
কোন পথে এগোচ্ছে ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক
ভারত ও ইসরায়েল একটি বহুল আলোচিত বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (Investment Protection Agreement – IPA) চূড়ান্ত করার পথে এগোচ্ছে। যদিও দুই দেশ এটিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি ধাপ হিসেবে তুলে ধরছে, তবুও বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা এর আড়ালে গুরুতর রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিপদের আশঙ্কা করছেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস করতে একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির ফলে শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নয়, বরং ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ দমননীতি আন্তর্জাতিক বৈধতা পেতে পারে। বোস্টনভিত্তিক এক ভারতীয়-আমেরিকান সমাজকর্মী মিডলইস্ট আইকে বলেন, এই চুক্তি উভয় দেশের দমনমূলক ও ফ্যাসিবাদী নীতিকে দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। তিনি একে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক কৌশলগত পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেন। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই চুক্তিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং ভারতকে “সত্যিকারের মিত্র” বলে আখ্যা দিয়েছেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও চুক্তির প্রতি জোরালো সমর্থন পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষক ও ফিলিস্তিনি লেখক আবদুল্লাহ মোয়াসওয়েসের মতে, ভারত সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে। বিজেপির ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ভাবনা এবং ইসরায়েলের জায়নবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। গাজা যুদ্ধ ও ভারতের অবস্থানগাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে জাতিসংঘে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা ভারতের অবস্থানকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন দেশটির নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব পিপলস মুভমেন্টস–এর সমন্বয়ক মীরা সংঘমিত্র এই পদক্ষেপকে “লজ্জাজনক” বলে অভিহিত করে বলেন, দিল্লির উচিত যুদ্ধাপরাধের জন্য নেতানিয়াহুর জবাবদিহি চাওয়া, বিনিয়োগ চুক্তি নয়। অর্থনৈতিক চাপ ও কৌশলগত উদ্দেশ্যমধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের অর্থনীতি চাপে পড়েছে। ২০২৪ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেলেও সামরিক ব্যয় বেড়েছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে হাইফা বন্দরে মেরস্ক কোম্পানি তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে, যা ভারতের আদানি গ্রুপকেও প্রভাবিত করেছে। উল্লেখ্য, হাইফা বন্দর ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডরের অংশ হওয়ায় এই সম্পর্ক দুই দেশের কৌশলগত গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। অস্ত্র বাণিজ্য ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ লক্ষ্যভারত বহু বছর ধরে ইসরায়েল থেকে অস্ত্র আমদানি করে আসছে এবং বর্তমানে ইসরায়েলের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা। পাশাপাশি, ভারত ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে দেশীয় অস্ত্র উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মোয়াসওয়েস বলেন, এই IPA আসলে সেই দীর্ঘমেয়াদি কৌশলেরই একটি অংশ, যেখানে দুই দেশ পারস্পরিক নির্ভরশীলতার দিকে এগোচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দমন ও বিক্ষোভ দমনসমালোচকদের মতে, ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক এখন শুধু অর্থনীতি ও কূটনীতিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি আদর্শিক সহযোগিতায় রূপ নিচ্ছে। দিল্লিতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের দমন-পীড়নের ঘটনাও এই সমীকরণকে আরও স্পষ্ট করে। বিশ্লেষকদের ভাষায়, এই সম্পর্ক বিশ্ব সামরিক-শিল্প কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে, যেখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও জবাবদিহির জায়গা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।

পানি নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজায় পানি নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলায় শিশুসহ ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির মিডিয়া অফিস। তারা বলছে, ‘পরিকল্পিত তৃষ্ণা যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব হামলা চালিয়েছে। খবর আল জাজিরার। এক বিবৃতিতে মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ১১২টি মিষ্টি জলের ভরাট কেন্দ্র এবং ৭২০টি জলকূপ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এর ফলে ১২.৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে কতদিনে এই সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে সে তথ্য জানায়নি সংবাদমাধ্যমটি। আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, গাজা জুড়ে ভয়াবহ পানি সংকট চলছে। উপত্যকায় যে পানি পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগই দূষিত ও লবণাক্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই দূষিত-লবণাক্ত পানি নিতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন গাজার বাসিন্দারা। গত কয়েক মাসে অন্তত দশবার সরাসরি আক্রমণের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে মধ্য গাজায় একটি পানি সংগ্রহ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। এছাড়া গাজার বিভিন্ন স্থানে শনিবার ও রোববার পৃথক ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২০২ জনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার গাজা সিটির বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও শরণার্থীশিবিরে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুধু গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫২ জন। এর মধ্যে, নুসেইরাহ শরণার্থীশিবিরে পানি বিতরণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে চালানো হামলায় নিহত হন ১০ জন এবং আহত হন অন্তত ১৬ জন। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে কমপক্ষে ৬৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গাজাকে কার্যত অবরোধই করে রেখেছে ইসরায়েলি প্রশাসন। ত্রাণ সহায়তার নামে প্রতিদিন মানুষ মারছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ভারত-চীনের সম্পর্কে উন্নতির দাবি জয়শঙ্করের
গালওয়ান উপত্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর প্রথমবারের মতো চীন সফর করলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে অংশ নিতে তিনি বেইজিং পৌঁছান। সফরের অংশ হিসেবে সোমবার চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি হান ঝেংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জয়শঙ্কর। বৈঠক শেষে হান ঝেং জানান, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের সময় এখনই। আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এই বৈঠকটি ২০২৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বৈঠকের পর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে জয়শঙ্কর বলেন, “চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি হান ঝেংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল। ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নতির পথে এগোচ্ছে। আশা করি, এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক যোগাযোগ আরও বাড়াবে।” জয়শঙ্কর আরও বলেন, জটিল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীন একে অপরের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বিনিময় করাটা খুবই জরুরি। পাশাপাশি, তিনি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের প্রতি ভারতের অবিচল সমর্থনের কথাও জানান। দীর্ঘদিন পর উচ্চ পর্যায়ের এই সরাসরি কূটনৈতিক যোগাযোগকে ভারত-চীন সম্পর্কের বরফ গলানোর একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে গালওয়ানের সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকের তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।

