‘বন্দর বাঁচাতে করিডোর রক্ষায়’ বামপন্থিদের রোড মার্চ

জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে দুই দিনের ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চ শুরু করেছে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে বামপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দিন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও হয়ে বিকেলে কুমিল্লার টাউন হল ময়দানে সমাবেশ করবে। দ্বিতীয় দিন সকাল নয়টায় ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে মীরসরাই পৌঁছে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। সেখান থেকে বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে সমাপনী সমাবেশ করে তাদের রোড মার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি করবেন। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে গিয়ে তার সমাপ্তি করবে। রোড মার্চ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তাদের রোড মার্চ কর্মসূচি পালনের চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো— নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করতে হবে; রাখাইনে করিডোর দেওয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; স্টারলিংক, সমরাস্ত্র কারখানা, করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে; এবং মার্কিন ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী আধিপাত্যবাদী দেশসমূহের সঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারসহ বিগত সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ করতে হবে ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে। এ সময় রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আগামীকাল বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে ঐতিহাসিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ রোড মার্চ কর্মসূচি শেষ করবো। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি-হৃৎপিণ্ড। আমরা আশা করব বিগত সরকারের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্দরকে ইজারা দেয়াসহ যে কাজ করতে চাইছেন তার থেকে তারা পিছু হটবেন। আর এটা নিয়ে আগামীকাল রোড মার্চের শেষে আর কোনো বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে হবে না। কিন্তু যদি সরকার এই দায়িত্ব পালন না করে তাহলে আগামীকাল সমাপনী সমাবেশ থেকে আমরা ঘোষণা পাঠের সঙ্গে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, বাসদ (মার্কসবাদী) এর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সভাপতি মফিজুর রহমান লালটু, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি এ্যাড আবদুস সবুর খান, বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্তসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়: আমিনুল হক

বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেছেন, বিএনপি মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চায়, মাদকমুক্ত প্রতিটি এলাকা গড়তে চায়, পুরো বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত রাখতে চায়। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর মিরপুর ও কাফরুল থানা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য ফরম বিতরণ ও নবায়ন কর্মসূচির দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আমিনুল হক বলেন, আমাদের অনেক সন্তান, তরুণ প্রজন্ম এবং যুবসমাজ মাদকের করাল গ্রাসে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। তাই আমরা চাই মাদক নিয়ন্ত্রণে এনে জনগণকে সচেতন করতে। প্রত্যেকটি পরিবার, প্রতিবেশী ও নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হবে। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে প্রায় ৮৩ লাখ তরুণ মাদকের ভয়াবহ ছোবলে আক্রান্ত। বিএনপি মাদকসেবীদের প্রথমে সতর্ক করে সচেতন করতে চায়। এরপরও যদি তারা সংশোধন না হয়, তবে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে। চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানিয়ে আমিনুল হক বলেন, বিএনপি কখনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ বা মব সৃষ্টিকারীদের সমর্থন করে না। বর্তমানে যারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে, তারা পতিত আওয়ামী লীগ। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে এসব স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে তিনি অভিযোগ করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালের জন্য নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ, সহনশীল ও ধৈর্যশীল থাকলে এসব ষড়যন্ত্র সফল হবে না। দলের সদস্য ফরম নবায়নে সতর্কতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৃণমূলের পরীক্ষিত, জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন ও নিবেদিত নেতাকর্মীদের সদস্য পদ নবায়ন করবো। কিন্তু যারা গত ১৭ বছর ধরে সুবিধাবাদী আচরণ করে রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন, তাদের সদস্যপদ নবায়ন করা হবে না। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এবিএমএ রাজ্জাক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত), গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ, মুহাম্মদ আফাজ উদ্দিন, হাজি মুহাম্মদ ইউসুফ, মো. শাহ আলম প্রমুখ। পরে বিকেলে কাফরুল থানা বিএনপি আয়োজিত সদস্য ফরম নবায়ন কর্মসূচিতেও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আমিনুল হক।

গণঅভ্যুত্থান দিবস ঘিরে বিএনপির ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

গণঅভ্যুত্থান দিবস (৬ আগস্ট) সামনে রেখে ৩৬ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রুহুল কবির রিজভী জানান, এই কর্মসূচি শুরু হবে ৩০ জুন রাত ১২টা ১ মিনিটে—অর্থাৎ ১ জুলাইয়ের প্রথম প্রহরে—কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে। মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিটি পালন করবে ছাত্রদল। তিনি জানান, ৬ আগস্ট স্বৈরাচারের গুম ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটবে। তবে ৫ আগস্ট সরকারের নানা কর্মসূচি থাকায় ওইদিন বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন রিজভী।

শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির ছাত্রত্ব কীভাবে থাকে?

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, ছাত্রশিবিরের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছে। সে সম্ভবত ২০০৮-০৯ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার কীভাবে ছাত্রত্ব থাকে? বাংলাদেশের একটি গুপ্ত বাহিনীর একটা আলবটর বাহিনী রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর যারা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তারা আপনাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি-সেক্রেটারি কত সেশনের শিক্ষার্থী, তা স্পষ্ট করবেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে ছাত্রদলের মাসব্যাপী ফরম বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ছাত্রশিবির ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করতে চেষ্টা করছে। বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারির ছাত্রলীগ করার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের ক্ষেত্র হিসেবে নিজেদের ব্যবহার করছে। ছাত্রলীগের পুনর্বাসন হিসেবে এ ছাত্র সংগঠনগুলো তৈরি হচ্ছে। রাকিব বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিতে যারা নিষ্ক্রিয় আছেন তাদের ৫-৬ দিনের মধ্যে তালিকা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্যই ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি যাচাই-বাছাই করার পর প্রতি ডিপার্টমেন্টে কমিটি ঘোষণা করব। রানিং শিক্ষার্থীদের দিয়েই বিভাগের কমিটি দেওয়া হবে। এ সময় জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, জবি ছাত্রদল বহু গুম খুনের শিকার হয়েছে। এখনো গুম অবস্থায় রয়েছে। এখনো তাদের লাশ খুঁজে পাইনি। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক নিজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সঞ্চালকের বক্তব্যে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফীন বলেন, আমাদের যেসব নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মূল্যায়ন করবেন। এ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত, জবি যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান রুমি, কাজী জাফর, সুমন সরদার, মাহমুদ হাসান, পরাগ হোসেনসহ বিভিন্ন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান হাসনাত-সার্জিসের

