বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হলেন আকতার হোসেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। তাকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন। এর আগে এ দায়িত্ব পালন করছিলেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান। দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশ ব্যাংকে পূর্ণাঙ্গ প্রধান অর্থনীতিবিদের পদ পূরণ হলো। প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে ড. আক্তার হোসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পরিচালনা পর্ষদকে সামষ্টিক অর্থনীতি, মুদ্রানীতি ও ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা বিষয়ে নীতিগত পরামর্শ দেবেন এবং গবেষণা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেবেন। ড. আখন্দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন দেশের একজন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসহ এমএ এবং লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক মডেলিং, যা পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। প্রায় তিন দশক অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন তিনি এবং ২০২০ সালে সেখান থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেন। ২০২৪ সালে তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এর পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (IMF) আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশ্বব্যাংকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রশিক্ষক ও গবেষক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ড. হোসেনের প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যা ৮৭টিরও বেশি এবং তিনি ২৭টি যৌথ গ্রন্থ অধ্যায়ে অবদান রেখেছেন। তার গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মুদ্রানীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক নীতি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চার সন্তানের জনক এবং সমাজ ও অর্থনীতিতে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অবস্থানকে সমর্থন করেন। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থেকেও তিনি দরিদ্রবান্ধব নীতিতে সহানুভূতিশীল। নতুন প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে তার নিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিতে গবেষণা-নির্ভর ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব তলব

শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সোমবার সব ব্যাংকের কাছে এই তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের ব্যাংকে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এবং তার পরিবারের সদস্যেদের বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নামে যে কোনো (হিসাব খোলার ফরম ও হালনাগাদ বিবরণী), সঞ্চয়পত্র, বন্ড, লকার, ক্রেডিট কার্ড, স্টুডেন্ট ফাইল, প্রি-পেইড কার্ড, গিফট কার্ডসহ পাঁচ লাখ ও তার বেশি লেনদেনের ভাইচার আগামী ১৫ জুলাইয়ে মধ্যে বিএফআইইউকে পাঠাতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক আলোচনার তৃতীয় দফার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক বিষয়ে তৃতীয় দফার আলোচনার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। সোমবার (১৪ জুলাই) দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিকভাবে শুল্ক নির্ধারণ করবে এবং বাংলাদেশও দক্ষতা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে পারবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গোপনীয়তা চুক্তি রয়েছে, যার ফলে আলোচনার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য সরকার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, “আমরা অংশীজনদের সঙ্গে ইতোমধ্যে মতবিনিময় করেছি এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও রয়েছে।” উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি দেশের ওপর রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করে। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে ৯ জুলাই পর্যন্ত তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে ইউএসটিআর–এর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। তবে এখনো সব বিষয়ে পূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এর আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন একটি পরামর্শ সভায় দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শিল্প-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এতে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ারুল আলম পারভেজ, এপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান এবং এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তার পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনা বাড়তে থাকায় দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, কেউ যদি দুদকের চেয়ারম্যান, কমিশনার কিংবা কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সোমবার (১৪ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি জরুরি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে জানানো হয়, প্রতারকরা ফোন বা সরাসরি গিয়ে নিজেদের দুদক কর্মকর্তা দাবি করে গ্রেপ্তার, মামলা বা তদন্তের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। এ ধরনের প্রতারণা সরকারের নজরে এসেছে এবং এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন আগে থেকেই সতর্ক থাকে এবং সন্দেহজনক কেউ এমন আচরণ করলে তা দ্রুত প্রশাসন ও পুলিশের জ্ঞাতার্থে আনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। সম্প্রতি এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ দুদকের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ তোলার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এরপর দুদকের অনুসন্ধানে চার প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা নিজেদের দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মামলার নিষ্পত্তির নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।

