এনসিপি আগামীর সংসদে নির্ণয়কের ভূমিকা পালন করবে: সারজিস
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১২:১৯ এম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভবিষ্যতের জাতীয় সংসদে নীতিনির্ধারক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে ময়মনসিংহ নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে জেলা শাখার সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সারজিস আলম বলেন, “আমরা চাই একটি স্থিতিশীল এবং ভারসাম্যপূর্ণ সংসদ। সংস্কার ও বিচারকেন্দ্রিক যেসব কার্যক্রম চলছে, নির্বাচনোত্তর সময়েও এনসিপি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে তা এগিয়ে নেবে।”
তরুণদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তরুণদের ক্ষমতায়ন আগামীর বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলতে চাই।”
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে গণতান্ত্রিক পটভূমিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই প্রেক্ষাপটে এনসিপি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আলোচনায় সারজিস আলম দাবি করেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এনসিপির সাংগঠনিক শক্তি একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। তার ভাষায়, বিএনপি ও জামায়াত আলাদা অবস্থান থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব লড়েছে, কিন্তু এককভাবে তা পর্যাপ্ত নয়। সেখানে এনসিপি একটি আপসহীন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতসহ বিশ্বের যেকোনো রকম আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি কখনো এককভাবে সরকার গঠন করেনি, জামায়াতও বড় পরিসরে সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতায় এনসিপি সেখানে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারবে।”
দুর্নীতি ও অপকর্ম বিরোধী অবস্থান নিয়ে তিনি জানান, তরুণদের সঙ্গে নিয়ে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এনসিপি। তার মতে, তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া দেশের কাঙ্ক্ষিত রূপান্তর সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “তরুণরা সংসদে না গেলে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হবে না।”
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতকে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তিনি দাবি করেন, একমাত্র এনসিপিই ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে পারে। “এনসিপি থাকলে আওয়ামী লীগ উৎখাতের যে লড়াই, সেটার নেতৃত্ব সঠিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবে,” বলেন সারজিস আলম।
শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে সরাসরি সমালোচনা করেন এনসিপির এই নেতা। তার ভাষায়, “নির্বাচন কমিশনের সচিবের কথা শুনে মনে হচ্ছে- শাপলা প্রতীক দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সমস্যা থাকা না থাকা এটা তাদের কাছে কোনো বিষয় না। শাপলা দেবে কি দেবে না- এটা তাদের মনমর্জির ওপর নির্ভর করে।”
তিনি স্পষ্ট করে দেন, এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় এবং কোনো ধরনের ‘ইচ্ছাধীন আচরণ’ বরদাশত করবে না। “আইনগত বাধা যেহেতু নেই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
রাজনৈতিক জোট গঠন প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, “১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ২০২৪ সাল। চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের নেতৃত্বেই এনসিপি গঠিত হয়েছে।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান, “কয়েকটা সিটের জন্য এনসিপি কারো সঙ্গে নেগোসিয়েশন করবে, এটা এনসিপি বিশ্বাস করে না।” তবে যদি কোনো রাজনৈতিক দল সত্যিকারের পরিবর্তনের পক্ষে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় এবং কথামতো কাজ করে, তাহলে জোট গঠনের সম্ভাবনা উন্মুক্ত রাখছে এনসিপি।
প্রতিনিধিত্বমূলক (PR) নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও দলের অবস্থান তুলে ধরেন সারজিস। তিনি বলেন, “এনসিপি সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে, তবে নিম্ন কক্ষে পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে।”
তার মতে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পর উচ্চ কক্ষে এই পদ্ধতির প্রয়োগ কতটা কার্যকর হতে পারে, তা সময় ও প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
দলের সাংগঠনিক অগ্রগতির বিষয়ে সারজিস আলম জানান, ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এনসিপি সারা দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটি গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সংগঠন বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জাবেদ রাসিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম, উত্তরাঞ্চলের নেতা আবুল বাশার এবং হালুয়াঘাট উপজেলার সমন্বয়ক আবু রায়হান।