আসমা চৌধুরী'র একগুচ্ছ কবিতা

কিছু সহজ গান প্রতিটি মানুষ আলাদা এ সত্য জেনেও তুলে ধরিঅন্য কোন সময়ের,অন্য কোন ভুবনের আলোসব পরিচিত চেহারা পাঠযোগ্য নয়,কিছু বার্তা ভাঙনেও বেঁচে থাকে। তুমি- আমি, যেখানে প্রতিদিন দেখি কিছু ক্ষয়। কিছু গান বাজে, সহজ সুন্দর আনন্দেধরো পৃথিবীর পচনের ইতিহাস দেখিতার গঠনে মুখ ভার করে থাকিআমি যে সেই এক পাপেই দোষী। আমাকে দিও না রঙ, এমন দুরাশায় যদিআরো আঁধার বনে দেহ রেখে যাইকিছু কষ্ট গোপনে রেখো হে সুধাভরা মাটিজানতে চেয়ো না আমি কত ভালোবাসিঐ ফ্রকে সেলাই করেছি ফুল,ইতিহাস সবুজ মুকুল। রেখো কিছু খড় পৌষের দরজায় শীত তাড়াবো। অপরিচিত মুখ যেখানেই যাই এত লোকের ভিতরেকাউকেই চেনা মনে হয় নাসব মুখ অপরিচিতআমরা পাশাপাশি বসে নাস্তা খাইএক্সকিউজ মি বলে, ধাক্কা খাওয়ার ভয়েসন্তর্পণে পাশ থেকে অন্য পথ ধরিপড়ে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে যাইকারো হাত ধরি না। এই যে হল ভর্তি মানুষকেন যেন তাদেরকে মনে হয় দাবারুএখনই সুবিধামতো চাল দিয়েঘোড়ার পাশে বসবেউদ্দেশ্য কিস্তি মাত করাআমি কিংবা তুমিকি করে হাত ধরবো তার? হল ভর্তি তরুণদের দেখোএকই রংয়ের পোশাকপ্রায় সমবয়সী তারাহাসছে, বসছে, উঠে যাচ্ছেদেখে মনে হচ্ছে না বাটপারএকই পোশাক,প্রায় একই বয়সওরা পরস্পরের সাথে ঝুঁকে আছেপরামর্শ করছে, খবর বলছেওদের বিশ্বাসের হাতগুলোঠিকঠাক থাকবে তো ? প্রজেক্টরে তাকিয়ে দেখিএকই সমাবর্তনের পোশাকেপ্রতিটি মুখ আমার সন্তান... মেয়েরা ঘর ছাড়ার পর বাড়ি বলে একটা টানা দুঃখ থাকে মেয়েরমা থাকে না, বাবা অথবা ভাইও থাকে নাচোখ বন্ধ করলে তারা দেখে এটাই নিয়তি। অজগর সাপের পেটে শুয়ে স্বপ্নের হরিণঝিরিঝিরি ঘাস খায় আর চোখ মোছেকেউ তাকে বলেনা, কেমন যাচ্ছে দিনকাল। অনেক শেকড় ছেঁড়া মুখ বহুদিন পার করেবাড়ির উঠোনে দেখে কেউ আর নাই আপনজমির হিসাব নেই ,কলাকৌশলে বাড়ে বঞ্চনা। তুমি মেয়ে, কার কাছে বলবে চাই উঠোনের দামআমগাছটির ডালে দোল খাওয়া সকালের রোদ্দুরশৈশবের সাঁতারের জল, তেঁতুলের চিরল পাতা! তুমি ছেড়ে গেলে, বদলে গেছে বাড়ির আসবাবএতকিছু বদলায় মেয়ে, মায়ের কাছে জানতে চেয়োএকটুও কী বদলিয়েছে বড় হওয়া জখমের দাগ।

হাবীব ইমন'র একগুচ্ছ কবিতা

অন্ধকারে আলো খোঁজা গল্পটা শেষ হবে না, যখন তোমার জাল থাকে,সন্দেহের সুরত মিটবে না, যখন মন খল থাকে। তুমি খুঁজবে ব্যথা অন্যের, ছুঁড়বে দগ্ধ তীর,তবু আসবে সে দিন, যে করে তোকেই বীর। বিশ্বাসের খোঁজে হারিয়েছি পথ অন্ধকারে,অন্ধকার বুকে জ্বালিয়েছি এক দীপ পবিত্র তাপে। তারা ভেঙেছে মন, মুছে দিয়েছে চিহ্ন,তবু বেঁচেছি আমি, লিখেছি অন্তরের গিঁথি। যে ভালোবাসে খাঁটি, দেবে ভরসা নিভৃত,যে থাকবে চুপচাপ তোর কাছে, করবে তোর আশ্রয় মধুরিত। লেখা আমার নয় শুধু স্মরণে রাখতে,আলো ছড়াতে, অন্ধকার কাটাতে। গল্প যদি শেষ হয় আজ এখানে,হোক সে শুরু কারো জীবনের নতুন গানে। আমি অমরত্বের বিশ্বাসী নই, জানি,তবু সৎ বয়ানে টিকে থাকবে ভালোবাসা, রাখব তোমারই জানি। শরীরের দুর্বলতা কি আসে তাতে,ভালোবাসার আলো জ্বলে চিরন্তনে। বৃষ্টিভেজা প্রেম বৃষ্টি নামে চুপচাপ, শহরের কোণে,তুমি আসো হৃদয়ে, স্বপ্নের টোনে।ভেজা পথের পাশে, দাঁড়িয়ে থাকি,তোমার নাম বলি, মনেতে রাখি। তুমি আছো বৃষ্টির মতো, নরম ছোঁয়ায়,ভালোবাসা ঢেউ তোলে, দুই চোখের কোণায়।শুধু তুমি, আর আমি, আর কিছু চাই না,এই বৃষ্টি, এই প্রেম — ফুরায় না, ফুরায় না। হাত ছুঁয়ে বয়ে যায়, কাঁপা হাওয়া,তোমার চোখে দেখি, নিঃশব্দ ছায়া।কথা ছাড়া বলো সব, দৃষ্টি দিয়ে,আমার মন হারায়, তোমার দিগন্ত পেয়ে। তুমি আছো বৃষ্টির মতো, নরম ছোঁয়ায়,ভালোবাসা ঢেউ তোলে, দুই চোখের কোণায়।শুধু তুমি, আর আমি, আর কিছু চাই না,এই বৃষ্টি, এই প্রেম — ফুরায় না, ফুরায় না। হয়তো একদিন, রোদ উঠবে ঠিক,তবুও মন খুঁজবে, ভেজা সেই আবেগ।তোমার সাথে বৃষ্টি, আমায় ডাক দেয়,ভালোবাসা চুপচাপ, হৃদয়ে বাজে। তুমি আছো বৃষ্টির মতো, নরম ছোঁয়ায়,ভালোবাসা ঢেউ তোলে, দুই চোখের কোণায়।এই জীবন, এই গান, শুধু তোমার ছায়া,এই বৃষ্টি, এই প্রেম — ফুরায় না, ফুরায় না। একদিন আমি ঠিক শেষ হয়ে যাবো একদিন আমি ঠিক শেষ হয়ে যাবো,চাইলেও আর তুমি পাবে না আমায়।ফিরে এলেও আমি ফিরবো না আর,ডাকবে হয়তো তুমি — "ইমন, অ্যাই ইমন!" পারলে কবরেতে লোবান দিও,সঙ্গে একটু বেলি, বকুলের গন্ধ।তোমার প্রিয় সেদিন হাসনাহেনাওরেখো যেন পাশে— আমি শুঁকবো দূর। ভোরের ধুলো-ধুলো রাস্তায় যখনহাঁটবে একা একা, দেখবে আমি সেইবাতাসে এক চন্দন গন্ধে ভেসেজড়িয়ে আছি তোমার সাদা শাড়ির ভাঁজে। চাঁদ যখন জানালায় তাকাবে তুমি,ভাববে আমি ঠিকই আছি পাশে খুব।নরম আলোর মতো ছুঁয়ে দেবো কাঁধ,ধীরে বলবো — "আজকে কী খেয়েছো?" একদিন আমি ঠিক শেষ হবো সত্যি,হয়তো তোমার মনে থাকবো না আর।তবু আমি বেঁচে থাকবো দীর্ঘশ্বাস,ঘুমহীন কবিতায়, তোমার রাতজুড়ে।