প্রথমবার নিলামে ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত নিলামে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়, যা সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে যোগ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে। রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় বাজারমূল্য ধরে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিলামে বেশিরভাগ ব্যাংক ১২০ টাকার আশপাশে দর দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা চেয়ে বেশি দামে কিনেছে। এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দরপতনে বাজারে প্যানিক তৈরি হয়েছিল, যা রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এই পদক্ষেপ নেয়। এর আগে ডলার সংকট মোকাবিলায় রিজার্ভ থেকে বড় অঙ্কে ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক—গত তিন অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে বাজারে ডলারের দাম কমেছে প্রায় ২ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, এই পতনের মূল কারণ হলো বাজারে ডলারের চাহিদা হ্রাস পাওয়া এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি। গত বৃহস্পতিবার, বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত রেট দেয়। কেউ কেউ ১২০.৬০ টাকা পর্যন্ত কিনলেও, বেশিরভাগ ব্যাংক দিনে শেষে ১২০ টাকার বেশি দিতে রাজি হয়নি। অথচ গত সপ্তাহের শুরুতে রেমিট্যান্স ডলারের রেট ছিল ১২২.৮০ থেকে ১২২.৯০ টাকা। সে হিসাবে এক সপ্তাহে ডলারের দরপতন হয়েছে ২ টাকা ৯০ পয়সা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো: বিশ্বব্যাংক

এক বছর আগের তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান ‘সামষ্টিক অর্থনীতি’ অনেক ভালো অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট। রোববার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান। বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের মন্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা এখন খুবই ভালো। প্রায় এক বছর আগে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, পরিস্থিতি আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এখন মনে করছি, আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’ বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘জোহানেস জুট এখন থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম দেখবেন এবং তার অফিস ওয়াশিংটনের পরিবর্তে নয়াদিল্লিতে থাকবে। তিনি বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের চলমান বিভিন্ন প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার বিষয়ে অবহিত আছেন।’ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থিক খাত, পেমেন্ট ব্যালান্স এবং বৈদেশিক মুদ্রা খাতের উন্নত অবস্থা স্বীকার করেছেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি বেসরকারি খাতের বিকাশ এবং আরও বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলে স্বীকার করেছেন।’ এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে চাওয়া সব সহায়তা পেয়েছে। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ গ্রুপের বার্ষিক সভায় প্রত্যাশিত সহায়তার পরবর্তী ধাপ উত্থাপন করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আর্থিক খাতে বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) নেওয়া সংস্কার উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন শুরু হয়েছে এবং এনবিআরকে দুটি পৃথক সংস্থায় বিভাজনের সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বিশ্বব্যাংক। যদিও এতে কিছুটা সময় লাগবে। সালেহউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর, লালদিয়ায় কনটেইনার টার্মিনাল সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংক অবকাঠামো খাতে সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। মার্কিন শুল্ক ইস্যু নিয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও আলোচনা প্রতিনিধিদলের প্রধান দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট গতকাল (শনিবার) ঢাকায় এসেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংক এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যার বেশির ভাগই অনুদান বা স্বল্প সুদে ঋণ।

পারটেক্স গ্রুপের সম্পদ নিলামে তুলল ব্যাংক এশিয়া

পারটেক্স গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পারটেক্স কোল লিমিটেডের বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থানে গেছে ব্যাংক এশিয়া। ১১৬ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকটির মহাখালী শাখা থেকে এক নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঋণের কিস্তি নিয়মিতভাবে পরিশোধ না করায় পারটেক্স কোলের ঋণ ‘ডিফল্ট’ হিসেবে শ্রেণিকৃত হয়েছে। ২০২৫ সালের ৯ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটি বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিলামে তোলা সম্পদের মধ্যে রয়েছে ২৫৯.৩৬ শতক জমি এবং ঢাকা ও গাজীপুরে অবস্থিত বিভিন্ন কারখানার ভবন। এসব সম্পদের দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ৩ আগস্ট। নিলামে পারটেক্স কোলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবেল আজিজসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। রুবেল আজিজ একইসঙ্গে সিটি ব্যাংকের একজন পরিচালক এবং পারটেক্স কোল লিমিটেডের অর্ধেক মালিকানার অংশীদার। ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী নিলাম ডাকতে হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি যদি আগেই ঋণ পরিশোধ করে, তাহলে নিলাম স্থগিত করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, যেকোনো ব্যাংকের পরিচালক যদি অন্য ব্যাংকে ঋণ খেলাপি হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রুবেল আজিজের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গঠিত পারটেক্স কোল লিমিটেড ২০১৫ সাল থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি দেশের সাতটি বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে তা সরবরাহ করে আসছে।

এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ পেলো ওয়ালটন

এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস-এর তৃতীয় সংস্করণে (২০২৫) তিনটি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের টেক জায়ান্ট ও সুপারব্র্যান্ড ওয়ালটনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। টেকসই ক্লিন এনার্জি উদ্যোগের জন্য ওয়ালটন অর্জন করেছে ‘এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’। পাশাপাশি বর্ষসেরা সবচেয়ে টেকসই ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতেও এই পুরস্কার পেয়েছে ওয়ালটন। এছাড়াও টেকসই উদ্যোগের মাধ্যমে জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষায় অসামান্য অবদান রাখায় ‘অনারেবল মেনশন’ ব্র্যান্ড হিসেবেও ওয়ালটনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। শনিবার (১২ জুলাই, ২০২৫) রাতে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওয়ালটনকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ‘এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস-২০২৫’ প্রদান করা হয়। পুরস্কার গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম। পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ওয়ালটন হাই-টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, "তিন ক্যাটাগরিতে ‘এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ অর্জন করায় ওয়ালটন পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। ওয়ালটনকে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।" তিনি জানান, উন্নতমানের ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য সামগ্রী উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় ওয়ালটন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব বিশ্বের সর্বাধুনিক মেশিনারিজ ও প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে কমপ্লায়েন্স মেনে চলছে ওয়ালটন। এছাড়াও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ওয়ালটন ফ্যাক্টরিতে পরিবেশবান্ধব রুফটপ সোলার প্রজেক্টসহ এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফ্রিজ ও এসিতে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক সিএফসি এবং এইচসিএফসি গ্যাস ফেজ আউট প্রকল্প বাস্তবায়নসহ পরিবেশ সুরক্ষায় মেটাল ও প্লাস্টিক রিসাইকেলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছরসহ দুইবার গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড এবং জাতীয় পরিবেশ পদক অর্জন করেছে ওয়ালটন। সাসটেইনেবল ব্র্যান্ড ইনিশিয়েটিভ ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের উদ্যোগে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া। এ বছর ২২টি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন গ্রহণ করা হয়। ২৬ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন সময়কালে মোট ৪৫৭টি মনোনয়ন জমা পড়ে। যেখান থেকে কঠোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’সহ ৬০টি টেকসই উদ্যোগকে ‘এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস-২০২৫’ প্রদান করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বড় অগ্রগতি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং ১০ দিনে বেড়েছে ৩৬%

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) দায়িত্ব নেওয়ার পর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে ২২৫ টিইইউএস (TEUs) কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। গত ১০ দিনে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের হার ৩৬.৪ শতাংশ বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ৩ জুলাই যেখানে ২,২৩৩ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল, সেখানে ১৩ জুলাই রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,০৪৭ টিইইউএস-এ। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রোববার (১৩ জুলাই) একটি পোস্টে জানানো হয়, ৭ থেকে ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড মোট ১০টি জাহাজের কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে এনসিটির চারটি জেটিতে একযোগে চারটি জাহাজে অপারেশন চলছে। আরও বলা হয়, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের অধীনে ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২,৯৫৬ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হতো। কিন্তু ৭ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম ড্রাইডক প্রতিদিন গড়ে ৩,১৮১ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডল করেছে। প্রসঙ্গত, এনসিটি দীর্ঘদিন পরিচালনা করে আসছিল সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। তবে ৬ জুলাই তাদের সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে পরদিন ৭ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড নতুনভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই পরিবর্তন আনা হয়।

চুক্তিভিত্তিক বাণিজ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ইউআরসি অনুসরণ বাধ্যতামূলক: বাংলাদেশ ব্যাংক

বিক্রয়-চুক্তির ভিত্তিতে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষভাবে ডকুমেন্টারি কালেকশন পদ্ধতিতে লেনদেন হলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত "ইউনিফর্ম রুলস ফর কালেকশন (ইউআরসি)" অনুসরণ বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, অনুমোদিত তিনটি লেনদেন পদ্ধতি অগ্রিম অর্থপ্রদান, ডকুমেন্টারি কালেকশন এবং ওপেন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বাণিজ্যিক লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে অবশ্যই দেশের বিদ্যমান আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক লেনদেনে ব্যাংকগুলো এলসি (লেটার অব ক্রেডিট)-ভিত্তিক লেনদেন করে, যেখানে ইউনিফর্ম কাস্টমস অ্যান্ড প্র্যাকটিস (ইউসিপি) নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এবার বিকল্প পদ্ধতির ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা মেনে চলার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ডকুমেন্টারি কালেকশন পদ্ধতিতে রপ্তানিকারকের ব্যাংক আমদানিকারকের ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠায়, যা নির্দিষ্ট শর্তে অর্থ পরিশোধ বা প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে হস্তান্তর করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংক কোনো আর্থিক নিশ্চয়তা দেয় না, বরং শুধুমাত্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। এ ব্যবস্থাকে পরিচালিত করে ইউআরসি নিয়মাবলি। ব্যাংক ও বাণিজ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর জন্য সময়োপযোগী ও সহায়ক হবে। এলসি ভিত্তিক লেনদেনে ইউসিপি এবং বিক্রয়-চুক্তিভিত্তিক কালেকশন পদ্ধতিতে ইউআরসি অনুসরণ বাধ্যতামূলক করায় আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী লেনদেনের নিরাপত্তা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মাত্র ১২ দিনে রেমিট্যান্স আসছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে। এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।

এনবিআর নামটি আর থাকবে না: ফাওজুল কবির

এনবিআর নামের প্রতি মানুষের একটি নেগেটিভ ধারণা রয়েছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এ কারণে এই নামটি আর থাকবে না। রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব বাস্তবায়ন নামে দুটো বিভাগ যেটা হয়েছে, এখন থেকে সেটাই থাকবে। দুই বিভাগের জন্য দুজন সচিব থাকবেন।রবিবার (১৩ জুলাই) সকালে সচিবালয়ে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, এনবিআর সংস্কার নিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। শব্দ গঠনেও ছিল কিছু ভুল। উপদেষ্টা কমিটি সেগুলো সংশোধনের সুপারিশ করবে। এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এক পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছিল। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করা ও রাজস্ব আদায় বাধাগ্রস্ত করাই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল। ফাওজুল কবির খান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তারা সরকারের আস্থা হারিয়েছেন। তাদের কর্ম তৎপরতার মাধ্যমেই সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের অর্থনীতি প্রত্যাশার জায়গায় না এলেও এখন গতিশীল হয়েছে।