পুতিন সুন্দর কথা বলেন কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায় বোমা মারেন: ট্রাম্প
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পুতিন ‘সুন্দর করে কথা বলেন, কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায় অন্য দেশের ওপর বোমা ফেলেন’। এ কারণেই ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশটিতে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ইউক্রেনকে আরো কার্যকর সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন। প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম ইউক্রেনে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তিনি নির্দিষ্ট কতগুলো পাঠানো হবে তা জানাননি। তবে ট্রাম্প দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ব্যয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বহন করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু তা সফল হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন পুতিনের দিকে ইঙ্গিত করে। এ ব্যর্থতাই ট্রাম্পকে ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী সামরিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। রবিবার ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “ইউক্রেনের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র খুব প্রয়োজন। পুতিন এমনভাবে কাজ করছেন, যা অনেককেই বিস্মিত করেছে। তিনি দিনের বেলায় বন্ধুত্বের কথা বলেন, কিন্তু সন্ধ্যায় হামলা চালান। এটা আমার পছন্দ নয়।” ট্রাম্প আরও জানান, ইউক্রেনকে শুধু প্যাট্রিয়ট নয়, বরং আরও বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করা হবে। তবে এসব সরঞ্জামের খরচ ইউক্রেনের মিত্ররাই পরিশোধ করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুবিধাজনক হবে বলে তিনি মনে করেন। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেন পরিস্থিতি এবং নেটোর ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে চলতি সপ্তাহেই তিনি নেটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এক সপ্তাহের মধ্যে গাজা চুক্তির আশা করছেন ট্রাম্প
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময় চুক্তির বিষয়ে চলমান আলোচনায় শিগগিরই অগ্রগতি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আশা করছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই এ আলোচনা ইতিবাচক মোড় নিতে পারে। তবে আলোচনার অগ্রগতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু—এমনটাই দাবি করছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। টাইমস অফ ইসরায়েলের বরাতে জানা গেছে, গত চারদিন ধরে আলোচনায় গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ইস্যুতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আরব বিশ্বের একজন শীর্ষ কূটনীতিক এবং মধ্যস্থতাকারী সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আশাবাদী হলেও নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ বিষয়টিকে জটিল করে তুলছে। সূত্র বলছে, চলতি বছরের ২৭ জুলাই থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটের অধিবেশন চলবে। এই সময়ের মধ্যে সংসদ ভাঙা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, তাই নেতানিয়াহু এই সময়ের আগেই বড় অগ্রগতি চান না। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধ শেষ হলে রাজনৈতিক বিরোধিতা বাড়তে পারে এবং এতে তার সরকার টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠবে। বিশেষ করে তার জোটের অতি-ডানপন্থী অংশ হামাসকে গাজা শাসনে রাখার বিপক্ষে কড়া অবস্থানে রয়েছে। এদিকে, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন নেতানিয়াহু। বৈঠকে তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাস গাজায় ক্ষমতায় থাকলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। গাজা থেকে হামাসের প্রভাব সম্পূর্ণ বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলেও জানান তিনি।

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতায় নিহত ছাড়াল ৫৮ হাজারে
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে প্রাণহানি ঘটেছে ৫৮ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশু। বাদ যায়নি সাংবাদিক, চিকিৎসক, ত্রাণ বিতরণকারী স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার কর্মীরাও। রবিবার (১৩ জুলাই) ভোর থেকে প্রায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে আরও ১শ’ ফিলিস্তিনির। সোমবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এদিন গাজা সিটির জনসমাগম এক বাজারে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে প্রাণ হারায় অন্তত ১২ জন। হামলায় এক স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ।মিসাইল হামলা করা হয় গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে খাবার পানির জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের উপর। যেখানে শিশুসহ মৃত্যু হয় ১০ জনের। অপরদিকে হামাস সদস্যদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া মিসাইল যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেখানে গিয়ে পড়েছে বলে দাবি আইডিএফ’র। উল্লেখ্য, ইসরায়েলের ব্লকেড ও লাগাতার হামলায় গাজায় দেখা দিয়েছে তীব্র জ্বালানি সংকট। হাসপাতাল, যানবাহনসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা চালু রাখতে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে দ্রুত জ্বালানি সরবরাহের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