একগুচ্ছ কবিতা

চুরি হয়ে যাওয়া শ্লোগান একদিন ছিনতাই হয়ে যাবে আমাদের স্বপ্নগুলো। আকাশের বক্ষ শূন্য হয়ে গেলে, উদ্ধত বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো গুলিবিদ্ধ শহীদের লাশ খেয়ে যাবে হাজার শকুন। তারপর, চুরি হয়ে যাওয়া শ্লোগান শহীদ মিনারে করে যাবে আর্তনাদ। জীবনের লেনদেন দিন আসে দিন যায় বেড়ে যায় জীবনের লেনদেন প্রতিদিন। মিছিলের হাত বাড়লে বাড়ে টিয়ারশেলের সংখ্যাও। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘতর হতে হতে পাহাড়ি ঢল বেয়ে জন্ম হয় একটি নদীর, তারপর নোনাধরা চোখে বাসা বাঁধে শ্যাওলারা একটু একটু করে। মুসাফির আনন্দময় শত আলোকবর্তিকার ভীড়ে পাখি সব ফিরে যায় আপন নীড়ে। আমি হাঁটি অজানার পথে, দেখি, ফুটপাত বিছানায় ঘুমন্ত আশরাফুল মাখলুকাত। দেশহীন অচেনা মানুষের চোখের জলে বুকে এসে বিঁধে তীর, তোমাদের এই লাল-নীল শহরে আমি এক মুসাফির।

শবনম মুশতারী ও আনোয়ারুল হক পাচ্ছেন ‘নজরুল পুরস্কার’

নজরুল সংগীত-চর্চা ও প্রসারে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গবেষক ও অধ্যাপক আনোয়ারুল হক এবং সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারীকে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৫’ দিচ্ছে বাংলা একাডেমি। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি রোববার নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ওই দিন বিকেলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। নজরুল চর্চায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি এ পুরস্কার চালু করে। পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রতিটি ১ লাখ টাকা, সঙ্গে দেওয়া হবে সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয়। শবনম মুশতারীর জন্ম নওগাঁয়। ষাটের দশক থেকে গানের সঙ্গে যুক্ত তিনি। দীর্ঘ সংগীত জীবনে আধুনিক ও নজরুল সংগীতের তাঁর ১০টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে এইচএমভি তার ‘লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া’ লং প্লে প্রকাশ করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের সাউন্ড সেকশন সংরক্ষণ করে রেখেছে। আর নিউইয়র্ক থেকে মুক্তধারা তার গানের অ্যালবাম বেস্ট অব শবনম মুশতারী প্রকাশ করে। তাঁর দুই বোন ইয়াসমিন মুশতারী ও পারভীন মুশতারীও নজরুলের গানের শিল্পী। নজরুলের গানের চর্চা ও প্রসারে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৭ সালে শবনম মুশতারী পেয়েছিলেন একুশে পদক। মাঝে কিছুদিন শারীরিকভাবে অসুস্থও ছিলেন তিনি। আনোয়ারুল হকের জন্ম ১৯৫২ সালে কুমিল্লার মোগলটুলিতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। তিনি নজরুলের জীবন-সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে গেছেন জীবনভর।

কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ

বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯০৮ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথাসাহিত্যে যে কয়েক জন লেখকের হাতে বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা মানিক গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তাঁর রচনায় ফুটে উঠেছে। মাত্র ৪৮ বছরের জীবনে তিনি রচনা করেন বিয়াল্লিশটি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোট গল্প। তাঁর রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামি, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্প সংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। বাংলা ছাড়াও তাঁর রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। পিতার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবনের ছাত্র জীবন অতিবাহিত হয় বাংলা-বিহার-ওড়িশার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তাঁর মা নীরদাসুন্দরীর আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য়। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের কারণে ওই সকল মানুষের জীবনচিত্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা ছিল মানিকের। তাই ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনচিত্রকে তাঁর সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। পদ্মার তীরবর্তী জেলেপাড়ার পটভূমিতে রচনা করেন পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটি। জীবনের প্রথম ভাগে তিনি ফ্রয়েডীয় মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া মার্কসবাদও তাঁকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল। তাঁর অধিকাংশ রচনাতেই এই দুই মতবাদের নিবিড় প্রভাব লক্ষ করা যায়। তাঁর প্রথম গল্পগুচ্ছ অতসী মামি ও অন্যান্য সংকলনে সব কয়টি গল্প এবং প্রথম উপন্যাস দিবারাত্রির কাব্য মধ্যবিত্ত জীবনভিত্তিক কাহিনি নিয়ে গড়া। এ ছাড়া গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষের জীবনচিত্রও তাঁর বেশ কিছু লেখায় দেখতে পাওয়া যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের সাহিত্যে বস্তুবাদের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবাদের জয়গানই তাঁর সাহিত্যের মুল উপজীব্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আরথসামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভাঙাগড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবকে তিনি তাঁর সাহিত্যে চিত্রায়িত করেছেন। সমাজের শাসক ও পুঁজিপতিদের হাতে দরিদ্র সমাজের শোষণবঞ্চনার স্বরূপ তুলে ধরেছেন সাহিত্যের নানান চরিত্রের আড়ালে। আর ছোটগল্প অতসী মামী, প্রাগৈতিহাসিক , সরীসৃপ , সমুদ্রের স্বাদ , হলুদ পোড়া , আজ কাল পরশুর গল্প, ফেরিওয়ালা ইত্যাদি। পদ্মানদীর মাঝি ও পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাস দুটি তাঁর বিখ্যাত রচনা। এ দুটির মাধ্যমেই তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরবর্তীতে পদ্মানদীর মাঝি চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে। শেষ জীবনে তিনি নিজেও চরম অর্থ কষ্টে ভুগেছেন। কিন্তু তবুও সাহিত্যকেই তিনি তাঁর পেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর বাঙলা ভাষার অন্যতম শক্তিশালী এ কথাসাহিত্যিক না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

