
যাত্রা পথে ইঞ্জিনে ত্রুটি , ১৫৪ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে ফিরে এলো বিমান
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইটেরর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। ২৫০০ ফিট ওপরে ওঠানোর পর ফ্লাইটটি আবারও বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে। শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে বিমানের বিজি ৫৮৪ ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে। ফ্লাইটটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এয়ারক্রাফট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাহমুদুল হাসান মাসুন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করেছে। বিমানে মোট ১৫৪ জন যাত্রী এবং সাত ক্রু সদস্য ছিলেন। সব যাত্রী ও ক্রু নিরাপদ ও সুস্থ রয়েছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিমানের ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় ৮টা ৩৮ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের পরপরই, প্রায় ২৫০০ ফিট উচ্চতায় পৌঁছালে বিমানের ক্যাপ্টেন ইঞ্জিন-সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানিয়ে ঢাকায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে বিমানটি বাংলাদেশ সময় ৮টা ৫৯ মিনিটে সম্পূর্ণ নিরাপদে অবতরণ করে এবং বিমানবন্দরের বে- ১৪ নম্বরে পার্ক করা হয়। সম্ভাব্য বার্ড স্ট্রাইক ভেবে অবতরণের পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রানওয়ের পরিদর্শন করেন। তবে সেখানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু বা পাখির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কারিগরি পর্যালোচনা শেষে পরবর্তী ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত ক্রয় সম্পন্ন হবে: ইসি সচিব
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনসংক্রান্ত মালামাল ক্রয় সম্পন্ন করবে ইসি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনসামগ্রী ক্রয় করার ব্যাপারে আমরা টেন্ডার আহ্বান করেছি। একটি টেন্ডার রি-টেন্ডার হবে। আমরা চেষ্টা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনসংক্রান্ত মালামাল ক্রয় সম্পন্ন করতে।’ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমস্ত দাপ্তরিক আলোচনাই এখন নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পর্কিত। প্রস্তুতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটাকে কোনো একটি টাইমলাইনে ফিট করলে ভুল হবে।’ ইসি সচিব জানান, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাতে নির্বাচনের আগে কোন সময় পর্যন্ত ভোটার তালিকায় ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা যাবে, তা ‘যৌক্তিক বিবেচনায়’ নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে, এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, যৌক্তিক বিবেচনাটা কিসের ভিত্তিতে হবে, এটা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন কবে হবে, এর আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে কাট অফ পয়েন্ট (নির্বাচনের আগে ভোটার হওয়ার শেষ সময়) ঠিক করা হবে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, হালনাগাদের তথ্য নিয়ে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে আগামী ২ জানুয়ারি। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে ২ মার্চ। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে চলমান হালনাগাদে তালিকাভুক্তরা ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জটিলতা আছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আইনে সংশোধনী আনা হলে এ–সংক্রান্ত জটিলতা থাকবে না। নির্বাচনের তফসিলের আগে একটি নির্দিষ্ট সময় ইসি নির্ধারণ করে দেবে। ওই সময়ের মধ্যে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যাঁরা ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন, তাঁরা ভোট দিতে পারবেন। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়েও কাজ এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে ইসি সচিব সাংবাদিকদের জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ৭৬টি আসনের বিষয়ে ইসি আবেদন পেয়েছে। এখানে একই আসনে বর্তমান সীমানা রাখার পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক আবেদনও আছে। এগুলো পর্যালোচনা করে জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রশাসনিক সীমানা এগুলো বিবেচনায় নিয়ে যেগুলো যৌক্তিক মনে হবে, ইসি সেটাই করবে। এটি পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে। তবে এ কাজ তাঁরা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চান। ৩০০ আসনের সীমানাই পুনর্বিবেচনা করা হবে কি না, তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ১৪৭টি আবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটি দল দুবার আবেদন করেছে। আবেদনগুলো প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ চলছে বলে জানান ইসি সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, ইসি রাজনৈতিক দলের জন্য প্রতীকের সংখ্যা বাড়াবে। মোট কতটি প্রতীক থাকবে এবং সেগুলো কী কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। কোন প্রতীক থাকবে, তা এখন তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়।

গত তিন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত ৩ টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তাই এ তিন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব নির্বাচনে অনিয়ম তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সুপারিশ প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই তিনটি নির্বাচন নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে এবং এসব নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোট প্রদানের অধিকার ভূলুণ্ঠিত করে সাজানো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগও এসব নির্বাচন পরিচালনকারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এতে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং মৌলিক মানবাধিকার বিপন্ন হয়েছে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ’ এতে আরও বলা হয়, ‘এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে, দেশে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করতে এবং ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের আশঙ্কাকে প্রতিহত করতে এসব নির্বাচনে সংঘটিত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার 'বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি' গঠন করেছে। ’ হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে সভাপতি করে এই কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক অতিরিক্ত সচিব (গ্রেড-১) শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপণ), ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীমকে সদস্য করা হয়েছে।

হাসিনা পালানোর ব্রেকিং নিউজ দিয়ে অ্যাওয়ার্ড পেলেন প্রেস সচিব
