পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১২ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে চুক্তির নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:৩০ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও কয়েকটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্তে এবার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিতে যাচ্ছে দেশটির ব্যাংকিং খাত।
সোমবার, ৬ অক্টোবর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দপ্তরে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেশের ৩২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে তারা ১২টি আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার ও আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, তারা যেন নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) স্বাক্ষর করে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ খোঁজা এবং ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রশাসনিক সহায়তা ছাড়াও আইনি সহায়তা প্রদান করবে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওমর ফারুক খান বলেন, 'ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবে পাচার হওয়া অর্থের খোঁজ ও পুনরুদ্ধারে।'
তিনি আরও জানান, 'নেতৃত্বদানকারী হিসেবে কিছু ব্যাংক অন্যদের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে। চুক্তি সম্পন্ন হলে পুনরুদ্ধারকৃত অর্থ কীভাবে জমা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করা হবে।'
ওমর ফারুক খান আরও উল্লেখ করেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১১টি দেশীয় শিল্পগোষ্ঠীকে পাচারে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা, এস আলম এবং নাসা গ্রুপের নাম রয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (এনডিএ) আওতায় এসব সম্পদ পুনরুদ্ধার সংস্থার সঙ্গে কাজ করব। কিছু প্রাথমিক আলোচনাও শুরু হয়েছে।'
এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, 'এই উদ্যোগটি কোনো একটি ব্যাংকের নয়, বরং একাধিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহত্তর ব্যাংকিং উদ্যোগ।'
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছে এবং এনডিএ স্বাক্ষর করে তাদের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে।
সভায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে অর্থ পাচারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম ছাড়াও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপ, বসুন্ধরা, এস আলম, বেক্সিমকো, সিকদার, নাসা, ওরিয়ন, জেমকন, নাবিল এবং সামিট গ্রুপের নাম এসেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের উপকারে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা: স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (স্টার) ইনিশিয়েটিভ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসি সিসি), যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিওজে), এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (আইসিএআর); এই পাচারের তদন্তে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। এই সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছে।