ইসলামী ব্যাংক ফেসবুক হ্যাকিংয়ে বরখাস্ত কর্মীদের হাত? যা বললেন ব্যাংকের মুখপাত্র
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:৪৪ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ একের পর এক সাইবার হামলার শিকার হওয়ার পেছনে ব্যাংক থেকে সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া কয়েকজন কর্মী জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র নজরুল ইসলাম।
শনিবার (৪ অক্টোবর) গণমাধ্যমকে তিনি জানান, পেজ হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নজরুল ইসলাম বলেন, "হ্যাকারদের দেওয়া স্ট্যাটাসগুলো থেকে স্পষ্ট যে, বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ রয়েছে।"
ব্যাংকটির এই কর্মকর্তা জানান, একাধিকবার হ্যাকের পর অবশেষে শনিবার ইসলামী ব্যাংকের ফেসবুক পেজটির নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়া গেছে।
ঘটনার শুরু হয় শুক্রবার ভোরে, যখন হ্যাকার গ্রুপ ‘MS 470X’ প্রথমবারের মতো ব্যাংকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজটির দখল নেয়। এর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, তারা পেজটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে।
তবে ওই দিন রাত ৮টা ২৮ মিনিটে হ্যাকাররা আবারও দ্বিতীয় দফায় পেজটি হ্যাক করে একটি স্ট্যাটাস দেয় এবং প্রোফাইল ছবি বদলে নিজেদের প্রতীক বসায়। এরপর একাধিক ইংরেজি ভাষার পোস্টে তারা নিজেদের কার্যকলাপের পক্ষে ব্যাখ্যা দেয়।
একটি পোস্টে তারা লেখে, “হ্যালো, প্রিয় ম্যাঙ্গো পিপল... [আমরা আবার অ্যাক্সেস ফিরে পেয়েছি... আমাদের নাম মনে রাখবেন সারাজীবন - MS 470X... লল মাই ফ্রেন্ড জাকার]”
প্রথম দফায় হ্যাকিংয়ের সময় হ্যাকাররা দাবি করে, তারা ইসলামী ব্যাংকের “অনৈতিক কর্মকাণ্ডের” বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি তারা ব্যাংকের বরখাস্তকৃত কর্মীদের পুনর্বহালের দাবি তোলে, যদিও কিছু সময় পর সেই পোস্ট মুছে ফেলা হয়।
ভোর ৫টা ৪২ মিনিটে আরও একটি পোস্টে হ্যাকাররা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছে এবং ভবিষ্যতে আরও সাইবার হামলার ইঙ্গিত দেয়।
পেজের নাম না বদলালেও প্রোফাইল ও কাভার ছবি হ্যাকাররা তাদের লোগো দিয়ে পরিবর্তন করে।
এ ঘটনার পর নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা পেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি, তবে তা তখন ঘোষণা করিনি, কারণ আমরা হ্যাকারদের পর্যবেক্ষণ করছিলাম।” তিনি আরও আশ্বস্ত করেন, “ফেসবুক পেজ হ্যাক হলেও ব্যাংকের গ্রাহকদের হিসাব বা আর্থিক লেনদেনে কোনো ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়নি।”
ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, সাইবার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তদন্তও শুরু হয়েছে।
এই সাইবার হামলার ঘটনা এমন এক সময় ঘটল, যখন ইসলামী ব্যাংক বড় ধরনের প্রশাসনিক রদবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি ঘোষণা দেয়, প্রথম দফায় ২০০ এবং দ্বিতীয় দফায় আরও ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অযোগ্যতা বিবেচনায়। একই সঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
এই ছাঁটাই ও পুনর্বিন্যাস ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে চরম অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। তারা বলছেন, কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই নয়, ব্যাংকগুলোকে তাদের পুরো ডিজিটাল অবকাঠামোর নিরাপত্তা বহুগুণে বাড়াতে হবে।