
শুটকির রাজ্যে ভোরে ভ্রমণ: নাজিরারটেকের গন্ধ, গল্প আর জেলেদের জীবন
সারারাত নির্ঘুম কাটাতে চাইলাম। মনের অজান্তে কিভাবে শেষরাতে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানিনা। ভোর রাতে যখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন তখনি কলিংবেল বেজে উঠল। চোখ মুছতে মুছতে দু কদম হেটে জানালার পাশে গেলাম, চোখ খুলে দেখলাম চারদিক অন্ধকার। হঠাৎ মনে পড়ল রাতে যে পরিকল্পনা করছিলাম তার কথা। সময় ভোর ৬ টা। যেতে হবে শুটকির রাজ্য নাজিরারটেক মাছ ঘাট। ঘুম ঘুম চোখ মুচতে মুচতে আমর সঙ্গি হলো এক ছোট ভাই, তাকে সাথে নিয়েই হোটেল থেকে বের হয়ে পড়লাম। কক্সবাজারের মত এমন একটি পর্যটক এলাকা সকালবেলা জনমানবহীন লাগছে। বুঝার আর বাকি রইলনা সবাই এখন ঘুমের দেশে রয়েছে। দশ কদম হাটার পরই পেলাম একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা। দুইশ টাকা রিজার্ভ ভাড়া করে এখন স্বপ্নের শুটকির রাজ্যে যাত্রা শুরু করলাম। বলছি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শুটকি উৎপাদন কেন্দ্র নাজিরটেক মাছ ঘাটের কথা । বলা চলে বাংলাদেশের শুটকি উৎপাদনের ৭০ ভাগ শুটকি এখানে উৎপাদিত হয়। শো শো শব্দ করে গাড়ি সামনে এগোতে লাগলো, অন্যদিকে গাড়ির শব্দের সাথে বাতাসের শব্দ এক হয়ে অন্য রকম এক অনুভূতি শুরু হলো। বাতাসের গতিবেগ দেখে আর বুঝার বাকি রইলনা আমি যে সমুদ্রের পাড় দিয়েই ভ্রমন করছি। আঁকাবাকাঁ পথ আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ছুটে চলছে আমাদের গাড়ি। পথে পথে দেখা হলো ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মক্তবে পড়তে যাওয়া। তা দেখে ক্ষনিকের জন্য হলেও আমার ছেলে বেলায় হারিয়ে গেলাম। তাতে বেশ কয়েকজনের সাথে খুনসুটি ও সালাম বিনিময় হলো। হঠাৎ করেই বাতাসের গন্ধ পাল্টে গেল। বুঝতে পাড়লাম সামনে কিছু একটা অপেক্ষা করছে,ভাবতে লাগলাম শুটকির রাজ্যে আসলাম আর শুটকির গন্ধ পাবোনা কেমনে হয়। বুঝার আর বাকি রইলনা আমরা এতক্ষনে শুটকির রাজ্যে ডুকে পড়লাম। রাস্তার দু পাশে সারি সারি শুটকি শুকাতে দিচ্ছে নারী ও শিশুরা। শত শত একর যায়গা জুড়ে রয়েছে শুটকি। কেউ কাচা মাছ শুটকি করতে রোদে দিচ্ছে, কেউ বা আবার শুকনো মাছ মোড়ক করছে। পাশে বসে থাকা ছোট ভাই ও গাড়ির ড্রাইভার মুখে রুমাল বেধে নিলেন। বুঝতে পারলাম বাতাসে শুটকির দুর্গন্ধের মাএা বেড়েই চলছে। আমি গন্ধটি উপভোগ করছি, কারন শুটকির রাজ্যে আসলাম আর শুটকির গন্ধ নিবোনা তা কেমনে হয়। তাই মুখে রুমাল না বেধেই পথ চলতে লাগলাম। চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম নাজিরটেক। গাড়ি থেকে নেমে চলে আসলাম নদীর ঘাটে । চারিপাশে অন্যরকম এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। নৌকা ঘাটে নোঙ্গর দিচ্ছে কোনটি আবার মাছ বিক্রি করে বসে আছে। মাছ ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, ব্যস্ততা থেকে বাদ যায়নি গাঙ্গ চিলও। তারাও জেলেদের মাছ থেকে ভাগ বসাচ্ছে আর মনের আনন্দে সাতার কাটছে। আমাদের দেখে বেশ কয়েকজন জেলে আমাদেরকে ঘিরে ধরলো। পরিচিতি হতে লাগলাম তাদের সাথে। এরই মাধ্যে একজন জেলে আমার হাতে একটি জীবিত অক্টোপাস ধরিয়ে দিতে চাইল, আমিও ভয়ে ভয়ে এটিকে ধরতে পেরে নিজে নিজে হিরো বনে গেলাম। জেলেরা আমাদেরকে পেয়ে মহাখুশি হলেন । জানতে পারলাম বহু অজানা কথা । আরও জানতে পরলাম এক একটি জাহাজ ১০-১৫ দিনের জন্য চলে যায় ১০০-১২০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে । মাছ ধরে ট্রলার বোজাই করে নিয়ে আসে। আবার কখনও আসানুরূপ মাছ ধরতে না পারলেও তারা থেমে থাকেননা। মৎস্য সম্পদের সাথে জড়িয়ে আছে এদের জীবন । জেলেপল্লীর নাম হলো ”কুতুবদিয়া পাড়া” মাছ যে ঘাটে বিক্রি তার নাম ”সমিতি পাড়া” মৎস্য কর্মীদের একেকজনের কাজ একেকরকম ভিন্ন ভিন্ন। কেউ মাছে ধরে আনে, কেউ স্থানীয় ভাষার পুটলি নামক ঝুড়িতে ভরে পাড়ে নামায়। পাইকাররা মাছ কিনে কিছু বাজারে কাঁচা বিক্রি করে এবং এর সিংহ ভাগই শুটকি করা হয়। বংশ পরাম্পরায় এখানে ছেলে বুড়ো সবাই মৎস্যজীবী। ছোট একটা বাচ্চা ছেলেকে কিছু মাছের নাম জিজ্ঞাস করলাম সে স্থানীয় ভাষাই ২০-৩০ টি মাছের নাম বলল। আড্ডার সময় যে বেশ ফুরিয়ে এলো, এবার ফিরতে হবে। জেলেদের মন যতটুকু খারাপ তার চেয়ে আমার মন বেশি খারাপ। কারন এরই মধ্যে যে তাদের খুব আপন করে নিয়েছি । তাইতো বিদায়ের বেলায় একখানা গ্রুফ ছবি নিয়ে নিলাম । একজেলে ভাই আমার মোবাইল নাম্বারটি নিয়ে নিলেন। অন্য একজন জেলে কিছু শুটকি মাছ ধরিয়ে দিলেন আমার হাতে। টাকা পরিশোধ করতে চাইলে টাকা না নিয়ে ্একটি শর্ত বেধে দেন, শর্ত হলো পরবর্তীতে আমি আবার গেলে যেন তাদের সাথে দেখা করি। হোটেলে ডুকে সবার মুভমেন্ট দেখে বুঝতে পারলাম তারা আমাদের না দেখতে পেরে চিন্তিত হয়ে খোজা খুঁজি শুরু করেছেন। অবশেষে যখনি আমরা শুটকি উৎপাদন খ্যাত নাজিরটেক এর কথা শেয়ার করি তখন তারা না যেতে পেরে বেশ মন খারাপ করলো। এমন সুন্দর যায়গায় পরবর্তী তাদের নিয়ে যাব বল ওয়াদা বদ্ধ হলাম।

এসএমই দিবস উপলক্ষে আলোচনায় সফল উদ্যোক্তা আতিকুর রহমানের কথন
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭৮ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন, যার নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নিজেদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিচ্ছেন। তাদের এই প্রচেষ্টার ফলে দেশে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ এ বিশাল জনগোষ্ঠী অর্থনীতির মূলধারায় অবদান রাখলেও এখনো অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত। তারা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন নানা রকম নীতি সংকট, ব্যাংক ঋণ সহায়তার অভাব, গবেষণা ও নকশায় ঘাটতি, দক্ষ মানবসম্পদের স্বল্পতা এবং পরিকল্পনার অভাব। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত (এসএমই) নিয়ে আমরা প্রায়ই কথা বলি, পরিকল্পনা করি। কিন্তু বাস্তবে যারা সত্যিকার অর্থে 'ছোট' উদ্যোক্তা-কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতের (সিএমএসএমই) অংশ তারা যেন নীতিগতভাবে একপ্রকার বঞ্চিতই থেকে যান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী মাঝারি উদ্যোক্তারাই মূলত সব সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। ব্যাংকগুলোও মূলত বড়দের নিয়ে আগ্রহী; যারা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত, মূলধনি এবং নিরাপদ। কিন্তু আসল লড়াই করা যারা ক্ষুদ্র (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তা, তাদের নিয়ে আগ্রহ নেই বললেই চলে। আমি বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি ও চারকোল যোদ্ধা হিসাবে একটি কথা বলতে চাচ্ছি যে এই চারকোলটি বাংলাদেশে আমরা কতিপয় ব্যবসায়ী চায়নাদের সহযোগীতায় বাংলাদেশে শুরু করি ২০১২ সাল থেকে এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ২৫০ কোটি টাকার রপ্তানি হয়। এই চারকোলকে যদি আমরা এক্টিভেটেড করে ফটোকপিয়ারের কালি, কম্পিউটারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারী, টায়ার, কসমেটিক্স, পেষ্ট অর্থাৎ ডাইভারসিফাইট প্রোডাক্ট আমরা উৎপাদন করতে পারি প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আমদানির নির্ভরতা কমে যাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে একটি বিশাল ভূমিকা রাখবে এর সাথে সাথে প্রায় পঞ্চাশ থেকে এক লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে আমাদের দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৫-২৭ শতাংশ। অথচ উন্নত দেশগুলোতে এই খাতের অবদান ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ, আমাদের এসএমই খাতের মধ্যে যে সম্ভাবনা রয়েছে তা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ২০১৯ সালে সরকার এসএমই নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তা সিএমএসএমইদের অনুকূলে বাস্তবায়ন হয়নি। বরং বড় ও মাঝারি শিল্পগোষ্ঠী নীতির সুবিধা বেশি পেয়েছে। আমরা অনেক দিন ধরেই সরকারকে অনুরোধ করে আসছি- সিএমএসএমই খাতের জন্য আলাদা ও বাস্তবভিত্তিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করা দরকার। কারণ এক ছাতার নিচে কটেজ, ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বড়দের একত্র করে দিলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা হারিয়ে যায়। নীতিনির্ধারক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত মাঝারি উদ্যোক্তাদের দিকেই দৃষ্টি রাখছেন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছেন। আমরা যদি সত্যিই বড় অর্থনীতির স্বপ্ন দেখি, তাহলে সিএমএসএমই খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করতে হবে যেন তারা এই খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে। এখনকার বাস্তবতা হলো-ব্যাংকগুলো সেই উদ্যোক্তাদের কাছে আগ্রহী যাদের আগে থেকেই মূলধন আছে। অর্থাৎ, যাদের মাথায় তেল আছে, তার মাথাতেই আরো তেল দেওয়া হচ্ছে। এখন আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথে। এর মানে হলো-আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে চলেছি। এই পরিবর্তনের ধাপ পেরিয়ে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। তখন আমাদের দক্ষতা, উৎপাদন ক্ষমতা, রপ্তানির সক্ষমতা অনেক বেশি প্রয়োজন হবে। এই সক্ষমতা তৈরি করতে গেলে সিএমএসএমই খাত হবে সবচেয়ে বড় শক্তি। কারণ, এ খাতেই রয়েছে নতুন উদ্যোক্তাদের উত্থান, কর্মসংস্থান সৃষ্টির অপার সম্ভাবনা এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্যের ভিত্তি। বিশ্ববাজারে বর্তমানে এক চমৎকার সম্ভাবনার জানালা খুলেছে। চীনে একজন শ্রমিকের বেতন যেখানে ৪০০-৭০০ ডলার, সেখানে বাংলাদেশে তার চার ভাগের এক ভাগ। ফলে বহু বিদেশি ক্রেতা এখন বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকেই বিবেচনা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি প্রস্তুত? আমাদের উৎপাদন খরচ কম হলেও দক্ষতা ও প্রযুক্তির ব্যবহারে এখনো অনেক পিছিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, একটি চীনা মেশিন অপারেটর যেখানে এক দিনে যে পরিমাণ উৎপাদন করে, বাংলাদেশে তার সমপরিমাণ উৎপাদনে চার-ছয় জন কর্মী লাগে। বিশ্ব জুড়ে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে পাটপণ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের পাট বিশ্বমানের এবং দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদৃত। কিন্তু আমাদের রপ্তানি তালিকায় এখনো আধিপত্য করছে পাটের সুতা, কাঁচা পাট ও পাটের বস্তা। বহুমুখী পাটপণ্যের রপ্তানি আজও সীমিত। অথচ বিশ্ববাজারে এখন চাহিদা রয়েছে পাট দিয়ে তৈরি আধুনিক প্যাকেজিং, গার্ডেনিং আইটেম, অটোমোবাইল অংশ, হোম ডেকর, এমনকি প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যেও। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে শুধু উৎপাদন নয়, প্রয়োজন গবেষণা ও নকশার উন্নয়ন। সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা যদি আধুনিক ও বৈশ্বিক মানের নকশা পান, তাহলে তারা রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরি করতে পারবে। সরকার চাইলে এই খাতের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজাইন ব্যাংক তৈরি করতে পারে, যেখানে উদ্যোক্তারা নিজ পণ্যের ধরন অনুযায়ী পেশাদার নকশা পেতে পারেন। পাশাপাশি পাটকল ও অন্যান্য উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়নও জরুরি। আমরা যদি দেশের প্রতিটি জেলায় উদ্যোক্তাদের ম্যাপিং করি-কে কোন খাতে কাজ করছেন, তাদের কী দক্ষতা, কোথায় কী ধরনের কাঁচামাল সহজলভ্য, স্থানীয় চাহিদা ও রপ্তানির সম্ভাবনা কী? তাহলে পরিকল্পনা করা সহজ হবে। চীন, ভারত, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশ এ কাজটি করে ফেলেছে। অথচ বাংলাদেশে এখনো এই খাতে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেই। সরকারের প্রায় ১০টি মন্ত্রণালয় ও ১০টি সংস্থা এসএমই নিয়ে কোনো না কোনোভাবে কাজ করছে, কিন্তু তারা কেউ জানে না কে কোথায় কী করছে। এর ফলে অপচয় বাড়ছে এবং প্রকৃত উদ্যোক্তারা সহায়তা পাচ্ছেন না। আমার প্রস্তাব হলো-আগামী পাঁচ বছরে সরকার যদি প্রতি জেলায় ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে চিহ্নিত করে, তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাজার সংযোগ, সহজ শর্তে ঋণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়, তাহলে এই খাত থেকেই আমাদের রপ্তানি আয় কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে এসব উদ্যোগকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সহজ হবে। আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত-এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছাতে সিএমএসএমই খাতকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করা। এর জন্য দরকার পেপারওয়ার্ক থেকে বাস্তব পরিকল্পনায় যাওয়া। প্রডাক্ট ভেলুয়েশন, প্রোডাক্টিভিটি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, গবেষণা-এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সর্বোপরি, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি সমন্বিত জাতীয় রোডম্যাপ, যেখানে থাকবে- ১. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের উদ্যোক্তা ম্যাপিং ২. খাতভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, ৩. গবেষণা ও ডিজাইন সাপোর্ট, ৪. ব্যাংকিং সহায়তা সহজীকরণ, ৫. নীতিমালার পুনর্গঠন ও বাস্তবায়ন তদারকি এবং ৬. রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা, ৭. বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বিভিন্ন দেশের কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলর এর দ্বারা মেইড ইন বাংলাদেশ ক্ষেত পণ্যের প্রচার তরান্বিত করা।এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে, শুধু পাটখাত নয়, বাংলাদেশের হাজারো উদ্যোক্তার শ্রম ও মেধা দেশীয় অর্থনীতিকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে পারবে। এসএমই নয়, সিএমএসএমই খাতই হবে ভবিষ্যতের টার্নিং পয়েন্ট এবং দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হবে।

‘বাবা সেই ছোট্ট অর্ণব তোমায় অনেক ভালোবাসে’
যে মানুষটার প্রতিদিনের পরিশ্রমে আমাদের ভালো রাখার গল্প লিখিত হয়। সেই মানুষটা হয়তো বাবা, আর মা তাঁর সহযোগী। সবসময় মনে হতো বাবা মানে ভয় দিয়ে মোড়ানো একটা বাসা। শাসনের বেড়াজালে ছেলেরা বাবাকেই হয়তো সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। আমিও তার ব্যতিক্রম না। আমার পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকেই বাবা সবচেয়ে বেশি তদারকি করতো। হাজার ব্যস্ততা আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে দিনশেষে বাসায় এসেও কখনো যেন তদারকি করতে ভুলতো না আমার পড়ালেখা কেমন হচ্ছে বা কেমন করছি। বাবার প্রতি ভয় কাজ করাটা হয়তো এখান থেকেই শুরু। পরিবারের সবার মুখে শোনা সেই ছোটবেলায় বাবার কোলে পিঠে চড়ে চারপাশের পরিবেশ দেখা আর বাবার আঙুল ধরে হাঁটার স্মৃতিগুলো আমাকে বারবার ফেলে আসা দিনগুলোতে নিয়ে যেতে চাই। তাইতো ছেলেরা বাবা হয়,কিন্তু বাবারা কখনো ছেলে হয় না। ছাতা হয়ে যে মানুষটা আমাদের আগলে রাখে তাঁর কথা মনে করার জন্য কেবল একটা দিন যথেষ্ট নয় বরং প্রতিটা দিনই বাবা দিবস। আমরা যারা পড়াশোনার ক্ষেত্রে পরিবার থেকে দূরে অবস্থান করছি,আমরাই হয়তো সবচেয়ে বেশি এই জিনিটা ফিল করি। হাজারো ক্লান্তি শেষে মুখে খুব বেশি কিছু হয়তো বলা হয়ে উঠে না,তবে বাবার চোখের পাতায় আর ক্লান্ত হাসিতে আমি যেন সব কথা বুঝে যাই। সন্তানদের জন্য বাবার এই আত্মত্যাগ, নিরলস পরিশ্রম আর নিঃশব্দ ভালোবাসা আমাদের প্রতিদিন শক্তি যোগায়। মুখ ফুটে হয়তো কখনো বলা হয়ে উঠবে না ঠিক কতটা ভালোবাসি বাবা। তবে বাবা তোমার সেই ছোট্ট অর্ণব তোমায় অনেক ভালোবাসে। জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী জেমসের গানের লাইন দিয়ে যদি শেষ করি তবে, “ছেলে আমার বড় হবে,মাকে বলত সে কথা। হবে মানুষের মত মানুষ, এক লেখা ইতিহাসের পাতায়।” এমন গানের প্রতিটা লাইনের মতোই আমার/আমাদের বাবারা স্বপ্ন দেখে একদিন তাঁর সন্তান ইতিহাস সমান কিছু হবে।বিশ্ব বাবা দিবসের শুভেচ্ছা নিও।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা। লেখক: অর্ণব দাশশিক্ষার্থী, সংগঠক ও সমাজকর্মী।

নজরুল জয়ন্তী: বিদ্রোহী কবির জন্মদিনে নতুন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা
আখি সাহা বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর প্রতিভা আর বিদ্রোহের অনন্য প্রতীক—কাজী নজরুল ইসলাম। প্রতি বছর ১১ই জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে) আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি এই অগ্নিকণ্ঠ কবিকে। নজরুল জয়ন্তী শুধু একটি জন্মদিন নয়, এটি আমাদের চেতনায় বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতার বার্তা বহন করে আনে। ১৯৪৭ সালের আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কলম যেমন বিদ্রোহ রচনা করেছিল, তেমনি সমাজের নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধেও তিনি উচ্চারণ করেছিলেন প্রতিবাদের ভাষা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি লিখেছিলেন— "আমি চির বিদ্রোহী বীর, বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!" তবে তার লেখায় তিনি শুধু বিদ্রোহ ফুটিয়ে তোলেননি। বিদ্রোহের পাশাপাশি তার সৃষ্টিতে ভরপুর ছিল প্রেম, প্রকৃতি, সঙ্গীত, মানবতা— আরও সবই। তিনি যেমন প্রেমে বলেছিলেন, “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়,” তেমনই আবার গেয়েছেন, “মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!” নজরুল শুধু কবি ছিলেন না, ছিলেন এক অসামান্য সুরস্রষ্টা। ৪,০০০-এরও বেশি গান রচনা ও সুর করেছেন তিনি—যা আজও 'নজরুলগীতি' নামে আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছে। তার গানগুলো যেন প্রেম, বিরহ, ভক্তি ও দেশপ্রেমের অনন্য প্রতিফলন। প্রতিবছর নজরুল জয়ন্তীতে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন, আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় তাকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে এই দিনটি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তবে নজরুল জয়ন্তী কেবল অনুষ্ঠান নয়—এটি তাঁর আদর্শকে ধারণ করার দিন, নতুন প্রজন্মকে তাঁর চিন্তা ও সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় করানোর দিন। আজকের সমাজে যখন বৈষম্য, ধর্মীয় কুপমণ্ডূকতা ও অসহিষ্ণুতার অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, তখন নজরুলের বাণী হয়ে ওঠে আলোর দিশারি। তিনি আমাদের শেখান—ধর্মের দেয়াল নয়, মানুষে মানুষে হৃদয়ের সেতু গড়ে তোলাই শ্রেয়। তার কলমের প্রতিটি অক্ষর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাম্য, ভালোবাসা ও মানবতাই হল মানবজাতির চূড়ান্ত আশ্রয়। নজরুল জয়ন্তী শুধু অতীতের একজন মহান কবিকে স্মরণ নয়, বরং তার ভাবনা, আদর্শ ও সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার। নজরুলের কণ্ঠে আমরা শুনি বিপ্লবের ডাক, আবার ভালোবাসার মাধুর্য। তার জয়ন্তী যেন হয়ে ওঠে নতুন করে জাগরণের প্রেরণা।

মা দিবস কেন রোববারে পালিত হয়?
পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা একমাত্র মায়ের থাকে সন্তানের জন্য। যে সবকিছু থেকে সন্তানকে আগলে রাখে তার সন্তানকে। শিশুর প্রথম বুলিই মা শব্দটি। একজন সন্তানের কাছে মা হচ্ছে সবচেয়ে আপন ও সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পুরো বিশ্ব মায়ের অবদান, ত্যাগকে সম্মান জানাতে পালন করে মা দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সারাবিশ্বে পালিত হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’। সেই হিসাবে আজ মা দিবস। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে রোববার কেন পালন করা হয় মা দিবস? এর পেছনে আছে একটি কারণ। এই দিনটি পালন শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রীক ও রোমানরা মা দেবী রিয়া ও সাইবেলিকে উৎসব উৎসর্গ করতে। ষোড়শ শতকে এসে এই দিনটি ইংল্যান্ডে মাদারিং সানডে’র উদ্ভব হয়। এ দিবসটি উদযাপন করা হতো লেন্টের (খ্রিস্টানদের ৪০ দিনের পর্ব) চতুর্থ রোববারে। মাদারিং সানডেতে ছেলেমেয়েরা পারিবারিক চার্চ বা মাদার চার্চের উদ্দেশ্যে পবিত্র যাত্রা শুরু করতো। এ দিবসটি মূলত পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ করে দিত। এদিনে ঘরের ভৃত্যদের পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হতো, বিশেষ করে মেয়েদেরকে ছুটি দেওয়া হত। যেন তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। মধ্যযুগে এই চর্চা চালু হয়েছিল যে, যারা কাজের জন্য যেখানে বড় হয়েছেন সেখান থেকে চলে গিয়েছেন, তারা আবার তাদের বাড়িতে বা মায়ের কাছে এবং ছোটবেলার চার্চে ফেরত আসবেন। সেটা হবে খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব লেন্টের চতুর্থ রোববারে। সেসময় ১০ বছর বয়স হতেই কাজের জন্য বাড়ির বাইরে চলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। তাই এটা ছিল সবাই মিলে পরিবারের সঙ্গে আবারও দেখা করার ও একসঙ্গে সময় কাটানোর একটা সুযোগ। এভাবে ব্রিটেনে এটা মায়ের রোববার হয়ে উঠে। কিন্তু যেহেতু লেন্টের তারিখ পরিবর্তিত হয়, তাই এই রোববারও নির্দিষ্ট থাকে না। যদিও আধুনিক যুগের মা দিবসের উৎপত্তি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে প্রতি বছরের মে মাসের ২য় রোববার পালিত হয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবসের আধুনিক সংস্করণ করেছিলেন জন্য আনা মারিয়া জার্ভিস নামের এক নারী। যদিও তিনি নিজে কখনো মা হতে পারেননি। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯০৮ সালে তার নিজের মাকে সম্মান জানাতে অথবা স্মরণ করতে প্রথম মা দিবস উদযাপন করেন আনা। সেদিন ছিল আনার মা আনা রিভিস জার্ভিসের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকি। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করেন। তবে একটা সময় আনা জার্ভিস নিজেই মা দিবসের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি যে লক্ষ্যে মা দিবস পালন শুরু করেছিলেন তা এখনকার মা দিবসের সঙ্গে কোনো মিল নেই। তিনি বুঝতে পারছিলেন এই দিনটি কেবল একটি ছুটির দিন, শুভেচ্ছা কার্ড, চকলেট ও ফুল সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। যা দেখে তিনি খুবই বিরক্ত হতে থাকেন। তিনি এ ধরনের উদযাপনের প্রতিবাদ করেন এবং এ দিনটিকে যেন চ্যারিটির জন্য অর্থসংগ্রহে ব্যবহার করা হয় তার প্রচেষ্টা চালান। তিনি মা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে ১৯৪৪ সালের মধ্যে ৩৩টি মামলায় জড়িয়ে পড়েন। তারপরও তার এ প্রতিবাদ থেমে থাকেনি। তিনি তার পুরো জীবন ও সঞ্চয় এ ছুটির দিনের বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যয় করেছেন। তিনি তার শেষ জীবনের কিছু বছর কাটান স্যানিটারিয়াম বা স্বাস্থ্যনিবাসে এবং ১৯৪৮ সালে কপর্দকহীন অবস্থায় মারা যান। তাকে ফিলাডেলফিয়ার ওয়েস্ট লরেল হিল কবরস্থানে তার মায়ের পাশে সমাহিত করা হয়। তার দাফনের আনার সম্মানে দিন পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের অ্যান্ড্রুস চার্চের ঘণ্টা ৮৪ বার বেজেছিল। আনার লড়াই তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়েছে। এখনো প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয় বিশ্ব মা দিবস হিসেবে।

একই অপরাধে দুই বার শাস্তি হাস্যকর: হৃদয় ইস্যুতে বিসিবিকে তামিম
একই ঘটনায় দুই বার শাস্তি- তাওহিদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাঃংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বললেন তামিম ইকবাল। আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) মিরপুর শেরে বাংলায় বিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক দীর্ঘ বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুখ খোলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। বিসিবিতে সকাল থেকেই জমজমাট পরিবেশ। একে একে হাজির হন তামিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাঈম শেখ, শরিফুল ইসলামরা। নিজেরা একদফা আলোচনার পর শেষ দিকে যুক্ত হয়েছিলেন বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদও। পরে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়ে হৃদয়ের শাস্তি ইস্যুতে অসন্তোষের কথা জানান তামিম। তামিম বলেন, ‘প্রথমে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো, কেউ কিছু বলেনি। পরে এক ম্যাচ কমিয়ে দেয়া হলো। আবার দুই ম্যাচ খেলার পর নতুন করে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা- পুরো ব্যাপারটাই কোনো সেন্স করে না। এটা হাস্যকর।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোহামেডান থেকে প্রেশার দিয়ে খেলানো হয়েছে কী হয়নি এটা গুরুত্বপূর্ণ না। বড় কথা হলো বিসিবি কি তাকে খেলার অনুমতি দিয়েছে? যদি দিয়ে থাকে, তাহলে সে শাস্তি ভোগ করেছে। তাহলে কীভাবে আবার একই অপরাধে শাস্তি পাবে? বিষয়টা আমরা বোর্ড সভাপতিকে বুঝিয়েছি।’ তাওহিদ হৃদয় ডিপিএলে আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণ করায় প্রথমে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হন। পরে বাইলজ পরিবর্তন করে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় নামিয়ে আনা হয় শাস্তি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে তীব্র সমালোচনা হলে, লিগের টেকনিক্যাল কমিটি আগের রায়ই বহাল রাখে। ফলে ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটার আবারও এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হন। যদিও গত ২০ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে মোহামেডানের হয়ে মাঠে নেমে নেতৃত্বও দেন তিনি। ঘটনা শুরু হয়েছিল ১২ এপ্রিল। সেদিন মোহামেডান ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া না দিয়ে আউট দেননি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা সৈকত ও তানভীর আহমেদ। তখনই আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে জড়ান হৃদয়। এতে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয় এবং চার ডিমেরিট পয়েন্টসহ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তী আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় আরও এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় হৃদয়কে। নিয়ম অনুযায়ী সুপার লিগের প্রথম দুই ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকার কথা ছিল তার, কিন্তু এক ম্যাচ পরই আবার খেলার সুযোগ পান তিনি, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়র ক্রিকেটাররাও।

কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিলেন মাহমুদুল হাসান মাসুম
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিলেন চাঁদপুরের ছেলে মাহমুদুল হাসান মাসুম। বাংলাদেশ ওপেন ওয়াটার সুইমিং (বোয়াস) এর উদ্যোগে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন তিনিসহ ১৫ সদস্যের সাঁতারু টিম। শনিবার (১২ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২টায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত পেকুয়া উপজেলার মগনামা লঞ্চঘাটের উত্তর পাশ থেকে থেকে এই সাঁতার শুরু করেন। অন্যান্যদের সাথে মাসুম সফলভাবে এই চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। তিনি ৬.২ কিলোমিটারের উত্তাল চ্যানেল পাড়ি দিতে সময় নেন ২ ঘন্টা ১৮ মিনিট। সাঁতারের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মাসুম বলেন, ‘প্রতিটি চ্যালেঞ্জ ভিন্ন অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। আজকের চ্যানেলটি ছিলো অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর। শান্তভাবে সাঁতার শুরু হওয়ার পর হটাৎ করে প্রচন্ড ঢেউ শুরু হয়। পাশাপাশি প্রচন্ড বিপরীতমুখী স্রোত। দূরত্ব কম হলে পুরো পথটা ছিলো চ্যালেঞ্জে ঠাসা, যা ছিল দারুন উপভোগ্য। ওপেন ওয়াটার সাঁতারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সাঁতারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। কারণ সাঁতার কোন সাধারণ স্পোর্টস নয়, এটি জীবন রক্ষাকারী একটি খেলা। নদীপ্রধান দেশ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকজন মানুষের বেসিক সাঁতার শেখা উচিত। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪,৪৩৮ জন শিশু পানিতে পরে মৃত্যুবরণ করে। সাঁতার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে এই মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া সমুদ্রের পানি দূষণমুক্ত রাখা এবং কুতুবদিয়া এলাকায় পর্যটনশিপ্লের প্রসার করাকেও অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।’ বাংলাদেশে ওপেন ওয়াটার সুইমিংকে জনপ্রিয় করতে বোয়াসের এই উদ্যোগটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানটির টাইটেল স্পনসর ছিল ‘পাহাড় থেকে ডট কম’ এবং রেসকিউ পার্টনার হিসেবে পাশে ছিল ‘কক্সবাজার ট্রায়াথলেট’। উল্লেখ্য, মাসুম এর আগে বাংলা চ্যানেল সাঁতার (টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন-১৬.১ কিলোমিটার), সুবলং চ্যানেল সাঁতার (কাপ্তাই লেক-১৩.৫ কিলোমিটার), পদ্মা ক্রসিং সাঁতার (১৩ কিলোমিটার), মেঘনা ক্রসিং সাঁতার (৫ কিলোমিটার) সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি লং ডিস্টেন্স রানিং করে থাকেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো হলো কোস্টাল আল্ট্রা - ১০০ কিলোমিটার, মেরিন ড্রাইভ আল্ট্রা - ৫০ কিলোমিটার, শমশেরনগর আল্ট্রা - ৫০ কিলোমিটার উল্লেখযোগ্য।

আখনি ছাড়া ইফতার জমে না সিলেটিদের
পবিত্র রমজান মাস এলে ইফতারে হরেক রকমের খাবারের জন্য দেশব্যাপী প্রতিবছর নতুন করে পরিচিতি পায় সিলেট। নানা ধরনের খাবারের ভীড়ে সিলেটিদের ইফতারের খাবার তালিকায় জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে আখনী। সুস্বাদু আর দেখতে লোভনীয় এই খাবারটি সিলেটের বড় বড় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ভোজন রসিকদের ঘরে প্রতিদিন ইফতার তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ও সিলেট নগরের নামি-দামি রেস্টুরেন্টে গুলোতেও এই আখনি কিনতে ভীড় জমান রোজাদরার। বিশেষ করের মুরগী কিংবা গরুর মাংসসহ নানা ধরনের মসলা আর বিরিয়ানির চাল দিয়ে তৈরি হয় এই আখনি। যার সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে। প্রতিদিন বিকেল হলেই ইফতারের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত লাইন ধরে এই আখনি কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সিলেট নগরের জিন্দাবাজারে পানসি, রাজবাড়ি ও পালকি রেস্টুরেন্টে ঘুরে দেখা যায়। আখনি কেনার জন্য আসরের নামাজের পর থেকেই ভীড় জমিয়েছেন রোজাদাররা। যেখানে ইফতার পাতলা খিচুড়ির পাশাপাশি কিনছেন আখনি। সিলেট পানসী রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন আখনি কিনতে ভীড় জমান নানা জায়গা থেকে আসা মানুষ। বেশি বিফ আখনি কিনতেই আসেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ক্রেতাদের চাহিদা পুরণ করতে। ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০ টাকা দামে গরুর মাংসের আখনি বিক্রি করছেন ক্রেতারা। এ ছাড়াও মুরগীর মাংসের আখনি জায়গায় ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। সিলেটিদের বারাবরই ভোজন রসিক বলা হয় তাই তো কিছু চিন্তা না করেই প্রতিদিন পছন্দের সুস্বাদু এই আখনি সংগ্রহ করতে ছুটে আসেন নিজেদের পছন্দের দোকানে। শফি ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ’এখানকার আখন খুব জনপ্রিয় আমি প্রতিদিন আমার বাসায় নিয়ে ইফতার এটি খাই। পরিবার সাথে নাই তাই একা রান্না করতে কষ্ট হয় বলে মজাদার এই আখনি কিনতে এসেছি।’

রমজানে সুস্থ থাকার সহজ উপায়
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো রোজা। নিজেকে পরিশুদ্ধ এবং মহান আল্লাহ তা’লার সান্নিধ্যে লাভের মাধ্যম এটি। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী রমজানের সময় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। শারীরিক দুর্বলতার কবলে পড়লে রোজা রাখাই সম্ভব হবে না। এর ফলে রমজান মাসের বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই রোজা রেখে শরীর যেন সুস্থ থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু নিয়ম কানুন আর প্রয়োজনীয় খাবার খেলেই কোনো সমস্যা ছাড়াই রাখা যাবে সবগুলো রোজা। সারাদিন রোজা রেখে আমরা সাধারণত ইফতার করি ঠান্ডা শরবত ও ভাজাপোড়া দিয়ে। শুধু ইফতারেই নয় সেহরিতেও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে পড়ে বিরূপ প্রভাব। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে মনও ভালো থাকে না। তবে সামান্য একটু সতর্ক হলে ও নিয়ম মেনে চললেই সুস্থ থাকা সম্ভব। চলুন জেনে নেই রমজানে সুস্থ থাকার কিছু উপায়- >> আমরা সাধারণত খেজুর দিয়ে ইফতার করে থাকি। খেজুরে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে ইফতারে বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেক, দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টি, কোমল পানীয় এবং ফলের জুস পরিহার করা উত্তম। মিষ্টির পাশাপাশি রমজানে নোনতা খাবার থেকেও দূরে থাকতে হবে। >> ইফতারের খেজুর, শরবত, তিন রকমের ফল, সালাদ, ছোলা, ডিম সেদ্ধ, মুড়ি ইত্যাদি রাখুন। >> খাবার খেতে হবে খুব ধীরে ধীরে। কারণ দ্রুত খাবার খেলে বুকজ্বালা এবং অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। >> ইফতার শেষে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রামের জন্য বসা যাবে না। কিংবা ঘুমানো যাবে না। বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। ইফতারের পর কিছুক্ষণ হাটাহাটিও করা যেতে পারে। >> যাদের চা কফি পানের অভ্যাস আছে তারা মাগরিবের নামাজের পর লাল চা ও গ্রিন টি পান করুন। >> রাতে হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- সবজি ও মাছ ইত্যাদি। অথবা ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস দুধ পান করুন। >> রমজানে প্রতিদিন যেকোনো সময়ে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন। >> ইফতার ও সেহরিতে ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল, মসলা, সাদা চিনি, বাইরের জুস, রাস্তার ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। >> দৈনিক কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি পান করুন। >> সেহরিতে দই, চিড়া, কলা অথবা ভাত-রুটি, মিক্সড সবজি, মাছ, ডিম, মাংস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে হজম শক্তি বাড়াবে। >> যারা ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই রোজার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

যে পাঁচ কারণে লেখালেখি করা উচিত সবার
যারা লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, অথবা নিজের লেখা গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ পাঠকের জন্য প্রকাশ করেন, তারা যে নিজের জন্য লেখেন না, তা কিন্তু নয়। লিখতে যারা ভালোবাসেন, তাদের সবারই একটি সাধারণ অনুপ্রেরণা আছে। আর তা হলো নিজের চিন্তার জগতকে সংরক্ষণ করতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। নতুন একটি ভাবনা, কোন উপলব্ধি, একটি নতুন অভিজ্ঞতা, মনে হয় এটি লিখে রাখি, যত্নে থাকুক। কোন এক অলস দুপুরে নিজের লেখাগুলো পড়ে হয়তো আবার স্মৃতিতে হারিয়ে যান অনেকে। এটি মানুষের খুব গভীর একটি চাওয়া – হারিয়ে না যাওয়ার বাসনা। প্রায় সবাই চান, ‘আমি না থাকলেও কেউ যেন আমায় মনে করে’। নিজের জন্য লেখাও মনের গভীর এই চাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে লেখালেখির এই অভ্যাসের বেশকিছু প্রাত্যহিক ব্যবহার আছে। আবার জিজ্ঞেস করলে অনেকের কাছেই খুব বাস্তবসম্মত কিছু কারণও জানতে পারবেন। জেনে নিন এমন কিছু কারণ। ১. চিন্তা-ভাবনা গুছিয়ে নিতে মাথায় অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে চলছে? কোনটাতেই মন দিতে পারছেন না? একে একে লিখে ফেলুন ভাবনাগুলো। চোখের সামনে সবগুলো বিষয় থাকলে দেখবেন গুরুত্ব অনুযায়ী একটি একটি করে পরিকল্পনা করে ফেলতে পারছেন। আবার পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি কাজে দেবে। যারা নিয়মিত নিজেদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে লেখেন, বা ডায়রি লেখার অভ্যাস লালন করেন, তারা সাধারণত অর্গানাইজড্ হয়ে থাকেন। তাই আপনিও যদি নিজের জীবনটা আরেকটু গুছিয়ে যাপন করতে চান, তাহলে এই অভ্যাসটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। ২. দৈনন্দিন তথ্য মনে রাখতে লেখা যে সবসময় গল্প-কবিতা-প্রবন্ধই হয় তাও নয়, এখনকার প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে মনে রাখতে হয় কতকিছুই! বিভিন্ন ডিভাইস আর অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে বাজারের লিস্ট। যাদের সৃজনশীল লেখালেখির শখ আছে, তারা কিন্তু এসব ছোট ছোট তথ্যগুলোও লিখে রাখেন। এতে জীবন অনেকটাই সহজ হয়।৩. মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য কোন বিষয়ে খুব কষ্ট পেয়েছেন? বা এতই রাগ হয়েছে যে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না? বিষয়টি লিখে ফেলুন। মনের যত কষ্ট, অভিমান, রাগ লিখে ফেললে দেখবেন নিজেকে হাল্কা লাগছে। সম্পর্কের উন্নতির জন্য এই লেখাগুলোকে আপনি চিঠির মতো করে কাছের মানুষকে দেখাতে পারেন, যেন তারা আপনার অনুভূতি আরো ভালো করে বুঝতে পারে। অথবা দেখাতে না চাইলে আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন বা নষ্ট করে ফেলতে পারেন। যাই করেন না কেন, এটি আপনকে সাহায্য করবে নিশ্চিত। এটি পেশাদার সাইকোলজিস্টদের পরামর্শগুলোর একটি। ৪. অব্যক্ত কথার চাপ কমাতে কত কথা কত মানুষকে বলবো ভেবে বলা হয়ে ওঠে না আমাদের। এক সময় আফসোস ছাড়া আর কিছু বাকি থাকে না। মুখে বলে উঠতে পারছেন না, কিন্তু মনের মধ্যে কথা জমা হয়েই চলেছে। কী করবেন? চিঠি লিখে ফেলুন। কোন এক সময় হয়তো সেই চিঠি আপনার পাঠানোর ইচ্ছা হতেও পারে। ৫. সৃজনশীলতার চর্চা ধরে রাখতে আপনার ভেতরকার সৃজনশীলতাকে লালন করুন শব্দের যত্নে। কোন ভাবনা, উপলব্ধি, বিশ্লেষণ, গল্প, কবিতা বা গান। মুহূর্তের চিন্তাগুলোকে হারিয়ে যেতে না দিয়ে শব্দের মুক্তা দিয়ে গেঁথে ফেলুন তাদের। জীবনের কোন এক ধাপে এই লেখাগুলো আপনার বড় আপন মনে হবে। লেখালেখির অভ্যাসের গুণগান শেষ হওয়ার নয়। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে এর আলাদা আলাদা গুরুত্ব আছে। তবে গুরুত্ব যতটুকই হোক না কেন, উপকার ব্যতীত এর কোনো অপকার নেই।

ব্যবহার শেষে কলম মাটিতে ফেললে জন্মাবে গাছ
কলমের কালি ফুরিয়ে গেলে সেটির জায়গা হয় ময়লার ঝুড়িতে। সৃষ্টি করে দূষণ। কিন্তু এমন কলম যদি বানানো যায়, যা থেকে গাছের জন্ম হবে, কেমন হবে সেটা? এমনই পরিবেশবান্ধব এক উদ্যোগ নিয়েছে বরগুনার আমতলী উপজেলার আমিরুল ইসলাম নামের এক স্কুলশিক্ষার্থী। জানা গেছে, উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামের মো. মনিরুল ইসলামের ছেলে আমিরুল ইসলাম আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট থেকেই নতুন কিছু সৃষ্টির উদ্যোগ তার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব কলম তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। দুই মাস চেষ্টার পর নভেম্বর মাসে সফল হন তিনি। বিভিন্ন রঙের কাগজের মধ্যে কালির শীষ পেঁচিয়ে আঠা লাগিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই কাগজের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছের চারা ভরে দেন। ওই কলম রোদে শুকিয়ে শক্ত করা হয়। এভাবে তৈরি হয় পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম। এ কলম ব্যবহার শেষে মাটিতে ফেলে দিলেই ফলদ গাছের চারা জন্মাবে। উদ্যোক্তা আমিরুল ইসলামের উদ্যোগ পাঁচ-দশ টাকা ব্যয়ে হাজার টাকা আয়ের পথ তৈরি করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা। বাজারে থাকা প্লাস্টিকের কলম পরিবেশদূষণ ছাড়া আর কিছুই হয় না। আর এ কলমের কালি ফুরিয়ে গেলে মাটিতে ফেলে রাখলেই গাছের চারা জন্ম হবে। ওই গাছ থেকে আয়ের পথও সুগম হবে আবার পরিবেশ রক্ষা পাবে। আমিরুলের এমন উদ্যোগ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সবাই তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। উদ্যোক্তা আমিরুল বলেন, দুই মাস চেষ্টার পরে প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে কাগজের তৈরি পরিবেশবান্ধব কলম তৈরি করেছি। এতে একদিকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে অন্য দিকে কলমটি ব্যবহার শেষে মাটিতে ফেলে রাখলেই ফলদ গাছের চারা জন্মাবে। প্লাস্টিকের তৈরি কলম শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করছে। এ কলম ব্যবহার করলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হবে না। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য হলো পাঁচ টাকা ব্যয়ে হাজার টাকার আয়ের পথ সৃষ্টি করা। মানুষ গাছ রোপণে আগ্রহী না। আমার এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে অনায়াসেই গাছ জন্মাবে। কারণ যেখানে এ কলম ফেলা হবে সেখানেই ফলদ গাছের চারার জন্ম হবে। আমিরুলের বাবা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমিরুল লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট থেকেই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে। তারই সফলতা পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম তৈরি। আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমএ হান্নান বলেন, আমিরুল ইসলাম প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব কলম তৈরি করেছে। এতে একদিকে পরিবেশ সুরক্ষিত হবে, অন্যদিকে আর্থিক সাশ্রয় হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, আমিরুলের এমন উদ্যোগকে প্রসারিত করতে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
/V-up-2402140318.jpg)
আজ পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসার দিন
শীতের রুক্ষতাকে বিদায় করে আজ প্রকৃতিতে ফাল্গুনের হাওয়া। আজ বাতাসে বসন্তের উন্মাদনা। আজ ফাল্গুনের প্রথম দিন, আজ বসন্ত। প্রেম ঋতু হিসেবে পরিচিত বসন্তের প্রথম দিনে আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) একইসঙ্গে পালিত হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। একদিকে বাসন্তী রং অন্যদিকে ভালোবাসার রংয়ে আজ মিলেমিশে একাকার মানুষ ও প্রকৃতি। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত। বাংলাদেশেও দিবসটি ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। অন্যদিকে, বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাস। কয়েক বছর ধরে একই দিনে উদযাপিত হয়ে আসছে পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার করায় এখন একই দিনেই পড়েছে দুটি উৎসব।রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে কাটাবে ভালোবাসার মানুষগুলো। তাদের পরনে লাল, নীল, সাদা, বেগুনি, গোলাপি বিভিন্ন রঙের পোশাক আর সাজসজ্জায় ভালোবাসার দিনটি যেন বর্ণিল রঙে রঙিন হয়ে উঠবে। এই দিনে মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী ফুলের দোকানে দিনভর বিক্রি হয় গোলাপ, গাঁদাসহ নানা ধরনের রঙিন ফুল। তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলে রাজধানীর রাজপথ, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বর, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ পুরো নগরী। বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, বনানী লেক, মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণ ফুলে ফুলে বর্ণিল, উচ্ছল-উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ভালোবাসা ও ফাল্গুন উদযাপনে।
/hug-day.jpg)
ভালোবাসা সপ্তাহে ‘হাগ ডে’ কেন পালন করা হয়?
ভালোবাসার সপ্তাহের ষষ্ঠ দিনটি হচ্ছে হাগ ডে। ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটি পালিত হয় ‘হাগ ডে’ নামে। ‘হাগ’ অর্থ আলিঙ্গন। ভালোবাসার অন্যতম প্রকাশ যার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই আলিঙ্গনই সম্পর্কের গভীরতার অন্যতম চিহ্ন। ভালবাসার উদযাপনেই আলিঙ্গন। আর তার জন্যই এমন একটি দিন বরাদ্দ করা হয়। তবে ‘হাগ ডে’ কবে থেকে শুরু, তা স্পষ্ট জানা যায় না। এর কোনো প্রামাণ্য নথি নেই। তবে আলিঙ্গনের গুরুত্ব প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে দেখা যায়। তবে আধুনিক হাগ ডে উদযাপনের সূচনা সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও, এটি মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে এসেছে এবং ভালোবাসা সপ্তাহের অংশ হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল হাগিং ডে প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপিত হয়, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পায়। তবে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি বিশেষভাবে পালিত হতে থাকে। বেশ কিছু সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, এটি হাল আমলের একটি রীতি। ব্যস্ত জীবনের থেকে ভালবাসার জন্য এই সময়টুকু বের করতেই হাগ ডে পালিত হয় বলে অনেকেরই মত। আলিঙ্গনের মাধ্যমে ভালবাসাকে অনুভব করার অবকাশ বলে মনে করা হয় ‘হাগ ডে’ কে। প্রেমিকার জন্য নয়, বরং এটি সকল সম্পর্ককে আরও গভীর ও সুন্দর করার সুযোগ দেয়। এটি শুধুমাত্র ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। আলিঙ্গন একটি ব্যক্তিগত অনুভূতির সঞ্চার করে। আমরা ছোট থেকে বেশ কয়েকটি আলিঙ্গনের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে উঠি। প্রিয়জনদের আলিঙ্গন ভালোবাসার প্রকাশ করে একই সঙ্গে সুরক্ষাও বটে। সেই প্রিয়জন তৈরি হয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে, ভালবাসার প্রণোদনায়। পরবর্তী সময়ে আলিঙ্গন বিশেষ মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। আলিঙ্গনে দুইজন আবদ্ধ হয়। বিশ্বাস ও আবেগ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। সেও তো একরকম আলিঙ্গন। আর সেই আলিঙ্গনের উদযাপনের আরেক নাম ‘হাগ ডে’। আলিঙ্গন করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্মিক সংযোগ গড়ে ওঠে এবং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আলিঙ্গন মানুষের শরীরে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। আলিঙ্গন একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়ায়, যা তাকে আরও ইতিবাচক ও সুখী করে তোলে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, আলিঙ্গন হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যে কোনো মানসিক চাপ, দুঃখ বা একাকীত্ব অনুভব করলে একটিমাত্র আলিঙ্গনও মনের ভার লাঘব করতে পারে।

হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হচ্ছে নতুন ফিচার
সারাবিশ্বে প্রতিনিয়ত কয়েকশ কোটি মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ভালো করতে একের পর এক ফিচার নিয়ে আসছে। হোয়াটসঅ্যাপে একটা নতুন ট্যাব আসতে চলেছে। এতে বাজারের সব জনপ্রিয় এআই ফিচার এবং চ্যাটবট থাকবে। মেটা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সকে খুব কৌশলীভাবে কাজে লাগাচ্ছে। ব্যবহারের পরিধি ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ট্যাব আনাও সেই কৌশলেরই অংশ। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন ইন্টিগ্রেশন আসবে। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের জনপ্রিয়তা বাড়বে। সঙ্গে ব্যবহারের সুযোগও। আসলে হোয়াটসঅ্যাপ এখন আর নিছক মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং ধীরে ধীরে এআই চ্যাটবট এবং অন্যান্য নতুন ফিচারের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে। থার্ড পার্টি ডেভেলপাররাও এখানে কাজ করতে পারবেন। টিপস্টারের খবর অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ এখন এআই ট্যাবের জন্য ওয়েলকাম স্ক্রিন পরীক্ষা করছে। এটাই ইউজারকে জানিয়ে দেবে, অ্যাপে নতুন ফিচার চলে এসেছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, মেটা এআই-এর জন্য ভয়েস মোড নিয়ে আসবে হোয়াটসঅ্যাপ। তবে কোনো কারণে এই আপডেট এখনো আসেনি বা দেরি হচ্ছে। যাইহোক, মেটার কাছে মেটা এআই-এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এটাই তাদের এআই প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। অন্যান্য এআই-এর মতো মেটা এআই-ও প্রম্পট অনুযায়ী কাজ করে। ছবি তৈরি, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ইত্যাদি কাজ পারে। আগামী মাসগুলোতে মেটা তাদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম, যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামে আরও আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ফিচার যোগ করবে। ইউজার সহজেই এই সমস্ত টুল ব্যবহার করতে পারবেন, কোনো দামি হার্ডওয়্যার লাগবে না। হোয়াটসঅ্যাপের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে নতুন এআই ট্যাব নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। এখনো বিটা ভার্সনে পৌঁছায়নি। ফলে ইউজাররা এখনই ব্যবহার করতে পারছেন না। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে বিটা ভার্সনেও নতুন এআই ট্যাব চলে আসবে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
/proposed.jpg)
কবে, কীভাবে শুরু হলো প্রোপজ ডে জানেন কি?
বছরের অন্যান্য দিনগুলো সবার জন্য হলেও ফেব্রুয়ারির এই কয়েকটা দিন বোধহয় প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য বরাদ্দ। বসন্তের এই সময়ের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ভ্যালেন্টাইনস উইক। সাতদিনের দ্বিতীয় দিনটি প্রোপোজ ডে। অর্থাৎ ভালোবাসার প্রস্তাব জানানোর দিন। অনেকদিন ধরে ভেবেও প্রোপজ করার সাহস করে উঠতে পারেননি, আজ তাদের দিন। ভালোবাসার প্রস্তাব করেই ফেলুন প্রিয় মানুষটিকে। কিন্তু জানেন কি? কীভাবে এলো প্রোপোজ ডে? যদিও এর কোনো নির্দিষ্ট ইতিহাস নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রিয়ান আর্চডিউকের প্রপোজালকে এমন প্রেম প্রস্তাব বলে মনে করা হয় যা আজও ইতিহাস স্মরণে রেখেছে। মনে করা হয়, এটিই প্রথম প্রোপোজাল যার উল্লেখ ইতিহাসে পাওয়া যায়। ১৪৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অস্ট্রিয়ান আর্চডিউক ম্যাক্সিমিলান মেরি অব বার্গ্যান্ডিকে প্রপোজ করেন। তবে তা খালি হাতে নয়, একটি হিরার আংটি পরিয়ে তাকে প্রোপোজ করেন তিনি। এখন ভ্যালেন্টাইনস উইকের আগে বিশেষ এই দিন পালন করা হয়। তবে ১৪৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র সঙ্গে এই দিনের যোগাযোগ ছিল না। আশ্চর্যের কথা, তখনকার সময় হিরার আংটি উপহার দেওয়ার চল ছিল না। এমনকি বিয়ের প্রস্তাবে অর্থাৎ এনগেজমেন্টেরও চল না। প্রেমের প্রস্তাব জানানোর পর অন্য উপহার দেওয়ার রীতি ছিল। উপহার হিসেবে গবাদি পশু যেমন দুগ্ধবতী গাভী উপহার দেওয়ার চল ছিল। অস্ট্রিয়ান আর্চডিউক সেদিক থেকে সত্যিকারের ইতিহাস গড়েন। অন্যদিকে হাঁটু গেড়ে বসে প্রোপজ করার চল কোথা থেকে এলো জানেন কি? জানা যায়, ইংরেজি ছবি ‘সেভেন চান্সেস’-এর কমিক চরিত্র বাস্টার কীটন ছবির নায়িকাকে এভাবেই হাঁটু মুড়ে বসে প্রেম প্রস্তাব জানিয়েছিল। আসলে প্রিয় মানুষটির প্রতি আবেগ ও অনুভূতি বোঝাতে হাঁটু গেড়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল বাস্টার। তাই এই অঙ্গভঙ্গি করেছিল যা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই চলচ্চিত্রটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে এই ছবির দৃশ্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই ইউরোপ জুড়ে এই রীতি প্রচলিত হয়। অবশ্য এটি ছিল একটি নির্বাক চলচ্চিত্র। তবুও এই চলচ্চিত্রের প্রেমের রসায়ন মনে ধরেছিল বিশ্ববাসীর। এ ছাড়াও বলা হয়, ১৮১৬ সালের আরেকটি ঘটনা রয়েছে যা আজকের এই দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলেছে। রাজকন্যা শার্লটের সঙ্গে তার হবু স্বামীর বাগদানের অনুষ্ঠান এই দিনেই হয়। তারপর থেকে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন পালিত হয় প্রোপোজ ডে হিসেবে।
 25/images (69).jpeg)
সিলেটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। কাদা আর মাটির লেপনে তৈরি মাটির ঘরে যেমন মিলে প্রশান্তি তেমনি যেকোনো আবহাওয়াতে মিলে শীতলতা। এক কালে মানুষ প্রচুর আবহাওয়া আর খরতাপ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিত মাটির ঘরে। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে এক সময় মাটির ঘরই ছিল সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাথা গোঁজার ঠাঁই৷ তবে কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেই মাটির ঘর এখন বিলুপ্ত প্রায়। সিলেটে দিন দিন প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ায় বিশাল পরিবর্তন এসেছে বিগত সময়ের চেয়ে। এখন সিলেটের বেশিরভাগ উপজেলাতেই পাকা বাড়ি দেখা যায়। তবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর যে একেবারে নেই তেমনটাও না। সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোলাপগঞ্জ উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় এখনো মাটির ঘর রয়েছে। সবুজের সমারোহ আর চোখধাঁধানো মাটির ঘরের এমন দৃশ্য শেষ কবে সিলেটের কেউ দেখেছে সেটা কারো জানা নেই। তবে সিনেমা কিংবা ছবিতে এমন দৃশ্য প্রায় দেখা গেলেও বাস্তবিক অর্থে এখন এমন দৃশ্য অনেকটা আকাশের চাঁদের মতো। জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার ফলে মানুষ এখন শহরমুখী। তবে ২০০০ সাল পূর্ববর্তী প্রজন্মের কাছে এখনো মাটির ঘরের শীতলতার প্রশংসা মুখে মুখে। আব্দুল করিম নামের এক ষাটোর্ধ যুবক বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের পরিবার নিয়ে মাটির ঘরে বাস করতাম। মাটির ঘরে বসবাসের কি যেন শান্তি বলে বুঝানোর মতো না। এর পর শহরমুখী হলাম বাড়িতে দালান বানালাম এভাবেই হারিয়ে গেলো মাটির ঘর। মাটির ঘরের শীতলতা আমাকে মুগ্ধ করতো।’ মোহাম্মদ রহিম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গ্রামে আগে মাটির ঘর দেখা যেতো। এখন তো সবাই বড় বড় দালান তৈরি করেছে। তবে এক সময় মাটির তৈরি ঘর বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমাদের প্রজন্মের কাছে মাটির ঘর ছিল আবেগ।’ এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের আসামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা মাটির তৈরি অনেক ঘরই স্মৃতি হিসেবে রাখা হয়। আমাদের সিলেটে যদি এভাবে রাখা যেত তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারতো।’

ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে "ডব্লিউসিএস বিডি"
বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগ হিসেবে পরিচিত, যা প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। বাংলাদেশেও ক্যান্সারের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি ও আক্রান্ত রোগীদের সহায়তা করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা, পরামর্শ এবং কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তুলতে কাজ করছে। ঢাকা ও ঢাকার বাহিরের যারা ক্যান্সার আক্রান্ত তাদের বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করে সংগঠনটি। প্রতিদিন বহু রোগী এখানে সেবা গ্রহণ করেন। ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য মানসিক শক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি রোগীদের পরিবারসহ তাদের মানসিক সুস্থতায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। নিয়মিত কাউন্সেলিং সেশন, সেমিনার, এবং রোগীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্কশপ আয়োজন করে সংগঠনটি। তবে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটির কার্যক্রম এখানেই শেষ নয়। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি তারা সমাজের বিভিন্ন দুর্বল শ্রেণির মানুষের জন্যও কাজ করে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিক্ষা সহায়তা দিয়ে তারা সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা পালন করে। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের মতো কার্যক্রমে এই সংগঠনটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ৭০ হাজার বৃক্ষরোপণ করেছেন, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সার কীটনাশক ব্যবহার না করে কীভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা যায় তা সচেতনতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সংগঠনটি। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ হুমায়ুন কবির একজন ক্যান্সার আক্রান্ত যোদ্ধা। তার সেবামূলক কাজ গুলো মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি সবসময় অসহায়, দরিদ্র ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার কাছে প্রশংসিত। ক্যান্সার রোগীদের জন্য তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও উদার মনোভাব প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সৈয়দ হুমায়ুন কবির তার কর্মজীবনের একটি বিশাল অংশ এই সংগঠনের উন্নয়নে ব্যয় করেছেন। তার মতে, "মানুষের সেবা করার মধ্যে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, সেটি অন্য কিছুতেই নেই। তিনি বলেন, "ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই, প্রতিটি ক্যান্সার রোগী জীবনের প্রতি আশাবাদী হয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখুক।" ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ হুমায়ুন কবির ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনে বরাবরই সচেষ্ট। তারা ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য বিতরণ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প, বর্নাতদের মাঝে খাদ্য, চিকিৎসাসেবা সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি এক মানবিক আন্দোলন। এই প্রতিষ্ঠান ক্যান্সার রোগীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখায় এবং তাদের পাশে থেকে সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে। সমাজে এই ধরনের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ আরও বড় পরিসরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা। এটি শুধু ক্যান্সার রোগীদের জন্য নয়, বরং মানবতার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান করতে চান শরীফ সিদ্দিকী
উল্লেখ্য, শরীফ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন upgraph.io ইতিমধ্যে পৃথিবীর ৫০ টারও বেশি দেশে কাজ করে যাচ্ছে।তার প্রতিষ্ঠান SEO এবং ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার কাজের সুনাম রয়েছে।

পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণে পরিবেশগত বিপর্যয় এবং উত্তরণের উপায়
দীপংকর বর : পলিথিন ও প্লাস্টিক আধুনিক জীবনের বহুল ব্যবহৃত উপাদান হলেও, পরিবেশের জন্য তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। পলিথিনের বহুল ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার ফলে মাটি, পানি, এবং বায়ু দূষণের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ প্লাস্টিক অপরিবর্তিত থাকে অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার হয় না এবং পরিশেষে তা সমুদ্রে পতিত হয় । এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ টন প্লাস্টিক সমুদ্রে যাচ্ছে। যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং নদী-নালার ধারণক্ষমতা কমে যায়। অধিকন্তু, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উপস্থিতি প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিবেশসম্মত পুনর্ব্যবহারকে দুরূহ করে তুলছে।পরিবেশের পাশাপাশি পলিথিন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি এবং ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। পলিথিন প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক খাবার বা পানির সংস্পর্শে আসলে ধীরে ধীরে খাদ্যে মিশে যায়। এই রাসায়নিকগুলো মানবদেহে ক্যান্সার, হরমোনগত অসামঞ্জস্য, এবং প্রজনন সমস্যার কারণ হতে পারে। পলিথিন পোড়ালে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। এগুলো শ্বাসনালির প্রদাহ, অ্যাজমা, এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিন ধীরে ধীরে ছোটো ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক অন্ত্রের ক্ষতি, রক্তে প্রদাহ, এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। নদী-নালা বা সমুদ্রের পলিথিন বর্জ্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই দূষিত জলজ প্রাণী যখন মানুষ গ্রহণ করে, তখন তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক খেলনা, প্যাকেটজাত খাদ্য, বা পানির বোতল থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থ শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্লাস্টিকের বস্তুটি মাটি ও পানিকে দূষিত করার ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর।পলিথিন সহজে মাটিতে মিশে না। এটি মাটির উপরে একটি আস্তরণ তৈরি করে, যার ফলে মাটির স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পলিথিনের উপস্থিতি মাটিতে উপকারী জীবাণু ও কীটপতঙ্গের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে, ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। পলিথিনের কারণে মাটিতে পানি জমে থাকে, ফলে ফসল নষ্ট হয় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পলিথিন উৎপাদনের সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। পলিথিনের কণা বৃষ্টির পানির সাথে নদী, হ্রদ ও সমুদ্রে চলে যায়, ফলে জলাশয় দূষিত হয়। জলজ প্রাণীরা পলিথিনকে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে, ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট হয় এবং মৃত্যু হয়। পলিথিন পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে, ফলে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং মানুষের জন্য পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পলিথিনের ক্ষতিকরদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ, ব্যবহারকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় পলিথিন দূষণ রোধে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পলিথিন উৎপাদনের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা করেছে। ১ অক্টোবর থেকে সুপার শপগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারসহ সারাদেশে পলিথিন শপিংব্যাগের ব্যবহারের বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ হতে এ পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন বিক্রয়, সরবরাহ ও বাজারজাত করার দায়ে ১৯৮টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ৪১৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট পঁচিশ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ আনুমানিক ৫০ হাজার ৫৫২ কেজি নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন জব্দ করা হয়েছে এবং ৪টি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার সেবা তথা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।ইতোমধ্যে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিংব্যাগ বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিং এর জন্য উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা মহানগরের বাজারে বাজারে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন, ক্লিনআপ পোগ্রামসহ বিকল্প বিতরণ করা হয়েছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে অর্থাৎ অবৈধ পলিথিন শপিংব্যাগ যারা উৎপাদন, পরিবহণ, বিক্রয় এবং মজুদদারকে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে নিয়মিত জরিমানা ধার্য ও আদায় করা হচ্ছে এবং অবৈধ পলিথিন সামগ্রী জব্দ, কারখানাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।পলিথিনের বিকল্প সোনালী ব্যাগের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, বায়োডিগ্রেডেবল মোড়কের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বয়ে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পলিথিনসহ সকল প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১০ বছর মেয়াদি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার শহরের প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা নদী দূষণের হট স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অচিরেই সেগুলো অপসারণ এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হবে।মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিন বছর মেয়াদি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সমুদ্র সৈকত, সৈকত সংলগ্ন হোটেল মোটেলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিভিন্ন আইটেম পর্যায়ক্রমে বন্ধের বিষয়ে কার্যক্রম চলমান। আশা করা যায় যে, দেশে প্রথমবারের মতো ইপিআর এর আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি ব্রান্ডের মালিকগণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অর্থায়নসহ সার্বিক বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করবেন। মহামান্য হাইকোর্ট উপকূলীয় এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকসহ সারাদেশে পলিথিন শপিংব্যাগ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।পলিথিনের কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। তাই পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সুরক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আমরা অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারি। পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাগজ থেকে তৈরি ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী এবং হালকা পণ্য বহনের জন্য জনপ্রিয়। এটি সহজেই পরিবেশে মিশে যায়, ফলে দূষণের কোনো ঝুঁকি থাকে না। সুতির কাপড় বা অন্যান্য টেকসই উপাদান দিয়ে তৈরি কাপড়ের ব্যাগ টেকসই এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। দৈনন্দিন বাজার এবং ব্যক্তিগত কাজে এটি একটি আদর্শ বিকল্প। পাট থেকে তৈরি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। বাংলাদেশে সহজলভ্য এই পণ্যটি বাজার, কেনাকাটা এবং প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা যায়। এটি মাটিতে সহজে মিশে যায় এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। পানি, তেল, মশলা ইত্যাদি রাখার জন্য কাঁচের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঁচের বোতল পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব। পানি বহন করার জন্য স্টেইনলেস স্টিলের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বাস্থ্যকর। কাচ ও স্টিলের পাত্র খাবার সংরক্ষণ এবং বহনে কার্যকর। এটি বারবার ব্যবহার করা যায়, ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগতভাবে উপকারী।বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি ব্যাগ, ঝুড়ি বা অন্যান্য পণ্য পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। এগুলো কৃষিপণ্য পরিবহণ ও সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। কর্নস্টার্চ বা ভুট্টার গুঁড়া থেকে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পলিথিনের কার্যকর বিকল্প হতে পারে। এটি দ্রুত পচনশীল এবং পরিবেশে কোনো ক্ষতি করে না। নারকেলের খোসা বা ধানের ছোবড়া থেকে তৈরি পণ্য প্যাকেজিং এবং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সহজে মাটিতে মিশে যায়। বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমন সম্ভাবনাও রয়েছে। সচেতনতার অভাব, খরচ বেশি হওয়া, এবং সহজলভ্যতার সীমাবদ্ধতা চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও, প্রচারণা, নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে এসব পণ্যকে জনপ্রিয় করা সম্ভব।পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করার জন্য রেডিও ও টেলিভিশনে পলিথিন দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর বিকল্প সম্পর্কে বিজ্ঞাপন, ডকুমেন্টারি ও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা প্রয়োজন। পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত নিবন্ধ, ফিচার এবং বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট, ভিডিও এবং তথ্যচিত্র প্রচার করা যেতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে প্রচারণা চালানোসহ সরকারি পর্যায়ে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতামুলক নিয়মিত কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। এনজিও ও পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার উৎসাহিত করতে পলিথিনের বিকল্প, যেমন পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ বা কাগজের ব্যাগের ব্যবহার জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে। কম খরচে এসব পণ্য সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। সরকার, শিল্পখাত এবং সাধারণ মানুষ সবাই মিলে কাজ করলে পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্ভব। নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে নতুন প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সর্বোপরি, নতুন প্রযুক্তিগুলোর পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া, তবে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। অপরদিকে, আইনের পরিধি আরও বাড়িয়ে পলিথিন ব্যবহারের জন্য জরিমানা এবং অন্যান্য শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পলিথিন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করতে হবে। পলিথিন উৎপাদনকারী এবং বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে বাজার থেকে পলিথিন উঠিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।পলিথিন দূষণ বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংগঠন ও উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এর চলমান প্লাস্টিক ফ্রি রিভার্স অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া প্রজেক্ট(প্লিজ) এর আওতায় একাধিক পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাসকরণে ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাসহ রিসাইকেল করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল প্লাস্টিক অ্যাকশন পার্টনারশিপের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা ও জিআইজেড এর সাথে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন।উন্নয়নশীল দেশগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত দেশের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পলিথিন দূষণ একটি বৈশ্বিক সংকট, যার প্রতিক্রিয়া স্থানীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায়। এটি প্রতিরোধে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ সামগ্রী থেকে মুক্তি পেতে আমাদের এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার হ্রাস করে এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।পলিথিন দূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সফল করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা গেলে একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পলিথিনের ব্যবহার কমানো গেলে পরিবেশ দূষণ কমবে। পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারি। তাই আজ থেকেই আমরা সবাই মিলে পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলি। সাধারণ মানুষকে পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানানো এবং তাদের জীবনযাত্রায় পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার উৎসাহিত করা হলে এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।লেখক: উপপ্রধান তথ্য অফিসার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

১৪ বছর বয়সেই সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার বেলকুচির সবুজ
সৃজনশীলতা যখন কারও জীবনের ধ্রুবতারা হয়ে ওঠে, তখন বয়সের সীমাবদ্ধতাকে হার মানতে হয়। সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সবুজ ইসলাম সোহাগ ঠিক এমনই একজন প্রতিভাবান তরুণ, যিনি নিজের প্রচেষ্টা ও দক্ষতার মাধ্যমে সবার জন্য হয়ে উঠছেন এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সোহাগপুর নতুনপাড়া আলহাজ্ব সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সবুজের জীবন অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্ন। তার সমবয়সীরা যেখানে গেমস কিংবা বিনোদনে মগ্ন, সেখানে সবুজ বেছে নিয়েছে সৃজনশীলতার পথ। সবুজের যাত্রা শুরু হয় বাড়ির পুরনো একটি ল্যাপটপ থেকে। ইন্টারনেটে ইউটিউবের টিউটোরিয়াল দেখে তিনি নিজেই শেখেন গ্রাফিক্স ডিজাইন। ধীরে ধীরে শখ থেকে কাজ, আর কাজ থেকে দক্ষতায় পৌঁছানোর পথে তিনি নিজেকে নিয়ে যান এক ভিন্ন উচ্চতায়। শুধু শেখার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে সবুজ পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাজ শুরু করেন।তাঁর এই আয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের মধ্যবিত্ত পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করছেন, যা তাঁর বয়সের তুলনায় অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বর্তমানে সবুজ Creative IT Solution-এ পার্ট-টাইম জুনিয়র ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর কাজের পরিধি দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও এডিটিংয়ে তার দক্ষতা তাকে নিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টে। সবুজ এরই মধ্যে জয়ত্রি এবং সহজবাজার-এর মতো ব্র্যান্ডের স্টাটিক ডিজাইন করছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নাটকের পোস্টার এবং জনপ্রিয় মডেলদের প্রমোশনাল ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করেও প্রশংসিত হয়েছে। প্রযুক্তির প্রতি তার আগ্রহ তাকে আরও নতুন কিছু শেখার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করছেন। সবুজ ইসলাম সোহাগ শুধু একটি নাম নয়, বরং সৃজনশীলতার প্রতীক। তার গল্পটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের দেখিয়ে দেয়, সীমাবদ্ধতাই শেষ কথা নয়; ইচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব। বেলকুচির মতো মফস্বল এলাকা থেকে উঠে এসে প্রযুক্তি আর সৃজনশীলতার মেলবন্ধনে নিজের জায়গা করে নেওয়া সবুজের এই যাত্রা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। সবুজের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন আরও বড়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছেন। তাঁর এই সৃজনশীল যাত্রা থেমে না যাক—এই শুভকামনা। এমন তরুণদের গল্প আমাদের সমাজের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।

আজ বেগম রোকেয়া দিবস
আজ ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) বেগম রোকেয়া দিবস। সোমবার এ দিবস উপলক্ষে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২৪’ প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। নারী শিক্ষার প্রসারে বেগম রোকেয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে সোমবার স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে (টিএসসির বিপরীত পাশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বিকেল ৩টায় ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২৪’ এর কর্মসূচির অংশ হিসেবে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা উভয়েই ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২৪’ পেতে যাওয়া নারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৪তম জন্মবার্ষিকী ও ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুরে বাংলা একাডেমি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। তার জন্ম ও মৃত্যুর দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ। বাঙালি মুসলমান সমাজে নারী স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বেগম রোকেয়া বিশ শতকের প্রথম দিকে বাঙালি মুসলমানদের নবজাগরণের সূচনায় প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন। বাঙালি মুসলিম সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকার এবং নারী স্বাধীনতার পক্ষে নিজের মতবাদ প্রচার করেন। বেগম রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী প্রভৃতি।

মধু চাষ করে বছরে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা
অনেকটা শখের বশে মাত্র ১টি মধুর বাক্স মৌমাছিসহ ৭হাজার টাকা দিয়ে কিনে বাড়িতে রাখেন লিমন ও রিপন। কিছুদিন পর থেকে তিনি মধু সংগ্রহ শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মৌ চাষ। এখন তার খামারে ৫০টার ও বেশি’ মৌমাছির বাক্স। গড়ে তুলেছেন ‘মিষ্টি মৌ-খামার’। বলছিলাম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার আলেপুর গ্রামের দুই ভাই লিমন ও রিপন এর কথা। মৌমাছি চাষ করে তারা এখন বেশ ভালো আছেন। এলাকায় তারা এখন চৌধুরী বাড়ির ‘মধু লিমন ও রিপন’ নামে পরিচিত। বৃস্পতিবার (২১নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে রয়েছে আম, ঝাম, কাঠাল, লেচু, লেবু সহ বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে। এসব জায়গার ভেতরে ফাঁকা একটু জায়গা মাঝে মধ্যে রয়েছে কিছু কাঠের বাক্স। সেখানে দেখা যায় মৌমাছিঁর আনাগোনা। চলছে মধু আহরণ। আগুনের ধুয়া ব্যবহার করে সেসব বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। জানা গেছে, চৌধুরী বাড়ির রিপন পড়াশোনা মোটামোটি শেষ করে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন। ছোট ভাই লিমন পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতে মধু চাষ করছেন। দুই ভাই শখের বসে প্রথমে ১টা বাক্স কিনে মধুর চাষ শুরু করেন। পরে এক এক করে ৫০টা বক্স বাড়ি উঠানের বিভিন্ন স্থানে মাচা তৈরী করে রাখেন। ৪মাস পর পর মধু সংগ্রহ করেন তারা। প্রতিটা বক্সে ৪-৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মধুর দাম ১৫০০-১৮০০টাকা করে বিক্রি করেন। এখন মধুর বাণিজ্যিক চাষের দিকেই মনোযোগী হন তারা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তারা মধু দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনলাইনে পাঠান। বছরে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা আয় করেন রিপন ও লিমন। রিপন ও লিমন বলেন, ‘২০১৭ সালে শখের বসে ৭ হাজার টাকা দিয়ে মাত্র ১টি মধুর বাক্স কিনে বিভিন্ন ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। দুই ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি এখন মধু চাষে এখন ব্যস্ত সময় পার করছি। এখন আমরা মধুর বাণিজ্যিক চাষ শুরু করি।’ তারা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ফুল থেকে মধু আহরণ করছি। মধুর চাষ করতে চাইলে আমরা সহযোগীতা করবো। কেউ খাটি মধু আমাদের কাছ থেকে নিতে চাইলে দিতে পারবো। আমরা বছরে ৪বার মধু সংগ্রহ করি। বর্তমান বাজার ম‚ল্য প্রতি কেজি মধুর দাম ১৫০০-১৮০০ টাকা। বছরে খরচ বাধেঁ আমাদের ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা আয় হয়।মধু সংগ্রহকারী মনু মিয়া নামের এক শ্রমিক জানান, ‘আমার বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কানাইদেশী গ্রামে। এই উপজেলার বিভিন্ন খামারে কাজ করেই তার সংসার চলে। ১০ বছর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি মধু সংগ্রহ করে। মধু চাষ করে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রতি মাসে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ৫০-৭০টা বক্স থেকে মধু সংগ্রহ করি। আমাকে মানুষ যে মধু দেয় সে মধু বিক্রি করে আমার সংসার চলে।’ কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়েন্ত কুমার রায় বলেন, ‘কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মধুর চাষ করা হয়েছেন। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কেউ মধু চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা সহযোগীতা করে থাকি।’

ক্ষুদ্র ব্যবসায় সফল নিপুন
নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ফ্যাশন সচেতন নারীরা দিন দিন ঝুঁকছেন হিজাব পরিধানে। দেশে হিজাবের বাজার বড় হয়েছে। চাহিদার প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে নানা ক্যাটাগরির হিজাব।শখ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিণত হওয়া এমনই একটি হিজাবের অনলাইন দোকান ‘টপ হিজাব বিডি’। মাত্র ছয় বছরে এই প্রতিষ্ঠানটি সফলতার পরিচয় বহন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নিপু হোসেন। বরিশালের মেয়ে নিপু হোসেনের ছেলেবেলা থেকে আগ্রহ ছিল আঁকিঝুঁকি ও ফ্যাশন ডিজাইনে। কিন্তু পরিবারের চাওয়াতে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা অর্জন করেছেন ব্যবসায় শিক্ষা শাখায়। কখনো ভাবেননি পোশাকের সঙ্গেই জড়িয়ে যাবে তার কর্মজীবন। বর্তমানে নিপুর ফেসবুক পেইজ ‘টপ হিজাব বিডি’-তে বিভিন্ন রঙের প্রায় ৬৫ ধরনের হিজাব বিক্রি হচ্ছে। নিপু হোসেন জানান, হঠাৎ এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ পান তুর্কি হিজাবের। শুরুতে নিজে পরার জন্য দুটি হিজাব সংগ্রহ করেন। আশেপাশের অনেকেরই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখতে পান ।কিছু হিজাব এনে কাছের মানুষদের কাছে বিক্রিও করে দেন। পরিচিতদের গণ্ডি ছাড়িয়ে দূরের মানুষদেরও চাহিদা দেখতে পেয়ে পুরোপুরি ব্যবসায়িক চিন্তাটি আসে তার মাথায়। বর্তমানে তার অধীনে কাজ করছেন প্রায় ৩০ জন।

সুন্দরী কমলা নাচে...
কমলার গানের সঙ্গে বঙ্গ কন্যাদের নাচ; যেকোনো আসোর জমানোর জন্য যথেষ্ট। তবে সুন্দরী কমলা নামটি যেভাবে বাংলার মানুষের জীবনের সঙ্গে গেঁথে আছে তাকে ফোকলোরের জগত থেকে টেনে তুলে আসল ইতিহাসটুকু জানার আগ্রহ এড়ানো যায় না। তবে কমলা শ্রেফ ইতিহাস নয়। তাকে বাস্তবই বলা যায়।সেন আমলের শেষের দিকে মহাস্থানের গোকুল ম্যাড়ের প্রাসাদে আবার অনেকের মতে স্কন্ধের ধাপে অবস্থিত প্রমোদ ভবনের তৎকালীন রাজার প্রমোদবালাদের মধ্যে অসাধারণ রূপবতী, গুণবতী ও প্রমোদকলায় পটীয়সী এক সুন্দরী প্রমোদবালার একজন কমলা। যার রূপ-গুণ-কৃতি নিয়ে পরবর্তীকালে লোকগান ও লোকনাটক উনিশ শতকেও অত্র জনপদ ছেড়ে উত্তরবঙ্গের অনেকটা এলাকাসহ বিদগ্ধ মানুষকে বিনোদন জুগিয়েছিল।এই কমলাকে কেন্দ্র করেই লেখা হয়েছে বিখ্যাত গান‘ওরে কমলার নাচনে বাগিচার পিছনেচাঁদ ও ঝলমলে হাঁসেরেভাহালো করিয়া বাজাওগো দোতারাসুন্দরী কমলা নাচে...’উত্তরবঙ্গেরই কোনো এক স্বভাবকবি গানটি লিখেছিলেন। কিন্তু কমলা কি বাস্তবেই কেউ ছিলেন? নাকি বাংলায় একটি ফোকলোর মাত্র। লোকসংস্কৃতিই কি কমলাকে জন্ম দিয়েছে? এ নিয়ে তর্ক হতেই পারে। তবে কমলা বাস্তবেও ছিল, অন্তত এমন প্রমাণও আছে। বাংলার আদি-মধ্যযুগের পালাগুলোতে বিচ্ছেদাত্মক ‘কমলা’ চরিত্রের স্বতন্ত্র কাহিনি পাওয়া যায়। ‘কমলার পুঁথি’ নামে বিয়োগান্ত কমলা চরিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল বাংলার সমাজে। অষ্টাদশ শতকের দ্বিজ ঈশান-রচিত কমলা পালা দীনেশচন্দ্র সেন তার সংকলনেও তুলে ধরেছেন। এও বিয়োগান্ত পরিণতির কমলা। ‘কমলা’ চরিত্রকে কেন্দ্র করে বাঙালি জীবনে নানা গীতিপালা তৈরি হয়েছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন পালায় ভিন্ন ভিন্ন কমলা, ভিন্ন ভিন্ন তার ঘটনা। উনবিংশ-বিংশ শতকে কমলার বনবাস, কমলা রানীর। আবার কমলা একসময় নর্তকী ছিল এবং পরে রানী হয়েছিলেন এমন প্রমাণও বিরল নয়।কমলা সুন্দরী যে মহাস্থানে বাস্তবে ছিল ও কাশ্মীরের রাণী হয়েছিল তার প্রমাণের খোঁজ পাওয়া যায় কাশ্মীরের কবি কলহন রচিত ইতিহাস গ্রন্থ ‘রাজ তরঙ্গিনী’ তে। কাশ্মিরের নৃত্য-বিকাশে বাংলা অঞ্চলের এই কমলার ভূমিকা অপরিসীম এবং কাশ্মীরে এখনো কমলার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আছে। বাংলার আদি-মধ্যযুগের পালাগুলোতে বিচ্ছেদাত্মক ‘কমলা’ চরিত্রের স্বতন্ত্র কাহিনি পাওয়া যায়। ‘কমলার পুঁথি’ নামে বিয়োগান্ত কমলা চরিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল বাংলার সমাজে। অষ্টাদশ শতকের দ্বিজ ঈশান-রচিত কমলা পালা দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর সংকলনেও তুলে ধরেছেন। এও বিয়োগান্ত পরিণতির কমলা।তার বইতে পুণ্ড্রনগরের কমলার কথার উল্লেখ রয়েছে। বাংলা সাহিত্যেও একাধিক কমলার কথা বিধৃত হয়েছে। তবে কমলার পরিচায়ক বলতে গেলে এই গানটিই। যেখানে কমলার রূপ ও নাচের সৌন্দর্যে রাতের চাঁদও হেসে ফেলে।