পৃথিবীর কোন দেশ বা ভাষার সাহিত্যই আর ভালো’র দিকে যাবে না। -রুদ্রাক্ষ রায়হান

রুদ্রাক্ষ রায়হান। কবি, গীতিকার, রাজনীতিবীদ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করা ও ছাত্রদের পাশে থেকে আইনি সহায়তা ও অনুপ্রেরণা দেয়াসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোদী আন্দোলনের সক্রিয় কবি। গত ১০ মে কবির জন্মদিন উপলক্ষে অনলাইন সাক্ষাতে কবির সাথে যুক্ত হন ঢাকাওয়াচ২৪ ডটকম সাহিত্য সম্পাদক অনিন্দ্য দ্বীপ। সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর পর্ব আমাদের পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো- অনিন্দ্য দ্বীপ: লেখালেখির চেয়ে কি ইদানিং রাজনীতিকেই প্রধান্য দিচ্ছেন? রুদ্রাক্ষ রায়হান: প্রাধান্য কি? করছিই তো অ্যাডভোকেসি আর রাজনীতি, (যদিও রাজনীতি টা দল ছাড়া একা একা করছি) লেখালেখি দীর্ঘদিন প্রায় বন্ধ। অনিন্দ্য দ্বীপ: সাহিত্যিকদের নির্বাচন ফলাফল খুবই করুণ। আপনি কি এই হতাশাকে আরো দীর্ঘ করবেন? রুদ্রাক্ষ রায়হান: কই? পাবলো নেরুদা তো কম্যুনিস্ট পার্টি থেকে সিনেটর ছিলেন আমাদের দেশের আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন মন্ত্রী, কবি মোহাম্মদ সাদিকের নির্বাচনের ফলাফল বিজয়ের। আবার নজরুল, গুণ দা অনেকটা ঝোঁকের বশে নির্বাচন করেছেন।আমার ক্ষেত্রে একজন কবি নির্বাচন করছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে রুদ্রাক্ষ রায়হান একজন রাজনীতিবিদ, যে কবিতা লিখতে পারেন। নির্বাচনের ফলাফল যদিও ব্যক্তির যোগ্যতার বাইরেও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে কিন্তু এই কথা বলতে পারি যে আমি বিজয়ের প্রত্যাশায়ই নির্বাচন করবো। সংসদ সদস্য হয়েও যেতে পারি এবার। অনিন্দ্য দ্বীপ: কবি হিসেবে কোথায় নিজেকে থিতুু করবেন, বহুগামী ঘোড়া নাকি জলঘুঘুতে? রুদ্রাক্ষ রায়হান: কোথাও না, কবির থিতু হওয়া আছে নাকি? অনিন্দ্য দ্বীপ: জুলাই গণঅভ্যুত্থান আপনার সাহিত্য জীবনে কি কোনো প্রভাব ফেলেছে? রুদ্রাক্ষ রায়হান: না, একদম না। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমার কোনকিছুকেই প্রভাবিত করতে পারে নাই। অনিন্দ্য দ্বীপ: পেশা কি সাহিত্য চর্চার অন্তরায় হতে পারে? রুদ্রাক্ষ রায়হান: সব পেশা নয় কারণ আমি আমার সেরা কবিতাগুলো বিক্রয়কর্মী থাকা অবস্থায় লিখেছি। তবে আইন পেশা টা প্রচুর সমস্যা করে লেখালেখির ক্ষেত্রে। দুই শিল্প একই সময়ে একই পথে চলতে চায় না। অনিন্দ্য দ্বীপ: নিজের লেখা নিয়ে নিজের উপলব্ধি কেমন? রুদ্রাক্ষ রায়হান: ভালোই, পড়ে মজা পাই, মূলত "ভালোই শুরু করেছিলাম কিন্তু হলো না" টাইপ একটা অনুভূতি। আমার মনে হয় নিয়মিত হতে পারলে বড় কবিই হতাম। হা হা হা... অনিন্দ্য দ্বীপ: অগ্রজ ও অনুজের পরস্পরা সাহিত্য জীবনের কোনো প্রভাবক হিসেবে মনে করেন কি? রুদ্রাক্ষ রায়হান: এমন প্রশ্নগুলোর আসলে উত্তর দেয়া কঠিন, এমন কখনো ভাবি নাই। আমি আসলে কবিতা লেখার বাইরে সাহিত্য নিয়া অমন চিন্তা ভাবনা করার মানুষই না। অনিন্দ্য দ্বীপ: পদক বা পুরস্কার বিষয়ক আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি? রুদ্রাক্ষ রায়হান: পদক ভালো, পদকের টাকাটা আরও ভালো গরীব লেখকদের জন্য। আমার ক্ষেত্রে এটা দরকার নাই, আমি বড়লোক মানুষ, হা হা হা.....। তবে রাষ্ট্রীয় পদকগুলো যোগ্য লেখকদের দেয়া হলে পদকগুলো আরও সম্মানিত হতো। অনিন্দ্য দ্বীপ: জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সাহিত্য সংস্কারে আপনার প্রস্তাবনা আছে কি? রুদ্রাক্ষ রায়হান: সাহিত্যের সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়ে হয় না, সংস্কার যা হওয়ার হচ্ছে। এখন তা কোনদিকে যাবে তা নিয়ে কথা বলা যায়। পৃথিবীর কোন দেশ বা ভাষার সাহিত্যই আর ভালো’র দিকে যাবে না।

সাংবাদিক হিমেল চাকমার লেখার প্রথম গ্রন্থ 'সীমাঘর বিতর্ক ও অনুসন্ধান' এর মোড়ক উন্মোচন

সাংবাদিক হিমেল চাকমার লেখার প্রথম গ্রন্থ রাঙামাটি রাজবন বিহার সীমাঘর বিতর্ক ও অনুসন্ধান এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। রবিবার(১১ মে) বিকেলে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্মেলন কক্ষে এ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ পবন কুমার চাকমা। রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমার সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাজীব চাকমা, এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, নানিয়ারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি চাকমা, রাঙামাটি পাবলিক কলেজের প্রভাষক মুকুল কান্তি ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রন্থটির লেখক হিমেল চাকমা। স্বাগত বক্তব্য তিনি গ্রন্থটির অনুসন্ধান এবং গ্রন্থ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন এ বইটির মাধ্যমে রাজবন বিহারের সীমাঘর বিতর্ক সম্পর্কে জানতে পারবে এবং পাঠকরা সমাধান খুঁজে পাবে বলে মনে করেন তিনি। প্রধান অতিথি হিসেবে কৃষিবিদ পবন কুমার চাকমা বলেন, রাজবন বিহারের সীমাঘর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে আসছি। এতে করে নানা তর্ক বিতর্ক দেখা যাচ্ছিল। এ বিতর্কের মাঝে ভিক্ষু সংঘের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে সৃষ্ট বিভাজনের একটা সমাধান আসবে মন্তব্য করে পবন কুমার চাকমা বলেন, বিতর্ক অবসানের জন্য বড় একটি অনুসন্ধানের কাজ করেছেন হিমেল চাকমা। এই বইটির মাধ্যমে বৌদ্ধ সমাজ উপকৃত হবে। রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাজীব চাকমা বলেন, এ বইটি সীমাঘর বিতর্কের অবসান ঘটাবে বলে আমি মনে করি। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যাঁরা চিন্তাভাবনা করেন এ চিন্তাশীল ব্যাক্তিদের জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, গভীর এই অনুসন্ধান রাজবন বিহারের সীমাঘর বিতর্কের অবসান ঘটাবে বলে আমি মনে করি। আমি লেখককে সাধুবাদ জানাই। যখন কোন বিতর্ক সৃষ্টি হয় তখন সঠিক তথ্য উপাত্ত জানা থাকলে বিষয়টি মানুষদের সঠিকভাবে জানানো সম্ভব হয়। গ্রন্থটি পাঠকদের সম্মৃদ্ধ করবে। গ্রন্থটি পড়ে পাঠক প্রকৃত সত্যিটা কি জানতে পারবে। এ বইটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সভাপতির বক্তব্যে সুশীল প্রসাদ চাকমা বলেন, লেখক রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির একজন সন্মানিত সদস্য আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি তিনি এই অনুসন্ধানে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। ডোর টু ডোর গিয়ে স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই অনুসন্ধান একদিনের অনুসন্ধান ছিল না। মাসের পর মাস তিনি কাজ করেছেন। অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন কৌতূহলী বিষয় আমার সাথে নিয়মিত শেয়ার করেছেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে তাকে উৎসাহ যুগিয়েছি যেন তিনি এই অনুসন্ধান গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে।

মে দিবস নিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবিতা

মে দিবস বা শ্রমিক দিবসের প্রভাব আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক। বিশেষকরে পুঁজিবাদের এই সময়ে চারিদিকে শ্রম শোষণ, শ্রমিকদের বঞ্চনা আর প্রতিনিয়ত শ্রমিক নিপীড়নের ঘটনাগুলো রোজই মে দিবসকে প্রাসঙ্গিক করে তুলছে। প্রতিটি দেশে একেকটি হে মার্কেট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে যারা মার্কসবাদী নন, কমিউনিজমকে এড়িয়ে যান তারাও অন্তত মে দিবসকে অস্বীকার করতে পারছেন না। দিবস কেন্দ্র করে বা মে দিবসের চেতনায় লেখা হয়েছে বহু কবিতা, উপন্যাস, গল্প ও গান। কলাকৈবল্যবাদী সাহিত্যিক বা শিল্পীরা শিল্পের জন্য শিল্প তত্ত্বে বিশ্বাসী। এর বিপরীতে একদল মনে করেছেন শিল্প জীবনের জন্য। কিন্তু আজকের দিনে মীমাংসিত সত্য হলো শিল্প যেমন শিল্পের জন্য, তেমনি জীবনের জন্যও। ফলে শ্রমিকদের বঞ্চনা, পুঁজিবাদী সভ্যতার যাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া মানুষের যাপন উঠে আসছে সাহিত্য ও শিল্পে। পিট সিগারের ‘টকিং ইউনিয়ন’ বা জোয়ান বায়েজের ‘জো হিল’ গান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মে দিবস নিয়ে বাংলা সাহিত্যে বহু কবিতা লেখা হয়েছে। মে দিবস নিয়ে কবিতার কথা বললেই যে কবিতাটি সকলের মানসপটে ভেসে ওঠে সেটি হলো কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা: ‘‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/ কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,/ গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য/ জীবনকে চায় ভালোবাসতে।” এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি- এই কবিতাটিকে শেখ লুৎফর রহমান সঙ্গীতে রূপদান করেছেন। মে দিবস নিয়ে প্রথম গানটি লিখেছিলেন ইজিন পাতিয়ের। কিন্তু আমাদের আজকের আলোচ্য মে দিবস নিয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রথম কবিতা ও তার কবিকে নিয়ে। তিরিশের দশকের আগে মে দিবস নিয়ে আমরা বাংলা কবিতা পাই না। রবীন্দ্রনাথ মার্কসবাদী ছিলেন না। তিনি সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার ভূয়সী প্রসংশা করেছেন বটে, কিন্তু মার্কসবাদকে জীবন দর্শন হিসেবে গ্রহণ করেননি। কিন্তু মার্কসবাদের ঐতিহাসিক সত্য ও শ্রমিকদের বঞ্চনার চিত্র উপেক্ষা করতে পারেননি। তিনি শ্রমিকদের নিয়ে লিখেছেন--‘সবচেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে বাকি সকলের পরিচর্যা করে। সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’ কাজী নজরুল ইসলামের ‘কুলি মজুর’ কবিতাটা মে দিবসের কবিতা নয়, কিন্তু তাতে মে দিবসের চেতনা রয়েছে। ‘‘হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,/পাহাড়-কাটা সে পথের দুপাশে পড়িয়া যাদের হাড়,/তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,/তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;/তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,/ তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!” সুকান্ত ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে আরও উজ্জ্বল। সুকান্ত নিজে মার্কসবাদী ছিলেন। মে দিবস নিয়ে তিনি লিখেছিলেন “১লা মে-র কবিতা '৪৬”। তিনি লিখেছিলেন- “লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে,কী হবে আর কুকুরের মতো বেঁচে থাকায়?কতদিন তুষ্ট থাকবে আরঅপরের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড়ে?” এই যে বলছিলাম যারা কমিউনিস্ট নন, তারাও কীভাবে মে দিবসের চেতনা ধারণ করেছিলেন? কারণ ইউরোপের প্রগতি লেখক সংঘ যেমন অকমিউনিস্ট উদার মানবতাবাদী লেখক, যথা রোমাঁ রোলাঁদের মতো মানুষদের কাছে রাখার চেষ্টা করেছে, সমর্থন এবং সহযোগিতা লাভ করার চেষ্টা করেছে তেমনি ভারতের প্রগতি লেখক সংঘও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নন্দলাল বসু, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, প্রেমচন্দ, সরোজিনী নাইডু, প্রমথ চৌধুরীরর মতো লেখকদের সাথেও সংযোগ স্থাপন করেছে। যাহোক, তিরিশের দশকে যে পঞ্চপাণ্ডব- বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ, অমিয় চক্রবর্তী এবং বিষ্ণু দে; এদের চারজনই ছিলেন কলাকৈবল্যবাদী। বিষ্ণু দে ছিলেন ব্যতিক্রম। হ্যা, বিষ্ণু দে-ই বাংলা সাহিত্যে প্রথম মে দিবস নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন। তার 'সন্দীপের চর' কাব্যগ্রন্থে ‘মে দিন’ নামে আমরা এই কবিতাটি পাই-- ‘মে দিনের গান অক্ষয় প্রাণেদুর্গত দেশে বঞ্চিত ত্রাণেতোলে চৈতালী সুর ওরা ভাবে ঢাকে কাল বৈশাখীমরণ ভিখারী শ্মশানের পাখিমশানে পোড়াবে মেঘ মে দিনের গানে আসন্নত্রাণেহে লালকমল হে নীলকমলনাগপাশ ছেঁড়ো প্রাণ সন্ধানেস্বর্ণালঙ্কা চুর ওরা কি বাঁধাবে সমুদ্রশ্বাসবৈশাখী মেঘ ঝড়ের বাতাসরুষবে বজ্রবেগ? মে দিনের গান কালবৈশাখীঝড়ে ডানা ঝাড়ে শ্মশানের পাখিমরণই মরণাতুর হাজার শকুন ওড়ে পথে ঘাটেমরিয়া ছলায় শত পাখসাটেঢাকে নাকি ঝড়ো মেঘ? হে পৃথিবী আজ এরা উন্মাদতোমার সত্যে বৃথা সাধে বাদযুগান্তে ভঙ্গুর কুটিল ভেবেছে কেউটে কামড়েকোটালে শকুনে পাখায় চাপড়েরুধবে বজ্র বেগ! হে পৃথিবী মাতা! বিশ্বজননীদৃঢ়পদে কড়া হাতে দিন গণিআশ্বাসে ভরপুর বিশ্বমাতার এ উজ্জীবনেবৃষ্টিতে বাজে রুদ্রগগনেলক্ষ ঘোড়ার খুর বিশ্বমাতার কোটি সন্তানদেশে দেশে তোলে তুরঙ্গ গানঅমোঘ নিরুদ্বেগ কোটি জলকণা এই জনতারকালবৈশাখী রোখে বলো কারমেশিনগান বা চেক? হে পৃথিবীমাতা নীল ধারাজলেবিদ্যুতে বাজে পুড়ে খাক জ্বলেহে লালকমল হে নীলকমলপোড়া চোখ শত্রুর দুই হাতে ডাকে স্বাগত স্বাগতপথে ঘাটে মিলে গাঁয়ে গাঁয়ে শতউত্থান বন্ধুর মিলিত হাতের মে- দিনের মেঘতাজিক কাজাক রুশ উজবেকহে লালকমল হে নীলকমলহাজার কসাক মেঘ।" বিষ্ণু দে’র এই কবিতাই বাংলা সাহিত্যে মে দিবস নিয়ে প্রথম কবিতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি জড়িয়ে পড়েন ফ্যাসিবাদ বিরোধী মুভমেন্টে। ফলে তার স্বদেশপ্রেম ও আন্তর্জাতিকতাবাদ ফুটে ওঠে তার রচনায়। তার সৃষ্টি প্রতিফলিত হয় মার্কসবাদের দর্পনে। তিনি লিখেছেন- “কার পদধ্বনি আসে? কার?/ একি নয় যুগান্তর! নব অবতার।/ এ যে দস্যুদল! / হে ভদ্রা আমার!/ লুব্ধ যাযাবর! নির্ভীক আশ্বাসে আসে ঐশ্বর্য-লুণ্ঠনে,/ দ্বারকার অঙ্গনে অঙ্গনে/ চায় তারা রঙ্গিলাকে প্রিয়া ও জননী/ প্রাণৈশ্বর্যে ধনী,/ চায় তারা ফসলের ক্ষেত, দীঘি ও খামার/ চায় সোনা-জ্বালা খনি। চায় স্থিতি অবসর!... চোখে আজ কুরুক্ষেত্র, কানে তার মত্ত পদধ্বনি,/ ক্ষমা কোরো অতিক্রান্ত জীর্ণ অসুয়ারে।/ ব্যর্থ ধনঞ্জয় আজ, হে ভদ্রা আমার!/ হে সঞ্চয়, ব্যর্থ আজ গাণ্ডীব অক্ষয়॥ (পদধ্বনি/ পূর্বলেখ) সমালোচক দীপ্তি ত্রিপাঠি এ প্রসঙ্গে বলেন- ‘পদধ্বনিতে বিষ্ণু দে অর্জুনের প্রতীকে আসন্ন বিপ্লবের সম্মুখীন বুর্জোয়ার ক্লৈব্যের ছবি এঁকেছেন। পদধ্বনি এখানে তাই শোষিত সমষ্টির সামাজিক বিপ্লবেরই পদধ্বনি।’অর্থাৎ, বিষ্ণু দে’র কবিতায় আমরা যে মিথের ব্যবহার দেখতে পাই তাতেও মার্কসবাদের ছোঁয়া রয়েছে। এভাবে বিষ্ণু দে ঢুকে পড়েন সাংগঠনিক কাঠামোতে। একসময়ে সংগঠন বনাম সাহিত্য- এরকম দ্বন্দ্বে ভোগেন। অবশ্য তিনি সাহিত্যকেই বেছে নিয়েছিলেন। এক সময়ে মানিক বন্দোপাধ্যায়দের সাথে তাত্ত্বিক তর্কেও লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু যেহেতু তিনি মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ, তাই চেতনাবিচ্যুত হননি। পরবর্তীতে আমরা দেখি আরও অনেকে মে দিবস বা শ্রমিকদের শোষণমুক্তির জন্য কলম ধরেছেন। যেমন- দিনেশ দাস, মল্লিকা সেনগুপ্ত বা এখনও অনেকে লিখে চলেছেন। কিন্তু মে দিবসের প্রথম কবিতা রচয়িতা হিসেবে বিষ্ণু দে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মিলন মাহমুদের কবিতা