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ব্রেকিং নিউজ দেওয়ার সুবাদে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সাংবাদিক শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি জানিয়েছেন শফিকুল আলম নিজেই। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, এটা আমার জন্য বড় খবর। “বাংলাদেশ বিপ্লব” এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ব্রেকিং নিউজ কাভার করার জন্য অনারেবল মেনশন (সম্মানজনক স্বীকৃতি) পেয়েছি। পোস্টের সঙ্গে অ্যাওয়ার্ডের একটি ছবি যুক্ত করেন তিনি। ছবিতে দেখা যায়, দ্য সোসাইটি অব পাবলিশারস ইন এশিয়া ২০২৫ (এসওপিএ) অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

আগস্টে মালয়েশিয়া সফরে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী আগস্টে সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যাবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওআইসি সম্মেলনসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্র হওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্র হতে বাংলাদেশ এখনও অনেক দূরে রয়েছে। তবে বাংলাদেশ চায় আসিয়ানের সদস্য হতে। গত ১৯ জুন চীনের কুনমিংয়ে ‘নবম চায়না-সাউথ এশিয়ান এক্সপজিশন অ্যান্ড দ্য সিক্সথ চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন’ শীর্ষক বৈঠকের সাইডলাইনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অন্য কোনো পক্ষকে কোণঠাসা করতে নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান। এ বিষয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলো একমত।
.jpg)
চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় জোট করছে না বাংলাদেশ
চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠককে কেন্দ্র করে ত্রিপক্ষীয় জোট গঠনের গুঞ্জন ছড়ালেও তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো জোট গঠন করছে না। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোনো জোট গঠন করছি না। মূলত উদ্যোগটি চীনের এবং এটি পুরোপুরি অফিসিয়াল পর্যায়ে হয়েছে—রাজনৈতিক পর্যায়ে নয়। তৌহিদ হোসেন জানান, কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনীর সাইডলাইনে ৩ দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। যেখানে মূল আলোচনার বিষয় ছিল কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য সহযোগিতা। আপনারা যে জোট গঠনের কথা বলছেন, সে ধরনের কোনো আলোচনা সেখানে হয়নি। এটি নিছকই একটি প্র্যাকটিক্যাল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনার বিষয় ছিল, বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিন দেশের যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলেও বক্তব্যে সামঞ্জস্যের অভাব থাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশ নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবৃতি দিয়েছে। আমরা আমাদের মতো করে বলেছি। এখানে কিছু ডিনাই করার প্রয়োজন নেই। যেটুকু আলোচনা হয়েছে, তাতে বড় কোনো স্ট্রাকচারাল ব্যাপার ছিল না। চীন ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যৌথভাবে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব থাকলেও বাংলাদেশ তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি। ভবিষ্যতে কোনো অগ্রগতি হলে তা জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। এ উদ্যোগ তৃতীয় কোনো দেশকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, অবশ্যই নয়। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এখানে কাউকে টার্গেট করার কোনো বিষয় নেই। ভারত যদি চায়, নেপাল বা অন্য কোনো দেশকে নিয়ে কানেক্টিভিটি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে, আমি কালকেই করতে রাজি। তিনি আরও বলেন, চীন ও পাকিস্তান থাকার কারণে হয়ত আপনাদের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কিন্তু এটিকে অতিরিক্ত জল্পনার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।

দেশব্যাপী সেনা অভিযানে সাত দিনে গ্রেপ্তার ৩৮৫
সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে গত সাত দিনে ৩৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে তাদের কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ককটেল বোমা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আইএসপিআর জানায়, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১৯ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীন ইউনিট কর্তৃক অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব যৌথ অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, চোরাকারবারি, কিশোর গ্যাং সদস্য, চাঁদাবাজ, অপহরণকারী, অবৈধ দখলদার, ডাকাত সদস্য, টিসিবির পণ্য আত্মসাৎকারী, অবৈধ রিক্রুটমেন্টের সঙ্গে জড়িত দালাল, ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায়ী, অবৈধ বালি উত্তোলনকারী, মব ভায়োলেন্স সৃষ্টিকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ মোট ৩৮৫ জন অপরাধীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ২৬টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৭০টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ১১টি ককটেল বোমা, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, চোরাই মালামাল, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আইএসপিয়ার আরও জানায়, দেশব্যাপী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও, বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা হয়। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে আইএসপিয়ার।

শান্তি সূচকে সারা বিশ্বে সবচেয়ে পিছিয়েছে বাংলাদেশ
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই)–২০২৫ বা এ বছরের শান্তি সূচক প্রকাশ করেছে। এ সূচকে গতবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১২৩। চলতি বছরের জুন মাসেই এ সূচকটি প্রকাশিত হয়। আইইপি হলো ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস নামক একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্ব শান্তি সূচক প্রকাশ করে থাকে। এই সূচকটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থা পরিমাপ করে। আইইপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক শান্তি সূচকে ২.৩১৮ স্কোর নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩তম স্থানে। গত বছর ১৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৯৩তম স্থানে। ২.৪৪৩ স্কোর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ১২৮তম স্থানে। অর্থাৎ শান্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আইইপি জানায়, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির মধ্যেই বৈশ্বিক শান্তির গড় স্তর ০.৩৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, বিশ্ব দিন দিন কম শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠছে, এবং এই অস্থিরতা অনেক সময় বড় ধরনের সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। আইইপি বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শান্তির এমন অবনতি আর দেখা যায়নি। গত ১৭ বছরে গড় দেশভিত্তিক শান্তি সূচক ৫.