অপারেশন সিঁদুরের পর ১৪ দেশ ভারতের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছে
চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। এরপর দুই দেশের মধ্যে চারদিনব্যাপী যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি ব্রক্ষ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারত। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেছেন, পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুরের পর ব্রক্ষ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের কদর বেড়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪টি দেশ ভারতের কাছ থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) উত্তর প্রদেশের পিজে কলেছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্র বানু গুপ্তর একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন তিনি। এরপরই অপারেশন সিঁদুর ও ব্রক্ষ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা বলেন রাজনাথ। তিনি জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লখনৌ থেকে রপ্তানি করা হবে। এতে রাজ্যে কর্মসংস্থান বাড়বে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশের উগ্রপন্থী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ব্যাপারে কথা বলেন রাজনাথ। তিনি দাবি করেন, আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশে আইন ও শাসন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ৭ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত হওয়া এ যুদ্ধে ভারত তাদের অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিমান হারায়। যারমধ্যে একটি সর্বাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানও ছিল। এছাড়া দুই দেশেই অনেক মানুষ নিহত হন। সূত্র: ইন্ডিয়ান আওয়াজ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে ২৩ দেশের জোট, যোগ দিল বাংলাদেশও
ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে একত্রিত হয়েছে ২৩টি দেশ। এই নতুন জোটে বাংলাদেশ, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে। আগামী ১৫ ও ১৬ জুলাই কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় একটি জরুরি বৈঠকে বসবে এই দেশগুলো। মূল আলোচ্য বিষয় ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে কী ধরনের কার্যকর কূটনৈতিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও কলম্বিয়া। মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ বৈঠকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সচেতনতা এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক মন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেন, “কোনো রাষ্ট্রই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং প্রতিটি অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, এই জোট আন্তর্জাতিক ন্যায়ের পক্ষে একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চায়। উল্লেখ্য, ইসরায়েলের ২০২৩ সালের গাজা অভিযানকে কেন্দ্র করে এই জোটের ভিত্তি তৈরি হয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, ওই অভিযান চলাকালে ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে। কলম্বিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরিসিও জারামিলো জাসির বলেন, “গণহত্যা বিশ্বব্যাপী মানবিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি। কলম্বিয়া এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কখনো নির্লিপ্ত থাকতে পারে না।” জানুয়ারিতে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে গঠিত হয় এই জোটের সূচনা—যেটি পরিচিত 'হেগ গ্রুপ' নামে। প্রতিষ্ঠাতা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বলিভিয়া, কিউবা, হুন্ডুরাস, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কলম্বিয়া। এইবার বোগোটা সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো হলো—আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, কিউবা, জিবুতি, হুন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, লেবানন, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, ওমান, পর্তুগাল, স্পেন, কাতার, তুরস্ক, সেইন্ট ভিনসেন্ট ও দ্য গ্রিনাডিনেস, উরুগুয়ে এবং ফিলিস্তিন।

এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ইরাক
মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে গত ১৩ জুন একটি আকস্মিক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই হামলায় আমেরিকার অনুমোদন নিয়ে ইরানের ঘুমন্ত জনগণের ওপর আঘাত হানে নেতানিয়াহুর বাহিনী। এই হামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে ফেলে ইসরায়েল, এমনকি অবৈধভাবে ইরাকের আকাশসীমাও ব্যবহার করে, যা নিয়ে চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বাগদাদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ হলেও তা অগ্রাহ্য করে ইসরায়েল হামলা চালায়। ইরাকের আকাশপথ ব্যবহার করায় দেশটির সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ হয়েছে বলেও মনে করছে বাগদাদ। বিবিসি ফার্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শাইইয়া আল-সুদানি বলেন, তার দেশের পক্ষে ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাব দেওয়া সম্ভব হয়নি, কারণ তাদের কাছে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নেই। তিনি জানান, আগেও রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করেছিল ইরাক, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিতে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। আল-সুদানি আরও বলেন, ইসরায়েল যদি মনে করে এই ধরনের হামলা চালিয়ে ইরানে সরকার পরিবর্তন সম্ভব, তবে তারা ভুল করছে। ইরানের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমন সময়ে সরকারবিরোধীরাও দেশের শাসকদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়, যা ইরানের জাতীয় পরিচয়ের শক্ত অংশ। ইতোমধ্যে ইরাক সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির পার্লামেন্টের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান করিম আলিউয়ি আল মোহাম্মাদাউয়ি জানিয়েছেন, আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে বাগদাদ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে। পাশাপাশি কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

হত্যার হুমকি পেয়ে ভয়ে হেলমেটে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে ঘুরছেন যুবক
প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগে মাথায় হেলমেট লাগিয়ে তাতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন ভারতের ইন্দোর শহরের বাসিন্দা সতীশ চৌহান। সম্প্রতি তার এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সতীশ ইন্দোরের হিরানগর থানার গৌরীনগর এলাকার বাসিন্দা। ভিডিওতে তিনি বলেন, তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী বলিরাম চৌহান ও মুন্না চৌহানের সঙ্গে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধে জড়িত। সতীশের দাবি, এই দুই প্রতিবেশী তার সম্পত্তি দখল করতে চান এবং এ নিয়ে প্রতিদিনই তাদের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছে যে, তিনি ও তার পরিবার নিজেদের জীবনের জন্য আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সতীশ আরও অভিযোগ করেন, প্রতিবেশীরা বাড়িতে ঢুকে তাকে ও পরিবারের সদস্যদের মারধর করেছে। এমনকি বাড়িতে আগে থেকে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরাও তারা খুলে নিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের দ্বারস্থ হলেও কোনো সাহায্য পাননি বলে দাবি করেন সতীশ। অভিযোগ, বারবার থানায় গিয়েও পুলিশ তার অভিযোগ নেয়নি বা কোনো নিরাপত্তা দেয়নি। এতসব ব্যর্থতার পর নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে হেলমেটে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছেন ভারতের এই যুবক। তিনি জানান, যেকোনো অনিয়ম বা হামলার ঘটনা প্রমাণ করতে যেন ভিডিও থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা নিয়েছেন। এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে অনুরাগ দ্বারী নামে একজন এই ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘প্রথম দেখায় এই দৃশ্য হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু শুনুন, ইন্দোরে এই মানুষটি আসলে বাধ্য হয়ে মাথায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে ঘুরছেন। কারণ প্রশাসন তাকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’

