৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে রিজার্ভ

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন করে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত হিসাবপদ্ধতি ব্যালান্স অব পেমেন্টস ম্যানুয়াল ৬ (বিপিএম ৬) অনুসারে এই রিজার্ভের পরিমাণ এখনো ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। আর বাস্তবে ব্যবহারের উপযোগী রিজার্ভ, যা দিয়ে বৈদেশিক দায় পরিশোধ সম্ভব, তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রিজার্ভে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পেছনে একযোগে কাজ করেছে কয়েকটি অর্থনৈতিক উপাদান। সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো বাড়ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে মুদ্রাবাজারে। ডলারের সংকট কমে আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও গত ১০ মাসে রিজার্ভ থেকে আর ডলার বিক্রি করেনি, যা রিজার্ভকে স্থিতিশীল রাখার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। এদিকে একের পর এক বৈদেশিক সহায়তা চুক্তি কার্যকর হওয়ায় রিজার্ভে যুক্ত হচ্ছে নতুন ঋণের অর্থ। বিশ্বব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান, ওপেক ফান্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে চলতি মাসেই প্রায় ৯০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুনের মধ্যেই আরও প্রায় ২৪০ কোটি ডলার রিজার্ভে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এসব অর্থ যুক্ত হলে জুন মাস শেষে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এসব ঋণ দীর্ঘমেয়াদি ও কম সুদের হওয়ায় তা রিজার্ভের ওপর তাৎক্ষণিক চাপ তৈরি করবে না। বরং এই অর্থ দিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন, ব্যাংক খাত ও রাজস্ব সংস্কারে কাজ হবে।এদিকে সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে এসেছে ২৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি। রপ্তানিতেও ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকায় সামগ্রিকভাবে রিজার্ভে স্বস্তির ইঙ্গিত মিলছে।

নগদের নতুন চেয়ারম্যান ও এমডি নিয়োগ

মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে সরকার। পাশাপাশি নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুতাসিম বিল্লাকে নিয়োগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়। এই বোর্ডে চেয়ারম্যান করা হয়েছে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহকে। অন্য সদস্যরা হলেন- ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক, ব্যাংকিং রেগুলেটরি অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) পরিচালক খন্দকার সাব্বির মোহাম্মদ কবির, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার তানিম হোসাইন শাওন, দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম বাররু সানি। উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে আসে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহক বানানো ও সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ ঘটনায় সরকারের ডাক বিভাগের আটজন সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি), নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা খারিজ করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা পরে স্থগিত হয়ে যায়। এই রায় গত ৭ মে বের হয়। সেদিনই নগদের দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। নগদের কর্মকর্তারা নিজেরাই সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলার আসামি মো. সাফায়েত আলমকে নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ দেন। এ অবস্থায় শুধু প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত গত বছরের ২১ আগস্টের আদেশ স্থগিতের অংশটুকু প্রত্যাহার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ মে আবেদন করে, যা পরদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। গত ১৪ মে চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনটি আপিল বিভাগের ২ জুনের কার্যতালিকায় ২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। পরে ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেওয়া আদেশ স্থগিত করে রায় দেন আপিল বিভাগ।

জুনেই পরিশোধ করল ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার

সরকারের কাছ থেকে চলতি সপ্তাহে ভর্তুকির ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সেখানে আদানি পাওয়ারকে বকেয়া হিসেবেই পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বা ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সরকারের কাছ থেকে চলতি সপ্তাহে ভর্তুকির ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সেখানে আদানি পাওয়ারকে বকেয়া হিসেবেই পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বা ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অথচ ভারতের এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে করা চুক্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও তার সমাধান হয়নি এখনো। উল্টো নানা চাপ দিয়ে আওয়ামী লীগ আমলের চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করে নিচ্ছে আদানি। বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বিপিডিবির কাছে আদানি পাওয়ারের বিপুল পরিমাণ পাওনা বকেয়া পড়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। তখন যা পরিশোধ করা হতো প্রতি মাসে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার চেয়ে তিন-চার গুণ আদায় করছে আদানি। আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিশেষ আইনের আওতায় করা সে চুক্তি বাতিলের জোর দাবি ওঠে। এমনকি ক্রয়চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও করা হয়। আদানিসহ ১১ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি খতিয়ে দেখতে গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কমিটি এরই মধ্যে এসব চুক্তি পর্যালোচনার জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায়ই বাড়ানো হয়েছে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিল পরিশোধ। মেনে নেয়া হচ্ছে একের পর এক তাদের শর্তগুলোও। বিপিডিবির তথ্যমতে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে আদানি পাওয়ারের মোট বকেয়া দাঁড়ায় ৭০ কোটি ডলারে। যদিও আদানির দাবি, প্রকৃত বকেয়ার পরিমাণ ৯০ কোটি ডলার। কয়লার উচ্চমূল্য নিয়ে জটিলতার কারণেই মূলত এ ব্যবধান। আদানির সঙ্গে বিপিডিবির বিল বকেয়া নিয়ে চিঠি চালাচালি বিগত বছরের শুরু থেকেই। বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আদানির শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বাংলাদেশ সফর করেছেন। এমনকি বকেয়া বিলের কারণে কখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়া, কখনো কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার মতো হুমকিও এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে বকেয়া বিল পরিশোধের ওপর ছাড় দেয়ার মতো অফারও দিয়েছে আদানি গ্রুপ। এখন পর্যন্ত নিয়মিত বিল পরিশোধ বাড়লেও বকেয়া বিলের সংখ্যা নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে বড় ধরনের কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি পাওয়ারের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি করেছে বিপিডিবি। তবে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মতবিরোধ চলছে বিপিডিবি ও আদানির মধ্যে। আদানি যে মূল্য কাঠামো অনুসরণ করছে, সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীল সূচকের ওপরের অতিরিক্ত নির্ভরতা আছে। আবার পরিবহন ব্যয়ও অনেক বেশি ধরার অভিযোগ। জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বিপিডিবি ও আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের মধ্যে গত সোমবার এক ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেখানে কয়লার বিতর্কিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয় আদানি পাওয়ার। তার আগে বাংলাদেশকে বকেয়া বিল পরিশোধ করার শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এ বিষয়ে ওইদিনই বিপিডিবি চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠিও দেয় আদানি পাওয়ার। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া বিল ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করা হলে বিলম্ব বিলের জরিমানা বাবদ ২০ মিলিয়ন ডলার মওকুফ করা হবে বলে ওই চিঠিতে জানায় আদানি। এর ঠিক দুই দিনের মধ্যে আদানি পাওয়ারকে বড় অংকের বকেয়া বিল পরিশোধ করা হলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধ তো করতেই হবে। এটা পরিশোধ না করলে পাহাড়সম হয়ে দাঁড়াবে। তবে যে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে সেটি পিডিবির হিসাব অনুযায়ী। দুই পক্ষের দুই ধরনের হিসাব রয়েছে। তারা যেটা দাবি করেছে, সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। একটা মিটিং হয়েছে। সামনে এ বিষয়ে আরো মিটিং হবে। বিষয়টি সামগ্রিক বিবেচনায় দুপক্ষের আপসে যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে বিপিডিবির ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমবে। তবে এখন পর্যন্ত দুপক্ষই তাদের হিসাবের পক্ষে অনড়।’

