খেয়ে এবং ঈদুল ফিতরে কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। পাচঁ. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মোস্তাহাব। ছয়. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচুস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। সাত. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব। আট. (ঈদুল ফিতরে) নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়)। নয়. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মোস্তাহাব। দশ. আনন্দ- অভিবাদন বিনিময় করা মোস্তাহাব। (ফতোয়ায়ে শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া: ২/৭১, বুখারি : ১/১৩০, ইবনে মাজাহ : ৯২) পরিচিত কারো সঙ্গে কিছুদিন বা অনেক দিন পর দেখা হলে উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে মহব্বতের সঙ্গে একবার কোলাকুলি করা এবং ‘আল্লাহুম্মা জিদ মহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহ’ পড়া সুন্নত। তবে ঈদের দিন জরুরি মনে করে কোলাকুলি করা বিদআত। অন্যথায় জায়েজ। (তিরমিজি : ২/১০২, মাহমুদিয়া : ২৮/২১১, ইসলাহি খুতুবাত : ১/১৮৬-১৮৭)

হজের খুতবা দিচ্ছেন ড. সালেহ আল হুমাইদ
মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেওয়া শুরু করেছেন কাবার ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সালেহ ইবনে আব্দুল্লাহ আল হুমাইদ। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির খবর সরবরাহকারী ওয়েব পোর্টাল ‘হারামাইন শরিফাইনে’ এ তথ্য জানানো হয়েছে। শায়খ সালেহ ইবনে আব্দুল্লাহ আল হুমাইদ ৯৫০ সালে সৌদি আরবের বুরাইদা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। একই ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন যথাক্রমে ১৯৭৬ ও ১৯৮২ সালে। পরে তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া অনুষদে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে ৩৩ বছর বয়সে তিনি মসজিদে হারামের ইমাম নিযুক্ত হন। তিনি সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিল ও হাই জুডিশিয়ারি কমিশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, সিনিয়র ওলামা কাউন্সিলের সদস্য এবং সৌদি আরবের রয়্যাল কোর্টের উপদেষ্টা। সৌদি আরবে আজ ৯ জিলহজ হাজিদের আরাফায় অবস্থানের দিন। হজের অন্যতম রোকন বা ফরজ হলো ‘উকুফে আরাফাহ’ বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল-হাজ্জু আল-আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। আজ (৯ জিলহজ) জোহরের সময় থেকে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। যদি কেউ সূর্যাস্তের আগে আরাফার সীমার বাইরে চলে যায়, তাহলে সূর্যাস্তের আগে আবার তাকে আরাফার মাঠে ফিরে আসতে হবে। অন্যথায় দম ওয়াজিব হবে। কেউ যদি জোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে আরাফার ময়দানে পৌঁছতে না পারে, তাহলে আজ রাতের মধ্যে সুবহে সাদিক পর্যন্ত কিছুক্ষণের জন্য হলেও আরাফায় অবস্থান করতে হবে। ৯ জিলহজ জোহরের পর থেকে আগত রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত কিছুক্ষণের জন্যও আরাফায় অবস্থান করতে না পারলে হজ বাতিল হয়ে যায়।

কোরবানির সময় পরিচ্ছন্নতা নিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
কোরবানির আনন্দ শুধু পশু জবাইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সম্পূর্ণ হয় যদি আমরা পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বও পালন করি—এমনই এক সময়োপযোগী বার্তা দিয়েছেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘কোরবানি আপনার, কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারের দায়িত্বও আপনার।’ তিনি আরও লেখেন, ‘যে ইসলাম কোরবানির বিধান দিয়েছে, সেই ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতারও শিক্ষা দিয়েছে। আপনার পশুর মলমূত্র, রক্ত, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদি যদি কারো অস্বস্তি কিংবা অসুস্থতার কারণ হয়, সেটা আপনার কোরবানিকে অর্থহীন করে দিতে পারে।’ শায়খ আহমাদুল্লাহ স্পষ্ট করে দেন, কোরবানির আনন্দ অন্যের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে উঠলে তা ‘হক নষ্ট’ বলে গণ্য হবে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। ‘আপনার কোরবানির বর্জ্য যদি অন্যের কষ্টের কারণ হয়, তবে আপনি হক নষ্টের গুনাহগার হবেন,’—বলেন তিনি। পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ ইসলামে পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ কোরবানির পশু জবাইয়ের পর যেভাবে তাৎক্ষণিকভাবে মাংস ভাগ করা হয়, ঠিক সেভাবে বর্জ্যও দ্রুত ও সঠিকভাবে অপসারণ করা উচিত—এটাই একজন দায়িত্বশীল মুসলিমের পরিচয়। সচেতন নাগরিক, সুস্থ সমাজ কোরবানির মৌসুমে শহর ও গ্রামাঞ্চলে তৈরি হয় প্রচুর বর্জ্য। অনেক সময় সেগুলো সঠিকভাবে অপসারণ না হওয়ায় সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধ, নোংরাভাব ও রোগবালাই। স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালালেও নাগরিকদের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। শায়খ আহমাদুল্লাহর বার্তাটি তাই শুধু একটি ধর্মীয় বক্তব্য নয়, বরং এটি একটি সামাজিক চেতনার ডাক—যেখানে কোরবানি হয় হৃদয় দিয়ে, আর পরিবেশ থাকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র।

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, মিনায় হাজিরা
মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। এরইমধ্যে মিনায় পৌঁছেতে শুরু করেছেন হজ করতে যাওয়া মুসল্লিরা। সবার মুখে মুখে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি। নিয়ম অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৭ জিলহজ) সন্ধ্যার পর মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম বা নিজ আবাসন থেকে হজের নিয়ত করে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন হজযাত্রীরা। সৌদি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত চার লক্ষাধিক হাজি মিনায় অবস্থান করছেন। ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মুখরিত মিনা উপত্যকা, যা হজের পবিত্র আবহকে আরও গভীর করছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতেই ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা হন ধর্মপ্রাণ অনেক মুসলমান। রাত্রি যাপন শেষে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রওনা হবেন আরফাতের ময়দানের উদ্দেশে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে হজের খুতবা। আরাফাতে অবস্থানকেই মূলত হজ হিসেবে ধরা হয়। এবার বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লি হজ পালন করছেন। মুসল্লিদের হজ পালন নির্বিঘ্ন করতে কড়া নিরাপত্তাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার। উল্লেখ্য, প্রতিবছর জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতাগুলো সম্পন্ন করা হয়। এ সময়ের মধ্যে হজযাত্রীরা চার দিনের বিভিন্ন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। সৌদি আরবের ধর্মীয় বিষয়ক প্রেসিডেন্সি রোববার (২৫ মে) ঘোষণা করেছে যে, এ বছর হজে আরাফার দিনের ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করবেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শেখ সালেহ বিন হুমাইদ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে তাকে আরাফাহর দিনে খুতবা দেওয়ার অনুমোদন দেন। আগামী ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবাহ দেবেন তিনি। ৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করে হাজিরা চলে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় এসে বড় শয়তানকে পাথর মারা, দমে শোকর বা কুরবানি দেওয়া ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ তওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ি করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় ফিরবেন। পরে মিনায় ১১ ও ১২ জিলহজ থেকে তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ি তওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

এবার হজের খুতবা দেবেন শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ হুমাইদ
চলতি হজ মৌসুমে হজের খুতবা দেবেন মসজিদুল হারামের প্রবীণ ইমাম শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ। আগামী ৯ জিলহজ হজে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আরাফাহর ময়দানে হজের খুতবা দেবেন তিনি। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে তাকে আরাফাহর দিনে খুতবা দেওয়ার অনুমোদন দেন। হারামাইন শরিফাইনভিত্তিক ওয়েবসাইট ইনসাইড দ্য হারামাইন এ তথ্য জানিয়েছে। সৌদির স্থানীয় সময় আগামী ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ হাজিদের উদ্দেশ্যে খুতবা দেবেন। ৯ জিলহজ আরাফাহর দিন মসজিদে নামিরা থেকে প্রদত্ত খুতবা হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ অংশগুলোর একটি। আর এই দিনটিই হজের প্রধান কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) ২০২৫ সালের আরাফাহ দিবস হতে পারে। সৌদি আরবের উম্মুল কুরা হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এদিন ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ থাকবে। কে এই শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ সৌদি আরবের কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্স-এর সদস্য এবং আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ কাউন্সিল-এর চেয়ারম্যান। ২০১৬ সালে তিনি ইসলাম সেবায় কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ সৌদি আরবের কাসিম প্রদেশের বুরাইদা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি মক্কায় চলে আসেন। যেখানে ১৯৮৭ সালে মাধ্যমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন এবং ১৯৭৫ সালে উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া অনুষদে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮১ সালে ফিকহ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।হাদিসের ভাষায় হজের অনন্য ৫ ফজিলতহাদিসের ভাষায় হজের অনন্য ৫ ফজিলত তার লিখিত একাধিক গ্রন্থ রয়েছে—যার মধ্যে ১১টি বই শরিয়া এবং দাওয়া সম্পর্কিত। এর মধ্যে কিছু বই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার পিতা শায়খ আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ ছিলেন সৌদি আরবের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম।

দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা সুলতান যওক নদভীর ইন্তেকাল
দেশের শীর্ষ আলেম, মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। শুক্রবার (২ মে) দিবাগত রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ার শিক্ষক মাওলানা এনামুল হক মাদানি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, মরহুমের জানাজার নামাজ শনিবার বিকাল ৪টায় জামেয়া প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীকে চট্টগ্রাম নগরীর এভারকেয়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সর্বশেষ ঘোষিত কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সভাপতি ও সৌদি আরবভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লিগ অব ইসলামিক লিটারেচারের বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন।

হজে যাওয়ার আগে যেসব কাজ করবেন
হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। হজরত ইবরাহিম কাবা ঘর নির্মাণের পর আল্লাহ তায়ালা তাকে হজের ঘোষণা দিতে বলেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে— ‘আর তুমি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা জারি করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং (দীর্ঘ সফরের কারণে) সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং (কোরবানির) নির্দিষ্ট দিনগুলিতে (১০, ১১, ১২ জিলহজ) তার দেওয়া চতুষ্পদ পশু সমূহ যবেহ করার সময় তাদের উপরে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও অভাবি ও দুস্থদেরকে। (সূরা হজ, আয়াত : ২৭-২৮)। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে হজরত ইবরাহিম আ. মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে উচ্চ কণ্ঠে চারদিকে ফিরে হজের ঘোষণা দেন। আল্লাহ তায়ালা তার এই ঘোষণা পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছিয়ে দেন। উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। ইসলামের বিধান পালনে এবং আল্লাহর প্রেমে প্রতি বছর হজ করতে যান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম। হজ করতে যাওয়ার আগে একজন মুসলিমের কিছু কাজ করা উচিত। বিশুদ্ধ নিয়ত যেকোনো আমলের জন্য নিয়ত বিশুদ্ধ করা জরুরি। নিয়তের শুদ্ধতা ছাড়া আল্লাহর দরবারে কোনো আমল গ্রহণযোগ্য নয়। হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদতের জন্যও নিয়তের বিশুদ্ধতা জরুরি। গুনাহ থেকে তওবা হজের মাধ্যমে ফরজ বিধান পালন করা হয়। একই সঙ্গে হজ পালনের কারণে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে গুনাহ মুক্ত করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণ পূর্ববর্তী সব অন্যায় মিটিয়ে দেয়। হিজরত আগের গুনাহ মিটিয়ে দেয় এবং হজও আগের সব পাপ মুছে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২১) হজ থেকে একেবারে গুনাহ মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে পূর্বের গুনাহের কারণে তওবা করে পবিত্র হওয়া জরুরি। মা-বাবার দোয়া ও অনুমতি নেওয়া হজ কবুলের জন্য নিজের মা-বাবা ও মুরব্বিদের কাছে দোয়া চেয়ে নিতে হবে। এবং মা-বাবার অনুমতি নেওয়াও জরুরি। তাদের কেউ অসুস্থ থাকলে তাদের অনুমতি নিয়ে হজে যেতে হবে। পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা কোনো ব্যক্তির নিজের এবং পরিবারের লোকজনের প্রয়োজনীয় ভরণপোষণের অতিরিক্ত মক্কায় গিয়ে হজ করে আসা পরিমাণ সম্পদ থাকলে হজ ফরজ হয়। তাই হজ করতে গেলে নিজের অনুপস্থিতিতে পরিবারের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করুতে হবে। ঋণ পরিশোধ করা কেউ ঋণগ্রস্ত থাকলে হজের সফরে বের হওয়ার আগেই সব ঋণ পরিশোধ করুন। ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে হজের সফরে বের হওয়ার আগে পাওনাদারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া উচিত। পাওনাদারের অনুমতি ছাড়া হজে যাওয়া মাকরুহ।

অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ দখল করলে যে গুনাহ
প্রবাদ আছে, জোর যার মুলুক তার। এ কথাটি যেন আজকাল মহাসত্য হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। ঘরে বাইরে সর্বত্র এমন অন্যায় অনাচার দুর্নীতি প্রকাশ পাচ্ছে। যার ক্ষমতা আছে। সেই যেন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে মরিয়া হয়ে উঠছে। এ জন্যই কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘সম্ভবত ক্ষমতা লাভ করলে, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন-সম্পর্ক ছিন্ন করবে।’ (সুরা মুহাম্মদ: ২২)অর্থাৎ, তেমরা ক্ষমতা লাভ করলে, ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। আবার সেই মূর্খতার যুগে ফিরে যাবে। পরস্পর খুনোখুনি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আয়াতে সাধারণভাবে পৃথিবীতে ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি এবং বিশেষভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হলো, মৌখিকভাবে, কর্মের মাধ্যমে এবং অর্থ সম্পদ ব্যয় করার মাধ্যমে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করো। (তাফসিরে ইবনে কাসির)ইসলাম আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে বলে। যা আরও একটি বারতা পৌঁছে দেয় আমাদের কাছে, তা হলো- পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সৌহার্দ ও সম্প্রতি বজায় রাখা। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকা। ইসলাম প্রয়োজন হলে অর্থ কড়ি সম্পদ ব্যয় করে আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার শিক্ষা দেয়।সেখানে আজকাল আমাদের অবস্থা হচ্ছে আমরা একটু সুযোগ পেলেই আমাদের নিকট আত্মীয় পড়শী প্রতিবেশীর হক- অধিকার নষ্ট করি। তার ঘরের জিনিস না বলে নিয়ে নিই। আমার ফ্রিজে ছোট শিশুর জন্য দুধ রেখেছে আমার প্রতিবেশী। সেটা খেয়ে সাবাড় করি। অনুমতি ছাড়া তার গাছের ফল খাই। তার জায়গা জমি দখল করি। খেতের আল কেটে নিয়ে যাই ইত্যাদি।ঠিক এভাবেই আমরা আমাদের প্রতিবেশী আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার পরিবর্তে তাদের ক্ষতি করি। তাদের হক নষ্ট করি। আমরা নিজেরাই আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করি।এমনিভাবে অন্যায় ও জোর করে আমরা অপরের অর্থ সম্পদ ও ফল ফসল জায়গা জমি দখল করি। ভোগ করি। নষ্ট করি। যা পরিস্কার অন্যায় ও হারাম-নিষিদ্ধ কাজ। এমনকি হিংসা বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসাবশত মারামারি ও খুনোখুনির মতো জঘন্য কাজগুলো আমরাই করি। এভাবেই সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এমনকি কখনো দেশ ও জনগণের অধিকার নষ্ট হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের অর্থ-সম্পদ গ্রাস করো না। তবে পরস্পর সম্মতিক্রমে তোমরা যে ব্যবসা করো তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা: ২৯) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ মাআরেফুল কুরআনে লেখা হয়েছে, যেভাবে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা হারাম। নরহত্যা তদপেক্ষা কঠিন হারাম। অন্যকে হত্যা করার বিষয়টিকে 'নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা ইশারা করা হয়েছে যে, কাউকে হত্যা করা পরিশেষে তার দ্বারা নিজেকেই হত্যা করা হয়।