ঢাকা সফরে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট

বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট ঢাকায় পৌঁছেছেন। চার দিনের এই সরকারি সফরে জুট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। জুট চলতি বছরের ১ জুলাই বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নতুন ভূমিকায় বাংলাদেশ তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। এর আগে তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জুট বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আমার গড়ে ওঠা বন্ধুত্বের অনেক মধুর স্মৃতি রয়েছে। আমি সবসময় বাংলাদেশের মানুষের সহনশীলতা, সৃজনশীলতা এবং তাদের সন্তানদের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার দৃঢ় সংকল্প দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশে ফিরে গত দশ বছরে অর্জিত রূপান্তরমূলক পরিবর্তনগুলো সরাসরি দেখার অপেক্ষায় আছি। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথে থাকতে এবং প্রতি বছর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর জন্য আরও ভালো কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ডাচ নাগরিক জুট ১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাংকে যোগদান করেন এবং ক্রমবর্ধমান দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন। তিনি সম্প্রতি ব্রাজিলের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি অপারেশনাল পলিসি অ্যান্ড কান্ট্রি সার্ভিসেস ভাইস প্রেসিডেন্সিতে কৌশল, ফলাফল, ঝুঁকি এবং শিক্ষা পরিচালক ছিলেন। তিনি তুরস্ক, কমোরোস, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, সেশেলস এবং সোমালিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিল যারা বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল। তখন থেকে বাংলাদেশকে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যার বেশিরভাগই অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণ। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) দ্বারা সমর্থিত বৃহত্তম চলমান কর্মসূচিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের একটি রয়েছে।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা অব্যাহত থাকবে

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার বাণিজ্য আলোচনার তৃতীয় ও শেষ দিনে উভয় দেশ বেশ কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দু’পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা অব্যাহত রাখার। দু’দেশের প্রতিনিধিরা আবারো আলোচনায় বসবেন, সেটি ভার্চুয়ালি এবং সামনাসামনি উভয়ভাবেই হতে পারে। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত সময় ও তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্য সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব আজ ১২ জুলাই দেশে ফিরবেন। প্রয়োজনে তারা আবারো যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তিন দিনের আলোচনার ভিত্তিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ৯ জুলাই এই বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়। গতকাল দ্বিতীয় দফার আলোচনার মাধ্যমে এটি শেষ হয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া ভার্চুয়ালি আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তিন দিনের এই আলোচনার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেছে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস।

টানা বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ, ভোগান্তিতে ভোক্তারা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার, আগারগাঁও তালতলা, কারওয়ান বাজার, পলাশী, রামপুরা, মালিবাগ ও হাজিক্যাম্পসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ মাত্র তিনদিন আগেও এর দাম ছিল ৮০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। পাইকারি বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে, যেখানে তিন দিন আগেও দাম ছিল মাত্র ৬০ থেকে ১০০ টাকা। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও রোববার থেকে আবার বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে মরিচ চাষে ক্ষতি হয়েছে এবং সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এতে দাম বেড়েছে অনেকটা। সেইসঙ্গে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভোক্তারা জানান, সাধারণ সময়ে যেসব পণ্য তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী ছিল, এখন তা কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। কাঁচা মরিচের এমন দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি চাপে পড়েছে।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি, বেশ কিছু বিষয়ে হয়েছে সমঝোতা

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনার দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দেশ। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই তথ্য জানান। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় উভয় পক্ষ ভবিষ্যৎ বাণিজ্য কাঠামো ও শুল্কনীতি নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করে। বেশ কিছু বিষয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া হলেও কিছু ইস্যু এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ারের একান্ত বৈঠক। ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক অবস্থান ও শুল্কসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। সেখানে শেখ বশিরউদ্দীন বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং ন্যায্য শুল্ক নীতির দাবি জানান। প্রধান উপদেষ্টার পোস্টে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়াতে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। উল্লেখ্য, তিন দিনব্যাপী এই শুল্ক আলোচনা পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আলোচনায় বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরীও অংশ নিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত গ্রেপ্তার

অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) মামলা থাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ধানমন্ডিতে অভিযান চালিয়ে আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হবে।’ আবুল বারকাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের নামে মামলা করে দুদক। সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও আবুল বারকাত পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে এই টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। আতিউর রহমান, তাঁর সহযোগী অন্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন অনৈতিক কৌশলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ২২ বছরে সর্বনিম্ন, খুলছে নতুন দুয়ার

যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পোশাক আমদানি মে মাসে ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের কারণে আমদানির এই ধস নেমেছে। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে ৫৫৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা এপ্রিলে ছিল ৭৯৬ মিলিয়ন ডলার। এটি টানা চতুর্থ মাসের পতন। এর আগে এত কম আমদানি হয়েছিল ২০০৩ সালের মে মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতারা ক্রমেই চীনা পণ্যের বদলে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও মেক্সিকোর দিকে ঝুঁকছেন। মেক্সিকো থেকে পোশাক আমদানি মে মাসে ১২ শতাংশ বেড়ে ২৫৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর উৎস বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর এই প্রবণতা নতুন নয় এবং সামনের মাসগুলোতে উৎসবের মৌসুমের সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য এই পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জের হতে পারে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স

তারল্য সংকটে থাকা ৯ ব্যাংক ব্যর্থ এসএলআর সংরক্ষণেও

তারল্য সংকটে থাকা ৯ ব্যাংক এসএলআর (বিধিবদ্ধ তরল স্থিতি) সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এসব ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা দিতেও পারছে না। কোনো কোনো ব্যাংক আবার গ্রাহকদের সারাদিন বসিয়ে রেখেও টাকা না দিয়ে পরের দিন আসতে বলছে। এতে ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে আতঙ্কে আছেন গ্রাহক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকের সব আমানতকারী তাদের আমানত ফেরত পাবেন। এর মধ্যে কিছু ব্যাংক একীভূত হবে, তবে গ্রাহকের টাকা গ্রাহক ঠিকই পাবেন। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএলআর না রাখতে পারা তারল্য সংকটের স্পষ্ট প্রতিফলন। দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যা চলতে থাকলে ব্যাংকিং কার্যক্রম হুমকিতে পড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে ১৩ শতাংশ এসএলআর সংরক্ষণ করতে হয়। এছাড়া ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৫ শতাংশ এসএলআর সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকগুলো এসএলআরের অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, নিয়ম ভাঙার কোনো ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। নিয়মের ব্যত্যয় হলে জরিমানা দিতেই হবে। ব্যাংকগুলো এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে তারল্য সংকট, গ্রাহক আমানত কমে যাওয়া ও আগের অনিয়মকে দায়ী করেছে। এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বলছেন, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে এবং সমস্যার সমাধানে সময় প্রয়োজন। জানা গেছে, এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থতার কারণে কিছু ব্যাংক জরিমানাও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব ব্যাংকে সরাসরি তারল্য সহায়তা বন্ধ করে দেন। যদিও পরে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে কিছুটা সহায়তা দেওয়া হয়।

ব্যাংক খাত ধ্বংসের অভিযোগে তিন সাবেক গভর্নরের নথি তলব

বিগত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি ও লুটপাটের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে দুর্বল করে ফেলার অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সংস্থাটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা তিনজনের নথিসহ ২৩ ধরনের নথি তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে। সাবেক তিন গভর্নর হচ্ছেন- আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। একইসঙ্গে ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার পর নতুন নীতিমালা জারি হওয়ার পর সুবিধাপ্রাপ্ত বেক্সিমকো গ্রুপ, এম আর গ্রুপ, রতন গ্রুপ, কেয়া গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, থার্মেক্স গ্রুপ, শিকদার গ্রুপ, বিবিএস গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ, এনানটেক্স গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহণের বিস্তারিত নথি চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির নথিও তলব করা হয়েছে। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, ঋণ খেলাপিদের ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি, রিজার্ভ চুরি, হলমার্ক জালিয়াতি, হলমার্ক জালিয়াতি, এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে বিগত ১৫ বছর ব্যাংক খাত ধ্বংস করা হয়েছে।

পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে বাংলাদেশ

চ্যালেঞ্জের মধ্যেও একক দেশ হিসেবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গত বছরও বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যদিও এসময় বাজার কমেছে দশমিক ৪৮ শতাংশ। বাংলাদেশের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম, আর প্রথম স্থানে চীন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস: কি ইনসাইটস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। চলতি মাসে ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বৈশ্বিক পণ্য ও সেবা বাণিজ্য ৪ শতাংশ বেড়ে ৩১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। টানা দুই বছর ধরে (২০২৩ ও ২০২৪ সাল) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। গত বছর রপ্তানি আয় ছিল ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার আর প্রবৃদ্ধি দশমিক ২১ শতাংশ। রপ্তানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাজার হিস্যা কমে গেছে বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছর সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ২৫ কোটির বিশেষ তহবিল করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে অনুদান এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য এ তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। বিশেষ এ তহবিলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে দেবে ১৪ কোটি টাকা। বাকি ১১টি ব্যাংক এক কোটি টাকা করে দেবে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সব ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে আজ দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভা শুরুর আগে বিভিন্ন সূচকে ভালো অবস্থানে থাকা ১১টি ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন গভর্নর। সেখানে এসব ব্যাংককে ১ কোটি টাকা করে যোগান দেওয়ার আহ্বান জানালে ব্যাংকগুলো তাতে রাজি হয়। এখন নিজ পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তহবিল হস্তান্তর করবে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো অর্থ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে হস্তান্তর করবে। বিশেষ এ তহবিল গঠনের জন্য বেশ আগ থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তহবিল আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।

ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা হজ ও ওমরাহ সেভিংস স্কিম: সঞ্চয়ে স্বপ্নপূরণ

হজ্জ ও ওমরাহ পালনে আগ্রহী ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে রয়েছে মুদারাবা হজ্জ সেভিংস অ্যাকাউন্ট (গঐঝঅ) ও মুদারাবা উমরাহ সেভিংস স্কিম। এ দুটি স্কিম গ্রাহকদের ধাপে ধাপে অর্থ সঞ্চয় করতে সহায়তা করে এবং আর্থিক ও মানসিক প্রস্তুতির মাধ্যমে পবিত্র হজ্জ ও ওমরাহ পালন সহজতর করে। এ সঞ্চয় হিসাবের মাধ্যমে গ্রাহকগণ হজ্জ বা ওমরাহ পালনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়- যেমন, ভিসা, বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য খরচের- অগ্রিম প্রস্তুতির মাধ্যমে নির্বিঘে পরিচালনা করতে পারেন। হজ্জ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তি তার সামর্থ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী এক থেকে পঁচিশ বছর মেয়াদে মুদারাবা হজ্জ সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। মুদারাবা পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ মুনাফা প্রদান করা হয় এ অ্যাকাউন্টে। গ্রাহক তার পরিকল্পনা ও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী হিসাবের মেয়াদের ভিত্তিতে কিস্তির পরিমাণ নির্ধারিত করতে পারেন বিধায় হজ্জের জন্য টাকা জমানো অধিকতর সহজ হয়। গ্রাহক হিসাবের পূর্বনির্ধারিত মেয়াদের পূর্বেই হজ্জ সম্পাদনে আগ্রহী হন তাহলে তিনি তাঁর মুদারাবা হজ্জ সঞ্চয় হিসাবে জমাকৃত অর্থের সাথে ঐ বছর নির্ধারিত হজ্জের টাকার অবশিষ্টাংশ জমা করে হজ্জ পালন করতে পারবেন। একইভাবে ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তি তার সামর্থ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ১-১২ বছর মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে উমরাহর টাকা জমা করতে পারেন। ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব ব্যক্তি নিজ নামে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার নামে পিতামাতা অথবা আইনগত অভিভাবক এই হিসাব খুলতে পারবেন। মুদারাবা পদ্ধতিতে মুনাফা প্রদান করা হয় এ অ্যাকাউন্টে। ইসলামী ব্যাংকের যেকোন শাখা, উপশাখা কিংবা এজেন্ট আউটলেটে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। হিসাব খোলার জন্য হিসাবধারী ও নমিনির এক কপি করে মোট দুই কপি সত্যায়িত ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্টের কপি দিয়ে এ হিসাব খোলা যায়। সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করেও গ্রাহক নিজে নিজে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। মাসিক কিস্তির টাকা পরিশোধে কোন ঝামেলা নেই। শাখায় সঞ্চয় হিসাব থেকে হজ্জ ও ওমরাহ অ্যাকাউন্টে মাসিক কিস্তির টাকা স্থানান্তরের জন্য “বিশেষ নির্দেশনা” প্রদানের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা যায়। এছাড়া সেলফিন অ্যাপ ও আই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিজেই কিস্তির টাকা ট্রান্সফার করতে পারেন।