আন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে পৃথকভাবে এ মন্তব্য করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, 'নতুন বাংলাদেশের প্রকৃত জন্মদিন ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট নয়।' হাসনাত লিখেছেন, 'নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৫ আগস্টে। ৮ আগস্ট নয়। ছাত্র ও সাধারণ জনতার রক্ত-ঘাম আর বিপ্লবের এই অর্জনকে সরকারের একচেটিয়া করে নেওয়ার প্রয়াস মেনে নেওয়া যাবে না।' আন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম সার্জিস আলম। তিনি ফেসবুকে লিখেন, ৮ আগস্ট ২য় স্বাধীনতা শুরু হয়নি, ২য় স্বাধীনতা নষ্টের, ছাড় দেওয়ার এবং বিপ্লব বেহাতের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস' এবং 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস'। এর আগে, গতকাল বুধবার (২৫ জুন) সরকার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। এ উপলক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে, যেখানে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি ওই পরিপত্র অনুযায়ী, দিনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা পালনের জন্য প্রস্তুতি নিতে। প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তবে, বিরোধী মহলের দাবি—প্রকৃত পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল ৫ আগস্টেই, যখন সাধারণ ছাত্র ও জনগণের আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়।

সংস্কার আলাপের চেয়ে খাওয়া-দাওয়া বেশি হচ্ছে: সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে চলা সংস্কার কার্যক্রমে আলাপ-আলোচনার চেয়ে খাওয়া-দাওয়া বেশি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে তিনি এও বলেছেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, চূড়ান্তভাবে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সালাহউদ্দিন এ মন্তব্য করেন। নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের বীজ বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমরা জানতাম ফ্যাসিবাদের পতন হবে। কিন্তু কবে, কখন ও কোন পদ্ধতিতে হবে- সেটা আমাদের জানা ছিল না।’ সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি সহযোগিতা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, দশ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না- এ প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। এখানেই ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়া হলো। এরপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে সেটি হবে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এ সময় বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে মালিকের চাকরি না করে বিবেকের চাকরি করেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

তুষারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলেন নীলা ইসরাফিল

অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগে এবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তদন্ত কমিটি বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন এনসিপির সাবেক সদস্য নীলা ইসরাফিল। অভিযোগপত্রের তিনি উল্লেখ করেছেন যে কীভাবে এনসিপি নেতা তুষারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) একটি কপি ফেসবুকে নিজের আইডিতে পোস্ট করেছেন। নীলার অভিযোগপত্রটি হুবহু তুলে ধরা হলো- তারিখ : ২৬ জুন ২০২৫ অভিযোগপত্র প্রেরক : নীলা ইসরাফিল পদবি : সদস্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ও ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি (৫১), জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রাপক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তদন্ত কমিটি কপি : নাহিদ ইসলাম, আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি আখতার হোসেন, সদস্য সচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি তারিখ: ২৬ জুন ২০২৫ বিষয় : এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক (স্থগিত) সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে অনৈতিক, যৌন হয়রানী ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ। প্রিয় তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ, আমি, নীলা ইসরাফিল, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একজন নিবেদিতপ্রাণ, আদর্শনিষ্ঠ এবং মেধাবী কর্মী হিসেবে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হিসাবে শুরু করে, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক দলের নীতিগত লড়াই, আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছি। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমার কাছে কোনো লোভ বা পদ-পদবির বিষয় নয়; এটি আমার নৈতিক ও আদর্শিক বেছে নেওয়া পথ, একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রের স্বপ্ন। আমার উত্থাপিত অভিযোগ আমি অত্যন্ত সাহস এবং একইসাথে দুঃখ, এবং মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে করছি, শুধুমাত্র নিজের সম্মানরক্ষার জন্য নয়, বরং সংগঠনের নারী সদস্যদের জন্য একটি নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিসর প্রতিষ্ঠার আশায়। প্রেক্ষাপট ও আমার অবস্থান: ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমি এক নির্মম সহিংসতার শিকার হই, আমার প্রাক্তন স্বামী মোয়াজ আরিফ ঢাকা ক্লাবে আমাকে হত্যার চেষ্টা করে, যদিও নিপীড়ন-নির্যাতন এবং যৌন হয়রানী বিবাহ বিচ্ছেদের পরে কয়েক বছর ধরে চলছিল। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য অপব্যবহার করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়। এই ঘটনায় আমি শারীরিক, মানসিক এবং সাংগঠনিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হই। শারীরিক ও মানসিক, সুরক্ষার স্বার্থে আমাকে বাংলাদেশ ত্যাগ করে নেপালে যেতে হয়। এই সময়টিতে সারোয়ার তুষার ছিলেন অনেকের মত আমার সঙ্গে যোগাযোগে থাকা রাজনৈতিক সহকর্মী, যিনি পূর্বেও আহত অবস্থায় অনেকের মত মানবিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। সেই আস্থার জায়গা থেকেই আমি তার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ চালিয়ে যাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পর্ককে তিনি ব্যক্তিগত ও অনৈতিক রূপ, যৌন হয়রানি করতে উদ্যত হন। সুনির্দিষ্ট অনৈতিক আচরণসমূহ: ১. নৈশকালীন ব্যক্তিগত ও আপত্তিকর আলাপ: তিনি প্রায়ই রাতের বেলা কল করে বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে কথা ভালো লাগে না, তোমার কণ্ঠে ভালো লাগে প্রতিবাদের স্লোগান’, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘একটা সুন্দর ছবি পাঠাও’ এই ধরনের মন্তব্য বারবার আমাকে অস্বস্তি ও অপমানের মধ্যে ফেলেছে। ২. ভিডিও কলে কথা বলার চাপ ও ব্যক্তিগত ছবি চাওয়া: আমি বারংবার অনুরোধ করেছি পেশাদার সীমা রক্ষা করতে। এরপরও তিনি বারবার ব্যক্তিগত আলাপের দিকে আলোকপাত করেন। ছবি চাইতেন এবং ভিডিও কলে কথা বলতে চাইতেন। ৩. ডিবি অফিসারের কাছে আমার সম্পর্কে মিথ্যা দাবি: তিনি বলেন, “তোমার বিষয়ে ডিবি অফিসার আমাকে প্রশ্ন করলে আমি বলেছি, তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড।” একজন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এ ধরনের ভ্রান্ত তথ্য প্রদান চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং আমার সামাজিক মর্যাদাকে হেয় করার শামিল। ৪. ফোনালাপ রেকর্ড ও প্রচারের ঘটনা: আমি যখন বুঝতে পারি, এই রাজনৈতিক সম্পর্ক আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ও মানসিকভাবে নিঃশেষ করছে, তখন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে তুষারের সঙ্গে কয়েকটি ফোনালাপ রেকর্ড করি। ১৬ জুন সেই রেকর্ডের একটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তুষার আমাকে চাপ দিতে থাকেন যেন আমি ফেসবুকে বলি, “তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।” আমি তখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফোনালাপও রেকর্ড করি এবং এগুলো কিছু মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রচারে সম্মতি দিই। কেননা, সেইগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানিমূলক, এবং যৌন হয়রানিমূলক অপরাধ করে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত করবার চেষ্টাও হয়েছিল অবিরত। দলীয় পদক্ষেপের অভাব ও হতাশা: ৭ জুন ২০২৫, ঈদের রাতে আমি বিষয়টি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জানাই এবং তুষারের দেয়া আপত্তিকর ম্যাসেজগুলো দেখাই। ওনার পরামর্শে ১৫ জুন (ঈদের ছুটির কারণে সব বন্ধ থাকায়) আমি মহানগর প্রতিনিধিদের শাহরিয়ার ও নিজামকে বিষয়টি জানাই। এখানে বলে রাখা ভাল, দুইজন পুরুষ সহকর্মী নিকট এই বিষয়ে আলাপ করতে অস্বস্তি বোধ করি, যার ফলে পরে আমি জ্যেষ্ঠ আহ্বায়ক সামান্তা শারমীনকেও বিষয়টি জানাই। ১৬ জুন রেকর্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ার ছড়িয়ে পড়লে আমি আবার এনসিপির প্রধান কার্যালয়ে যাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলে সাংগঠনিকভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য। কিন্তু কারো কাছ থেকে তেমন কোন সাড়া না পেয়ে রাতে বাসায় ফিরে আসি। আমার এই কঠিন সময়ে দলের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনো লিখিত বিবৃতি, সহানুভূতি বা সুরক্ষা প্রদান করা হয়নি। ১৯ জুন এনসিপির পক্ষ থেকে আমাকে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলা হয়। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্বশীল বা আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; এই ধরনের নীরবতা, গা-ছাড়া আচরণ, এবং একটি নারীর সম্মান নিয়ে কৌশলগত নিঃস্পৃহতা একটি প্রগতিশীল দলের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সাথে, আমি বলতে চাই, রাজনীতিতে একজন নারী হিসেবে পথ চলাটা সহজ নয়, শিল্পী হিসাবেও বুঝেছি অনেক আগেই । কিন্তু সত্য বলার পর, দলের ভেতরে যে ভয়াবহ মানসিক নিপীড়নের মুখে পড়তে হবে, সেটা কল্পনাও করিনি। আপনারা মনে করতে পারেন, আমার লিখা এবং তুষারের সাথে রেকর্ডিং ছড়িয়ে মব করতে চেয়েছি, ভুল আপনারা, আমার লিখা এবং তুষারের সাথে রেকর্ডিং তুষারের অপরাধের প্রমাণ। আপনারা জেনে অবাক হবেন, তুষারের বিপক্ষে অভিযোগ জানানোর পরে; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- ফেসবুক, WhatsApp এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে গ্রুপে শুরু হয়ে গেল উশৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলা (মব ট্রায়াল) দলবদ্ধভাবে নিন্দা, অপপ্রচার, চরিত্রহননের চেষ্টা। এই কোনো আইনি প্রক্রিয়া নয়। এটা এক ধরণের ডিজিটাল লিঞ্চিং। আপনাদের জেনে রাখা ভালো, কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে "মত তৈরি" করছেন, গুজব ছড়াচ্ছেন, এবং আমার সম্মান এবং আত্মমর্যাদাকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আপনারা এই বিষয়ে অবগত নন? কোন ব্যবস্থা কি নিয়েছেন? কোন কর্মী যদি এই ভুক্তভোগীকে অপরাধিকরণ করে কোন নীতিমালা আছে? এটাই কি আপনাদের দলীয় চেতনা এবং নৈতিকতা, যার কথা বলে আমরা জনগণের সামনে দাঁড়াই? আমার স্পষ্ট দাবি ও প্রত্যাশা: ১. একটি নিরপেক্ষ, নারীবান্ধব এবং স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ২. নারী কর্মীদের জন্য স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা (Internal Complaint Redressal Mechanism) অবিলম্বে চালু করা হোক। ৩. এনসিপি এই ঘটনায় দায় এড়িয়ে নয়, বরং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে সাহসী রাজনৈতিক অবস্থান নিক, যা দলকে আরও বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নীতিনিষ্ঠ করে তুলবে। আমি এই অভিযোগ করেছি দীর্ঘ আত্মসংযমের পর, অনেক চিন্তা ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে। আমি দলীয়ভাবে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি এবং বিশ্বাস করি, সত্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে এনসিপি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, যেখানে নারী কর্মী কেবল ভুক্তভোগী নয়, বরং সম্মানিত ও নিরাপদ রাজনৈতিক অংশীদার। নিবেদক, নীলা ইসরাফিল সদস্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি (৫১)

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন এমপিরা: সালাহউদ্দিন

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে উভয়পক্ষের এমপিরা স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন— ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি এমন প্রস্তাব করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা যে সংস্কার প্রস্তাব করেছি তাতে সব দল একমত হয়েছে। আমরা আরেকটি প্রস্তাব করেছি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে উভয়পক্ষের এমপিরা স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। সেটা আরেকটা বিপ্লব হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর করার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছি, এটাও বড় ধরনের অর্জন। আমরা যদি প্রতিক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে সীমাবদ্ধ করি আইনিভাবে ও সাংবিধানিকভাবে, তাহলে কিন্তু নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হবে। তখন রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করা যাবে না। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক ঐক্যর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকতে হবে। সেজন্যই আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। স্বচ্ছ নিরপেক্ষ এবং নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে, তাহলে কিন্তু স্বৈরাচারের উৎপত্তিটা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী দাঁড় করানো যাবে না। তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগকে খর্ব করার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না। নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে। বিচার বিভাগ ও আইন সভাকে তার কাজ করতে দিতে হবে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে একটা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো প্রয়োজন, যাতে তারা নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাহলে এদেশে আর কোনোদিন স্বৈরাচারের উৎপত্তি হবে না। সব রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারা কেউ চাইবেন কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, আরেকজন চাইবেন অকল্যাণমূলক রাষ্ট্র– এগুলো যেন না হয়। সবার মধ্যে যেন একটা কমন আদর্শ থাকে যে আমরা সবাই জনগণের মুক্তি চাই। বৈষম্যহীন সাম্যভিত্তিক মানবিক মর্যাদা ভিত্তিক সামাজিক সুবিচারের রাষ্ট্র চাই। এখানে যেন আমরা সবাই কার্যত এক হতে পারি। ভাষণের মধ্যে নয়। কারণ এই দেশে আমরা ভাষণ অনেক দিয়েছি। এখন আমরা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছি যেই জায়গায় শহীদের রক্ত। পিচ্ছিল রাজপথের ওপরে তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল অনেক, প্রত্যাশা ছিল অনেক। সে আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা যেন আমরা পূর্ণ করতে পারি। তিনি বলেন, আপনারা এখানে সংস্কার নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু হতাশা কেউ ব্যক্ত করেন নাই। কারণ আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ। আলাপ আলোচনা চলছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমরা একটা জায়গায় ঐক্যতে আসতে পারব। আমরা ঐক্যে আসার জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে কি কি বিবেচনা নিয়েছি জাতীয় স্বার্থ আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন। আমরা বলেছি ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে বসতে পারবেন না। এখানেই স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়া হলো। আলোচনা সভায় এর আগে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনকে দাপট মুক্ত করতে হলে ধর্মের অপব্যবহার, প্রশাসনের দলীয়করণ করা বন্ধ করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য কী, তাদের মনে কী আছে? গত ১৬ বছর দেশের জনগণ ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও জাতীয় নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেছে। কেউ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে অন্তত এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে। তাই এসব খেলা বন্ধ করেন। দড়ি নিয়ে বেশি টানাটানি না করি। কারণ বেশি টানাটানি করলে দড়ি ছিড়ে যাবে। নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- ১২ দলীয় জোটপ্রধান ও জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্য সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।

অবৈধ নাগরিকদের নয়, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করুন

বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ভারত প্রতিদিন হাজার হাজার ভারতীয় বাংলা ভাষাভাষী নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজের দেশের নাগরিকদের নয়, যে হাসিনাকে অবৈধভাবে আদর-আপ্যায়ন করে রেখেছেন, তাকে পুশ-ইন করুন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। দুদু বলেন, ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করলেও গত পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা ভারতের কাছ থেকে বন্ধুসুলভ আচরণ পাইনি। যেটা পেয়েছি সেটা খুবই মর্মান্তিক। আমাদের তিস্তা নদীতে পানি নেই। পানি চুক্তিও নেই। ৫০ বছর ধরে ভারত চুক্তির কথা বললেও তারা চুক্তি করছে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা মর্মান্তিক। প্রতিদিন বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে ভারত সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক যারা টাকা চুরি করে ভারতে পালিয়েছে, তাদেরকে পুশ করুন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যাকারীকে আপনারা আদর-আপ্যায়ন করে অবৈধভাবে রাখবেন, আর আপনার নাগরিককে পুশ করবেন, এটা ঠিক না। সাধারণ জনগণের উদ্দেশে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, সবচেয়ে বড় হত্যাকারী হচ্ছে শেখ হাসিনা। তাকে বাংলাদেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে...এবং ভারত যে অন্যায় করছে, এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিবাদ করতে হবে। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, কৃষকদলের দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদী, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জুয়েলসহ প্রমুখ।

তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলেন নীলা ইসরাফিল

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক (স্থগিত) সরোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য নীলা ইসরাফিল। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই অভিযোগপত্রটি প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে এনসিপির গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে নীলা ইসরাফিল উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে শারীরিক, মানসিক ও সাংগঠনিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তখন এনসিপির নেতা সরোয়ার তুষার তাকে সহানুভূতিশীল ও সহায়তাকারী হিসেবে পাশে দাঁড়ালেও, পরবর্তীতে সেই সম্পর্ককে ব্যক্তিগত ও অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেন। নীলা ইসরাফিল অভিযোগ করেন, তুষার প্রায়ই রাতের বেলা ফোন করে বলতেন— ‘রাজনীতি নয়, তোমার কণ্ঠে স্লোগান ভালো লাগে’, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘একটা সুন্দর ছবি পাঠাও’- এসব মন্তব্য আমাকে অপমানিত ও অস্বস্তিতে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, আমি বারবার পেশাদার সীমা বজায় রাখার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি বারবার ব্যক্তিগত আলাপে টানতেন, ছবি চাইতেন, ভিডিও কলে কথা বলতে চাইতেন। একটি ঘটনায় তিনি অভিযোগ করেন, তুষার বলেন- ‘তোমার বিষয়ে ডিবি অফিসার আমাকে প্রশ্ন করলে আমি বলেছি তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড’। একজন রাজনৈতিক নেতার মুখে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং এটি আমার সামাজিক মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অভিযোগপত্রে নীলা ইসরাফিল একটি স্বাধীন, নারীবান্ধব এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় স্বচ্ছ ও কার্যকর অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান। এ বিষয়ে এখনো সরোয়ার তুষারের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা অবস্থান এখনো জানানো হয়নি।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি

ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বেলা ১১টার দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার গুলশান কার্যালয়ে আসেন। সেখানে তার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু। বৈঠকে আরো উপস্থিত আছেন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে: ডা. শফিকুর

সাম্য, ইনসাফ ও বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্তমানবতার কল্যাণ ও দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই জামায়াতের রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি জুলাই বিপ্লবের সুফল পুরোপুরি ঘরে তুলতে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর কাফরুলে কাফরুল থানা জামায়াত আয়োজিত এক নির্বাচনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। থানা আমির অধ্যাপক আনোয়ারুল করিমের সভাপতিত্বে পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা আওয়ামী অপশাসন-দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। মূলত, ছাত্র-জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে এ ঐতিহাসিক বিপ্লব সাধিত হয়েছে। কিন্তু তা নির্বিঘ্ন হয়নি বরং আমাদেরকে চড়ামূল্যে কিনতে হয়েছে। এ আন্দোলনে দু'হাজারের অধিক মানুষ রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা দেশে এমন এক ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েম করতে চাই, যে সমাজ বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হবে। যেখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। রাষ্ট্রই প্রত্যেক নাগরিকের সব সমস্যার সমাধান করবে। কারণ, মানুষের তৈরি বিধান দিয়ে মানুষের কল্যাণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি দেশকে কুরআন-সুন্নাহর আদর্শের কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিত প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান।