১০০ ডলার দেশে পাঠালেই বাড়তি ৩০৭ টাকা বেশি পাবেন

আপনি কি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন? সেখানে উপার্জন করছেন বা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন? বৈধ পথে, অর্থাৎ বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার পাঠালেই সরকার আপনাকে দিচ্ছে আর্থিক প্রণোদনা। ১০০ ডলার দেশে পাঠালে আপনি পাচ্ছেন আড়াই ডলার আর্থিক প্রণোদনা। ফলে প্রবাসে অবস্থান করা কোনো বাংলাদেশি ১০০ ডলার পাঠালে দেশে তাঁর আত্মীয় পাচ্ছেন ১২ হাজার ৩০০ টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)। এর সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এই হিসাবে দেওয়া হয় ৩০৭ টাকা ৫০ পয়সা। কীভাবে পাঠাবেন আপনি যে দেশেই থাকেন না কেন, সেই দেশের মুদ্রায় আয় পাঠালে তা ডলার হিসেবে দেশে আসে। ব্যাংকগুলো তা বিতরণ করে বাংলাদেশি টাকায়। যদি কোনো প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অন্য মাধ্যমে দেশে আয় পাঠান, তাহলে এ প্রণোদনা পাচ্ছেন না। ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় দিন দিন বাড়ছে। প্রণোদনা পেতে আপনাকে অবশ্যই বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে হবে। এ ছাড়া এখন ব্যাংকে ডলারের দামও ভালো। বাংলাদেশে বিভিন্ন উপায়ে প্রবাসী আয়ের অর্থ গ্রহণ করা যায়। ব্যাংক হিসাব না থাকলেও প্রবাসী আয়ের অর্থ পাওয়া যায়। যাঁদের ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তাঁরা সেই হিসাবে অর্থ নিতে পারেন। পাশাপাশি পিনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে অর্থ নেওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় পাঠানো ব্যক্তির স্বজনের কাছে পিন আসবে। বিদেশ থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানি গ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পাঠানো যায়। সেই পিন নিয়ে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানি গ্রাম লেখা ব্যাংক বা এনজিওতে গেলেই প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেবে। পিন অনেকটা গোপন নম্বরের মতো। এই পিন নিয়ে ওই রেমিট্যান্স হাউসগুলোয় গেলেই প্রবাসী আয়ের টাকার পাশাপাশি সরকারের প্রণোদনার বাড়তি টাকা দেবে। প্রতি ১০০ ডলারে বাড়তি ৩০৭ টাকা ৫০ পয়সা বেশি পাবেন। এ ছাড়া মোবাইলে আর্থিক সেবা বিকাশ, রকেট, নগদ হিসাবেও সরাসরি প্রবাসী আয়ের অর্থ গ্রহণ করা যায়। এ জন্য কোনো হিসাব প্রয়োজন হয় না। সাধারণ বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বজনের কাছে পৌঁছে যায়। ফলে দেশে প্রবাসী আয়ের অর্থ গ্রহণ করা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা প্রায় বছরখানেক ধরে বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। মূলত অর্থ পাচার কমে আসায় এবং বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানো সহজ হওয়ায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকে বেছে নিয়েছেন। রেমিট্যান্স কত এল দেশে চলতি জুনের প্রথম ৩ সপ্তাহে ১৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে শেষ ৩ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের জুনের প্রথম ৩ সপ্তাহে এসেছিল ১৯১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। সে হিসাবে চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪ শতাংশ। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলেন, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতাও কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ দর ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২ হাজার ৩২৯ কোটি ডলারের। তার মানে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিগত ১৬ বছরের অসামঞ্জস্যতা থেকে উত্তরণে পলিসি ডাইভারশন জরুরি

বিগত ১৬ বছরের অর্জিত ক্রিমিনালাইজেশন থেকে উত্তরণে পলিসি ডাইভারশন জরুরি। আর এই ডাইভারশন করতে গেলে আমাদের কগনিজেন্ট হতে হবে। আমাদের নিয়ামকগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ করতে হবে। আজ বুধবার (২৫ জুন) বিকালে ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ইআরএফ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে 'অটোমোবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশে বাল্ক কার্গো আসে, সেটা সিমেন্ট ক্লিঙ্কার, ফার্টিলাইজার বা ফুডগ্রেইন যার পরিমান প্রায় ১০ কোটি টন। সেমিনারে বলা হয়েছে আমাদের জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ জলিস্টিক। আমাদের যে ক্যাশ আউটফ্লো হয় তার সাথে এটাকে কলাবরেট করাতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাস আউটফ্লোর একটা বড় অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় হয়। যেমন আমরা যে এক্সটারনাল ফ্রেইট পরিশোধ করি,যে বিমান ভাড়া পরিশোধ করি, পোর্ট কস্ট পরিশোধ করি তার সবই জলিস্টিক কস্ট। দু:খজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের লজিস্টিক কস্ট বিশ্বের উন্নত দেশের জলিস্টিক কস্টের চাইতে বেশি। এইমুহূর্তে আমাদের দেশে একচল্লিশ বিলিয়ন কিলোমিটার টন লজিস্টিক প্রয়োজন আছে। ২০৪০ সালে এটা নয়গুণ বেড়ে ৩০০ বিলিয়ন কিলোমিটার টনে রুপান্তরিত হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের অর্থনীতির মোটাদাগে নিয়ামকগুলোর মধ্যে কৃষি ,শিল্প এবং সেবা অন্যতম। এসকল কিছুর প্রাইমারি এনাবলার হচ্ছে লজিস্টিক। এটার সাথে ইউটিলিটি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং লেবার প্রডাক্টিভিটি। এগুলোকে যদি সমন্বিত করি তাহলে দেখি আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার বা খাদ্যপণ্যের বাজার ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা যদি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করি আমাদেরদেশের যে সকল স্থানের নাম গঞ্জ দিয়ে আছে সেটা সিরাজগঞ্জ হোক আর মুন্সিগঞ্জ আর নারায়ণগঞ্জ হোক এগুলো ছিলো আমাদের দেশের লজিস্টিক হাবস। পৃথিবীতে এমন দেশ আর আছে কিনা জানানেই যেখানে দুইশ’র অধিক নদী আছে বলে যোগ করেন তিনি। শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমাদের ১৭/১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ। কোন খনিজ সম্পদ নেই, আছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা খুবই ভাইব্রেন্ট ও প্রডাক্টিভ। এটাকে যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে লজিস্টিক ক্যাপাসিটি ও শ্রমশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যদি শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারি তাহলে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাজেটে আমাদের নীতির একটি ম্যানুফেস্টেশন থাকে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সেখানে অটোমোবাইল একটি ছোট অংশ হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এক সময় গাড়ি উৎপাদনের নামে পুরো বডি বিদেশ থেকে এনে চারটা চাকা লাগিয়ে প্রশংসা নেওয়া হয়েছে। বিগত ১৬ বছরের ওইসব অসামঞ্জস্যতা উত্তরণ কর‍তে এখন সুষ্ঠু নীতি করতে হবে। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি'র চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ। প্যানেল আলোচনায় অংশনেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী এবং উত্তরা মোটরস এর চেয়ারম্যান মতিউর রহমান এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান। অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এর সভাপতি দৌলত আকতার মালা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

বিবাহ ও মোহর আদায়ে ইসলামী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব

বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন যা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে এবং বিবাহ পরবর্তী মোহর আদায়কে সহজতর করতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র রয়েছে মুদারাবা বিবাহ সেভিংস অ্যাকাউন্ট (এমবিএসএ) এবং মুদারাবা মোহর সেভিংস অ্যাকাউন্ট। মুদারাবা বিবাহ সেভিংস অ্যাকাউন্ট (এমবিএসএ) একটি মাসিক কিস্তিভিত্তিক সঞ্চয় হিসাব। প্রাপ্তবয়স্ক যুবক কিংবা অভিভাবকরা বিবাহের খরচ নির্বাহের জন্য এ হিসাব খুলতে পারবেন। এই হিসাবে মাসিক কিস্তি ৫০০ টাকা কিংবা তার গুণিতক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়। মেয়াদ হবে সর্বনিম্ন ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর। কিস্তির পরিমাণ যেহেতু অপরিবর্তনীয়, তাই হিসাব খোলার সময় কিস্তির পরিমাণ সামর্থ্য ও লক্ষ্যের সাথে সমন্বয় করে নির্ধারণ করতে হয়। এ অ্যাকাউন্টে ইসলামিক শরিআ‘হ ভিত্তিতে বছরে দুইবার প্রাক্কলিত মুনাফা প্রদান করা হয় এবং বছর শেষে চূড়ান্ত মুনাফা সমন্বয় করা হয়। ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে ৫৩ হাজার বিবাহ সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মুদারাবা মোহর সেভিংস একাউন্টও একটি মাসিক কিস্তিভিত্তিক সঞ্চয় হিসাব। পেশাজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কিংবা প্রবাসী পুরুষ যারা মোহর পরিশোধের জন্য পরিকল্পিত সঞ্চয় করতে চান তাঁরা সামর্থ অনুযায়ী এই একাউন্ট খুলতে পারবেন। এই হিসাবে মাসিক কিস্তি ৫০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা এবং ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদ। স্বামী কিংবা বিবাহেচ্ছুক পুরুষ এ হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন। বিবাহেচ্ছুকদের লক্ষ্যমাত্রার সাথে আর বিবাহিতদের ক্ষেত্রে কাবিননামায় উল্লেখিত মোট টাকার পরিমাণ, আদায়কৃত টাকা এবং আদায়যোগ্য টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে আদায়যোগ্য টাকার উপর মাসিক হার নির্ধারণ করা হয়। ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে ৫২ হাজার মোহরানা অ্যাকাউন্ট রয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্র/পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি, নিজের ২ কপি ছবি, বিবাহ হিসাবের জন্য নমিনীর এক কপি ছবি আর মোহর হিসাবের জন্য স্ত্রীর ২ কপি ছবি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের যে কোন শাখা, উপশাখা কিংবা এজেন্টে এই একাউন্টদ্বয় খোলা যাবে। সেলফিনের মাধ্যমেও এই একাউন্ট খোলা যায়। ব্যাংকের যেকোন শাখা, উপ-শাখা কিংবা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে কিস্তির টাকা জমা দেওয়া যায়। এছাড়া সেলফিন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এমক্যাশের মাধ্যমে ২৪/৭ ঘরে বসে খুব সহজে মাসিক কিস্তি ট্রান্সফার করা যায়। শাখায় স্পেশাল ইনস্ট্রাকশন দিয়ে রাখলে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট হিসাব থেকে বিবাহ ও মোহর একাউন্টে কিস্তির টাকা জমা হবে। গ্রাহক চাইলে কিস্তির টাকা অগ্রিম পরিশোধ করতে পারেন। দিন দিন বিবাহ সংক্রান্ত ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যবিত্তের জন্য বিয়ের খরচ নির্বাহ করা অনেকটা কঠিন হয়ে উঠছে। আবার মোহরানা আদায়ে শরিয়তের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও সমাজে মোহরানা আদায়ের সংস্কৃতি প্রায় নির্মুল হয়ে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের এই দুই অ্যাকাউন্ট বিবাহের মত একটি পবিত্র বন্ধন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে এবং বিবাহ পরবর্তী মোহর আদায়কে সহজ করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ইতোমধ্যে এই একাউন্ট দুটি বেশ গ্রাহক প্রিয়তা অর্জন করেছে।