কেননা তার বদলে হত্যাকারী নিজেই নিহত হতে পারে। যদি দুনিয়াতে তাকে হত্যা নাও করা হয়, তবে আখিরাতে তার জন্য যে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তা মৃত্যু অপেক্ষাও কঠিনতর। অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার সাথে এ বাক্যের উল্লেখ দ্বারা এ বিষয়ের প্রতি ইশারা যে, সমাজে অন্যায়ভাবে সম্পত্তি গ্রাস করার বিষয়টি যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন তার পরিণাম দাঁড়ায় সামাজিক আত্মহত্যা।সাহাবি হজরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অত্যাচার করে অর্ধহাত ভূমি দখল করেছে, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি ভূমি তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) এ হাদিস থেকে বুঝে আসে, অন্যায়ভাবে জায়গা জমি দখল করার পরিণতি কী হবে? এমনকি হাদিসে আমানতের খেয়ানত করাকে মুনাফেকি-কপটতা বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমাদেরকে মনে রাখা দরকার, কারও কোনো অর্থ সম্পদ কিংবা গচ্ছিত কোনো বস্তু হুবহু তার প্রাপক বা বাহককে পৌঁছে দেওয়া হলো আমানত। একইভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করাও আমানত। যা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যার খেয়ানত কাম্য নয় কখনো।

সারা দেশে সব মসজিদে একই সময় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা
সারা দেশে সব মসজিদে একই সময় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। রোববার (১৩ এপ্রিল) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম সই করা এক চিঠিতে এ নির্দেশনা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও উপপরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, জুমার দিন সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এ-ই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম; যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ৯) জুমা পারস্পরিক দেখা সাক্ষাৎ ও সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এ দিনকে বিশেষ মর্যাদা ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো এ দিনে বিশেষ সময়ে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন মসজিদে বিভিন্ন সময়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। কোনো মসজিদে দুপুর ১টায়, কোনো মসজিদে দেড়টায়, আবার কোনো মসজিদে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু করতে দেখা যায়। সময়ের তারতম্যের কারণে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিশেষ করে পথচারী (সফররত মুসল্লিরা) বিভ্রান্ত ও সমস্যার সম্মুখীন হন। এ সমস্যা দূরীকরণে সারা দেশে সব মসজিদে মুসল্লিদের সুবিধার্থে একই সময় দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায় করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো যাচ্ছে। চিঠিতে ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও উপপরিচালকদের তার বিভাগ/জেলায় অবস্থিত সব মসজিদে একই সময়ে অর্থাৎ দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ আদায় করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় বিক্ষোভের ঘোষণা আজহারির, উপস্থিত থাকবেন নিজেই
ঢাকায় বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারি। সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় এ বিক্ষোভের ঘোষণা দেন তিনি। ভিডিও বার্তায় আজহারি বলেন, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে ফিলিস্তিনের গাজায় সংগঠিত শতাব্দির বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ শিরোনামে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণজমায়েতের আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী ১২ এপ্রিল (শনিবার) শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়েতে গিয়ে এই মার্চটি শেষ হবে। ইনশাআল্লাহ আমি নিজে সশরীরে এই বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত থাকব। আপনারাও দলে দলে যোগদান করুন। তিনি আরও বলেন, মানবতার পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, গাজাবাসীদের পক্ষে, দল, মত, জাতি, পেশা নির্বিশেষে এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

ফিলিস্তিন নিয়ে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন নবীজি