৪ শতাংশ কমে গেছে, যা ২০০৮ সাল থেকে বৈশ্বিক শান্তির ধারাবাহিক পতনের ইঙ্গিত দেয়। তবে কিছু আশাব্যঞ্জক দিকও রয়েছে—চলতি বছরে ৭৪টি দেশের শান্তি সূচকে উন্নতি দেখা গেছে। আইসল্যান্ড টানা ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশের মর্যাদা ধরে রেখেছে এবং বৈশ্বিক শান্তির মানদণ্ড স্থাপন করে চলেছে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল টানা দশম বছরের মতো সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৫-এর সর্বনিম্ন ১০টি দেশের মধ্যে চারটিই এই অঞ্চলের। শান্তি সূচকে বরাবরের মতো তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। সূচক অনুযায়ী, প্রথম স্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড যার স্কোর ১.০৯৫, ২য় আয়ারল্যান্ড স্কোর ১.২৬০, ৩য় নিউজিল্যান্ড স্কোর ১.২৮২, ৪র্থ অস্ট্রিয়া স্কোর ১.২৯৪, ৫ম সুইজারল্যান্ড স্কোর ১.২৯৪, ৬ষ্ঠ সিঙ্গাপুর স্কোর ১.৩৫৭, ৭ম পর্তুগাল স্কোর ১.৩৭১ , ৮ম ডেনমার্ক স্কোর ১.৩৯৩, ৯ম স্লোভেনিয়া স্কোর ১.৪০৯ এবং ১০ম ফিনল্যান্ড স্কোর ১.৪২০। সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ পাঁচ দেশ হলো- সুদান, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন ও আফগানিস্তান। গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্সে সবচেয়ে বেশি অবনতি বাংলাদেশের ২০২৫ সালের গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্সে শান্তিপূর্ণতার সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। ৩৩ ধাপ নিচে গিয়ে ১২৩তম অবস্থানে অবস্থান করছে, যা এই সূচকের শুরু থেকে সর্বনিম্ন র্যাংকিং। ২০২৩ সালে কিছু উন্নতি হলেও, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্কোর ১৩.২ শতাংশ কমেছে। শান্তিপূর্ণতার পতনের প্রধান কারণ ছিল ব্যাপক নাগরিক অসন্তোষ, যা পরবর্তীতে সরকারি কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রাণঘাতী সহিংসতায় রূপ নেয়। ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন শেষ করার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন এবং দেশত্যাগ করেন। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, তবে বিরোধী গোষ্ঠী, ছাত্র আন্দোলন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন এখনও অনিশ্চিত। বাংলাদেশ ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবনতি দেখা যায়। সরকার কঠোরভাবে নিরাপত্তা বাহিনী ও সম্পর্কিত গ্রুপের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। এসময় ব্যাপক সহিংসতা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক নিখোঁজের অভিযোগের জন্ম দেয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১ হাজার। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, এ সংখ্যা এক হাজার ৪০০ জন। বাংলাদেশ ছাড়াও শান্তি সূচকে সবচেয়ে বেশি পেছানো দেশগুলো হলো–ইউক্রেন, রাশিয়া, মিয়ানমার, কঙ্গো।

ইউনূস-স্টারমার বৈঠক না হওয়া প্রসঙ্গে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরকে দেশটির পক্ষ থেকে ‘অফিসিয়াল’ বলা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেই প্রথমে বলা হয়েছিল, এটি একটি অফিসিয়াল সফর। তাদের বক্তব্যের পরে আমরাও তা নিশ্চিত করি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সফরকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক না হওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয় এখনো কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।’ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বৈঠকটি কেন হয়নি, এ মুহূর্তে আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না। কারণ, আমি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। যারা ছিলেন, তারাই হয়তো ভালো বলতে পারবেন। তবে বাস্তবতা হলো মিটিংটি হয়নি।’ গত ১৮ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এ সফরের আগে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার (ঢাকাস্থ) এক ব্রেকফাস্ট মিটিংয়ে আমাকে জানিয়েছিলেন, তারা এ সফরকে সরকারি সফর হিসেবে আপগ্রেড করেছেন।’ তার পরেও মিটিং না হওয়ার দায় কার- জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এখন দেখা যাক, এর দায় কেউ নেয় কি না।’ তিনি বলেন, ‘তারা বলেনি এ সময়ে বৈঠকটি হবে। তবে সফরটি অফিসিয়াল এটি বলা হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী আমাদের প্রত্যাশাও ছিল।’ অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সফরকালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিইসি
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ তেহরান থেকে প্রত্যাবাসিত ২৬ বাংলাদেশি পাকিস্তানে প্রবেশ করবে
তেহরান থেকে প্রত্যাবাসিত ২৬ বাংলাদেশি বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পাকিস্তানে প্রবেশ করবে। সেখান থেকে পাকিস্তান সরকার তাদের করাচি নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। করাচি থেকে ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন প্রত্যাবাসিতরা। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, আজকের দিনের মধ্যে ২৬ জন পাকিস্তানের সীমানায় মধ্যে পৌঁছাবে। সেখান থেকে পাকিস্তান সরকার তাদের করাচি নিয়ে যাবে, সেখান থেকে তারা বিমানযোগে ফিরে আসতে পারবে। তুরস্কের মাধ্যমে কিছু করা যায় কিনা সেটাও আমরা চিন্তা করেছি। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, মনে হয় না যে চট করে আবার শুরু হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ফিরতে চাওয়াদের আগ্রহ কমছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমি অন্তত দু’একজনের কথা জানি যাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। তারা এখন আসতে চায় না। আমার মনে হয় এটা নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। যদি আরও অল্প কিছু মানুষ আসতে চায় তার ব্যবস্থা করা আছে।
-681dc972aac03.jpg)
উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের পরও মামলা করা হয়নি: আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সব মামলা রহিত হয়েছে। গণমাধ্যমে না হোক সোশ্যাল মিডিয়াতে উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যাচার করা হয়। আমরা কেউ এ মিথ্যাচারের জন্য মামলা করিনি। প্রতিবাদ ও করিনি, দেশের মানুষের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। একশ্রেণির লোক যদি মামলা করার মধ্যে ব্যবসা খুঁজে পায় এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্ট্যাডিজ। অনুষ্ঠানে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন- অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, দৃক পিকচার লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রথম আলো পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ, সহকারী অধ্যাপক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্ট্যাডিজ পারভেজ করিম আব্বাসী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক মো. জাহেদ উর রহমান, দ্য ডিসেন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির, সিনিয়র সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ, জায়মা ইসলাম, এন.এইচ.