এনবিআর সংস্কার বাধাগ্রস্ত করতে সুবিধাভোগী কিছু ব্যবসায়ীর স্বার্থ থাকতে পারে: অর্থ উপদেষ্টা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের সময়কার কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর স্বার্থ থাকার বিষয়ে সন্দেহ করছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এনবিআরকে পৃথক করে রাজস্ব শাখা ও নীতি শাখা হিসেবে নতুন বিভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এমনটি করা হলে এখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অধিপত্য ও উপস্থিতি বাড়বে-এমটি বলে আসছেন বিসিএস (কর) ক্যাডার এবং বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডার কর্মকর্তারা। এরই ভিত্তিতে আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে আন্দোলন, কর্মবিরতি চলছে। সেখানে পুলিশ পাহারায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সচিব আবদুর রহমান খান। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে। ওদের ক্যারিয়ারের কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এনবিআর একটা স্বতন্ত্র ডিভিশন হবে। ওদের স্ট্যাটাসটা বাড়বে। ওদের ক্যারিয়ারটা আরও প্রসপেক্ট হবে। ওদের প্রমোশনটা আরও বেটার হবে। এখন তাদেরকে কারা কী বুঝিয়েছে, ভেতরের ব্যাপার আপনারা আরও ভালো বলতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘ওরা যেটা করেছে যে- কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, এটা কোনো সরকারি কর্মচারী বিশেষ করে এনবিআরের কেউ কোনোদিন করেনি। এটা আপনার আমার ব্যাপার না। পুরা দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজস্বের ব্যাপার। বন্দর, স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির ব্যাপার। আমি বলেছি, এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা আলোচনা করে সমাধান করা যাবে না।’ আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ইন্ধন আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এনবিআরে সংস্কার করার কারণ হচ্ছে এখানে আগে অনেক রকম অসঙ্গতি (ডিসক্রেপেন্সি) ছিল। সেখানে অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ট্রান্সপারেন্সি নেই। এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের সরকারের সময় কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী বেনিফিটেড হতো, ভালো যারা তারা সুবিধা পেত না। এনবিআর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারেকাছেও ছিল না।’ ‘অতএব আমি অনুমান করে বলছি, এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু স্বার্থ আছে। না হয় ক্যারিয়ার ট্যারিয়ার নিয়ে ওরা হঠাৎ করে এত চটে গেল কেন? অন্য কোনো ইস্যু যদি না থাকে তাহলে এমন হওয়ার কথা না। এটা হলো আমার অনুমান। আমি ব্যবসায়ীদের ওভাবে দোষ দিচ্ছি না’, বলেন অর্থ উপদেষ্টা। আন্দোলনের মাধ্যমে এনবিআর কর্মকর্তারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন কি না এমন প্রশ্ন করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তো হ্যাঁ, আমরা একটু ধৈর্য ধরছি। চাকরি করতে হলে অনেক বিধিনিষেধ মানতে হবে, শৃঙ্খলা থাকতে হবে।’

বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: আবু আহমেদ

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেছেন, আইসিবিকে বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। এটা এখন চলে না। চালাতে হলে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এসময় যেসব বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে না, সেগুলোর ওপর আয়কর বাড়িয়ে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বুধবার (২৫ জুন) ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক‍্যাপিটাল মার্কেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আইসিবি চেয়ারম্যান অধ‍্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিডিবিএল চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী ও এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আক্তার। অনুষ্ঠানে আবু আহমেদ বলেন, শুধু টাকার জন‍্য না, পাবলিক ইন্টারেস্ট ও সরকারের চাহিদার কারণে বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসতে হয়। বাংলাদেশে বহুজাতিক স্ট‍্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব‍্যাংক অনেক মুনাফা করে, যা বাংলাদেশের শীর্ষ ৪ ব‍্যাংকের থেকে বেশি। কিন্তু এই ব‍্যাংকটি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না। অথচ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় তালিকাভুক্ত। তিনি বলেন, যেসব বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে না, সেগুলোর ওপর আয়কর বাড়িয়ে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করবো। বর্তমানে শেয়ারবাজার নড়ছে না বলেও মন্তব্য করেন আবু আহমেদ। এর কারণ হিসেবে উচ্চ সুদহারের বিষয় উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় আবু আহমেদ বলেন, যতদিন আইসিবিতে আছি, ততদিন আইসিবিতে অনিয়ম হবে না।

বাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে ভালো মানের কোম্পানি আনতে হবে: আবু আহমেদ

আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে ভালো মানের কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসতে হবে। বুধবার ( ২৫ জুন) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসেসিয়েশন(ডিবিএ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা। বলেন। তিনি বলেন, ভালো কোম্পানি ছাড়া শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল হবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ দেবো। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুূস বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সাথে বাজারের উনয়নে বৈঠক করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ওই বৈঠকে যেসমস্ত দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মার্কেট স্থিতিশীল হবে।তিনি আরও বলেন, বন্ডের সুদ বাড়ানো হয়েছে, যেকারণে বিনিয়োগকারীরা সেদিকে যাচ্ছে। মার্কেট থেকে বিনিয়োগ উঠিয়ে নিচ্ছেন তারা। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বন্ডের সুদ কমাতে হবে আবু আহমেদ বলেম, দেশের বৃহত্তর অর্থনীতির সার্থে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে হবে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী সারাজীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ করেছেন। দেশের অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারে তাদের অনেকেই বিনিয়েোগ হারিয়েছেন, সর্বশান্ত হয়েছেন। এই ধরনের পরিস্থিতি আগামীতে যেন না হয় সে বিষয়টি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। মার্কেটের উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। আশা করি পরবর্তী সরকার সেগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করবে। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, দ্যা ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আক্তার।

বাংলাদেশের রিজার্ভ ছাড়ালো ২৭ বিলিয়ন ডলার

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে সোমবার সংস্থাটির বোর্ড সভায় ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে ২৩ জুন পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম৬ হিসাব অনুযায়ী তা ছিল ২১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এরও আগে ১৫ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার (গ্রস) এবং ২০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম৬ অনুযায়ী)। ২৭ মে পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, বিপিএম৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন মাসে দেশের রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। রপর ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়নে এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ তা পৌঁছায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। ওই বছরের অক্টোবরে তা প্রথমবারের মতো ৪০ বিলিয়নের মাইলফলক অতিক্রম করে। এমনকি কভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রেকর্ড ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছয়। তবে ২০২২ সালের পর থেকে ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় ও অর্থনৈতিক চাপে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বর্তমানে সেই সীমার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির জন্য সতর্ক সংকেত হলেও সাম্প্রতিক উত্থান স্বস্তিদায়ক।

২২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রিজার্ভ

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ যোগ হওয়ায় মঙ্গলবার রিজার্ভ উঠেছে ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালের আগস্টের পর তথা ২২ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ওই মাসে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বাড়তে–বাড়তে গত ৩০ এপ্রিল রিজার্ভ বেড়ে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। তবে গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর তা কমে ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার হয় ২০২২ সালের আগস্টে। তবে অর্থপাচার বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তা কমতে–কমতে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যায়।

এডিবি ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা দেবে রোহিঙ্গাদের

বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি অবকাঠামো ও পরিষেবা উন্নয়নে ৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলার অর্থায়ন অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১০৬০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ দশমিক ২২ টাকা ধরে)। মঙ্গলবার (২৪ জুন) এডিবির ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোট অর্থায়নের মধ্যে অন্তত পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ডলার অনুদান এবং সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে দুই কোটি ৮১ লাখ ডলার দেওয়া হবে। এই অর্থ এডিবির দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ সদস্য দেশগুলোর জন্য নির্ধারিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এডিএফ)’ থেকে সরবরাহ করা হবে। ‘ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিসেস অ্যান্ড লাইভলিহুড ফর ডিসপ্লেসড পিপল ফ্রম মিয়ানমার অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটিস ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার ও ভাসানচর অঞ্চলের রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের জন্য পানি, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি, রাস্তা ও সেতু, নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগ সহনশীলতার মতো মৌলিক সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুই অঞ্চলের নির্দিষ্ট চাহিদা বিবেচনায় একটি পৃথক কৌশল অনুসরণ করা হবে। এতে শুধু যোগাযোগ ও সেবায় প্রবেশাধিকারই বাড়বে না, একইসঙ্গে সরকারের প্রকল্প ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাও জোরদার করা হবে। এডিবির বাংলাদেশে কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে এবং আশ্রয় শিবির ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সামাজিক সংহতি তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। তিনি আরও জানান, নতুন এই অর্থায়ন আগের সহায়তারই ধারাবাহিকতা। ২০১৮ সাল থেকে এডিবি এই খাতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ১৭১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার অনুদান ও ঋণ দিয়েছে।