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে শামদেশ বলতে যেসব অঞ্চলকে বোঝানো হতো তার মধ্যে অন্যতম ফিলিস্তিন ভূখণ্ড। শামদেশ বলতে বোঝায়, বর্তমান সময়ের সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভূখণ্ড। বিশেষ করে বায়তুল মুকাদ্দাস ও তার আশপাশের এলাকা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বেশকিছু ভবিষ্যদ্বাণী আছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, ভবিষ্যতে এ অঞ্চল পরিণত হবে মুসলিম বাহিনীর ঘাঁটিতে। অতীতে এটি ছিল নবী ও রাসুলদের পবিত্র ভূমি। কেয়ামতের পূর্বে এখানেই আসমান থেকে অবতরণ করবেন ঈসা (আ.)। দাজ্জালের অবসান ঘটবে এ ভূমিতেই এবং এখানেই ঘটবে কেয়ামতের নিষ্পত্তিমূলক মহাসংঘর্ষ। শামের ভূমি নিয়ে রাসুল (সা.) বহু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। বিশেষ করে বায়তুল মুকাদ্দাস ও আশপাশের অঞ্চল নিয়ে রয়েছে অসংখ্য হাদিস, যা ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের ইঙ্গিত দেয়। ফিলিস্তিন নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ৭ ভবিষ্যদ্বাণী হলো- ১. সত্যবাদী দলের অবস্থানস্থল রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, তার উম্মতের মধ্যে সব সময় একটি বিশেষ দল থাকবে, যারা সত্যের পথে অবিচল থাকবে এবং নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। আল্লাহর সহায়তা তাদের সঙ্গে থাকবে, এবং কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। কেয়ামত পর্যন্ত তারা বিজয়ের অবস্থানে থাকবে। হাদিস অনুযায়ী, এ দলটির অবস্থান হবে শাম অঞ্চলে। মুগিরা ইবন শোবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল সবসময় সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে, এমনকি কেয়ামত এসে যাবে আর তারা তখনো বিজয়ী থাকবে।’ (বুখারি : ৭৩১১) আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সবসময় সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তারা শত্রুর বিরুদ্ধে সাহসিকতায় টিকে থাকবে এবং শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবে না—শুধু দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এ অবস্থা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সাহাবিরা তখন জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, তারা কোথায় অবস্থান করবে?’ উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৩২০) ২. মুসলিমদের দ্বিতীয় হিজরত ভূমি সাধারণভাবে হিজরত বলতে বোঝায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাদের মক্কা থেকে মদিনায় গমন। তবে এক হাদিসে ভবিষ্যতের এক বিশেষ হিজরতের কথাও বলা হয়েছে, যা সংঘটিত হবে শাম অঞ্চলে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি—‘প্রথম হিজরতের পর শিগগিরই আরেকটি হিজরত হবে। সে সময়ে দুনিয়ার সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হবে তারা, যারা ইবরাহিম (আ.)-এর হিজরতভূমি—শাম দেশে অবস্থান করবে। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে অধঃপতিত মানুষরা বাকি থাকবে, যাদের ভূমি তাদের ছুড়ে ফেলবে। আল্লাহ তাদের ঘৃণা করবেন এবং ফিতনার আগুন তাদের ঘিরে ধরবে, তারা যেখানে যাবে, সঙ্গে থাকবে বানর ও শূকরের মতো চরিত্র।’(আবু দাউদ : ২৪৮২) ৩. মুসলমানদের সেনাছাউনি একসময় শাম অঞ্চল মুসলমানদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে এবং দামেস্ক শহরের পার্শ্ববর্তী গোতা নগরী তাদের সেনাছাউনি হবে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের আশ্রয় হবে গোতা শহরে, যা দামেস্কের কাছে অবস্থিত। এটি শামের অন্যতম উৎকৃষ্ট শহর।’ (আবু দাউদ : ৪২৯৮) একটি অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘অচিরেই তোমরা শাম জয় করবে, যখন সেখানে বসবাসের অধিকার পাবে। তোমরা দামেস্ক শহরকে বাসস্থান হিসেবে গ্রহণ করবে, কারণ এটি যুদ্ধকালে মুসলমানদের আশ্রয়স্থল হবে। তাদের ছাউনি হবে গোতা নামক একটি ভূমিতে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৭৪৭০) ৪. ইহুদিদের সঙ্গে মুসলিমদের যুদ্ধ হবে একটি হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না মুসলমানরা ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানরা তাদের হত্যা করবে এবং তখন তারা পাথর বা গাছের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, 'হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এখানে ইহুদি রয়েছে, আসো, তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ গাছ এ কথা বলবে না, কারণ এটি ইহুদিদের গাছ।’