কে টিভির বাংলাদেশ প্রতিনিধি পারভিন এফ চৌধুরী। এছাড়া ছিলেন জি-নাইন এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিন্তু গ্রেপ্তার ১৫ জন। যাদের নামে মামলা হয়েছে তাদের ইনসাইড ক্রাইম বা এমেন্ডমেন্ট এর জন্য মামলা হয়েছে। মামলা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই, মামলা করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে আমরা বলে দিয়েছি সাবস্টেনশিয়াল এভিডেন্স না পেলে যেন কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, গণমাধ্যম ও এ সংক্রান্ত যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তারা সে অর্থে গণমাধ্যম সংস্কার ও কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে খুব একটা কথাবার্তা বলেননি ও টেলিভিশনেও আলোচনা হয়নি, পত্রপত্রিকায় ও লেখালিখি করেননি। কি ধরনের সংস্কার দরকার, কমিশনের এ রিপোর্ট কতটা ইতিবাচক, এ রিপোর্টের দুর্বলতাগুলো কি সেগুলা নিয়ে কথাবার্তা হয়নি। মূলত সেই বিবেচনা থেকেই আজকের এ গোলটেবিল আলোচনা আয়োজন করা হয়েছে। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেল লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সরকারকে খুশি করতে তাদের পছন্দনীয় কথা আবেদনে উল্লেখ করেছে। তাদের আবেদনের অঙ্গীকারনামায় প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয় যা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন ও কৌশলের সঙ্গে মিলে যায়। আবেদনপত্রেই তারা জানিয়ে দেয় যে তারা রাজনৈতিক দলের চিন্তা চেতনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এসব আবেদনপত্রের ভিত্তিতেই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে গত ১৫ বছর। শফিকুল আলম বলেন, হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরে ট্রাস্ট ডেফিসিট তৈরি হয়েছে, আমরা সে জায়গা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। সে আমলের কাজগুলো যেন আমাদের আমলে না হয় আমরা চেষ্টা করছি ও আমরা অনেকাংশেই এক্ষেত্রে সফল। সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার জন্য আমরা কোনো এডমিনিস্ট্রেটিভ প্রেশার তৈরি করে কাউকে তার সাংবাদিকতা থেকে দূরে সরাচ্ছি না। মিথ্যা নিউজ হলে বলছি এটি মিথ্যা, প্লিজ এটি সরান। কেউ কেউ সরাচ্ছেন, কেউ সরান না। আমরা শুধু জানিয়ে রাখছি এটি মিথ্যা, সবাই যার যার লিগ্যাল কাজ করুক। জার্নালিস্ট প্রোকেটশন অর্ডিন্যান্স চাচ্ছেন কিন্তু যারা অপসাংবাদিকতার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাকে কীভাবে আপনি প্রোটেকশন দেবেন? তার প্রোটেকশনটাও তো চিন্তা করা উচিত। ড. শহিদুল আলম বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স সব আইনগুলোর মধ্যে একটা জায়গায় আমরা দেখেছি কোনো পরিবর্তন নেই। সেখানে রাজনৈতিক অনুভূতিকে আলাদা করে একটা বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে। অনুভূতি সবারই আছে, ধর্মীয় অনুভূতির ক্ষেত্রে বিশেষ একটা জায়গা দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি একমাত্র অনুভূতি যেটি সংরক্ষণ করা হবে অন্যান্য ক্ষেত্রে করা হবে না, এ পার্থক্য কেন রাখা সেটি আমাদের ভাববার বিষয়। মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, মিডিয়াগুলো আটকে যায় মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে। তারা টাকা জেনারেট করেন, আয় করেন। তারা এভাবে ক্রিয়েটিভিটি আটকে দেন। রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির ধারা সেটিকে প্রতিহত করে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আমরা যত ভালো কথা বলি না কেন এটি খুব একটা অগ্রসর হতে পারব বলে মনে করি না। এ প্রচলিত দুরবস্থার কাঠামোর মধ্যে যতটুকু পারি সবার সচেতন প্রয়াস ও আমাদের কিছুটা অগ্রতির পথ দেখাবে।

বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালো ইরান
ইসরায়েল এবং তার সমর্থকদের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার, জনগণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য ও বিবৃতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ঢাকার ইরান দূতাবাস। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার ইরান দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, সহানুভূতিপূর্ণ বক্তৃতা-বিবৃতি এবং বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ, শিক্ষাবিদ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের স্পষ্ট অবস্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত এই সংহতি মানবিক সচেতনতা এবং ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও জাতীয় মর্যাদার নীতিগুলোর প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। ইরানি জনগণের এই প্রতিরোধ জাতীয় ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রকাশ। একইসঙ্গে এটি আধিপত্যবাদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুধু একটি বৈধ অধিকারই নয়, বরং একটি নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা আবারও জোর দিয়ে বলছি যে, সহিংসতা, আগ্রাসন ও সম্প্রসারণবাদী নীতির মোকাবিলায় জাতিসমূহের পারস্পরিক সংহতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মূল্যবান সমর্থন ও সংহতি প্রকাশের জন্য আমরা বন্ধুপ্রতিম ও ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগ, অনুসন্ধানে দুদক
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘ঘুষ দাবি’ করা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ওই পোস্টে তিনি একাধিক ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করেন। এবার সেই অভিযোগ অনুসন্ধানে নামার ঘোষণা দিয়েছে দুদক কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংস্থাটির মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ দুদককে নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন; অনুসন্ধান শেষে তার প্রকৃত চিত্র আমরা জানতে পারব। তিনি আরও বলেন, ওই ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলতে শোনা যাচ্ছে; তিনি এর আগেও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তারের জন্য দুদক তাকে খুঁজছে। খুব শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আ.লীগ ক্ষমতার দাপটের পরিণাম ভোগ করছে: বদিউল
বিগত সরকারের (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতার দাপটে দেশে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে সবাই অবগত। সেই দাপটের পরিণামই তারা (আওয়ামী লীগ) ভোগ করছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার দাপট দেখায় সরকার। সরকারের সঙ্গে যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থাকে, তারাও ক্ষমতার দাপট দেখায়। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বদিউল আলম মজুমদার। নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ক্ষমতার দাপট কমিয়ে সুষ্ঠু গণতন্ত্র ধরে রাখতে এমন একটি রাজনৈতিক দল দরকার, যাদের সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকবে। নাগরিক ঐক্য তেমনি একটি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। দেশে মব সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইতোমধ্যে সাবেক দুজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্রেফতার হয়েছেন। তবে একজন যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি এটার নিন্দা জানাই। কেউ অপরাধী হলে অবশ্যই তিনি উপযুক্ত সাজা পাবেন।’ অনুষ্ঠানে আরও অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন—বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্কসবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যে ভ্যাট পুনঃবিবেচনার প্রস্তাব
