
জুলাই যোদ্ধারা আগামী মাস থেকে ভাতা পাবেন : উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। তিনি বলেছেন, মাসিক ভাতার পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘আহত যোদ্ধারা’ আজীবন সরকারি মেডিক্যাল হাসপাতালগুলোতে বিনা খরচে চিকিৎসা পাবেন। সোমবার সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)কে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা জানান। উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে। কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০ম তলায় এ অধিদপ্তরের জন্য বিশ জন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অধিদপ্তর থেকে জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। ফারুক-ই-আজম আরো বলেন, শহীদদের অনেকেরই হয়তোবা খোঁজ আমরা রাখি নাই বা রাখতে পারিনি। তবে গণঅভ্যুত্থানের এতোদিন পরেও যদি কেউ অধিদপ্তরে এসে অভিযোগ করে যে, তার কোন স্বজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধান তিনি চান। সেক্ষেত্রে যাদেরকে গণকবর দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে হলেও তাদের আবেদনের বিষয়ে সরকার আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করবে। তাদের জন্য সরকারের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের 'জুলাই শহীদ' এবং আহতদের ' জুলাই যোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘ক্যাটাগরি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তাছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে। তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবন যাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। বাকী ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ‘ক্যাটাগরি- বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে, তারা একা মোটামুটি চলতে ফিরতে পারেন। অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তাঁরা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তাছাড়া এই বি” ক্যাটাগরির যোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মসংস্থানে চাকরি ও পরিচয়পত্র পাবেন। চিকিৎসার পর বর্তমানে যারা সুস্থ তাদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বাসসকে বলেন, ১০ হাজার ৬৪২ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ এই ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এছাড়া আগামী মাস থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে পাচ্ছেন পুনর্বাসন সুবিধা এবং পরিচয়পত্র। উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ৫ আগস্টকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় দিবস হিসাবে আগামীতে এই দিবসকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হবে। তিনি বলেন, ৮৩৪ শহীদ পরিবারের মধ্যে ১৩৪ জনের পরিবারকে ওয়ারিশ জটিলতার কারণে পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। তাও অতি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আহত যোদ্ধাদের তালিকায় যে সব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে সেটারও সমাধান করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের সাবেক মেয়র সহিদুর কারামুক্ত
টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সোমবার (২৩ জুন) টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। টাঙ্গাইলের জেল সুপার শহিদুল ইসলাম বলেন, গোপালপুর উপজেলায় এক বিএনপি নেতার বাড়িতে ২০০৯ সালে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন সহিদুর রহমান। রবিবার সন্ধ্যায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কারাগারে জামিনের আদেশনামা আসে। পরে আজ সোমবার সকালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, সহিদুর রহমান খানের বাবা আতাউর রহমান খান ও ভাই আমানুর রহমান খান রানা টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় ৬ বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মাঝে দুইবার কয়েক সপ্তাহ জামিনে ছিলেন তিনি। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৮ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান। গত ১ নভেম্বর টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পথে মুক্তিকে আবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে ২০২১ সালে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০০৯ সালে গোপালপুরে বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগে এক বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করে গত নভেম্বরে গোপালপুর থানায় মামলা করা হয়। পরে ওই মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সহিদুর রহমান খান কারাগারে থাকাকালে গত ২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়। ওই মামলা থেকে সহিদুর ও তার তিন ভাই বেকসুর খালাস পান।