বিএনপির শর্তে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে: সারজিস

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও এনসিসি প্রশ্নে বিএনপি যে শর্ত দিয়েছে তাতে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পাওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। বুধবার (২৫ জুন) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সারজিস আলম তার পোস্টে বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছরের মেয়াদে বিএনপি একমত। তবে এনসিসির মতো কমিটি করে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে একমত হওয়া সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তিনি শর্তসাপেক্ষে সেটা বলেছেন। সারজিস আলম বলেন, ‘এনসিসি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য গঠিত কাউন্সিল। যেমন: নির্বাচন কমিশন, পিএসসি, দুদক এমন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এই কাউন্সিল কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সদস্য মিলে এই কাউন্সিল গঠিত হবে। ফলে এমন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্রকে একটি দলের কাছে জিম্মি করার সুযোগ কমে আসবে। বিরোধী দলের মতামত দেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে। সিদ্ধান্তে ভারসাম্য আসবে। দলীয় আনুগত্য প্রদর্শনকারী ব্যক্তির চেয়ে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রাধান্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। চাইলেই যাকে তাকে বসিয়ে নির্বাচন ডাকাতি করা, দুদককে কাজে লাগিয়ে অর্থ-সম্পদ লুটপাট করা কিংবা পিএসসিকে প্রভাবিত করে দলীয় লিস্ট থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশের সিস্টেমগুলোর প্রকৃত সংস্কারের কথা বলি তাহলে সব ক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও এই সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ অবশ্যই এনসিসি কিংবা যেকোনো নামের এমন কাউন্সিলের মাধ্যমে হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যদি এই শর্ত দেয় যে হয় প্রধানমন্ত্রীর পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর অথবা এনসিসি, তাহলে এখানে দেশের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পাওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে। বিএনপি হয়তো মনে করছে তারা তো অবধারিত ক্ষমতায় আসবে! তাই সবাই মিলে এনসিসি গঠন করে তাদের নির্বাহী ক্ষমতা হ্রাস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিএনপির উচিত, নিজেদের ক্ষমতার জায়গায় না দেখে নিরপেক্ষ পজিশনে থেকে দেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেওয়া। ইভেন তারা নিজেদের বিরোধী দলের জায়গায় রেখেও এই বিষয়টি ভাবতে পারে। কারণ একটি দল তো সব সময় ক্ষমতায় থাকবে না।’ সারজিস বলেন, ‘যদি এনসিসি আর প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ ১০ বছর ক্ষমতায় থাকাকে বিএনপি মুখোমুখি দাঁড় করায় এবং একটি বেছে নিতে হয় তবে দেশের স্বার্থে আমি নির্দ্বিধায় এনসিসিকে বেছে নেব। দেশের স্বার্থে মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র আপস নয়।’

‘জাইমার পাশে আছি, সত্যের পাশে দাঁড়ানোই ন্যায়বোধের আসল পরীক্ষা’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান। বুধবার (২৫ জুন) তার একটি ছবি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী নিলা ইসরাফিল। ছবির উপরে লিখেছেন, জাইমার পাশে আছি- কারণ সত্যের পাশে দাঁড়ানোই ন্যায়বোধের আসল পরীক্ষা। ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, একজন নারী যখন নিজ আলোয় এগিয়ে যান, কিছু চোখ তখন সত্য মেনে নিতে পারে না।ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে ঘিরে যে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ প্রচার চালানো হচ্ছে, তা শুধু ব্যক্তিগত আঘাত নয়- সমাজের মূল্যবোধের ওপরও এক নির্মম আক্রমণ বলে জানিয়েছে তিনি। নিলা ইসরাফিল আরও লিখেছেন, একজন শিক্ষিত, সম্মানিত নারীর চরিত্র হরণে যে অসৎ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, তা আমরা ঘৃণা করি। জাইমার পাশে আছি- কারণ সত্যের পাশে দাঁড়ানোই ন্যায়বোধের আসল পরীক্ষা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত, সাধারণ সম্পাদক ইনামুল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন রিফাত রশিদ, এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ইনামুল হাসান। বুধবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশনে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন মুঈনুল ইসলাম এবং মুখপাত্র হয়েছেন সিনথিয়া জাহীন আয়শা। এক বছর মেয়াদে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। সংগঠনের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেওয়ায় নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দেয়। ওই শূন্যতা পূরণে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ভোটে এই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়।

নির্বাচনের আগেই হাসিনার প্রতিটি হত্যাযজ্ঞের বিচার চায় হেফাজত

নির্বাচনের আগেই শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যাসহ প্রতিটি হত্যাযজ্ঞের বিচার দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। বুধবার (২৫ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, ইসলামবিদ্বেষী, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী চেতনা সংরক্ষণ, রাষ্ট্র-সংস্কারের গণ-আকাঙ্ক্ষা সুসংহতকরণ এবং জাতীয় ঐকমত্য গঠনকল্পে অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। সেসঙ্গে নির্বাচনের আগেই শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামা হত্যাকাণ্ড ও জুলাই গণহত্যাসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতিটি হত্যাযজ্ঞের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এর অন্যথা হলে ড. ইউনূস সরকারকে ছাত্র-জনতা ক্ষমা করবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে, এখনো বিছানায় কাতরাচ্ছে পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করা হাজার হাজার আহত শাপলা ও জুলাই-যোদ্ধা। অগণিত শহীদের রক্তের ফসল জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হলে গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার কাছে ড. মোহাম্মদ ইউনূস সরকারকে জবাব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, শাপলা চত্বরের রক্তাক্ত ইতিহাসের পথ বেয়ে জুলাই বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনে হাজির হয়েছে। জুলাইকে বিস্মৃত হতে দেওয়া যাবে না। জুলাই বিপ্লবের সাথে গাদ্দারি করে জনসমর্থন ধরে রাখা যাবে না। এদেশে যারাই ভারতীয় আধিপত্যবাদের গোলামি করবে, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিবে, মাফিয়াতন্ত্র জারি রাখবে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণপ্রতিরোধের চেতনা বারবার ফিরে আসবে। দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে ছাত্র-জনতা আবারও রাজপথে নামতে বিলম্ব করবে না। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ফেরাউন পারেনি; হাসিনাও পারেনি। ভবিষ্যৎ ক্ষমতাসীনদের এই ঐতিহাসিক শিক্ষা ধারণ করতে হবে। মাওলানা আজিজুল হক বলেন, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম দাবি কাঠামোগত সংস্কার। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার জন্ম দেওয়া বিদ্যমান রাষ্ট্র-কাঠামোর বিলোপ ও পুনর্নির্মাণের মধ্যেই বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ পরিদৃষ্ট। জুলাই গণঅভ্যুত্থান সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এনে দিয়েছে। গণহত্যার বিচার ও সংস্কার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র-সংস্কারের মৌলিক কাজগুলো আরও বেগবান করতে হবে। ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থের চেয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষায় আত্মনিবেদিত হওয়ার মধ্যেই মাহাত্ম্য নিহিত। তিনি আরও বলেন, সংস্কারকাজে অবশ্যই ইসলামবিরোধী অপশক্তির ফাঁদ ও কু-মন্ত্রণা এড়িয়ে যেতে হবে। সংবিধানের মূলনীতি থেকে বহুত্ববাদ বাদ দিতে হবে। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারী কমিশন বাতিল করতে হবে‌। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম, সভ্যতা সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের আলোকে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