মিসরে কনসার্ট শুরুর আগেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত মঞ্চ
মিসরের উত্তর উপকূলীয় হাসিয়েন্দা এলাকায় একটি কনসার্ট মঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠান শুরুর আগেই আগুনে পুড়ে যায় পুরো মঞ্চ। স্থানীয় সময় অনুযায়ী কনসার্টের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল। দর্শকদের বসার জন্য সারি সারি চেয়ার বসানো হয় এবং মঞ্চও শিল্পীদের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু দর্শকদের আগমনের আগেই হঠাৎ করে আগুন ধরে যায় মঞ্চে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পুরো মঞ্চ দাউ দাউ করে জ্বলছে। কেউ কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও অধিকাংশ মানুষ নিরাপদে সরে যেতে বাধ্য হন। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে অনেকেই শুধু দূর থেকে তা দেখার বাইরে কিছুই করতে পারেননি। সৌভাগ্যবশত, এই অগ্নিকাণ্ডে কেউ নিহত হননি। তবে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন সামান্য আঘাত পান বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সাদা এল বালাদ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মঞ্চে স্থাপিত একটি সাউন্ড স্পিকারে ত্রুটি থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে তা দ্রুত পুরো ভেন্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আশপাশের এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সক্ষম হন। ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আয়োজকরা বলছেন, পুরো ঘটনায় আরও তদন্ত চালানো হবে। সূত্র: গালফ নিউজ

এবার ইসরায়েলে নেতানিয়াহু সরকারের পতনের ডাক
গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমনটাই বলছেন ইসরায়েলের বিরোধী নেতা ইয়াইর গোলান। শনিবার তিনি স্পষ্টভাবে নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করে বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে এবং দেশকে রক্ষা করতে হলে এই সরকারকে অবিলম্বে বিদায় নিতে হবে।’ গোলান দাবি করেন, মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেই প্রমাণ মিলেছে- নেতানিয়াহু, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখার স্বার্থে বন্দি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাগুলো বারবার নস্যাৎ করেছেন। এক্স (টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা গোলান বলেন, ‘এই চুক্তি বাধাগ্রস্ত করছেন নেতানিয়াহু ও তার উগ্রপন্থি মন্ত্রিসভার সদস্যরা। সেনা ও বন্দিদের জীবন তাদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ নিজেদের মন্ত্রিত্ব ও পদ রক্ষা করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহু, স্মোত্রিচ ও বেন গাভির হলো চরমপন্থি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যারা পুরো দেশকে এক নির্মম নরকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বারবার শান্তি প্রচেষ্টা বানচাল করে এরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার খেলায় মেতেছে।’ গোলানের এই কঠোর মন্তব্য এমন সময় সামনে এলো, যখন নিউইয়র্ক টাইমস তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে জানায়- গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার সিদ্ধান্ত ছিল মূলত রাজনৈতিক। এতে বলা হয়, নেতানিয়াহু এবং তার ডানপন্থি জোটসঙ্গীরা গাজায় যুদ্ধ ও মানবিক সংকট অব্যাহত রেখে নিজেদের ক্ষমতা ও জনসমর্থন ধরে রাখার কৌশল বেছে নিয়েছেন। এদিকে বন্দি বিনিময় চুক্তি দ্রুত কার্যকরের দাবিতে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে শনিবার রাতভর হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধ বন্ধ করে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানান। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ এবং চাপ বাড়ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ অবস্থায়। শনিবার (১২ জুলাই) দক্ষিণ রাফাহ শহরের আল-শাকুশ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের সহায়তা কেন্দ্রে হামলাকে ‘মানব হত্যাযন্ত্র’ ও ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। গাজার চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসের শেষ দিক থেকে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এসব স্থানে ৮০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি। আল-আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খলিল আল-দেগরান বলেন, নিহতদের অধিকাংশের মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মারাত্মক সংকটে আমরা দিশেহারা। এদিন গাজার অন্যান্য এলাকায়ও ইসরায়েলি হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হন। শহরের তুফাহ এলাকায় জাফফা স্ট্রিটে এক বাসায় বোমা হামলায় মারা গেছেন অন্তত চারজন। আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। জাবালিয়ায় দুটি আবাসিক ভবনে হামলায় মারা যান ১৫ জন। শাতি শরণার্থী শিবিরে নিহত হয়েছেন আরও সাতজন। উত্তর গাজার বেইত হানুন এলাকায় একযোগে প্রায় ৫০টি বোমা নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েল জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় তারা গাজায় ২৫০ বার হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে তারা খাদ্য ও মানবিক সহায়তাও ঢুকতে দিচ্ছে না, যদিও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা গাজায় দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গাজায় সরকারি মিডিয়া অফিস শনিবার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে ৬৭ শিশু মারা গেছে। আরও ৬ লাখ ৫০ হাজার শিশুর ওপর তাৎক্ষণিকভাবে চরম অপুষ্টির ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। মিডিয়া অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়, গত তিন দিনে খাদ্য ও ওষুধের অভাবে বহু মৃত্যু হয়েছে। এটি এক চরম নিষ্ঠুর মানবিক বিপর্যয়।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি যুক্তরাজ্যের ৬০ লেবার এমপির
গাজায় ‘জাতিগত নিধন’ বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রায় ৬০ জন ব্রিটিশ লেবার এমপি। শনিবার এ খবর জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। লেবার ফ্রেন্ডস অব ফিলিস্তিন অ্যান্ড দ্য মিডল ইস্ট-এর আয়োজিত চিঠিটি বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে পাঠানো হয়। এতে লেবার পার্টির মধ্যপন্থি ও বামঘরানার ৫৯ জন এমপি স্বাক্ষর করেছেন। এমপিরা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহর ধ্বংসস্তূপে ত্রাণের অজুহাতে তাবু শহর গড়ে তোলার ইসরাইলি পরিকল্পনা বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তারা হুঁশিয়ারি দেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জোরপূর্বক স্থানান্তর এবং তাদের উপস্থিতি মুছে ফেলার শামিল হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আপনাকে জানাচ্ছি যে, গাজার সব ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে রাফাহর ধ্বংসস্তূপে একটি ক্যাম্পে জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে তাদের বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। আমরা এটিকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে দেখছি।’ এমপিরা আরও বলেন, যুক্তরাজ্যকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র তহবিল পুনরায় চালু করা, জিম্মিদের মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতিতে উৎপাদিত পণ্যের ওপর বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করা। তারা চিঠিতে লিখেছেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে আমাদের নিজেদের দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের নীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি এবং এই বার্তা দিচ্ছি যে, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকবে এবং এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কার্যত মুছে ফেলা ও দখলের পথ তৈরি হবে।’ নতুন লেবার প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাজ্য সরকার এখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র স্বীকৃতির ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক অবস্থান পরিবর্তন করেনি। গাজায় যুদ্ধ দশম মাসে গড়িয়েছে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ব্যাপক স্থানচ্যুতি, অবকাঠামোর ধ্বংস এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনার ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