প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ সিদ্দিক
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা ও তার সুনাম নষ্ট করার জন্য "পরিকল্পিত প্রচারণা" চালানোর অভিযোগ তুলেছেন। ড. ইউনূস ও দুদক বরাবর টিউলিপের পাঠানো একটি উকিল নোটিশে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্কাইনিউজ। নোটিশে টিউলিপ বলেছেন, ‘তার সুনাম ক্ষুণ্ন করাই ড. ইউনূস ও দুদকের প্রধান উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা, বিশেষ করে টিউলিপের নিজ নির্বাচনী এলাকা, তার রাজনৈতিক দল এবং দেশসেবার কাজে বিঘ্ন ঘটাতে তারা এসব অভিযোগ তুলেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান স্টেফেনসন হারউড এলএলপির মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন টিউলিপ। নোটিশে তার দেওয়া আগের কোনো চিঠির জবাব না পাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনাও করা হয়েছে। উকিল নোটিশে টিউলিপ বলেন, গত ১৮ মার্চ ও ১৫ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চিঠি পাঠানো হয়। এরপর ৪ জুন একটি চিঠি পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে। নোটিশে আইনি প্রতিষ্ঠান স্টেফেনসন হারউড বলছে, ‘এখনও আমরা কিংবা টিউলিপ সিদ্দিক কোনো চিঠির জবাব পাইনি। আমরা চিঠিতে স্পষ্ট বলেছি, টিউলিপ সিদ্দিক একটি পরিকল্পিত অভিযানের শিকার, যার নেপথ্যে রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ও দুদক। আমাদের চিঠিপত্রে এটা দেখিয়েছি, কেন টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ অসত্য।’ উকিল নোটিশে ইউনূসের সাক্ষাৎ না দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘ইউনূসের লন্ডন সফরের কথা শুনে টিউলিপ তার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্যোগ নেন। তিনি দুদকের অভিযোগের বিষয়ে ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা দুঃখজনকভাবে টিউলিপের সেই প্রস্তাবটি গ্রহণে ব্যর্থ হন।’ বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে টিউলিপের সঙ্গে দেখা না করার যে কারণ ইউনূস তুলে ধরেছেন, তার সমালোচনাও করেছে স্টেফেনসন হারউড। নোটিশে বলা হয়, ‘বিবিসি রেডিওর সাক্ষাৎকারে ইউনূসের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে দুটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়। প্রথমত, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পেয়ে তিনি হতাশ কি না। দ্বিতীয়ত, টিউলিপের সঙ্গে তিনি কেন সাক্ষাত করেননি।’ এতে আরও বলা হয়, ‘এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অবাক করার মত অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি সেদিন বলেছিলেন যে এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া এবং তিনি সেটিতে হস্তক্ষেপ করতে চান না।’ নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল, যুক্তরাজ্যের নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার আগে প্রধান উপদেষ্টা সঠিকভাবে তথ্য যাচাই করবেন। তার এটাও মাথায় রাখা উচিত ছিল, দুদকের পক্ষ থেকে যখন তদন্ত চলছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তখন টিউলিপকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করাটা সমীচীন নয়।’ স্টেফেনসন হারউড মনে করে, টিউলিপের সঙ্গে বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো মিথ্যা। স্টেফেনসন হারউড বলছে, টিউলিপের সঙ্গে বসে এসব মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ পেয়েছিলেন ইউনূস। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ গ্রহণ না করে দুদকের আড়ালে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন, যা আমাদের কোছে টিউলিপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের দ্বিতীয় কারণ বলে মনে হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এ নোটিশের একটি অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টাকেও পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে। নোটিশে টিউলিপ বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন প্রধান উপদেষ্টা ও দুদকের এসব মিথ্যা প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। ’ স্টেফেনসন হারউড বলছে, দয়া করে এখন এটা নিশ্চিত করুন, যে দুদকের তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, যদি এই চিঠি এবং আমাদের আগের চিঠিগুলোর যথাযথ জবাব ৩০ জুনের মধ্যে না দেন, তবে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তিসঙ্গতভাবেই বিষয়টির ইতি ঘটেছে বলে ধরে নেবেন।

বিএনপি ‘মব’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে : সালাহউদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বিএনপি ‘মব’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার মব ঘটনার সাথে দলের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আজ সোমবার দুপুরে দলের অবস্থান তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মব কালচারে বিশ্বাস করি না, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছি।’ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া এবং তার বিচার প্রক্রিয়া আইনগতভাবে পরিচালিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তবে, আমরা তার অপমান সমর্থন করি না। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার পক্ষপাতিত্বের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য দায়ী কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে নূরুল হুদা একজন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ধ্বংস করার জন্য আরও বেশ কয়েকজন দায়ী।’ তবে যে কারোরই আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার অক্ষুণ্ন থাকা উচিত উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই, কোনো ব্যক্তি যতবড় অপরাধীই হোন না কেনো তার আইনি এবং সাংবিধানিক অধিকার যেন ভোগ করার অধিকার অক্ষুণ্ন থাকে, যত বড় অপরাধীই হোন না কেনো তার আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়।'

দুদকের ৪ কর্মকর্তা পেলেন পদোন্নতি
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চার কর্মকর্তাকে পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৩ জুন) সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দুদকের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) দাউদ হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষর করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের বর্ণিত কর্মকর্তাদের ‘জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫’ এর ৫ম গ্রেডে ‘পরিচালক’ পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন— মো. হেলাল উদ্দিন শরীফ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. ফজলুল হক ও মো. নূরুল হুদা। তারা প্রত্যেকে বর্তমানে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপ-পরিচালক পদে কর্মরত।

করোনায় একদিনে ৩ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৯
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে ৪০৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজন চট্টগ্রাম বিভাগের, একজন ঢাকা বিভাগের। সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১৯ জনসহ দেশে এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৯৭ জনে। নতুন করে তিনজন মারা যাওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫১৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ, দুইজন নারী। এই তিনজনই ষাটোর্ধ্ব ছিলেন বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আটজন পুরুষ এবং ১১ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

এমপিওভুক্তদের জন্য নতুন সুযোগ, বেতন-ভাতা নিয়ে আসছে খুশির বার্তা
সরকার এমপিওভুক্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীর জন্য প্রণোদনার হার বৃদ্ধি করে নতুন আদেশ জারি করেছে। এ নির্দেশনা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যাতে বিশেষ সুবিধার আওতায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়তি অর্থ পান। সোমবার (২৩ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত চিঠি প্রকাশ করেছে।চিঠিতে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মাদরাসা ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাতীয় বেতনস্কেল-এর তুলনীয় গ্রেড-৯ হতে তদুর্ধ্ব গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আগামী ১ জুলাই থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে প্রাপ্য মূল বেতনের ১০% হারে এবং গ্রেড-১০ হতে তদনিম্ন গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ আগামী ০১ জুলাই ২০২৫ তারিখ হতে প্রতি বছর ০১ জুলাই তারিখে প্রাপ্য মূল বেতনের ১৫% হারে, তবে ১,৫০০ (এক হাজার পাঁচশত) টাকার কম নয়, 'বিশেষ সুবিধা' প্রাপ্য হবেন। এর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রণোদনা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে সে সময় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এই সুবিধা পাবেন কিনা তা নিয়ে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের পাশাপাশি অসন্তোষও দেখা দেয় শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে। তাদের ভরসাস্থল দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তায় টেলিফোন করে জানতে চাচ্ছেন। সরকারের উপরমহলে যোগাযোগ করে অগ্রগতি জানার অনুরোধ জানাচ্ছেন। জানা গেছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণার পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এ সুবিধা পাবেন কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিলো। পরে সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা পেয়ে আসছেন। ওই বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আলাদা চিঠিও জারি করা হয়েছিলো। চিঠিতে বলা হয়েছিলো, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ১ জুলাই ২০২৩ থেকে প্রতিবছর ১ জুলাইয়ে প্রাপ্য বেতনের ৫ শতাংশ হারে, তবে ১ হাজার টাকার কম নয়, ‘বিশেষ সুবিধা’প্রাপ্য হবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিটি তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়েছিলো। বেসরকারি হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মাসে মূল বেতন ও কিছু ভাতা পান। সরকার ঘোষিত বৈশাখী ভাতা এবং বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) সুবিধাও তারা পান। এর সঙ্গে এ বছর ঈদুল অজহা থেকে ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতাও পাচ্ছেন তারা।

কলঙ্ক মোচনে পুলিশকে মানবিক হতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কলঙ্ক মোচনের জন্য পুলিশকে জনবান্ধব ও মানবিক হতে হবে। সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মব প্রসঙ্গে বলেন, মব বন্ধে আমরা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে এতে আমাদের বাহিনীর কেউ দায়ী থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যারা এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমান পুলিশের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের সন্তুষ্টির সঙ্গে আমার সন্তুষ্ট। আমরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করছি। সন্তুষ্টি কোনো প্যারামিটের না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন সবাইকে ভালো রাখতে পারি। বন্যা প্রসঙ্গে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বন্যা এখনো আসেনি, দোয়া করবেন যেন না আসে। যদি আসে তাহলে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। এ সময় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শরীফা হক, জেলা পুলিশ মো. মিজানুর রহমান, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ প্রমুখসহ অন্যান্য জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বৈরাচারী সরকার তরুণদের ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নিয়েছিল: উপদেষ্টা আসিফ
বাংলাদেশের বিগত স্বৈরাচারী সরকার তরুণদের ভোটাধিকার হরণ করেছিল, তাদের কণ্ঠরোধ করেছিল ও তাদের ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে কমনওয়েলথ চার্টার যুব কর্মশালা বাংলাদেশ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের ইতিহাসে এমন অন্ধকার অধ্যায় রয়েছে— যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ অসংখ্য পরিবারকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। তিনি আরো বলেন, অনেক তরুণ প্রজন্ম কখনও একটি স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বাদ পায়নি, এমনকি অনেকেই কখনও ভোট দেয়ারও সুযোগ পায়নি। তাদের কণ্ঠস্বর চেপে দেওয়া হয়েছিল, তাদের ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও, তরুণরাই ছিল সেই আলোকবর্তিকা— যারা একটি নতুন যুগের জন্য সংগ্রাম করেছিল, গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। তাদেরই সাহস ও ত্যাগের বদৌলতে আজ আমরা একটি স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্ত। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আমরা অনুভব করেছি যে, শুধুমাত্র একটি শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করাই যথেষ্ট নয়— এটি একটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষারও বিষয়। তাই আমরা ব্যাপক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু কমিশন গঠন করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডার— বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে, তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিছু প্রস্তাবনা ইতোমধ্যেই বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, অন্যগুলো নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে গণতন্ত্র কখনই বিপন্ন হবে না, যেখানে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা ও মর্যাদা সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়— এ জন্য প্রয়োজন সকলের সক্রিয় অংশ গ্রহণ, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের।’ কমনওয়েলথ নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, কমনওয়েলথ চার্টার হলো আমাদের সম্মিলিত বিশ্বাসের একটি মৌলিক দলিল— যা আইনের শাসন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। এটি একটি নৈতিক কম্পাস, যা আমাদের ৫৬টি সদস্য রাষ্ট্রকে একই লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এই চার্টার কেবল আদর্শিক নীতিমালা নয়, বরং এগুলোকে প্রতিদিনের জীবনে বাস্তবায়ন, রক্ষা ও লালন করতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক কমনওয়েলথয়ের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক লুইস ফ্রান্সেসি বলেন, আপনি আজ যা করবেন, তা-ই আপনাকে গড়ে তুলবে এবং আগামী ৩০ বছরে আপনি কী হয়ে উঠবেন তা নির্ধারণ করবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আপনার বর্তমান পছন্দের ওপর—সেই কাজগুলো করুন যা আপনাকে, আপনার পরিবারকে ও আপনার দেশকে গর্বিত করবে। অধ্যাপক লুইস ফ্রান্সেসি বলেন, বাংলাদেশ বদলাচ্ছে, বিশ্ব বদলাচ্ছে, এবং আপনারা সেই পরিবর্তনের কারিগর। আসুন আমরা এই যাত্রায় একসাথে কাজ করি—গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী, শাসনব্যবস্থাকে আরও জবাবদিহিমূলক ও সমাজকে আরও মানবিক করে গড়ে তুলতে। তিনি বলেন, আসুন, আমরা এই কাজের কথা বলি ও এগিয়ে যাই।