উপদেষ্টা আসিফের যোগসাজশে নগর ভবনে হামলা: ইশরাক হোসেন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে শ্রমিক দল নেতাদের একাংশের ওপর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, এতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সম্পৃক্ততা আছে কি না সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত সাপেক্ষে বলতে পারবেন। কারণ প্রমাণিত ছাড়া আমরা কাউকে অভিযুক্ত করতে পারি না। তবে যার নেতৃত্ব হামলা হয়েছে তার সঙ্গে উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ঢাকাবাসীর চলমান আন্দোলন, সেবা কার্যক্রম ব্যাহত করতে পরিকল্পিত হামলা এবং ঢাকাবাসীর আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অবমাননাকর দাবি ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ইশরাকের পাশে সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সেরা কাউন্সিলর পদক পাওয়া ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বাদল সরকার উপস্থিত ছিলেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নগর ভবনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান প্রিন্স ও একাংশের সভাপতি আরিফ চৌধুরীর পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহতদের দেখতে গিয়ে ইশরাক হোসেন হামলার জন্য প্রিন্স ও ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেলকে দায়ী করে তাদের ফ্যাসিবাদের দোসর অ্যাখ্যা দেন। তাদেরকে আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগী ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ দাবি করেন তিনি। ইশরাক হোসেন বলেন, ‘সোমবারের হামলা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের প্ররোচনায়। তাদের মূল হোতা ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেল। রুবেল একদিনও আন্দোলনে ছিলেন না। তিনি এনসিপিতে যোগদান করবেন কিংবা করেছেন। তারাই আন্দোলনের একপর্যায়ে গোলযোগ সৃষ্টি করেন। এই ষড়যন্ত্র না থামালে পুনরায় আন্দোলন শুরু হলে সেটা নগর ভবনের গণ্ডি পেরিয়ে রাজপথে বের হবে।’ হামলাকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেল ও আরিফুজ্জামান প্রিন্স বিএনপি সমর্থিত সংগঠনের পদধারী নেতা হয়েও কিভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ও উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ হিসেবে কাজ করছেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে ইশরাক বলেন, ‘ডিএসসিসিতে আরিফ চৌধুরী ও বেলায়েত বাবু শ্রমিক দলের নেতৃত্বে আছেন। এর বাইরে কেউ যদি নিজেদের জাতীয়তাবাদী আদর্শের দাবি করেন, তবে তাদেরকে কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। তারা বর্তমান উপদেষ্টার প্ররোচনায় আমাদের আন্দোলনে সবচেয়ে পরিচিত মুখদের ওপর নির্মম হামলা করেছেন। তাদের আচরণই বলে দেয় তারা দোসর, না আমাদের সমর্থক।’ সংবাদ সম্মেলনে বাদল সরকারকে তার পাশে বসানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি। ইশরাক হোসেন বলেন, ‘একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির এক নেতার প্ররোচনায় নগর ভবনের আন্দোলন হয়েছে। এই কথায় নগরবাসীকে হেয় করা হয়েছে। আসিফ আরও বলেছেন, ইশরাককে কেউ মিসগাইড করেছে। এই বক্তব্যে তিনি আমাকে চরম অবমাননা করেছেন। এই বক্তব্যের জন্য তাকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে।’

গণতন্ত্রকে গতিশীল রাখতে হবে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আর যেন একমাত্রিক রাষ্ট্রের পুনঃপ্রবর্তন না হয়, সে জন্য গণতন্ত্রকে গতিশীল রাখতে হবে। মানবতা, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুমহান ঐতিহ্য আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য গণতান্ত্রিক শক্তির অটুট ঐক্য বজায় রাখা অতীব জরুরি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (২৫ জুন) দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।তারেক রহমান বলেন, নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিবসটির তাৎপর্য অপরিসীম। প্রতি বছর ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক এই দিবসটি পালিত হয়। এই দিবসটি নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি জানানোর জন্য পালিত হয়। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে অধীন জাতিসমূহ ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও সারাবিশ্বে সহিংসতা ও সংঘাত বন্ধ হয়নি। রক্তোন্মদনা যেন দেশে দেশে এক ভয়ংকর হানাহানি ও রক্তারক্তিকে অব্যাহত রেখেছে। এই কারণে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী তাদের বিরোধীদের ওপর সীমাহীন ক্রোধে ভয়ানক দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসব দেশে নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ মারাত্মক হুমকির মুখে। একনায়কদের দোর্দণ্ড প্রতাপে বিরোধী মতের মানুষদের গুম, খুনসহ মিথ্যা মামলায় এক অবর্ণনীয় বন্দিজীবন কাটাতে হয় বছরের পর বছর। বাংলাদেশে প্রায় ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রকে বন্দি করে ভয়াবহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চলেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে বাংলাদেশকে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সব প্রকার নাগরিক স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নানা কালাকানুন দ্বারা ছিল শৃঙ্খলে বন্দি। এদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন মূমুর্ষ দেশনেত্রীর সুচিকিৎসাকেও বর্বর আওয়ামী সরকার নির্দয়ভাবে বাধা দিয়েছিল। গোটা দেশটাই বাকরুদ্ধ, ভীতি ও শঙ্কার মধ্যে আবদ্ধ ছিল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু আচরণের প্রতিবাদ করলেই লেলিয়ে দেওয়া হতো পেটোয়া বাহিনী। মানবতাকে উচ্ছেদ করে আওয়ামী সরকারের পোষ্য সন্ত্রাসীরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে বলেই নারী শিশুসহ সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। একমাত্র গণতান্ত্রিক সমাজেই মানুষের সার্বিক অধিকার নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সুষ্ঠু চর্চার কর্মপ্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এখন ‘মবজাস্টিস’ নামে এক হিংস্র উন্মাদনা মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিবেশকে বিপন্ন করবে। আর যেন একমাত্রিক রাষ্ট্রের পুন:প্রবর্তন না হয় সেজন্য গণতন্ত্রকে গতিশীল ও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমি নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব নির্যাতিত মানুষকে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। নির্যাতিতদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে নানা প্রতিকূলতা বন্ধের আহবান জানাচ্ছি। মানবিকবোধে উদ্বুদ্ধ বিশ্বের সব গণতন্ত্রকামী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমেই নিষ্ঠুর নির্যাতনকারী গোষ্ঠী ও স্বৈরশাসককে পরাস্ত করা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয় সিদ্ধান্তে একমত বিএনপি