আবারও ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ পেল ওয়ালটন হাই-টেক

আবারও ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করলো পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত টেক জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারক খাতে গ্রিন ফ্যাক্টরির মর্যাদা পেয়েছে ওয়ালটন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার আওতায় অপরিহার্য প্রতিপালন, পরিবেশগত প্রতিপালন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিপালন এবং উদ্ভাবনী কার্যক্রম বিবেচনায় রেখে ওয়ালটনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে দুই বার গ্রিন ফ্যাক্টরির স্বীকৃতি পেল ওয়ালটন। মঙ্গলবার (২৪ জুন, ২০২৫) রাজধানীর আবদুল গণি সড়কের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওয়ালটনকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ডের ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টও (এএমডি) মো. ইউসুফ আলী। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও দক্ষ শ্রমশক্তি ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতির গতিকে বেগবান ও টেকসই করার মাধ্যমে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে ওই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। এ বছর গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড নীতিমালা ২০২০-এর আওতায় ১৬টি খাতের ৩০টি শিল্পকারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ওয়ালটন হাই-টেকের এএমডি মো. ইউসুফ আলী বলেন, এই নিয়ে দুই বার ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি স্বীকৃতি পাওয়ায় ওয়ালটন পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। ওয়ালটনকে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার প্রদানের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ তিনি জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উন্নতমানের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় ওয়ালটন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই ফ্রিজ, এসি, টিভি, কম্প্রেসার, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ওয়ালটন ফ্যাক্টরিতে পরিবেশবান্ধব রুফটপ সোলার প্রজেক্টসহ এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় মেটাল ও প্লাস্টিক রিসাইকেলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শতভাগ কমপ্লায়েন্স মেনে চলছে ওয়ালটন। উচ্চমানসম্পন্ন প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা প্রদান এবং দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের বিকাশ ও অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ওয়ালটন বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করে আসছে। যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৮, রাষ্ট্রপতি শিল্প-উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৮, জাতীয় রপ্তানি ট্রফি (স্বর্ণ পদক)-২০২২, গ্রিন ফ্যাক্টরি আওয়ার্ড-২০২৩ সহ নানা পুরস্কার।

এফবিসিসিআই’র সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক মিশনের সভা

দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের টেকসই উন্নয়ন, প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত সব সেবা একটি মাত্র কর্তৃপক্ষের অধীনে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে এফবিসিসিআই এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (টিএফএ) ট্র্যাকিং টুলস মিশনের মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নিয়ে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন স্পেশালিস্ট মেলভিন স্প্রেইজ, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কনসালট্যান্ট থেরেসা মরিসে এবং সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট ও টাস্ক টিম লিডার নুসরাত নাহিদ বেবি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (টিএফএ) ট্র্যাকিং টুলস হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা সদস্য দেশগুলোকে টিএফএ-এর অধীনে তাদের বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে সহায়তা করে। দেশগুলো যাতে নিজ নিজ বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং টিএফএ-এর সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক তাদের সাহায্য করে। দেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস এবং উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, অবকাঠামো, লজিস্টিকস এবং ল্যাব সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং তাঁদের প্রতিনিধিরা। এ সময়, বাণিজ্য সহজীকরণ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে শোনেন বিশ্ব ব্যাংক মিশনের সদস্যরা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোতে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (টিএফএ) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামতকে বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক মো. আব্দুল হক, এফবিসিসিআই-এর মহাসচিব মো. আলমগীর, এফবিসিসিআই-এর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স উইং-এর প্রধান মো. জাফর ইকবাল এনডিসি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কে. এম. ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ফারুক আহম্মেদ, বারভিডার জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ জগলুল হোসেন, মেঘনা গ্রুপের এফএফসিজি বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার (এক্সপোর্ট) মিথুন কুমার গায়েন প্রমুখ।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৪ শতাংশে নামিয়ে আনল আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর আগে গত এপ্রিলে সংস্থাটির পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আজ মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী পর্যদ বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার ছাড় করার অনুমোদনের সঙ্গে বাড়তি ৮০ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আইএমএফ এক বিবৃতিতে এ তথ্যের পাশাপাশি জিডিপির পূর্বাভাসসহ অর্থনীতির বেশকিছু উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয়, আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। এ দিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও আইএমএফ প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ অনুমানের চেয়ে কম। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর দ্রুত অন্তর্বর্তী সরাকর গঠন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে পর্যায়ক্রেম যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তবে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান বাধা এবং ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়ার কারণে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আগের চেয়ে কমেছে। আইএমএফের ডিএমডি এবং পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ার নাইজেল ক্লার্ক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় নীতি কার্যক্রম ও সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানায় আইএমএফ। তিনি আরও বলেন, কঠিন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং বর্ধিত নিম্নমুখী ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি সংক্রান্ত অগ্রগতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তোষজনক। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ঝুঁকিগ্রস্থ মানুষকে রক্ষা করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সংস্কার এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

একীভূতকরণে অনীহা এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে দেশের পাঁচ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি শক্তিশালী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না এক্সিম ব্যাংককে কেন একীভূত করার তালিকায় রাখা হয়েছে। বাকি চারটি ব্যাংকের মোট ব্যবসাও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ে কম। আমাদের খেলাপি ঋণও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়।” একইভাবে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউজ্জামান বলেন, “আমরা একীভূত হতে আগ্রহী নই। আমাদের ব্যাংকের নিজস্ব সক্ষমতা রয়েছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। গ্রাহকদের আস্থাও রয়েছে আমাদের প্রতি।” বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে তিনটির খেলাপি ঋণের হার ৯০ শতাংশের বেশি। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৯৪ শতাংশ, ইউনিয়নে ৯৬ এবং ফার্স্ট সিকিউরিটিতে ৯৩ শতাংশ। তুলনায় এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৮ শতাংশ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৫৮ শতাংশ। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে আরও হস্তক্ষেপ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।” বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত কি ভিত্তিতে নেয়া হচ্ছে, তা ব্যাংকগুলোকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। এছাড়া ব্যাংকিং রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ীই পদক্ষেপ নিতে হবে।” বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, একীভূত ব্যাংকের গ্রাহক সেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না এবং কর্মীদের চাকরিও রক্ষা করা হবে। সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পর বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য বের হয়ে আসছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে লুটপাটের কারণে তারল্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকট মোকাবেলায় একীভূতকরণের পথ বেছে নিয়েছে। তবে সক্ষম ব্যাংকগুলো তাদের স্বাধীনতা বজায় রেখে কাজ করতে চায়।

