মিরপুরে আগুন: স্বজনের খোঁজে ছবি হাতে অনেকে
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১২:২৪ এম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

মিরপুরের রূপনগরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ধোঁয়ায় ঢাকা পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামের চারপাশে ছুটে বেড়াচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আগুনে নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে কারও হাতে প্রিয়জনের ছবি, কারও চোখে উদ্বেগের ছাপ। ফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাচ্ছেন না কোনো সাড়া।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, আগুনে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে প্রথমে ৯ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, এরপর সন্ধ্যা ৭টার পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬-এ। মৃতদের সবাই পোশাক কারখানার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কারো নাম পরিচয় প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি, কারণ মরদেহগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকেও নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য জানানো হয়নি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা এবং মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ভিড় বাড়তে থাকে। নিখোঁজদের পরিবার ও স্বজনরা একরকম ছুটেই আসেন এলাকাটিতে।
নাসিমা আক্তার তেমনই একজন। ভাইয়ের ছেলে রবিনের ছবি হাতে নিয়ে কারখানার আশপাশ ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। “এখানে জিএম ফ্যাশন নামে একটি কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করছিলেন রবিন,” বলেন নাসিমা। “তার কর্মক্ষেত্র ছিল পুড়ে যাওয়া ভবনটির তিন তলায়। ভবনের পাঁচতলা থেকে শ্রমিকরা বের হতে পারলেও তিনতলা থেকে কেউ বের হতে পারেনি। এখন পুরো পরিবারের সদস্যরা রবিনের ছবি হাতে খুঁজতে বেরিয়েছেন।”
শাকিল আহমেদ তার মামাতো ভাই খালিদ হাসান সাব্বিরকে খুঁজছেন। সাব্বির ছিলেন আরমান গার্মেন্টসের স্টোর ইনচার্জ। “সাব্বিরের ফোন এখনও বাজছে,” বলেন শাকিল। “তবে কেউ ধরছেন না।”
এদিকে বন্ধুর ছবি হাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আমানুল্লাহ। তিনি জানান, তার বন্ধু সারোয়ার কিছুদিন আগে একটি ওয়াশিং ফ্যাক্টরিতে হেলপারের চাকরি নিয়েছিলেন। “আগুন লাগার পর থেকে সারোয়ার নিখোঁজ,” জানান আমানুল্লাহ।
দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় কসমিক ফার্মা নামে একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশে থাকা একটি পোশাক কারখানায়ও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টিনশেড গুদামটির মালিক একজন ‘আলম সাহেব’।
ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২টি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়। যদিও পোশাক কারখানার আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও রাসায়নিকের গুদামে সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন জ্বলছিল।
সন্ধ্যার পরও গোটা এলাকা রাসায়নিকের ঝাঁঝালো গন্ধে ছেয়ে যায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে। উদ্ধারকাজে অংশ নেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও।
আগুন লাগার সাড়ে সাত ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ধোঁয়ার চাদর সরেনি, থামেনি কান্নাও। নিখোঁজদের পরিবারের জন্য প্রতিটি মিনিট যেন একেকটি দুঃস্বপ্ন।