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার রুটি ও বিস্কুটের ওপর উচ্চ ভ্যাট অব্যাহত রাখায় দরিদ্র মধ্যবিত্ত ও শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি এবং এই বৈষম্যমূলক করনীতির পুনর্বিবেচনার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইআরএফ ও ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক (ওয়াইপিএন) যৌথভাবে আয়োজিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও ভ্যাট’ শীর্ষক এই সেমিনারে বক্তারা সরকারের বর্তমান করনীতি দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে উল্লেখ করেছেন বক্তারা। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের হেড অব রিসার্চ কে এম ইমরুল হাসান। আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক পার্থ সংকর সাহা, ওয়াইপিএন-এর ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মো. আকবর হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী রাবেয়া এবং বাংলাদেশ ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের হেড অব রিসার্চ কে এম ইমরুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, দেশে ৯ শতাংশেরও বেশি মূল্যস্ফীতি, যুব বেকারত্ব এবং আয় বৈষম্য বিদ্যমান। তিনি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখান যে, পূর্ববর্তী বাজেট থেকে বিস্কুট ও পাউরুটির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা বর্তমান বাজেটেও অব্যাহত আছে। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের জরিপে নিম্ন আয়ের (১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসিক আয়) মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ সকালের খাবার বাদ দেন এবং ৩.৫ শতাংশ দুপুর বা বিকালের খাবারও বাদ দিতে বাধ্য হন। ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে রুটি-বিস্কুট গ্রহণ করেন, যা তাদের জন্য ভাতের সস্তা বিকল্প। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ১৫ শতাংশ মনে করেন, এই ভ্যাট হার অনেক অতিরিক্ত। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভ্যাটের কারণে হয় বিস্কুট ও পাউরুটির আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে অথবা দাম বেড়ে যাচ্ছে, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ মানুষের প্রত্যাশা ছিল আসন্ন বাজেটে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতিবাচক কিছু থাকবে, কিন্তু এই ভ্যাট আরোপে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান। ওয়াইপিএন-এর ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মো. আকবর হোসেন তার ফলোআপ গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী, রিকশাচালক, দিনমজুর, পোশাক শ্রমিক এবং ডেলিভারি ম্যানদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিস্কুট ও ব্রেড এখন আর নাস্তার খাবার নয়, বরং দরিদ্র মানুষের একবেলার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার হয়ে উঠেছে। তার গবেষণা অনুযায়ী, ৬৮ শতাংশ মানুষ প্যাকেটজাত বিস্কুট খায় এবং ৬৫ শতাংশ মানুষ প্যাকেটজাত বিস্কুট ক্রয়ে প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০ টাকা খরচ করে। ৭০ শতাংশ খুচরা বিক্রেতা জানিয়েছেন যে, ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে তাদের দোকানে প্যাকেটজাত বিস্কুট ও ব্রেডের বিক্রি কমে গেছে। তিনি বলেন, সরকার রুটি ও বিস্কুট থেকে বছরে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করে, অথচ এই করের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আকবর হোসেন শ্রীলঙ্কা, ভারত ও নেপালের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেসব দেশে রুটি ও বিস্কুটে কোনো ভ্যাট নেই অথবা থাকলেও তা ২-৩ শতাংশের বেশি নয়। তিনি অবিলম্বে রুটি ও বিস্কুটের ওপর থেকে ভ্যাট কমানোর বা শূন্য করার দাবি জানান এবং এনবিআরকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পুষ্টিকর পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলোকে ভ্যাটমুক্ত রাখার পরামর্শ দেন। দৈনিক প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক পার্থ সংকর সাহা ওয়াইপিএন-এর গবেষণার প্রশংসা করে বলেন, সাধারণ মানুষ যদিও অনেক জটিল রিপোর্ট পড়েন না, তবে এই ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাটের বিষয়টি তাদের কাছে অত্যন্ত আগ্রহের, বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কাছে। তিনি বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও এই ধরনের করনীতির কারণে দেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে অতি দরিদ্র হতে পারে। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ৭০ শতাংশ মানুষের আশা ছিল যে এই বাজেটে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে, কিন্তু সম্ভবত তা হয়নি। তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি সহনশীল হওয়ার জন্য কর ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী রাবেয়া বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ এবং রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য একটি শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েম করা। অথচ, এখনো দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের ওপর ভ্যাট তাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, রুটি-বিস্কুট দরিদ্র মানুষের জন্য ন্যূনতম খাবার, এর চেয়ে নিচে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাপসী রাবেয়া বলেন, এই ভ্যাট শুধু 'খাদ্য অধিকার' নয়, 'স্বাস্থ্য অধিকার'ও লঙ্ঘন করছে। তিনি জুলহাস উদ্দিন মামলার উদাহরণ টেনে বলেন, যেখানে চিকিৎসা সেবার ওপর ভ্যাট আরোপকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল, কারণ এটি জীবন ধারণের অধিকার লঙ্ঘন করে। তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদগুলির কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সেগুলোর পক্ষভুক্ত, যেখানে খাদ্য একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দরিদ্রবান্ধব করনীতি প্রণয়নের আহ্বান জানান, যা দরিদ্র মানুষের ওপর করের বোঝা চাপাবে না এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে নামমাত্র বা শূন্য ভ্যাট রাখবে। বাংলাদেশ ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া ওয়াইপিএন-এর গবেষণার ফলাফলের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, পূর্বে যখন রুটি-বিস্কুটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল, তখন অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলন করেছিল এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের সাথে দুবার বৈঠক করে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি বলেন, তারা সরকারের কাছে সবসময় রুটি-বিস্কুটকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে গণ্য করে শূন্য ভ্যাট রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন। শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, যদি শূন্য ভ্যাট সম্ভব না হয়, তবে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ ভ্যাট রাখা উচিত, যা এফবিসিসিআইও সুপারিশ করেছিল। তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি এই দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানান। প্রধান অতিথি আবদুর রহমান খান, এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা উচিত কিনা, তা নিয়ে একটি মৌলিক বিতর্ক সবসময়ই থাকবে। করনীতি প্রণয়নে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতে হয় জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি সরকারের ঋণ নির্ভরতা কমানো, বিশেষ করে ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়। তিনি বলেন, সহজে রাজস্ব আদায়ের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর আরোপ একটি 'বদভ্যাস' হতে পারে। তবে দেশের জন্য রাজস্ব সংগ্রহের গুরুত্ব এবং ঋণনির্ভরতা কমানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি। চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের সর্বনিম্নগুলোর মধ্যে একটি। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সরকার বুঝতে পেরেছে যে, ভ্যাট দরিদ্র মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, তখন রুটি-বিস্কুটের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আদর্শ ভ্যাট ব্যবস্থায় (যেখানে ইনপুট ক্রেডিট সুবিধা থাকে) ৭.৫ শতাংশ ভ্যাটও অযৌক্তিক, এবং সিস্টেমের প্রক্রিয়াগত ও ডিজিটাইজেশনের ত্রুটির কারণে এমনটা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত ভ্যাট পুনর্বিবেচনা করতে সেমিনারে বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি জনবান্ধব ও ন্যায়ভিত্তিক করনীতি অপরিহার্য বলে মত দেন তারা।

মব নয়, প্রেশার গ্রুপ তৈরি হয়েছে: শফিকুল আলম
গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের কার্যালয়ের সামনে যে মব তৈরি হয়েছিল, সেগুলো প্রেশার গ্রুপ হিসেবে দেখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আওয়ামী লীগ শাসনামলে যারা গণমাধ্যমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারাই এই প্রেশার গ্রুপ তৈরি করছেন বলে মত দিয়েছেন তিনি। সিরডাপ মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও আইনি কাঠামো বিশ্লেষণ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ ১৬ জন প্যানেল আলোচকের বক্তব্যের পর বক্তব্য রাখেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। কয়েকজন আলোচক মব নিয়ে তাদের ক্ষোভ তুলে ধরেন। এখন অনেক লেজি জার্নালিজম হচ্ছে অভিযোগ তুলে তার কারণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন প্রেস সচিব। আওয়ামী লীগ আমলে কীভাবে সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো, গণমাধ্যম মালিকেরা কীভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন সেসব নিয়েও কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনার আমলে সাংবাদিকতার ওপর থেকে মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে বলেও মত দেন তিনি। নিজের বক্তব্যে শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনি যেটাকে মব বলছেন সে তো তৈরি হচ্ছে। আমি ওটাকে মব বলছি না, বলছি প্রেশার গ্রুপ। সে তৈরি হচ্ছে আগের এই যে জার্নালিজমের ফেইলুরের (ব্যর্থতার) কারণে। সে তো অ্যাফেকটেড হয়েছে, সে তো সাড়ে ১৫ বছরে তারে আপনার কোনো মিনিমাম সিভিল লিবারলিজ আপনি রাখেন নাই। সে তো অ্যাফেকটড হয়েছে, এখন তার যে কনসার্ন। ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশের টপ জার্নালিস্টরা গিয়ে শেখ হাসিনাকে গিয়ে বলেছেন, এদেরকে খুন করেন, পুলিশ কেন গুলি করছে না? বলে নাই? এটা তো টপ টপ মিডিয়া হাউসের ইয়েরা। এখন এই জিনিসটা তো আবার রিপিট করতে পারে, এই ভয় থেকে এই প্রেশার গ্রুপগুলো তৈরি হচ্ছে।’ শফিকুল আলমের বক্তব্যের শেষে সেমিনারের আলোচক ইরাবতী-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. মুক্তাদির রশীদ প্রশ্ন করেন, মাননীয় প্রেস সচিব আপনি বলেছেন যে মব হচ্ছে প্রেশার গ্রুপ, এটা কি সরকারের অবস্থান? জবাবে শফিকুল বলেন, ‘আমি বলছি যে মব’, এরপর থেমে যান শফিকুল। পাল্টা প্রশ্নে বলেন, ‘আপনি মব বলতে কি বোঝেন, এটা আমাকে একটু বলেন।’ এরপর প্রশ্নকারী মুক্তাদির রশীদ বলেন, ‘মব বলতে আমরা যেটা বুঝি মব করে সমকালের সামনে গিয়ে ভয় দেখানো হয়। তৌহিদী জনতার নামে যে।’ এরপর মুক্তাদিরকে থামিয়ে দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘আপনি মবটা কি, তৌহিতা জনতা কি এগুলো আমাকে এক্সপ্লেইন করেন।’ তারপর মুক্তাদির বলেন, আমি প্রত্যেকটা জিনিস এক্সপ্লেইন করতে পারব আপনাকে। তখন শফিকুল বলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, প্লিজ বলেন। তখন মুক্তাদির বলেন, ‘যে গোষ্ঠী ডেইলি স্টারের সামনে গিয়ে কোরবানি দেয় বা গরু জবাই করে তাদেরকে আমি মব বলছি। আপনি কি মনে করছেন তারা প্রেশার গ্রুপ? আপনার বক্তব্য সরকারের অবস্থান কি না, সেটি জানতে চাই আপনার কাছে।’ জবাবে শফিকুল বলেন, ‘আমরা দেখছি যে অনেক ক্ষেত্রেই যারা আগের রিজিমের সময় যারা অ্যাফেকটেড হয়েছেন তারাই এই প্রটেস্টগুলো বেশি করছেন, আমরা দেখছি।’ এরপর মুক্তাদির প্রশ্ন করেন, ‘আপনি এটাকে প্রেশার গ্রুপ বলছেন এবং সরকারের অবস্থান হচ্ছে প্রেশার গ্রুপ?’ জবাবে শফিকুল বলেন, ‘এটা সরকারের অবস্থান না, আমি আমার কথাটা বলছি। যারা অ্যাফেকটেড হয়েছেন তারা এখন প্রেশার গ্রুপ তৈরি হচ্ছেন, তারা ভাবছেন যে তারা আগের অবস্থাই দেখছেন, কোনো চেঞ্জ হচ্ছে না জার্নালিজমে। সে জায়গা থেকে তারা প্রেশার তৈরি করছেন।’ এরপর মুক্তাদির প্রেস সচিবকে প্রশ্ন করেন, ‘এটা কি আপনি কোনো রিসার্চের ভিত্তিতে বলেছেন নাকি হোজমিক্যালি কোনো মতামত? আপনি এটা বলছেন এটার ভিত্তিটা কি?’ তখন শফিকুল আলম বলেন, ‘স্যরি আমি এটার আর উত্তর দেব না।’ নিচের বক্তব্যে মবের সমাধান নিয়েও কথা বলেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘আপনি সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছেন। সরকার যতটুকু পারে সেই কাজটা সরকার করছে। সরকার সে কাজগুলো করছে। কিন্তু আপনারা যারা যারা এই যে বিশ্বাস ভঙ্গ যেটুকু হলো সেই জায়গাগুলো যারা যারা কন্ট্রিবিউট করেছেন তারা কেউ কিন্তু কথাটা বলছেন না। তারা ভাবছেন এটা বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল। পুরান দেশ হয়েছে এটা সরিয়ে ফেলো নতুন আমরা আবার শুরু করব। আবার নতুন পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট আসছে, তাকে সামনে রেখে আবার তারা তাদের গুটিগুলো সাজাচ্ছেন, কীভাবে উনারা এটা করবেন। এতে বাংলাদেশের জার্নালিজমের কোনো ধরনের কোনো উত্তরণ হবে না।’ শফিকুল আলম বলেন, ‘কেউ যদি বলেন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই সেটা একদম ফালতু কথা। বাংলাদেশের জার্নালিজম এত ফ্রিডম আছে আমি বলব যে উন্নত বিশ্বেও এত ফ্রিডম নেই। কেন নেই? ইদানীং যেটা হচ্ছে মানুষ ভিডিওর মাধ্যমে নিউজ নিচ্ছে। এই ভিডিও যারা বানাচ্ছেন সেগুলো বেশির ভাগই মিথ্যায় ভরপুর। এটা অপসাংবাদিকতাও হলেও এক ধরনের সাংবাদিকতা। মানুষ পত্রিকা পড়ছে না তো, কয়জন পত্রিকা পড়ে? এটাকে আপনি কীভাবে মনিটর করবেন?’ তিনি বলেন, ‘আমার নামে যা-তা বলতেছে, আমাদের উপদেষ্টাদের নামে যা-তা লিখতেছে। নোংরামির তো একটা সীমা আছে। কিন্তু এটা হচ্ছে। এখন আমি যদি বলি আপনি যে কাজ করেছেন সেটা অন্যায়, আপনি আমার নামে ৪০ মিনিটের একটি ভিডিও বানিয়েছেন তার মধ্যে ৩২০টি মিথ্যা আছে। আপনি বলবেন যে আমার ওপরে প্রেশার হচ্ছে, সরকার আমাকে টার্গেট করেছে, আপনি আমাকে কাঠগড়ায়, আমি আমার কথাটা বলব, আপনি আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেবেন, ফলে জার্নালিস্ট প্রোটেকশন অর্ডিনেন্সের দরকার আছে। একই সময়ে অপসাংবাদিকতার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাকে আপনি কীভাবে প্রোটেকশন দেবেন?’