তর্জমা করছিশ্রমিকের রক্তে শিরায়, পথের দু পাশে, সেলাই কলে হাড়ের অস্থি মজ্জায়লেগে আছে ধূলিঝড়। এখনও অনাদায়ীমজুরি বেতন ; চল -- চল, তবে আজ মিছিলপ্রিয় পথ। এগুতে হবে -- হাতুড়ি কাস্তে শাবলআর কাঠফাটা আঙুলের করে মার্চ করে তালে তালপা'য়ের শিকল বেজে ওঠে। আজ কেড়ে নিবো নক্ষত্রেরগোলা, ছিনিয়ে নিবো অধিকার। আজ ১লা মে, শ্রমিকের ঘামহউক লাল পতাকার! তর্জমা করছি, নিপীড়িতের নামে ...

জিয়াবুল ইবন এর কবিতা

ফাটল ছিলদেয়ালে বিবেকেএবং রাষ্ট্রেরবুকে রানা প্লাজাধসে পড়ল শ্রমিকেরাজানত নাকতটুকু ফাটলচাইমরে যাওয়ারজন্যে

সাঈদা সানজিদার কবিতা

❀ এখানে রাজপথ জুড়ে ছন্নছাড়া জীবনের ভীড় আর হাওয়ায় ভাসে ক্লান্ত প্রশ্বাস।মরিচিকার সুখের খোঁজে বোকা মানুষের ছুটে চলার অস্থিরতা। মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে রোজ স্বপ্ন ওড়ায় আকাশে,অবসন্ন দিনের শেষে বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায় অগণিত স্বপ্ন। জীবন ছেড়ে পালাতে না পারার তীব্র আয়োজনে,কান্ত দেহে, ভাঙা মনে, বোকা মানুষেরা তবুও রোজ স্বপ্ন সাজায়।

নকিব মুকশির কবিতা

জুতা ক্ষয় হলে গেলেপা কঙ্কর বা কাঁটায় রক্তাক্ত হয়,জীবনবাগানে নেমে আসেঅ্যাসিড বৃষ্টির মতোম্যাক্স এনট্রপি, তবু পা যুগলক্ষয় করে যায় নতুন জুতাদের! ফসলি জমিতে অস্ত্রাগার করেপায়েরা খোঁজে কালো রসুন!তা দেখে পাশেই হাসে মাটিহা হা হা… কালো রসুন…হা হা হা… পা এতই বজ্জাত—যে জুতা এত দিন বুক পেতেপাথর, পেরেকের ঘাসহ্য করে এসেছে কেবলপাকে সুরক্ষিত রাখতে, সেইপা-ই আজ তাকেছুড়ে ফেলে দিল ভাগাড়ে!তুলে নিল নতুন জুতাতার বুকে ঘা দিতে দিতেক্ষয় করাতেই তার যেনমহানন্দ, অথচ তাকে ছাড়াএক পা সামনে বাড়ানোর তারকোনো মুরোদ নেই, সত্যি নেই অথচ পা জানে না—ক্ষুদ্র প্রাণী টার্ডিগ্রেট১৪৯ ডিগ্রি তাপও সহনশীল,বেঁচে থাকতে পারেমাইনাস ২৭২ ডিগ্রি ঠান্ডাতেওক্ষুদ্র তো ক্ষুদ্র নয়, ক্ষুদ্র—হেমার্কেট স্কয়ারেওবুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে যায়পৃথিবীকে পাল্টে দেয়ম্যাককরমিকে সমবেত কণ্ঠে এই সব স্পার্ম ব্যাংকমূলত জুতাদের দৌলতেই পূর্ণখোজাদের দুনিয়া গড়ে দেয়পাল্টে যায় পৃথিবীর মানবেতিহাসতবু নিয়তি এমন—জুতারা দিন শেষে বুক ফুলিয়েসমবেত হয় পায়ের সাম্রাজ্যটিকিয়ে রাখতেইএরই নাম পৌনঃপুনিক নিয়তি…

আসমা চৌধুরীর কবিতা

তামাক পাতার মতো আমাকে দেখএক অপার নেশা, ঘাম, রক্তের জলচেয়ে থাকি, খুঁজি শস্যের কিনারা। একটি হাতুড়ি পেলে লুকাই নিজের বেদনাপাথরে পাথর ঘষি আছে কিছু অনাবাদি মুখপরস্পরকে বলি, খুলে নাও রঙিন ইজেরএসো নতুন পৃথিবী গড়ি, বিশ্বাস হইশ্রম ছাড়া যেন নেই আর কোনো আশ্রয়তোমার- আমার ঠিকানা...