গাজায় ইসরায়েলি রক্তক্ষয়ী তাণ্ডবে নারী-শিশুসহ ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও গুলিবর্ষণে শনিবার (১২ জুলাই) কমপক্ষে ৮৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। মানবিক ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৪ জন। এছাড়া শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। চিকিৎসাসেবা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার সকালে পশ্চিম গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে জামাল আবদেল নাসের সড়কে এক বিমান হামলায় এক মা ও তার তিন সন্তান প্রাণ হারান। গাজা শহরের আল-তুফাহ এলাকার ইয়াফা স্কুলের কাছে একটি বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে চারজন নারী নিহত হন এবং আহত হন আরও ১০ জন। এছাড়া শেখ রাদওয়ান এলাকায় এক আবাসিক ভবনে হামলায় একই পরিবারের তিন সদস্য মারা যান। আল-রিমাল এলাকায় একটি বাড়িতে হামলায় আরও দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন। গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে আল-হাসাইনা স্কুলসংলগ্ন এক বাড়িতে হামলায় এক শিশু নিহত হয় এবং আরও কয়েকজন আহত হন। দেইর আল-বালাহর আল-মানসুরা এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একই পরিবারের চারজনসহ সাতজন নিহত হন। পাশাপাশি, আল-আকসা হাসপাতালের কাছে আরেকটি তাঁবুতে হামলায় প্রাণ হারান তিনজন। খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় কুয়েতি হাসপাতালের কাছাকাছি বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। একই শহরের শেখ নাসের এলাকায় দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিন দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের উত্তরে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষারত সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরও ২৭ জন নিহত ও অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আল-শাকুশ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবার সংগ্রহে জড়ো হওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলি চালানো হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গত ২৬ মে থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে প্রতিনিয়ত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে প্রাণহানি ঘটছে। এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ৭৯৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩৯ জন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার ৮০০ জনে, বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