সরকারে এসে অবরুদ্ধ বোধ করছি: আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমার কাছে অনেক অন্যায় তদবির নিয়ে আসে। যখন সেগুলো পাত্তা না দেই তখন শুরু হয় গালাগালি। আমাকে তখন ভারতের দালাল বানানো হয়। সরকারে এসে অবরুদ্ধ বোধ করছি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে এই কথা জানান তিনি।আসিফ নজরুল বলেন, সরকারে আসার কারণে আমাকে নিয়ে এতো মিথ্যাচার, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি না। জীবনে এতো অসহায় কখনো ফিল করিনি।সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি মামলা দেয় সেই ব্যাপারে আমার কিছু করার নাই। প্রচুর মিথ্যা মামলা হচ্ছে, সেই তুলনায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যত মামলা হচ্ছে সেগুলো অস্বাভাবিক নয়। জামিনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। আমরা আইন মন্ত্রণালয় থেকে সাংবাদিকদের জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছু বলিনি। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কেউ এক না। দলাদলি গ্রুপিং না করে নিজেরা এক হন। শক্তিশালী হন। দলকানা হয়ে নিজেরা মারামারি করলে গণমাধ্যম কখনো স্বাধীন হবে না।আসিফ নজরুল আরও বলেন, অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলা বাতিল করার এখতিয়ার আছে হাইকোর্টের। পুলিশের ব্যাপারে আমার কিছু করার নাই। কেউ যদি ফলস মামলা করে আমার কিছু করার নাই। ডিজিটাল আইনের অধীনে যত মামলা ছিল তা প্রায় সবই প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শহিদ আবু সাঈদ হত্যা মামলা: তদন্তে মিলেছে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রথম শহিদ রংপুরের আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে প্রসিকিউশন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ২৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদনে আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা মিলেছে বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হতে পারে। এ মামলায় চার আসামি কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গতবছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ।

যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (রোড, ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ব্রিজ) ড. শেখ মঈনুদ্দিন বলেছেন, রাজধানীতে যানজটে বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যে টাকা দিয়ে দুটি করে এমআরটি লাইন তৈরি করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে বছরে ৫ মিলিয়ন ঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে। এজন্য একটি সমন্বিত পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বৃহস্পতিবার পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বনানীতে পিআরআই সম্মেলনকক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মান্থলি ম্যাক্রোইকোনমি ইনসাইটস (এমএমআই) প্রকাশ এবং বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনা উপলক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তারের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাইদী সাত্তার নিজে এবং পিআরআই’র মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান। প্যানেল আলোচক ছিলেন বিল্ডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ফেরদৌস আরা বেগম এবং ঢাকার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ মঈনুদ্দিন আরও বলেন, রোড ট্রান্সপোর্ট একটি দেশের উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা রাখে। দেশে সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। এজন্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকা দরকার। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। যেমন- যেকোনো অবকাঠামোর ক্ষেত্রে প্ল্যানিং, ডিজাইন এবং বাস্তবায়নের মধ্যে কোনো সমন্বয় থাকে না। রেল, নৌ, বিমান এবং সড়কের জন্য পৃথক চারটি মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কাজ করে। এগুলো সব একটি জায়গা থেকে সমন্বিতভাবে হলে ভালো হতো। এছাড়া আমাদের দেশে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনেক সময় চলে যায়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন হতেই ৪-৫ বছর চলে যায়। পরে এক্সচেঞ্জ রেটের পরিবর্তনসহ সব কিছুরই দামে পরিবর্তন ঘটে। তাই ট্রাসপোর্টেশন খাতে অবকাঠামো মাস্টারপ্ল্যান করা প্রয়োজন।

সাংবাদিকতায় বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা উন্নত বিশ্বেও নেই: প্রেসসচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ফ্রিডম নাই এটা ভুল। আমি মনে করি, দেশে সাংবাদিকতায় এত ফ্রিডম, যা উন্নত বিশ্বেও নাই।’ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে এই দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গত ১০ মাসে বর্তমান সরকার সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে কোনো চাপ প্রয়োগ করেনি, কোনো বাধা দেয়নি; যেমনটা আওয়ামী লীগ আমলে ছিল।’এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘গণমাধ্যমে ১৫ বছর ধরে অরাজকতা চলেছে। ফলে, অবৈধ নির্বাচনগুলো বৈধতা পেয়েছে। ফ্যাসিজম সেই সুযোগ পেয়েছে। অনিয়ম ধরার মূল হাতিয়ার গণমাধ্যম। এটা ঠিক থাকলে জালিয়াতির নির্বাচনগুলো ঠেকানো যেত।’

মাদক বিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারকে একটি বহুমাত্রিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই এর সমাধান করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মাদক বিরোধী সামাজিক আন্দোলনে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। উপদেষ্টা আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস, ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাদকের বিস্তার রোধে মাদক বিরোধী প্রচার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যে কোন দেশের উন্নতির প্রধান নিয়ামক হলো, কর্মক্ষম বিপুল যুবশক্তি। আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ যুবশক্তিই পারে দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যখনই বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচার ও মূল্যবোধের সংকট তৈরি হয়েছে, তখনই যুব সমাজ সংকল্প ও ঐক্যের মাধ্যমে তা প্রতিহত করেছে। উপদেষ্টা আরো বলেন, জুলাই ছাত্র-যুব-জনতার গণঅভ্যুখান যুব সমাজ ও তারুণ্যেরই বিজয়। উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে, তরুণ সমাজকে অবশ্যই মাদকমুক্ত রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাদক চোরাচালানের একটি ভয়াবহ বিষয় হলো নারী, শিশু ও কিশোরদেরকে এ গর্হিত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। উপদেষ্টা বলেন, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক ড্রাগস বা নিউ সাইকোঅ্যাকটিভ সাবস্টেন্স (এনপিএস) এর আবির্ভাবের ফলে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারজনিত সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, নতুন নতুন এসব মাদক নিয়ে আমাদেরকে নতুনভাবে কর্মকৌশল তৈরি করতে হচ্ছে। এসব মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এগুলোকে আইনের তফশিলভুক্ত করার পাশাপাশি কৌশলগত নজরদারি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের একান্ত সদিচ্ছায় ইতোমধ্যে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৪’ প্রণীত হয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রথম ব্যাচের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে আভিযানিক ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি অধিদপ্তরের মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনায় আরও সাফল্য আসবে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সাতটি বিভাগীয় শহরে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সাতটি বিভাগীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। তাছাড়া মাদকাসক্তদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেন, যে পরিবারের সদস্য মাদকাসক্ত হয়, কেবল তারাই এর গভীরতা, ভয়াবহতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বুঝতে পারে। তিনি আরো বলেন, মাদকের বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধের দিকটি ইদানীং কমে গেছে। এটিকে বাড়িয়ে মাদকের পারিবারিক, ব্যক্তিক ও রাষ্ট্রীয় কুফল থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, মাদকের উৎপাদন বাংলাদেশে হয় না। পাশ্ববর্তী দেশসমূহ থেকে পাচারের মাধ্যমে আমাদের দেশে এসে এটি যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে আর এটিকে সফল করতে হলে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী কার্যক্রমের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থী, সেরা তিনটি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধি এবং মাদক বিরোধী প্রচারণা, উদ্বুদ্ধকরণ ও গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সেরা দুইটি প্রতিষ্ঠানের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। তাছাড়া তিনি দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্যুভেনির ও এ্যানুয়াল ড্রাগ রিপোর্ট এর মোড়ক উন্মোচন করেন।এর আগে উপদেষ্টা বেলুন উড়িয়ে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অংশ গ্রহণে নির্মিত মাদক বিরোধী স্টল পরিদর্শন করেন।

৪৩ দিন পর নগর ভবনে এলেন প্রশাসক, সব সেবা চালুর ঘোষণা
৪৩ দিন পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে এসেছেন সংস্থাটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া। পাশাপাশি সকল সেবা কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে তিনি নগর ভবনে আসেন। ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, আমরা আর পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। আমরা সামনে এগিয়ে যাব। সামনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনেকগুলো কাজ করব। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। ইশরাকের সমর্থকেরা নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। ফলে গত ১৪ মে থেকে সংস্থাটির প্রশাসক নগর ভবনে আসতে পারেননি। গত ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। জরুরি প্রয়োজনে এসে এ সময় সেবাপ্রার্থী নাগরিকদের বারবার ঘুরে যেতে হয়েছে। সে সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইশরাকপন্থী কর্মচারীরা নগর ভবনের মূল ফটক আটকে রাখার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে রাখেন। পরে ঈদের বিরতির পর গত ১৫ জুন থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে একত্রিত হয়ে ফের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন।

আগামী বছর হজ ব্যবস্থাপনা যেন আরও সুষ্ঠু হয় : প্রধান উপদেষ্টা
চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সফলভাবে সম্পন্ন করায় ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস। একইসঙ্গে আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনা যেন আরও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ বছর ছোটখাটো যেসব ত্রুটি ধরা পড়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন না ঘটে।তিনি আগামী বছরের হজ রোডম্যাপ আগেভাগেই প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই বাংলাদেশিদের জন্য হজ কোটা ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি সভায় উল্লেখ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ বছর হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। সবাই প্রশংসা করেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছে এজন্য সবাইকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। তিনি বলেন, হজযাত্রী ও হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সবাই যেন নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি। চলতি বছরের হজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং সৌদি সরকারের নির্দেশনার আলোকে হজ ২০২৬ এর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সফল ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপগ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, সৌদি টাইমলাইন ও রোডম্যাপ অনুযায়ী হজ কার্যক্রমের ক্যালেন্ডার ও চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে এবং হজযাত্রী কোটার পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, হজ ২০২৬ এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে। ১০ জুলাই ২০২৫ তারিখে হজ ২০২৬ এর বাংলাদেশের কোটা ঘোষণা করা হবে এবং ২১ অক্টোবর ২০২৫ এর মধ্যে হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন এবং ০৪ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে ভেন্ডর ও কোয়াটেশন অনুমোদনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর ২০ মার্চ ২০২৬ থেকে হজযাত্রীদের ভিসা প্রদান শুরু হবে এবং ১৮ এপ্রিল ২০২৬ থেকে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হবে। সবশেষে, ২৯ মে ২০২৬ তারিখে পবিত্র হজের টেস্ট (সেবা যাচাইকরণ) সম্পন্ন হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৮৭,১০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। লাব্বাইক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন এবং অ্যাপটিতে ৩০,২৩৪ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। হজ পালনকালে এ বছর ৩৮ জন ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এই মুহূর্তে সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসতাপালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন। গত ২৫ জুন পর্যন্ত দেশে ফেরত এসেছেন ৫১, ৬১৫ জন হাজী। ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, এখন পর্যন্ত ৮০৬টি লাগেজ হারানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৯০টি লাগেজ পাওয়া গেছে। বাকি ১৬টি লাগেজ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পর পর তিন বছর হাজী নিতে না পারায় ৪১৫টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। আগামী বছর যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তারা যেন এখন থেকে লাব্বাইক অ্যাপ ব্যব্যবহার করে তাদের নানা প্রশ্নের জবাব পান সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে পবিত্র ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকরাও যেন এই অ্যাপ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পান সেদিকে নজর দিতেও বলেন তিনি।