দর কষাকষির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঠিক হবে: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘ওয়ান টু ওয়ান নেসোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা ঠিক হবে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল ৯ জুলাই ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে।’ আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ওখানে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা আছেন। উনি ৩ দিন আগে গেছেন। আজকেই কমার্স টিম যাচ্ছে। ৮ তারিখে মিটিং। ওদের ৮ তারিখ মানে আগামীকাল বুধবার খুব ভোরবেলা। মিটিংয়ের পর আমরা বুঝতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘শুল্ক যেটা যেটা দিয়েছেন সেটা ঠিক অফিসিয়াল…। ইউএসটিআরের সঙ্গে আলাপ করবে উনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) ম্যান্ডেটরি। এর আগের দিন কথা বলেছেন। কালকের পর আপনারা বুঝতে পারবেন।’ মিটিংয়ে কি কোনো উন্নতি হওয়ার আশা করা যায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা আশা করি। যাই হোক, সেটার প্রেক্ষিতে আমরা অন্যান্য পদক্ষেপগুলো নেব। এখন বৈঠকটা মোটামুটি পজেটিভ। ৬ তারিখ একটা মিটিং হয়েছে, মোটামুটি পজেটিভ আছে।’ চিঠি তো ইতোমধ্যে ইস্যু হয়ে গেছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট দিয়েছে। এটা ওয়ান টু ওয়ান যখন নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। চিঠি তো বহু আগে দিয়ে দিতো, ৩৫ শতাংশ। এইটা আবার ১৪টা দেশের জন্য বলছে একই। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে, সে জন্যই তো ইউএসটিআরে সঙ্গে কথা বলা। এটা ফাইনাল না।’ ভিয়েতনাম চেষ্টা করে ২৬ শতাংশ কমিয়েছে, বাংলাদেশের কেন মাত্র ২ শতাংশ কমানো হলো। তার মানে কি নেগোসিয়েশন ভালো হয়নি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না না নেগোসিয়েশন….। এটা ঠিক যে আমাদের ডেফিসিট মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ১২৫ বিলিয়ন ডলার। ওখানে কিন্তু ওরা মোটামুটি কনসেশন দিতে পারে, মানে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এত কম ডেফিসিট। আমরা চেষ্টা করছি যে আমাদের এত কম ডেফিসিট, এত শুল্ক দেওয়ার তো জাসটিফিকেশন থাকে না।’ তিনি বলেন, ‘ওরা যেটা করছে ব্ল্যাঙ্কেট কতোগুলো করেছে। চায়নার জন্য আলাদা। একেবারে চায়নার একটা সিঙ্গেল হ্যান্ডেলে ডিল করে ওরা। আর বাকিরা… এটা যেটা করেছে ১৪টা দেশের একই বলেছে। এখন আমরা নেগোশিয়েট করব।’ চিঠিতে যে সমস্ত কন্ডিশন দেওয়া হয়েছে এগুলো কি ফুলফিল করা সম্ভব? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমি কিছু বলতে পারব না।’ রাজস্ব আয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এইবার কালেকশন যা হয়েছে মোটামুটি, একেবারে বিরাট গ্যাপ না। আর আগামী বছর আমরা চেষ্টা করছি শুধু ট্যাক্স, ভ্যাট না দিয়ে সিস্টেমটা চেঞ্জ করলে দেখবেন কালেকশনটা অনেক বেশি হবে। লিকেজ হবে না, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাত করে কিছু করতে পারবে না। আমাদের ট্যাক্স ক্যাপাসিটি ভালো, কিন্তু আমরা সেটা ইউটিলাইজ করতে পারিনি। সে কারণে রেভিনিউ কিছুটা শর্ট।’