(সহিহ মুসলিম: ৭০৭৫) ৫. সত্যের পক্ষে বিজয়ীদের ভূমি হবে ফিলিস্তিন বায়তুল মুকাদ্দাস বা ফিলিস্তিনকে মহানবী (সা.) একদিন বিজয়ীদের ভূমি হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা ইহুদিদের নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের অবসান ঘটাবে। মুসলমানদের একটি দল তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে এবং বিজয়ী হবে। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের একটি দল সবসময় সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে। তারা শত্রুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী থাকবে এবং দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো বিরোধীপক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী, কেয়ামত পর্যন্ত তারা এমন অবস্থায় থাকবে। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কোথায় অবস্থান করবে? রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তারা বায়তুল মুকাদ্দাস এবং তার আশপাশে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ : ২১২৮৬) ৬. ঈসা (আ.)-এর অবতরণস্থল ও দাজ্জালের মৃত্যুস্থান ঈসা (আ.) বর্তমানে দ্বিতীয় আকাশে অবস্থান করছেন এবং কেয়ামতের পূর্বে তিনি আবার পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তিনি দুই ফেরেশতার ডানায় ভর করে সিরিয়ার দামেস্ক শহরের একটি উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। এরপর তিনি সিরিয়ার তবে লুদ নামক স্থানে গিয়ে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। নাওয়াস ইবন সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) একবার দাজ্জাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, তখন আল্লাহ ঈসা ইবন মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দুজন ফেরেশতার কাঁধে ভর করে, ওয়ারস ও জাফরান রংয়ের কাপড় পরিধান করে দামেস্ক নগরের পূর্ব দিকে উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। তার মাথা থেকে ঘাম ঝরতে থাকবে এবং যেখানে তার শ্বাস যাবে, সেই জায়গায় কাফিরদের ধ্বংস হবে। তিনি দাজ্জালের খোঁজ করতে থাকবেন এবং অবশেষে সিরিয়ার লুদ স্থানে গিয়ে তাকে পাকড়াও করে হত্যা করবেন। (মুসলিম : ২৯৩৭) ৭. হাশরের ময়দান আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে ‘হাশরের ভূমি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তিনিই কিতাবের অধিকারীদের মধ্যে যারা কাফির, তাদের প্রথম সমাবেশে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন।’ (সুরা হাশর : ২) এখানে ‘প্রথম সমাবেশ’ দ্বারা শাম দেশে ইহুদিদের একত্রিত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, যখন নবী (সা.) মদিনা থেকে বনু নাজিরকে নির্বাসিত করেছিলেন। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২৩, পৃষ্ঠা-২৬২) মায়মুনা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের বায়তুল মুকাদিস সম্পর্কে কিছু বলুন।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘বায়তুল মাকদিস হলো হাশরের ময়দান এবং পুনরুত্থানের স্থান। সেখানে গিয়ে নামাজ আদায় করো, কারণ সেখানে এক ওয়াক্ত নামাজ অন্য মসজিদে এক হাজার ওয়াক্ত নামাজের সমান।’ তিনি আর বলেন, যে ব্যক্তি সেখানে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে না, সে যেন সেখানে জ্বালানি তেল হাদিয়া হিসেবে পাঠায়, কারণ যে বায়তুল মুকাদিসে হাদিয়া পাঠায়, সে তাতে নামাজ আদায়কারীর মতো সওয়াব পাবে। (মুসনাদে আহমদ : ২৭৬২৬)

শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার নিয়ম
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। আনন্দ, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে আসে এ দিনটি। পবিত্র রমজান মাসব্যাপী যারা সিয়াম সাধনা করেছেন, শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখলেই মিলবে সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব। এ ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। শাওয়াল মাসের ফজিলত বিশুদ্ধ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ যে ব্যক্তি রমজান মাসের ফরজ রোজাগুলো রাখল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল।’ (মুসলিম ১১৬৪)শাওয়ালের রোজা রাখা ফরজ না। এটা নফল ইবাদত। তবে এর রয়েছে অগণিত সওয়াব। হাদিসে প্রিয় নবী সা. শাওয়াল মাসের প্রথমদিকে, মধ্যভাগে বা শেষাংশে নির্দিষ্ট করে রোজা রাখার কথা বলেননি। আবার রোজা ছয়টি লাগাতার রাখার নির্দেশনাও হাদিসে পাওয়া যায় না। তাই ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ‘শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যে কোনো ছয় দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব পাওয়া যাবে।’শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পূরণ করতে পারলেই হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে। যাদের কাজা রোজা আছে, অসুস্থতা কিংবা নারীদের হায়েজ-নেফাসের কারণে রমজানের রোজা অপূর্ণ থাকে, তাদের জন্য নিয়ম ও করণীয় হলো, শাওয়াল মাসে তাদের ভাংতি রোজাগুলো আগে পূর্ণ করে নিবে। তারপর তারা শাওয়ালের ৬ রোজা পালন করবে।হাদিসে আছে, যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহ কবুল করেন, তখন তাকে অন্য আরও নেক আমলের তওফিক দেন। এই রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার নিদর্শন।

ঈদের রাতে যে আমলে জান্নাত আবশ্যক হয়
ইসলামে দুইটি ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালিত হয়। আর শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ঈদুল ফিতর পালিত হয়। ঈদের রাতটি অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতময়। অনেকেই এ রাতটি হেলায়-ফেলায় কাটিয়ে দেন। ফুকাহায়ে কেরাম দুই ঈদের রাতে জাগ্রত থাকাকে সুন্নত লিখেছেন। তাই এ রাতের বিশেষ কদর করা উচিত। এ রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।ঈদুল আজহার রাতে ইবাদতের মাধ্যমে জান্নাত আবশ্যক হয়। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের মাধ্যমে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। জিলহজ মাসের ৮ তারিখের রাত; জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রাত (আরাফাত দিবসের রাত), ঈদুল আজহার রাত; ঈদুল ফিতরের রাত ও ১৫ শাবানের রাত।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব লিল মুনজেরি: ২/৯৮, হাদিস : ১৬৫৬) ঈদের রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত এবং দুই ঈদের রাতসহ এ পাঁচ রাতে কোনো দোয়া করে; সে রাতে তার কোনো আবেদনই ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৯২৭)ঈদের রাতে ইবাদতকারীর অন্তর কেয়ামতের দিন মরবে না। হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর কাছে সওয়াব পাওয়ার নিয়তে ইবাদত করবে তার হৃদয় সেদিনও জীবিত থাকবে যেদিন সকল হৃদয়ের মৃত্যু ঘটবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৮২)

ঈদের জামাত মসজিদে নাকি ঈদগাহে পড়া উত্তম
মুফতি জাকারিয়া হারুন: দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বিদায় নিতে যাচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। দেশে কয়েক দিন পর উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর দুইটি ঈদ উদযাপন করে। ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। একজন জানতে চেয়েছেন, ঈদের জামাত মসজিদে নাকি ঈদগাহে পড়া উত্তম?ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ঈদের নামাজ ঈদগাহে ও খোলা মাঠে পড়া সুন্নত। রসুলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদীন সকলেই ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়েন। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, كَانَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلّى রসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন (ঈদের নামাজের জন্য) ঈদগাহে যেতেন। (বুখারি, হাদিস: ৯৫৬)হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘ الْخُرُوجُ إِلَى الْجَبّانِ فِي الْعِيدَيْنِ مِنَ السّنّةِ দুই ঈদে (ঈদের নামাজের জন্য) খোলা মাঠে যাওয়া সুন্নত ‘ (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী, হাদিস: ৪০৪০)তাই মাঠে পড়ার ব্যবস্থা থাকলে বিনা প্রয়োজনে মসজিদে ঈদের জামাত করা সুন্নতের খেলাফ হবে। তবে বিনা প্রয়োজনে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।ইদানীং শহরে ইদগাহ কম বিধায় অধিকাংশ মসজিদে ঈদের জামাত হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়া বা বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়লে সুন্নতের খেলাফ হবে না। ওযরের সময় মসজিদে পড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فِي يَوْمِ عِيدٍ، فَصَلّى بِهِمُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلَاةَ الْعِيدِ فِي الْمَسْجِدِ কোনো এক ঈদের দিন তারা বৃষ্টিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। ফলে রসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১১৫৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩১৩)