একজন ব্যক্তি দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, সংবিধানে এমন বিধান যুক্ত করার বিষয়ে একমত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি সংস্কারের আরেক মৌলিক বিষয় সাংবিধানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মতো প্রতিষ্ঠান গঠনের সঙ্গে দলটি একমত নয়। এটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানা যায়, বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদ সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গত কয়েকদিনের আলোচনার বিষয়ে রিপোর্ট তুলে ধরেন। গত রোববার কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। দুই ‘পূর্ণ মেয়াদ’ হবে নাকি দুই ‘বার’ হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক হয়। কেউ কেউ সংসদের দুই মেয়াদের পক্ষে, কেউ কেউ দু'বারের (মেয়াদ যত দিন হোক, সর্বোচ্চ দু'বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারবেন) পক্ষে মত দেন। যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে ওই বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এভাবে ঐকমত্যে আসা হয়তো সম্ভব হবে না। এর বদলে একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ কত বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর (দুই পূর্ণ মেয়াদ) প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন। এছাড়া বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে নারীদের জন্য ১০০ আসন এবং সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা ১০০ জনের বিষয়ে বিএনপি ইতোমধ্যে একমত পোষণ করেছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘জ্যেষ্ঠতম দুই জনের’ মধ্যে যে কোনো একজনকে নিয়োগের বিষয়ে দলটি একমত হয়েছে।

উপদেষ্টা আসিফকে বক্তব্যের লাগাম টানতে বললেন ইশরাক হোসেন

অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কথাবার্তার লাগাম টেনে না ধরলে এবং আন্দোলনকারীদের বিষয়ে কোনো প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে নগর ভবনের আন্দোলন রাজপথে গড়াবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। বুধবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ইশরাক হোসেন বলেন, চলমান আন্দোলনের ফলে জনগণের যেসব গুরুত্বপূর্ণ সেবা বিঘ্নিত হচ্ছিল, সেগুলা সচল করার জন্যে আমার অনুরোধে গত সোমবার থেকে নগর ভবনে কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে, এটার সঙ্গে আন্দোলনের দাবি অথবা সরকারের কোনো চাপ বা ভীতির বিন্দুমাত্র কোনো বিষয় নেই। বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, ন্যায্য দাবি এবং আইন আদালতকে পরোয়া না করে দিনের পর দিন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে রাখে। এই দুর্ভোগ নিরসনে জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে আমরা সবাইকে নিয়ে সব জরুরি সেবা চালু রাখি। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের পর নগর ভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দৈনন্দিন সব সেবার কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিলে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সচিব আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে জন্ম, মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদ দিতে বারণ করেন। মূলত, জনগণকে সুবিধা বঞ্চিত করে এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল তারা। সেই চক্রান্ত রুখে দিতে কর্মবিরতি তুলে নগর ভবন উন্মুক্ত ও আঞ্চলিক কার্যালয় সচল করা হয়েছে। তবে, সীমিত পরিসরে সেবা প্রার্থীদের কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্দোলনকারীরা প্রতীকী কর্মসূচি পালন করে যাবে। বিএনপির এ নেতা বলেন, গতকাল হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ হিসেবে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে। এরা কেউ কেউ নিজেদের বিএনপি ঘরানার পরিচয় দিলেও তারা দলের কোনো পদে নেই। তাদের মূলহোতা, গতকালকে আন্দোলনকারীদের হত্যার চেষ্টা করা গোলাম কিবরিয়া রুবেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে রয়েছে। আসিফ মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর রুবেল তার লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। শুরু থেকেই সে আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করেছে। আসিফ মাহমুদকে উদ্দেশ করে ইশরাক হোসেন এরপর বলেন, আমি আশা করছি, আসিফ মাহমুদ তার বক্তব্য ও কথাবার্তার লাগাম টেনে ধরবেন এবং বর্তমানের স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করবে না। তবে, আন্দোলনকারীদের বিষয়ে কোনো প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে আন্দোলন নগর ভবন পেরিয়ে রাজপথে গড়াবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার জন্য বলেছি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন একটি তত্ত্বাবধায়ক, অন্তর্বর্তী সরকার যেটিই হোক, সেটা হবে। এর অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ভালো হবে। দলীয়ভাবে ভোট হলে দলের সরকার তার প্রার্থী জয়ী করে নেয়। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা জাতীয় নির্বচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাই। বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি। ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা ইসি পুনর্গঠন চাইনি। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের পর নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, সেহেতু এই কমিশনের আস্থার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তারা এখনো প্র্যাকটিক্যালি কাজ শুরু করেনি। অতীতের মতো দলীয় সরকারের অধীনে তো এই কমিশনের নিয়োগ হয়নি, এই সরকারের আমলেই নিয়োগ হয়েছে। তিনি বলেন, নিবন্ধন ও প্রতীকের গেজেট প্রকাশ করে আমাদের দীর্ঘদিনে দাবি বাস্তবায়ন করেছে ইসি। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বেআইনিভাবে নিবন্ধন বাতিল ও প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। চরম অন্যায় করেছিল। কমিশন গেজেট করায় যে প্রত্যাশায় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তার পূরণ হয়েছে। হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা ভোটে পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পদ্ধতি চাই। ঐক্যমত কমিশনেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা এটার দাবি জানিয়েছি। পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে সুষ্ঠু ভোট হয় না, তা অতীতে দেখেছি। পিআর পদ্ধতিতে নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধ হয়। আমরা এক শতাংশ ভোটের হারে আসন বণ্টনের কথা বলেছি। ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বিদেশে। ভোট দিতে পারে না। প্রবাসীরা যেভাবে বাংলাদেশকে বিদেশে উপস্থাপন করেন, রেমিট্যান্স পাঠায় তার চেয়ে বড় কথা তাদের ভোটা গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন বলেছে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে তারা উদ্যোগ নিয়েছে। জামায়াতের এই নেতা বলেন, সংস্কার হবে তা যেন কাগজে না হয়। নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। আশ করি আগামীতে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যশা পূরণ হবে। যে দাবিগুলোর কথা বললাম তা ইসি রিলেটেড। ঐকমত্য কমিশনের পাশাপাশি ইসিকেও জানালাম। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াত নেতা ও বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।