আইএমএফ বোর্ডে দুই কিস্তি অনুমোদন, ১৩৩ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ

অনেক দর কষাকষির পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তি মিলিয়ে ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার একসঙ্গে পাচ্ছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে এই অর্থ অনুমোদন করেছে বলে সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ দুই কিস্তির টাকা হাতে পাবে বলে আভাস মিলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথায়। আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। সে বছর ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া যায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করে আইএমএফ। ওই তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার বাংলাদেশের হাতে আসে। কিন্তু মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, বিদেশি মুদ্রার নিট সঞ্চিতি বা রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণ না হওয়ায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি আটকে দেয় আইএমএফ। অথচ চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি এবং পরে মার্চে বোর্ড সভার কথা বলা হয়। কিন্তু মার্চের সভায় বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচি বিষয়টি পর্ষদে ওঠেনি। এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে। দুই সপ্তাহের সফর শেষে আইএমএফ তখন জানায়নি বাংলাদেশ কিস্তি পাচ্ছে কি না। শর্তের বিষয়গুলো নিয়ে এপ্রিলের শেষভাগে ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে আরো আলোচনা হয়। তবে তখনও জটিলতা কাটেনি। মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে দর-কষাকষি চলতে থাকে। এরপর মে মাসের শুরুর দিকে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব বৈঠকে অংশ নেন। ধারাবাহিক বৈঠকের পর বিনিময় হার পুরোটা বাজারমুখী করতে রাজি হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে ঋণ আলোচনায় অগ্রগতি হয়। গত ১৪ মে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিস্তি ছাড়ে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। সেদিন ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে। ঋণের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় করা হবে জুনে। এর এক মাস ১০ দিন পর আইএমএফ এর বোর্ড সভায় দুই কিস্তি অনুমোদন পেল। আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ হয়েছে।

বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিলো এআইআইবি

এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ক্লাইমেট রেসিলেন্স ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির আওতায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২.২০ টাকা ধরে)। এই ঋণ মূলত বাজেট সহায়তা হিসেবে ব্যবহার হবে। সোমবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ ও এআইআইবির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এআইআইবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রজত মিশ্রা ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশের পরিবর্তন প্রতিরোধকল্পে মজবুত ভিত্তি তৈরি। জলবায়ু নীতিমালা সংস্কারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অভিযোজন এবং প্রশমনমূলক কার্যক্রমকে আরও অগ্রসর করা। যাতে টেকসই, সহনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করে। গৃহীত এ ঋণ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৫ বছরে পরিশোধযোগ্য। ঋণের সুদের হার এককালীন ০.২৫ শতাংশ পরিশোধ করা হবে

ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়ে ৮.০৭ বিলিয়ন ডলার

ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়কালে ৮.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৬.৫১ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৩.৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯.৭১ শতাংশ এবং একক মূল্য বেড়েছে ৩.৫৭ শতাংশ। যা রপ্তানি আয়, পরিমাণ ও দামের একটি ভারসাম্যপূর্ণ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈশ্বিক পোশাক আমদানিতে ১৪.২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২.৪৯ বিলিয়ন ডলার। পরিমাণের দিক থেকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৮৪ শতাংশ, তবে গড় ইউনিট মূল্য ১.৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়াও ইইউতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়কালে ইইউতে চীনের রপ্তানি ২১.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৩৯ বিলিয়ন ডলারে রদাঁড়িয়েছে, যেখানে ইউনিট মূল্য ৭.৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তুরস্কের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। দেশটির ইইউতে রপ্তানি ৫.৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩.১০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ভিয়েতনামের রপ্তানি ১৫.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৪৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং ইউনিট মূল্য ৫.৬৮ শতাংশ বেড়েছে। ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া যথাক্রমে ২.০১ বিলিয়ন, ১.৪২ বিলিয়ন ও ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। যার প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২০.৫৮ শতাংশ, ২৩.৪২ শতাংশ ও ৩১.৭৮ শতাংশ। শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইইউ বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষ করে ইউনিট মূল্যে বাড়তি আয় একটি ইতিবাচক দিক হলেও চীন এখনও এগিয়ে এবং ভিয়েতনামও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে। বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘ইইউ বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে হলে আসন্ন ইইউ নিয়মনীতি অনুসরণ করে কৌশল গ্রহণ করা এবং উৎপাদন সক্ষমতা উন্নয়ন জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে নতুন বাজার অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে, যাতে ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর অতিনির্ভরতা কমে আসে এবং বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছতে পারে।’