সাহিত্যের পথেই আমি আমার নিজেকে খুঁজে পাই : শাম্মী তুলতুল

সাহিত্যিক না হয়ে জন্মানো যায় না—এই বিশ্বাস নিয়েই যাঁরা লেখালেখিকে জীবনের অংশ করে তোলেন, তাঁদের মধ্যে একজন শাম্মী তুলতুল। তিনি শুধু একজন লেখক নন; একইসঙ্গে কবি, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, উপন্যাসিক এবং একজন সচেতন সমাজকর্মী। তাঁর কলমে উঠে আসে সমাজের অসঙ্গতি, ইতিহাসের আলো-আঁধারি, শিশুমনের নির্ভেজাল কল্পনা এবং নারীর মুক্তির কথা। পেয়েছেন বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং পাঠকের নিরন্তর ভালোবাসা। সম্প্রতি ঢাকা ওয়াচের মুখোমুখি হন এই লেখক। তিনি বলেন তার লেখালেখির যাত্রা, পারিবারিক অনুপ্রেরণা, সাহিত্যভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে। ঢাকা ওয়াচ: ঢাকা ওয়াচে আপনাকে স্বাগতম। প্রথমেই জানতে চাইবো—লেখালেখির প্রতি আগ্রহ কীভাবে শুরু হলো? শাম্মী তুলতুল: ছোটবেলায় খুব চঞ্চল ছিলাম। স্কুলে নাচ, গান, আবৃত্তি করতাম। নিজের লেখা ছড়া আবৃত্তি করে পুরস্কারও পেয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা এসেছিল দাদুর কাছ থেকে। তিনিও একজন লেখক ছিলেন। তাঁর লেখা যখন পত্রিকায় ছাপা হতো, দেখে আমার ভেতরেও লেখার ইচ্ছা জাগে। ক্লাস থ্রিতে প্রথম ছড়া লিখি। এরপর পত্রিকায় লেখা পাঠানো, ছাপা হওয়া—আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ঢাকা ওয়াচ: আপনি একাধিক পরিচয়ে পরিচিত। লেখক, কবি, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, উপন্যাসিক—এর মধ্যে কোন পরিচয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব করে বলে মনে করেন? শাম্মী তুলতুল: একজন লেখক সব ধারাতেই বিচরণ করেন। তাই আমার কাছে সবগুলো পরিচয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা ওয়াচ: পরিবারের সাহিত্যিক ঐতিহ্য আপনার লেখালেখির যাত্রায় কতটা প্রভাব ফেলেছে? শাম্মী তুলতুল: অতুলনীয় প্রভাব। আমার দাদা ও নানু দুজনেই লেখক ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকেই সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা পেয়েছি। ঢাকা ওয়াচ: ‘একজন কুদ্দুস ও কবি নজরুল’ উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত কোনটি ছিল? শাম্মী তুলতুল:কবি নজরুল ও আমার দাদু কুদ্দুস মাস্টারের বিদায়ের দৃশ্যটি লেখার সময় খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। দাদুর মুখে বারবার শুনেছি এই গল্প, আর লিখতে গিয়ে নিজের চোখে জল এসে গিয়েছিল। দাদু একবার কবিকে স্বপ্নেও দেখেছিলেন। ঢাকা ওয়াচ: আপনার লেখায় যে সামাজিক বার্তা থাকে, সেটা কীভাবে পরিকল্পনা করেন? শাম্মী তুলতুল:লেখা আমার প্রতিবাদের মাধ্যম। ভাবি, আমি যদি একটা মানুষের চিন্তা বদলাতেও পারি, সেটাই বড় কিছু। অনেকেই নিজের পরিবর্তনের কথা আমাকে জানিয়েছেন। ঢাকা ওয়াচ: সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে আপনি বারবার লেখেন। আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে জরুরি পরিবর্তন কোনটি? শাম্মী তুলতুল: মানুষ যেন নিরাপদ বোধ করে, হয়রানির শিকার না হয়। আর ধর্ষণের মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে যেন দ্রুত শাস্তি হয়। এটাই এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন। ঢাকা ওয়াচ: দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ নিয়ে আপনার ভাবনা লেখায় কীভাবে প্রতিফলিত হয়? শাম্মী তুলতুল:আমি সরাসরি না লিখে সূক্ষ্মভাবে বার্তা দিই। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে লিখি ঘৃণাভরে। যারা সৎ, তারা আমাকে উৎসাহ দেন, আর অন্যরা সমালোচনা করেই যায়। ঢাকা ওয়াচ: শিশুদের জন্য লেখার সময় আপনি শিক্ষামূলক দিকগুলো কীভাবে তুলে ধরেন? শাম্মী তুলতুল: আমার নিজের শৈশব, কল্পনাশক্তি আর চারপাশের বাস্তবতা থেকেই উপাদান নিই। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি শিশুই আলাদা, তারা কারও মতো হয় না। সেই বিশ্বাসই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করি। ঢাকা ওয়াচ: আপনার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় পুরস্কার কোনটি? শাম্মী তুলতুল: সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে আবেগের পুরস্কার ছিল রত্নগর্ভা সম্মাননা, যা আমার মা পেয়েছিলেন এবং আমি তাঁর হাতে তুলে দিই। সেটিই আমার জীবনের গর্বের মুহূর্ত। ঢাকা ওয়াচ: আন্তর্জাতিক পাঠকদের প্রতিক্রিয়া কেমন পান? শাম্মী তুলতুল: আলহামদুলিল্লাহ, দারুণ সাড়া পাই। বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠকের চিঠি ও বার্তা আসে। তারা ভালোবাসে বলেই আমি আরও উৎসাহ পাই। ঢাকা ওয়াচ: বেগম রোকেয়া চরিত্রে মডেলিং করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? শাম্মী তুলতুল: বেগম রোকেয়া নারীর মুক্তির জন্য যে আলো জ্বালিয়েছিলেন, আমি সেই আলোকে ধারণ করি। ২০১৪ সালে লেখালেখির জন্য বেগম রোকেয়া পুরস্কার পেয়েছিলাম। অনেকেই আমাকে রোকেয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ামাত্র রাজি হয়ে যাই। ঢাকা ওয়াচ: ‘পিঁপড়ে ও হাতির যুদ্ধ’ নাটকটি কেমন সাড়া ফেলেছিল? শাম্মী তুলতুল: অসাধারণ সাড়া পেয়েছিলাম। বিশেষ করে শিশুরা দারুণ উপভোগ করেছে। নাটক দেখে অনেকেই বইয়ের খোঁজ করেছিলেন। এটি বইমেলার বেস্টসেলার ছিল। ঢাকা ওয়াচ: আপনার ভবিষ্যৎ সাহিত্য পরিকল্পনা কী? শাম্মী তুলতুল: যতদিন বাঁচব, লিখে যাব। অনেকগুলো বইয়ের কাজ হাতে আছে। সময়মতো পাঠকদের জানাব। ঢাকা ওয়াচ: আপনি কীভাবে চান মানুষ আপনাকে মনে রাখুক? শাম্মী তুলতুল:লেখক হিসেবেই। আমার মন, প্রাণ, আত্মা—সব সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত। তাই আমি চাই, মানুষ আমাকে একজন কথাসাহিত্যিক ও লেখক হিসেবেই মনে রাখুক। ঢাকা ওয়াচ: তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে? শাম্মী তুলতুল: প্রথমে খাতায় হাতে লিখে চর্চা করুন। তারপর পত্রিকায় লেখা পাঠান। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আর সবসময় মৌলিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। ঢাকা ওয়াচ: এখন অনেকেই লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, বিশেষ করে অভিনেতা, গায়ক বা কনটেন্ট ক্রিয়েটররাও। আপনি কীভাবে দেখেন এই প্রবণতা? শাম্মী তুলতুল: লেখক হওয়া সহজ নয়। নিজের ধারা ও মৌলিকতা ধরে রাখতে হয়। একজন গায়িকা বা অভিনেত্রীর কাজ একসময় কমে যেতে পারে, কিন্তু একজন প্রকৃত লেখকের কলম সারা বছর চলে।

কবিতা: রঙিন বৃন্ত  ।। উম্মে সালমা চৌধুরী

পৃথিবী হঠাৎ থমকে গেছেএকটি বৃন্তে এসে।ধূসর আকাশ, স্থবির বাতাস।। উড়ে না পাখি ডানা মেলে আর,প্রজাপতি ছোঁয় না ফুল।ঘাটে বাধাঁ তরী হবে না পারাপারহবে না আর কোন পাল তোলা গান। অতঃপরএলো কালবৈশাখী ঝড়বজ্রে গর্জে পৃথিবী। সেই ফুলের বৃন্ত কাঁপিয়া উঠিলপ্রবল বাতাস বেগে,বজ্র বিদ্যুৎ বাজে মেঘে মেঘে।। কতশত পাখি ডানা ঝাঁপটেপাল করে করে উড়ে আকাশে।আর প্রজাপতি ছুঁটে যায় রঙিন ফুলের তরে।।পাল তুলে নৌকা হয় পারাপার, নতুন কোন গানে।। এমনই করিয়া রাঙিলো পৃথিবীসেই বৃন্তে ফুটিলো রঙিন ফুল।। কবি: সংস্কৃতিকর্মী, চট্টগ্রাম