জনগণ সরকারের কাছে আইনের শাসন প্রত্যাশা করে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, সরকারের কাছে মানুষ আইনের শাসন প্রত্যাশা করে। আপনারা দৃষ্টান্ত রেখে যাবেন যাতে করে নির্বাচিত সরকার এলে আপনাদের ভালো দৃষ্টান্তগুলো চিহ্নিত করে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করে। বুধবার (২৫ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সভাপতিত্বে জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফউদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মোস্তফা-ই জামান সেলিমসহ অনেকেই। কেন এই সময়ে এসে এত খুন-জখম হবে, কেন এত ডাকাতি, চুরি, হত্যাকাণ্ড ঘটবে- এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। বলা হচ্ছে পুলিশের মধ্যে এখনো আস্থা ফিরে আসেনি- কেন আস্থা ফিরবে না? রিজভী বলেন, ২৪-এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পটভূমি রচনার প্রধান নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমরা দেখেছি যখন ছাত্র-জনতা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তখন তিনি দলের সব নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় থাকার জন্য। কখনো তিনি লন্ডন থেকে বক্তব্যের মাধ্যমে, কখনো আমাদের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাশে থাকা নির্দেশ দিয়েছেন। এই আন্দোলনে আমাদের ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মী বিএনপির সমর্থক অনেকেই আত্মহুতি দিয়েছেন গণতন্ত্রকে ফেরানোর জন্য। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আমরা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনাগুলো দেখছি সেখানে আমরা শুনতে পাচ্ছি যারা তদন্তে আছেন তারা নানা কারণেই গোপনীয়তা রক্ষা করছেন, যদিও তারা বলেছিল রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, হয়তো বিশেষ কারণে নামগুলো এখনো বলছেন না, কিন্তু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় যে হয়েছে এটা বলছেন তারা। তার মানে পরিকল্পিতভাবে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। হয়তো কারও স্বার্থে, প্রভুদের স্বার্থে অথবা অন্য কোনো স্বার্থে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল তৎকালীন যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। রিজভী আরও বলেন, আজকে একটি সংবাদ পড়ে একদিকে যেমন বেদনার্ত হয়েছি অন্যদিকে আশাবাদী হয়ে উঠেছি অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে গুম করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অনেকেই অস্বীকার করেছেন এবং যারা অস্বীকার করেছেন তাদের নামসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবনে এ ধরনের নথিও পাওয়া গেছে আর যারা রাজি হয়েছেন তারা তো গুম-খুন করেছেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ও তার নৈকট্য লাভের জন্য। এর মধ্যেও কিছু কিছু পুলিশ অফিসার অস্বীকার করেছেন তাদের ডিপার্টমেন্টকে পুরস্কৃত করা উচিত। কারণ তারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও গুম করতে অস্বীকার করেছেন। আমরা যতটুকু জেনেছি তাতেই তো আমাদের রক্ত হয়ে হিম হয়ে যায়। রিজভী বলেন, পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। আর যারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও অন্যায় কাজ করেনি তাদের পুরস্কৃত করা উচিত। এটা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করব। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত নানাভাবে নানা কারণে ১৭৭ জন মানুষের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যারাই এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা যে দলেরই হোক যে মতেরই হোক সরকারের উচিত আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করা। সরকার আইনশৃঙ্খলা দেখবে, কোনো পার্টির রং দেখবে না। কে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, কে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি নয়, কে ধনী, কে গরিব এটা বিবেচনা করবে না, তাদের উচিত কারা অপরাধ করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় বিচার করবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট প্রথমেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে যদি স্থানীয় নির্বাচন হয় সে নির্বাচনের বিশ্বস্ততা বাড়বে। যারা নির্বাচিত হবেন তারা দেখাবেন যে, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। ১৬-১৭ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি, সে কারণে জাতীয় নির্বাচন আগে হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ বিষয়ে বিএনপির মতামত অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

বিএনপি কখনোই মবের পক্ষে নয়: ফারুক

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, বিএনপি কখনোই মবের পক্ষে নয়।” তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “সুশীল সমাজের কাছে জানতে চাই, এই মব কে সৃষ্টি করেছে? আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। বুধবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র ফোরাম আয়োজিত এক প্রতিবাদী যুব সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, যেদিন কাওরান বাজারে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেদিনও সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। শেখ হাসিনা মব সংস্কৃতির মাস্টারমাইন্ড। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই যে তারা এই মব সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে ফারুক বলেন, কোথায় হারুন কোথায় বিপ্লব, আইজি,কমিশনার ? গোয়েন্দা সংস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন এখনো তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করুন। সংগঠনের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. আব্দুল সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ প্রমুখ।

১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াতের হাতে কেউ কষ্ট পেলে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শুধু ১৯৭১ সাল নয়, ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত জামায়াতের মাধ্যমে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে, তাদের সবার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে যেমন মানুষ ভুল করতে পারে, তেমনি মানুষের সমষ্টি- একটি দলেরও ভুল সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। কোনটা ভুল, কোনটা সঠিক- সেটা ইতিহাস নির্ধারণ করবে। ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামে একটি টকশো অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির। অনুষ্ঠানে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দিন প্রশ্ন করেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে আপনি বলেছিলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন, তার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’ এই ক্ষমা প্রার্থনায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল অন্তর্ভুক্ত কি না। উত্তরে জামায়াত আমির বলেন, শুধু একাত্তর নয়, ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের দ্বারা কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে, তাদের সবার কাছেই আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আদর্শবাদী একটি দল। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা মানুষ- ভুলের ঊর্ধ্বে নই। আমাদের দ্বারা বা আমাদের সহকর্মীদের দ্বারা কেউ কষ্ট পেয়ে থাকতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সবকিছুর জন্য আমি কোনো শর্ত ছাড়াই ক্ষমা চেয়েছি। মাফ চাওয়ার বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে কোনো পরাজয় নেই, কোনো লজ্জা নেই। আমার মানবিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বের জায়গা থেকে মাফ চেয়েছি।