একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারে রেকর্ড পতন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:১০ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

একীভূতকরণের পথে থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের বাজারমূল্য গত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও বিক্রির চাপের কারণে শুধু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর মোট বাজারমূল্য ৯২৬ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ১০ টাকার ফেস ভ্যালুর বিপরীতে ২ টাকা ৬০ পয়সায়, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১ টাকা ৮০ পয়সায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ টাকা ৯০ পয়সায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪ টাকা ৪০ পয়সায় এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি কমেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বাজারমূল্য—মোট ৩৪২ কোটি টাকা। তবে যদি হিসাবের সময়সীমা ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নেওয়া হয়—অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত—তাহলে ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি। গত ১৩ মাসে পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত বাজারমূল্য ২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের বাজারমূল্য কমেছে প্রায় ৬০০ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৪৮৩ কোটি টাকা।
৪ আগস্ট ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত বাজারমূল্য ছিল ৪ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। সে সময় শেয়ারমূল্য ৬.১ থেকে ৮.১ টাকার মধ্যে থাকলেও, ৩০ সেপ্টেম্বর শেষের দিকে তা নেমে এসেছে ১.৮ থেকে ৪.৪ টাকার মধ্যে। এই সময়ে কিছু ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, আর কোনো কোনো ব্যাংকের শেয়ার ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
শেয়ার বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস, ব্যাংকের দুর্বল আর্থিক অবস্থা এবং একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত—সব মিলিয়ে এই খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইতিহাসের সবচেয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি হলেও ক্রেতার সংখ্যা কম।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মূলত চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গ্রুপটি বিভিন্ন কোম্পানির নামে শেয়ার ক্রয় করে ধীরে ধীরে ব্যাংকের মালিকানা নিয়েছে এবং পর্ষদে নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের বসিয়েছে। এভাবে নেওয়া ঋণের বড় অংশ এখন খেলাপি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহক আস্থা সংকট ও খেলাপি ঋণের কারণে পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি বড় ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পুরো ব্যাংকিং খাতই বর্তমানে সংকটে; অনিয়ম, খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক উদ্যোক্তা তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করছেন, এমনকি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় বিনিয়োগ করা শেয়ারও ছাড়ছেন।