আধুনিক সভ্যতা ভেঙে পড়েছে , গণতন্ত্র ব্যর্থ
১০০ বছরে পা রেখেছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে খ্যাত দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় মালয়েশিয়ার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে দেশটির খোলনলচে বদলে দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান নেতা। ১০০তম জন্মদিনের প্রাক্কালে নিজের দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সেখানে মাহাথির বলেছেন, গণতন্ত্র যেমন কাজ করেনি, তেমনি আধুনিক সভ্যতাও ব্যর্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু। দুই দফায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাহাথির গণতন্ত্র নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘গণতন্ত্র মানুষের তৈরি একটি পদ্ধতি। এটি নিখুঁত নয়। গণতন্ত্রকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে এর থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না।’ তাঁর মতে, বহুদলীয় গণতন্ত্র বরং দুর্বলতা তৈরি করে। মাহাথির বলেন, ‘গণতন্ত্রে শুধু দুটি রাজনৈতিক দল থাকলে ভালো হয়। তখন একটি জিতবে, একটি হারবে। এভাবে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন সম্ভব। কিন্তু সবাই নেতা হতে চেয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে কোনো পক্ষই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই গণতন্ত্র বহুক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।’ চলমান আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে মাহাথির সরাসরি অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এক ধরনের গণহত্যা, আর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়ে তা চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে ক্ষুধা ও যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র সেই অপরাধীদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। এটা পশ্চিমা সভ্যতার পতনের প্রতিচ্ছবি। আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে গেছে।’ বিশ্বনেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। নিজের শতবর্ষের দীর্ঘ জীবনের পেছনে রহস্য কী এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, ‘অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া না করাই ভালো। আমি নিয়মিত শরীরচর্চা করি, মস্তিষ্কের ব্যায়াম যেমন পড়াশোনা করি, লিখি, কথা বলি, বিতর্ক করি, নিজেকে সক্রিয় রাখি।’ এ সময় ৯৮ বছর বয়সী স্ত্রী সিতি হাসমাহকে সারাজীবনের সঙ্গী হিসেবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন মাহাথির। সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যতের মালয়েশিয়া ও মুসলিম বিশ্ব নিয়েও নিজের ভাবনা জানিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি মনে করেন, মালয়েশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বের বিষয়ে আক্ষেপ করে মাহাথির বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মতো ইস্যুতেও মুসলিম দেশগুলো একমত হতে পারে না। তাই ওআইসিও কিছুই করতে পারে না।’ ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে জন্ম হয় মাহাথিরের। পেশায় চিকিৎসক হলেও মাত্র ২১ বছর বয়সেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৪ সালে পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন মাহাথির। এর পর ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম টানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর শাসনামলে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিকভাবে অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করে। ৮০ বছর বয়স পেরিয়েও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে আবারও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দুই বছর পর পদত্যাগ করেন মাহাথির।

গাজাকে ‘শিশুদের কবরস্থান’ বানাচ্ছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে ‘শিশু ও অনাহারীদের কবরস্থান’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা এখন শিশুদের কবরস্থান ও অনাহারের উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক মাধ্যম এক্সে লেখেন, ইসরায়েল গাজায় একটি নিষ্ঠুর ও পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের ফাঁদ তৈরি করেছে। ফিলিপ লাজারিনি আরও লেখেন, ‘গাজার মানুষ এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে তাদের সামনে বেছে নেয়ার মতো মাত্র দুটি পথ রয়েছে। ক্ষুধায় মারা যাওয়া অথবা গুলিতে প্রাণ হারানো।’ এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর বলছে, মে মাস থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৮০০ জন। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২৭ মে থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৭৯৮ জনকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে জিএইচএফের ত্রাণগুলোর আশপাশে। আর ১৮৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে ত্রাণ নিতে যাওয়ার পথে।’ অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের তুর্কি কবরস্থানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে লাশ উত্তোলন করেছে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে আশপাশের কবর ও শিবির। এখন পর্যন্ত গাজার ৬০টি কবরস্থানের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসায় নতুন ফি, বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক আইন, ‘বিগ বিউটিফুল বিল’-এ স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে ২০২৬ সাল থেকে অধিকাংশ নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় অতিরিক্ত ২৫০ মার্কিন ডলার ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’ গুনতে হবে আবেদনকারীদের। এই ফি যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন, শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যাওয়া বিদেশি নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে। নতুন এই আইন অনুসারে, বিদ্যমান ভিসা ফি ছাড়াও আবেদনকারীদের এই সারচার্জ দিতে হবে, যা ফেরতযোগ্য নয়। তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে, যেমন ভিসার নিয়ম মেনে মেয়াদ শেষের পাঁচ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করলে বা বৈধভাবে স্ট্যাটাস পরিবর্তন করলে ফি ফেরতের সুযোগ থাকতে পারে। ফি কাঠামো অনুযায়ী, বি-১/বি-২ (পর্যটন ও ব্যবসা), এফ ও এম (শিক্ষা), এইচ-১বি (কর্মসংস্থান) এবং জে (এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম) ক্যাটাগরির ভিসাধারীরা এর আওতায় পড়বেন। শুধু কূটনৈতিক ‘এ’ ও ‘জি’ ক্যাটাগরির ভিসা এই ফি থেকে ছাড় পাবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন বা ব্যবসা ভিসার জন্য ফি ১৮৫ ডলার। নতুন আইন কার্যকর হলে অতিরিক্ত ফি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচসহ একজন আবেদনকারীর মোট খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৪৭২ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার টাকা যা বর্তমান ব্যয়ের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। এই আইন অনুযায়ী, ফি প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যসূচকের (CPI) ভিত্তিতে সামঞ্জস্য করা হবে। উল্লেখ্য, এই বিলের আওতায় রেমিট্যান্স পাঠানোর ওপরও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিধান রয়েছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের জন্য নিজ দেশে টাকা পাঠানো আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদেশিদের ভিসা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়েছে। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট পুরো ব্যবস্থাটি তদারকি করবে।