কবি দাউদ হায়দারের নির্বাসিত জীবনের চিরমুক্তি

‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’—বাংলা কবিতার এ বিখ্যাত পংক্তির রচয়িতা, নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার জীবনের সীমানা পেরিয়ে চলে গেলেন চিরনির্বাসনে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে জার্মানির বার্লিনের একটি বয়স্ক নিরাময় কেন্দ্রে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও দাউদ হায়দারের ভাতিজি শাওন্তী হায়দার জানান, স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২০ মিনিটে কবির মৃত্যু হয়। বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলায় জন্ম নেওয়া দাউদ হায়দার একাধারে কবি, লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি হিসেবে তার পরিচিতি। সত্তর দশকের শুরুতে ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’। ১৯৭৩ সালে দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ কবিতায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ ওঠে। এর জেরে ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় দুই মাস কারাভোগের পর মুক্তি দেওয়া হলেও, নিরাপত্তার অভাবে ২১ মে ভোরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। নিজের লেখায় দাউদ হায়দার লিখেছিলেন, নির্বাসনের সময় তার কাছে ছিল মাত্র ৬০ পয়সা, একটি ব্যাগে কয়েকটি পোশাক, স্লিপার, একটি টুথব্রাশ এবং কবিতার বই। কলকাতায় কয়েক বছর কাটানোর পর, ভারত সরকারও তাকে বহিষ্কার করে। এরপর জার্মান সাহিত্যিক ও নোবেল বিজয়ী গুন্টার গ্রাসের সহায়তায় ১৯৮৭ সালে জার্মানিতে আশ্রয় নেন তিনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গত বছর ডিসেম্বরে বার্লিনের বাসায় সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। এরপর হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যদিও পরে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন, কিন্তু আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। চিরকুমার দাউদ হায়দার বার্লিনেই ছিলেন নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে। ১৯৭৩ সালে লন্ডন সোসাইটি ফর পোয়েট্রি তার একটি কবিতাকে ‘দ্য বেস্ট পোয়েম অব এশিয়া’ সম্মানে ভূষিত করেছিল।

কবিতা: সখি তুমি কার?  । আবদুল হান্নান চৌধুরী

এ কেমন চরিত্র তোমার সখিবুঝি না আমি কিছুই যার,যখন যার কাছে যাও তুমিহয়ে যাও তখন তুমি তার। শিক্ষকের হাতে যখন তুমিজ্ঞান বিলাও অবারিত,তোমার হাত ধরে জ্ঞানালয়হয় জনে জনে মুখরিত। সৎ বিচারকের হাতে তুমি যখনবিচার তখন হয়ে যায় খাস,কিন্তু আবার অসতের হাতে পড়েঅপরাধী পেয়ে যায় খালাস। বিচারালয়ে কখনো কখনোমজলুমের মুখে ফোটে হাসি,অসতের হাতে পড়ে কেউ আবারপরে গলায় ফাঁসির রশি। তুমি যাও যখন মন্ত্রীর হাতেহয় কোটি টাকার দুর্নীতি,দেশের সম্পদ লুটে যায় সববিলুপ্ত হয়ে যায় সুনীতি। অফিস আদালত সবখানেতেতোমার বিচরণ অবারিত,খারাপের পাল্লায় পড়ে তখনতুমি হয়ে যাও বিসর্জিত। সৎ মানুষের সাথে যখনহয় তোমার যাত্রা,পৃথিবীটা তখন সুন্দর হয়ে যায়ফিরে পায় এক নতুন মাত্রা।

পেনসিলভানিয়ার সম্মানজনক সংকলনে কবি বদরুজ্জামান আলমগীর

এপ্রিল মাস- কবিতার মাস। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এপ্রিলকে ‘ন্যাশনাল পোয়েট্রি মান্থ’ বা জাতীয় কবিতা মাস হিসেবে উদযাপন করা হয়। কবিতার প্রতি ভালোবাসা, শব্দের জাদু ও মানবিক অনুভবের প্রকাশকে সম্মান জানিয়ে এ উপলক্ষে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য আয়োজন করে নানা সাহিত্যিক কর্মসূচির। এরই অংশ হিসেবে প্রকাশ পায় অঙ্গরাজ্যভিত্তিক সম্মানজনক কবিতা সংকলন, যেখানে স্থান পান স্থানীয় ও খ্যাতিমান কবিরা। চলতি বছর পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যও তাদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এক বিশেষ সংকলন প্রকাশ করেছে, যার আয়োজন করে রাজ্যের প্রখ্যাত সাহিত্য সংস্থা বার্ড। এই সংকলনে স্থান পেয়েছেন গুণী কবি বদরুজ্জামান আলমগীর। গভীর অনুভব, জীবনদর্শন ও অন্তর্দৃষ্টিময় লেখনীর জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাঠকসমাজে প্রশংসিত। তাঁর অন্তর্ভেদী কবিতা স্থান পেয়েছে এ মর্যাদাপূর্ণ সংকলনে- যা প্রবাসে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রেও এক গৌরবজনক সংযোজন। সংকলনে অন্তর্ভুক্ত বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা ‘ব্লাইন্ড স্পট’ আধুনিক জীবনের প্রচলিত কাঠামোর বাইরে থাকা সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোর প্রতিচ্ছবি। কবিতায় ফুটে উঠেছে- কৃত্রিম ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা না পড়া ভালোবাসা, স্মৃতি ও পারিবারিক আবেগের এক অদৃশ্য জগৎ। কবির ভাষায়, ‘আমার বাবার অনুভূতি, মায়ের ভালোবাসা- এসব কখনো ক্যামেরাবন্দি হয়নি। এইখানেই আমার সংযোগ সেই ‘ব্লাইন্ড স্পট’-এর সঙ্গে।’তিনি আরও লেখেন, ‘আমার সামনে দাঁড়ায় আমার ছেলে, আমার কন্যাও। জানি তাদের মাঝেও এক ব্লাইন্ড স্পট লুকিয়ে থাকে।’এই কবিতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- প্রযুক্তিনির্ভর চিত্রায়নের যুগেও মানবিক অনুভূতির গভীরতা অনুপম এবং অনেক সময়েই দৃষ্টির অগোচর। বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা শুধু প্রবাসী সাহিত্যপ্রেমীদের নয়, বরং বিশ্বব্যাপী পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম। তাঁর এই সাফল্য আমাদের সকলের গর্ব। বার্ড সাহিত্য সংস্থার এ উদ্যোগ যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি এর মাধ্যমে বাংলা কবিতা চর্চার ক্ষেত্রেও এক নতুন মাত্রা যুক্ত হল। পেনসিলভেনিয়াতে বসবাসরত বাংলা ভাষার শক্তিমান লেখক বদরুজ্জামান আলমগীর বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য কণ্ঠস্বর। যিনি দীর্ঘ দিন ধরে লিখে চলেছেন জীবন, সময় ও সম্পর্কের অনির্বচনীয় অনুভূতিগুলো নিয়ে। প্রবাসে থেকেও তিনি বাংলা ভাষা ও আবেগকে ধারণ করেন গভীরভাবে। তাঁর লেখায় ফুটে ওঠে সমকালীন সমাজ, প্রযুক্তির প্রভাব এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কের গভীর সংকেত। তিনি সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে নতুন প্রজন্মকে সাহিত্যের জগতে উৎসাহিত করে চলেছেন। তাঁর কবিতা পাঠককে শুধু ভাবায় না, প্রশ্ন তোলে এবং হৃদয়ের গভীরে এক নীরব আলোড়ন সৃষ্টি করে।

নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক মারিও বার্গাস য়োসার প্রয়াণ

বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণ আর কাব্যিক গদ্যের জাদুতে পাঁচ দশকের বেশি সময় পাঠকদের মুগ্ধ করে রেখে চিরবিদায় নিলেন পেরুর নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক মারিও বার্গাস য়োসা। ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার’, ‘ডেথ ইন দ্য আন্দিজ’ এবং ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মত সাহিত্যকর্মের স্রষ্টা বার্গাস য়োসাকে বিবেচনা করা হয় ২০ শতকের লাতিন আমেরিকান সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে। ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ী এই লেখকের বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তার ছেলে, খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলভারো বার্গাস য়োসা এক এক্স পোস্টে জানান, রোববার পেরুর রাজধানী লিমায় পরিবারের সান্নিধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ বিদায় নেন তার বাবা। মারিও বার্গাস য়োসার তিন সন্তান জানিয়েছেন, পারিবারিকভাবেই তারা বাবার শেষকৃত্য সারবেন, কোনো নাগরিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে না।

কবিতা: বৈশাখ  । মো. গনি মিয়া বাবুল

বৈশাখ মিশে আছে হৃদয়ে অন্তরেবাঙালির সুখে-দুঃখে চেতনা জুড়ে,জীর্ণতা ছেড়ে নতুনের কেতন উড়িয়েঅতীতের পঙ্কিলতাকে ধুয়ে-মুছে,নতুন বার্তা নিয়ে বৈশাখ আসেনব নব উদ্দীপনায় মানুষের কাছে। ঝড় বৃষ্টি দূরন্ত মেঘমালাপুতুল নাচ সার্কাস নাগরদোলা,গ্রাম গ্রামান্তরে বৈশাখী মেলাধর্মবর্ণের পরিচয় ভুলে একত্রে চলা। বৈশাখ কৃষ্টি সংস্কৃতি ইতিহাসের পাতাবাঙালির উৎসাহ প্রেরণা শুভ হালখাতা,ধর্ম নিরপেক্ষতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মানুষে মানুষে একতা। সংস্কৃতিতে বোনের স্নেহ মায়ের মমতাভেদাভেদ ভুলে ধনী গরীবের সমতা,বৈশাখ বাঙালির কাছে চির সুখেরঅতি আপন অমলিন সকল মানুষের। লেখক: শিক্ষক, কবি,লেখক, প্রাবন্ধিক ও সমাজসেবকসভাপতি, কবি সংসদ বাংলাদেশচেয়ারম্যান, লেখক উন্নয়ন কেন্দ্র

কবিতা: বৈশাখী শুভেচ্ছা  । সাজ্জাদ হোসেন

কি আর দেব নববর্ষের শুভেচ্ছা?লক্ষ প্রাণ দিয়েও গচ্চা-বাঙালি জাতি হলো না সাচ্চা।হারিয়েছি মাসি পিসির কেচ্ছাবাংলা সন তারিখ বলতেও অনিচ্ছা,আমাদের মানসিকায় হাজার সমস্যাকি আর দেব নববর্ষের শুভেচ্ছা? শখের চোর লুটেছে পুঁইশাক-কেমনে খাবো বৈশাখী শাক ভাত?গরীবের নুন পান্তা জুটোতে মরণ,কেমনে হবে বৈশাখ বরণ?একে অন্যের ধন-মান করি হরণ,সন্তানহারা মায়ের বুকে রক্ত ক্ষরণ-পুথিপাঁজি কেউ রাখে না স্মরণ। সংসার ঘানিতে বহে নাভিশ্বাসকি দিয়ে করব বৈশাখী উৎসব?নালিশে নেই সালিশ-ঘুমে নেই বালিশ,কি দিয়ে কিনব হাজার টাকায় ইলিশ?গরীবের পেট আবার রাক্ষুসী খামার,সারাদিন চাই গামলা গামলা খাবার,আজ আমার প্রাণের বৈশাখ-মজা করে খাবো মায়ের হাতের শাক ভাত।

কবিতা: দুর্বোধ্য ।। উম্মে সালমা চৌধুরী

জীবন, কী নিদারুণ দুর্বোধ্য!প্রতিনিয়ত বক্ররেখায় চলমান।বুঝিবার আগেই ঊর্ধে উঠিয়া যায়, ফের নিম্নে ধাবিত হয়।জীবন যেন নিজেইতাহার পান্ডুলিপি লিখে যায়।। যেথা সুন্দর কুৎসিত এক মুদ্রারএপিঠ ওপিঠে রয়,এমন মুদ্রা ভয় পাই তাইকরিতে সঞ্চয়।কেমনে বুঝিবো খাঁটি মুদ্রা, কেমনে করিবো পরখ? জীবন কভু রঙিন সকাল, কখনো আঁধার রাত্রি,জীবনের পথে হেঁটে চলাতে কেবল নিজেই নিজের সঙ্গী।। কবি: সংস্কৃতিকর্মী, চট্টগ্রাম

এবার বইমেলায় মোট প্রকাশ হলো ৩ হাজার ২৯৯ নতুন বই

শেষ হলো এবারের অমর একুশে বইমেলা। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অনাড়ম্বর এক সমাপনী অনুষ্ঠানে পর্দা নেমেছে এবারের এই মেলার। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার ৩৩৫টি নতুন বইসহ এবার ২৮ দিনে এসেছে মোট ৩ হাজার ২৯৯টি নতুন বই। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটি সদস্যসচিব সরকার আমিন বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানের এ তথ্য জানান। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সরকার আমিন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্ব) মফিদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি শিমুল পারভীন ইতি, গবেষক আবদুল আলীম, গবেষক এম এ মোনায়েম এবং কবি মঈন মুনতাসীর। এসময় মোহাম্মদ আজম বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ৫২’র ভাষা আন্দোলন। এই ঘটনা স্মরণ করেই আমরা প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজন করি। আগামী দিনগুলোতে মেলাকে কীভাবে আরও সুন্দর করা যায় সে বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করতে হবে। সদস্যসচিব তার প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ সব প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। বাংলা একাডেমি ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনে ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই বিক্রি করেছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ২৪এর অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কিছু অস্থিরতা সত্ত্বেও এ বছর আমরা ‘অমর একুশে বইমেলা’আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতে বইমেলাকে নতুন আঙ্গিকে নতুন মাত্রায় আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাংলা একাডেমিকে নতুন চিন্তাচেতনার ধারক একটি গতিশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। বইমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথা প্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (প্লেটো : জীবন ও দর্শন-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ঐতিহ্য (ভাষা শহীদ আবুল বরকত: নেপথ্য-কথা- বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথা প্রকাশকে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবন স্বপ্ন-সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার : ২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাকাতুয়াকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়।

সাজেদুর আবেদীন শান্তর কবিতার বই ‘ঈশ্বর ও হেমলক’

অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি সাজেদুর আবেদীন শান্তর তৃতীয় কবিতার বই ‘ঈশ্বর ও হেমলক’। বইটি প্রকাশ করছে উন্মেষ প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন আর করিম। এ কবিতার বইয়ে প্রকাশ পেয়েছে প্রেম, পরিণতি, বিরহ ও হতাশার কবিতা। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। সাজেদুর আবেদীন শান্তর বিগত বইগুলো এক ফর্মার। ফলে তিনি এক ফর্মার কবি হিসেবে পরিচিত। সাজেদুর আবেদীন শান্ত একাধারে কবি, সম্পাদক ও গণমাধ্যমকর্মী। শৈশবে স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কবিতা, গল্প, ফিচার ও কলাম লেখেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘আষাঢ়, তুই এবং মৃত্যু’ (২০২১) ও ‘স্নিগ্ধ ভোর অথবা মৃত্যু’ (২০২২)। এছাড়া তিনি নিয়মিত সম্পাদনা করেন শিল্প-সাহিত্যের সাময়িকী ‘উন্মেষ’। তিনি ফিচার সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০২২ সালে ‘প্রভাতের আলো তরুণ সংঘ সম্মাননা’ লাভ করেন। বইটি সম্পর্কে সাজেদুর আবেদীন শান্ত বলেন, ‘গত দুটি বইয়ে ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। অনেকে বই দুটি পড়ে আলোচনা করেছেন। সেই সাহস নিয়ে তৃতীয় বই করা। আশা করি এটিও পাঠক নন্দিত হবে।’