বিয়ের জন্য নেওয়া যাবে ব্যাংক ঋণ, জানুন শর্তগুলো

বিয়ে মানেই বেশ খরচের ব্যাপার। এই খরচ নিয়ে অনেকেই থাকেন দুশ্চিন্তায়। তবে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে রয়েছে বিবাহ ঋণ। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ‘বিবাহ ঋণ’ নামের বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব ব্যাংক থেকে বিয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যায়। এই ঋণ মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। ঋণ পরিশোধে সময় দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ৫ বছর। কারা নিতে পারবেন ম্যারেজ লোন চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বিয়ের ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে মূলত আবেদনকারীর মাসিক আয়, চাকরির ধরন, চাকরির অভিজ্ঞতা, বয়স ও লেনদেনের ইতিহাসের ওপর। যাদের স্থায়ী চাকরি এবং আয় বেশি, তারা তুলনামূলকভাবে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। সাধারণত মাসিক কিস্তি যেন গ্রাহকের আয়ের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ থাকে, তা ব্যাংক বিবেচনা করে। তাই কার কত ঋণ মিলবে, তা নির্ধারিত হয় ওই ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্যের ভিত্তিতে। অন্য পেশাজীবীরাও একইভাবে ঋণ পাবেন। যেসব ব্যাংক থেকে বিবাহ ঋণ পাওয়া যায়;দেশে বেশ কিছু ব্যাংক বিশেষ বিবাহ ঋণ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে- উত্তরা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউসিবি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ইত্যাদি। এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধায় বিবাহ ঋণ নেওয়া যায়। ব্যাংকগুলোতে বিবাহ ঋণের যেসব অফার রয়েছে বিয়ের জন্য সর্বোচ্চ ঋণ পাওয়া যায় এনসিসি ব্যাংক থেকে। ব্যক্তিগত ঋণের আওতায় বিবাহ ঋণ দেয় এনসিসি ব্যাংক। ১ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকটি। চাকরিজীবী, জমির মালিক, ব্যবসায়ীরা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা আয় হতে হবে। বাকিদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা। বেসরকারি ব্যাংক উত্তরা ব্যাংক সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বিয়ের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে বিয়ের জন্য ২ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। তবে এই ঋণ ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধার আওতায় নিতে হবে। ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সী চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। একইভাবে ইউসিবি বিয়ের জন্য ঋণ দেয়। এই ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। ৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। চাকরিজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, জমির মালিকসহ নানা পেশার লোকজন এই ঋণ পেতে পারেন। বিজিবি সদস্যদের জন্য বিয়ে ঋণ রয়েছে সীমান্ত ব্যাংকে। শুধু বিজিবির কর্মরত সদস্যরাই ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। ঋণটি মূলত সংশ্লিষ্ট সদস্যের নিজের বিয়ের জন্য প্রযোজ্য হলেও সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রেও এই ঋণ নেওয়া যাবে। সাধারণ সদস্যদের জন্য এই ঋণের সীমা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা আছে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণ পেতে হলে আবেদনকারীকে বিজিবির স্থায়ী সদস্য হতে হবে এবং ন্যূনতম ৬ বছর সক্রিয় চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তবে সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫৬ বছর পর্যন্ত এই ঋণ নেওয়া যাবে। ঋণ নিতে যা যা প্রয়োজন বিয়ের জন্য ঋণ পেতে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, চাকরির প্রমাণপত্র (যেমন আইডি কার্ড, নিয়োগপত্র), সর্বশেষ ৩ থেকে ৬ মাসের পে-স্লিপ, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ এবং কিছু ক্ষেত্রে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) প্রয়োজন হয়। এছাড়া যেহেতু এই ঋণ নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়, তাই প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে বিয়ের কার্ড, চিকিৎসার কাগজ বা ভ্রমণ পরিকল্পনার কপি দিতে হতে পারে। এর সঙ্গে বর বা কনের সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি চাইতে পারে ব্যাংক।

২১ দিনে এলো ২৪ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স

চলতি জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে ১৯৮ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৪৬৫ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)। রোববার (২২ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩০ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪২ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৫ কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর শাখার মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২৫ কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার। এরপরের অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।

ফারিয়া, সাবিলা নূর ও মৌসুমীসহ ২৫ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

ফাঁকি দেওয়া কর আদায়ে চিত্রনায়িকা মৌসুমী, চিত্রনায়ক বাপ্পারাজ, চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া, সাবিলা নূর ও অভিনেতা আহমেদ শরীফসহ ২৫ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর কর অঞ্চল-১২’র সহকারী কর কমিশনার কাজী রেহমান সাজিদ মন সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ১৫ জুন এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। চিঠিতে ২৫ জনের ব্যাংক হিসাব, বকেয়া কর, টিআইএন, পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে তারা হলেন– হাজী কামাল উদ্দিন, গোলাম মাওলা, ওসমান গণি, আশরাফ হোসেন, মো. জহিরুল হক, জাহিদুর রহমান সিদ্দিক, জোৎভ্রা বেগম, ইউসুফ আলী, সাব্বির হোসেন বাপ্পি, জামাল উদ্দিন চৌধুরী, আল আমিন চৌধুরী, ইরফান সেলিম, কাজী রুবায়েত হাসান, নুসরাত ফারিয়া, নাসিমা খান, নুসরাত ইয়াসমিন তিশা, সাবিলা নূর, রেজাউল করিম (বাপ্পারাজ), এ. কে. এম মোশারফ হোসেন, শবনম পারভীন, পারভীন জামান মৌসুমী, আহমেদ শরীফ, নৃত্তাঞ্চল, এ. কে. এম. হুমায়ন কবির ও মো. মিকাইল হোসেন। এনবিআর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, সময়মতো কর পরিশোধ না করায় বেশ কয়েকজন তারকার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন তাদের কর পরিশোধ করেছেন। কয়েকজন সময় নিয়েছেন। কর পরিশোধ হলে আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হবে।

১৮ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২২৭০০ কোটি টাকা

চলতি জুন মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এসময়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগেও প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ছিল। সদ্যবিদায়ী মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে, গত মার্চে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়া‌রি‌তে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে নানান উদ্যোগ, উৎসব কেন্দ্রিক আয় বৃদ্ধি ও অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠাতে নিরুৎসাহিত করায় এ প্রবাহ বাড়ছে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

আগের চেয়ে বাড়তি করে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা এবং ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব বাজেটে করা হয়েছিল। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করার সময় সেটি পরিপূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ রোববার (২২ জুন) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সভাকক্ষে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ২ জুন সোমবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয় নতুন বাজেট। প্রস্তাবিত এ বাজেটের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গত ১৯ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের থেকে মতামত গ্রহণ করে। নির্বাচিত সরকারের আমলে বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হতো সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হতো নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদে আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের শুধুমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মধ্যমে নাগরিকদের থেকে মতামত নেওয়া হয়।