ইসরায়েল সফরে ইউরোপীয় ইমামদের প্রতিনিধিদল, নিন্দা জানাল ইমাম কাউন্সিল
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজেক হারজোগের সঙ্গে ইউরোপীয় ইমাম প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক বৈঠক ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। ইউরোপের একাধিক মুসলিম সংগঠন ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এই সফরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্যারিসভিত্তিক ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ইমাম এক বিবৃতিতে জানায়, এই সফর সন্দেহজনক এবং ইউরোপীয় মুসলিমদের অবস্থান ও মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে না। কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়, এই সফর কোনোভাবেই নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি ইসলামের মৌলিক নীতির পরিপন্থী, যা নির্যাতিতদের পক্ষে ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানায়। সংগঠনটি আরও উল্লেখ করে, সফরে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ইউরোপে অপরিচিত এবং কোনো স্বীকৃত মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। ইউরোপীয় ইমাম কাউন্সিলের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সফর একটি প্রচারমূলক আয়োজন, যা ইসরায়েলের দখলদার নীতিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা মাত্র। বিবৃতিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়, এটি গাজায় চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপরীতে ইউরোপীয় মুসলিমদের ব্যাপক প্রতিবাদের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে। উল্লেখ্য, গত সোমবার ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট হারজোগ ফ্রান্স, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস এবং ইতালির মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম ও নেতাদের সঙ্গে পশ্চিম জেরুজালেমে বৈঠক করেন। সফরকারীরা শান্তি, সহাবস্থান ও ইহুদি-মুসলিম সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই সেখানে গিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। তবে ইউরোপীয় ইমাম কাউন্সিল এই প্রচেষ্টাকে 'ভুল বার্তা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, ইউরোপজুড়ে নিয়মিত মিছিল এবং প্রতিবাদই দেখিয়ে দেয় মুসলিমরা গাজা ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতিশীল এবং দখলদারদের কোনো বৈধতা দিতে রাজি নন।

বিশ্বব্যাপী শুল্ক উত্তেজনার মধ্যে চিন-মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক ঘণ্টার বৈঠক
মার্কিন বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী উত্তেজনার মধ্যে এশিয়ায় নিজেদের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার (১১ জুলাই) কুয়ালালামপুরে বৈঠক করেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ওয়াশিংটনের শীর্ষ কূটনীতিক দায়িত্ব গ্রহণের পর এশিয়ায় প্রথম সফরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। তিনি জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে যোগদান করছেন। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, আজকের আলোচনার শুরুতে রুবিও এবং ওয়াং কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি। বৈঠকটি প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। প্রতিবেদন বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের মধ্যে ওয়াং ইয়ের সঙ্গে রুবিওর বৈঠকটি হচ্ছে। চীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী মাসে তাদের পণ্যের ওপর ভারী শুল্ক পুনর্বহালের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। চীনকে সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা দেশগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেইজিং। রুবিওর এই সফর ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মনোযোগ পুনরায় জোরদার এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সংঘাতের বাইরে নিজেদের দেখার প্রচেষ্টার অংশ। এখন এশিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের বেশিরভাগ মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এই সপ্তাহে অনেক এশীয় দেশ এবং মার্কিন মিত্রদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের ঘোষণার ফলে এটি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মালয়েশিয়ার ওপর ২৫%, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৩২%, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার জন্য ৩৬% এবং মায়ানমার ও লাওসের উপর ৪০% শুল্ক। বিশ্লেষকরা বলছেন, রুবিও এই সফরের সময় ওয়াশিংটনের প্রধান কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে আরও ভালো অংশীদার, তা তুলে ধরতে চাইবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, রুবিও শুক্রবার থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন। একদিন আগে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বলেছিলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে। 'গুন্ডামিমূলক আচরণ' এদিকে, শুক্রবার বেইজিংয়ের প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, চীনের ওয়াং কুয়ালালামপুরে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, মার্কিন শুল্ক একতরফা হুমকিমূলক আচরণ, যা কোনো দেশেরই সমর্থন করা বা একমত হওয়া উচিত নয়। ওয়াং থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, শুল্কের অপব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, মার্কিন শুল্ক দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোকে তাদের উন্নয়নের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ওয়াং বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার, নীতিগত অবস্থান মেনে চলার এবং তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে।' অপরদিকে, শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করেই আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছে, একতরফা শুল্ক 'বিপরীতমুখী এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক খণ্ডনকে আরও খারাপ করার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ'। মে মাসেও আসিয়ান নেতারা একই ধরণের বিবৃতি দিয়েছিলেন। তারা 'নতুন এবং উদীয়মান' অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তার ওপরেও জোর দেন এবং একটি স্বচ্ছ ও ন্যায্য বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার আহ্বান জানান। তারা বলেন, 'আমরা এই লক্ষ্যে সকল অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।'

পাকিস্তানে বাসযাত্রীদের অপহরণের পর গুলি করে হত্যা
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলায় বাস থেকে অপহৃত অন্তত ৯ যাত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার (১১ জুলাই) আলজাজিরার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেলুচিস্তান থেকে পাঞ্জাবগামী বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে কয়েকজন অস্ত্রধারী যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে নেয়। পরে পাহাড়ি এলাকায় তাদের নিয়ে গিয়ে অন্তত ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের শরীরে গুলির স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিনদ নিশ্চিত করেছেন, ঘটনাস্থল থেকে অপহৃতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নবীদ আলম নামে এক কর্মকর্তা জানান, নিহতরা পাঞ্জাবি জাতিগোষ্ঠীর হতে পারেন এ কারণেই তারা এই হামলার টার্গেট হয়ে থাকতে পারেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি হামলার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার পেছনে জড়িতদের কঠোরভাবে দমন করার হুঁশিয়ারি দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিরীহ মানুষের রক্ত বৃথা যাবে না। এটি ভারতের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উদাহরণ।” তবে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। ঢাকাওয়াচ/এমএস

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ৯ বাসযাত্রীকে অপহরণের পর হত্যা
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে দুই বাস থেকে নয়জন যাত্রীকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করেছে অস্ত্রধারীরা। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝব ও লোরালাই জেলার সীমান্তবর্তী সুর-ডাকাই এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পাঞ্জাবগামী দুটি কোচ থেকে ওই যাত্রীদের অপহরণ করা হয়। ঝবের সহকারী কমিশনার নাভিদ আলম সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, দুটি কোচ থেকে অপহৃত নয়জনকেই হত্যা করা হয়েছে, সবার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদেহগুলো পাঞ্জাবে তাঁদের নিজ শহরে পাঠানোর জন্য রাখনিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ফিতনা আল হিন্দুস্তান’ (বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ) কাকাট, মাস্তুং এবং সুর-ডাকাই-এই তিনটি ভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, ‘সুর-ডাকাই এলাকা থেকে কিছু যাত্রী অপহরণের খবর পাওয়া গেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী অপহৃত বাকি যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধারের জন্য তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।’ জানানো হয়, পাঞ্জাবগামী দুটি যাত্রীবাহী কোচকে এন-৭০ মহাসড়কের কাছে সুর-ডাকাই এলাকায়, লোরালাই-ঝব সীমান্তের কাছে ডাব নামক স্থানে পথরোধ করা হয়। একদল সশস্ত্র ব্যক্তি রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন দুটিকে থামায়। সশস্ত্র হামলাকারীরা কোচগুলোতে উঠে যাত্রীদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে এবং বন্দুকের মুখে ১০ জনকে নামিয়ে নিয়ে যায়। বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী জানান, একটি কোচ থেকে সাতজন এবং অন্যটি থেকে তিনজন–এই ১০ জন যাত্রীকে তারা টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না তারা তাদের সঙ্গে কী করেছে, তবে আমরা যখন চলে যাচ্ছিলাম তখন গুলির শব্দ শুনেছিলাম।’ নয়জন যাত্রীকে অপহরণ করার পর, হামলাকারীরা দুটি কোচকেই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী মহাসড়কে যান চলাচল স্থগিত করে এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করে। সূত্র অনুসারে, হামলাকারীরা সব যাত্রীর সিএনআইসি (জাতীয় পরিচয়পত্র) পরীক্ষা করে এবং বিশেষভাবে পাঞ্জাবের ঠিকানার ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করে। তারা অপহরণের সময় কোচগুলো লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে। একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সশস্ত্র ব্যক্তিদের দ্বারা অপহৃত নয়জন যাত্রীকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা মুসাখাইল-মখতার এবং খাজুরির মধ্যবর্তী মহাসড়ক অবরোধ করার পর এই নয়জনকে হত্যা করেছে। তবে হত্যার কারণ ব্যাখ্যা করেননি তিনি।
ইসরাইলি হামলায় গাজায় একদিনে নিহত ৮২
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় একদিনেই ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ভোর থেকে ইসরাইলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলা শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছেন। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে দেইর আল-বালাহ শহরে। সেখানে শিশুখাদ্য সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একসঙ্গে ১৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ শিশু ও ৪ নারী ছিলেন। হামলায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যখন মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সাহায্যের জন্য লাইনে দাঁড়ায়, তখন তাদের ওপর হামলা চালানো সম্পূর্ণ অমানবিক।” তিনি গাজায় ক্রমবর্ধমান অনাহার ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও তুলে ধরেন। রাসেল আরও বলেন, ইসরাইল যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলে এবং এই হামলার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা হয়। হামাস এক বিবৃতিতে এই হামলাকে গাজায় “গণহত্যার ধারাবাহিকতা” বলে উল্লেখ করে জানায়, ইসরাইল নিয়মিতভাবে স্কুল, রাস্তাঘাট, শরণার্থী শিবির ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস এটিকে একটি পরিকল্পিত জাতিগত নিধন হিসেবে অভিহিত করেছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত ও প্রায় ২৫১ জন জিম্মি হয়। এরপর থেকেই ইসরায়েল গাজায় টানা প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়ে আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আবারও ইরানে হামলার হুমকি
তেহরান থেকে যদি কোনো ধরনের হুমকি আসে, তাহলে ইসরায়েল আবারও ইরানে হামলা চালাবে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কাটজ বলেন, ইসরায়েলকে হুমকি দিলে তেহরান, তাবরিজ বা ইসফাহানের মতো যেকোনো জায়গায় হামলা চালানো হবে। ইসরায়েলের অস্ত্র যে কোনো স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম এমন বার্তাও তিনি দেন। তার ভাষায়, "আমরা যদি ফিরে আসি, তাহলে আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে আসব।" এর আগে, গত জুনে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিন ধরে চলা সংঘাতের কারণে পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সংঘাতের শুরু হয় যখন ইসরায়েল অভিযোগ তোলে যে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এরপর তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্রে হামলা চালায় ইসরায়েল। যদিও ইরান বারবার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে এসব অস্বীকার সত্ত্বেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রও ইরানে সামরিক হামলা চালায়। পরিস্থিতি এখনো জটিল অবস্থায় রয়েছে।