সেন্টমার্টিন রক্ষায় মাস্টারপ্ল্যানের চিন্তাভাবনা চলছে: পরিবেশ উপদেষ্টা
রোববার সাবেক সিইসির সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছন পরিবেশ বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি আদর্শ সময়ে দায়িত্ব পায়নি। আমরা আদর্শ পরিবেশের চেষ্টা করছে। সোমবার (২৩ জুন) সকালে নিজ মন্ত্রণালয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করেছে জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দ্বীপটি নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যানের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এজন্য জলবায়ু ট্রাস্ট থেকে একটি প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ চলছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, নদীদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের শপিং সেন্টারগুলো শতভাগ পলিথিন ব্যাগমুক্ত হয়েছে। তবে কাঁচা বাজারগুলোতে মূলত নিজেদের অভ্যাসের একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি সাবেক বিডিআর সদস্যদের
প্রধান উপদেষ্টা বা তার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার যমুনা ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সোমবার (২৩ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ ঘোষণা দেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. ফয়জুল আলম সবুজ। সবুজ বলেন, আমরা শাহবাগে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করাবেন। তাই মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে যদি আমাদের কোনো কিছু জানানো না হয়, তাহলে আমরা যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করব। এর আগে আমরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করব। তিনি আরও বলেন, আমরা ভেবেছিলাম নতুন সরকার আসায় সুষ্ঠু বিচার পাব। কিন্তু সেটা পাইনি। বর্তমান সরকার আসার পর অনেক আসামি মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। এ সময় শাহবাগে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন তারা। এতে সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন। এতে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদেরকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে সময় নেওয়া হয়েছে। সেই পর্যন্ত তারা যেন মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন, তা বুঝিয়ে জাদুঘরের সামনে নিয়ে আসা হয়। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এক রাতে সাবেক সিইসি-এমপিসহ ৮ রাজনৈতিক নেতা গ্রেফতার
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন মিলিয়ে এক রাতে অন্তত আটজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেফতাররা হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা (৭৯), মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব (৫৫), নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য মো. তরিকুল ইসলাম (৩৮), সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন (৪৬), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক এমডি মনিরুল মওলা (৬২), ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহায়াব (৫৮), লালবাগ থানা ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বাবু (৪৩) এবং ৯২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন আলী (৬১)। সোমবার (২৩ জুন) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গতকাল রোববার রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। তেজগাঁও থানার মনিপুরীপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবকে গ্রেফতার করে ডিবি-লালবাগ জোনাল টিম। রাত সাড়ে ১২টার দিকে কদমতলী থানাধীন শনিরআখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তরিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ডিবি-মতিঝিল বিভাগের মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার টিম। ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে সাবিনা আক্তার তুহিনকে গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগ। রাত সাড়ে ১২টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মনিরুল মওলাকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগ। রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে কলাবাগান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আব্দুল ওহায়াব ও রাত ২টায় মেহেদী হাসান বাবুকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগ। রাত দেড়টায় পল্লবী থানা এলাকা থেকে জাকির হোসেন আলীকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগ। ডিসি তালেবুর রহমান আরও জানান, গ্রেফতার সবার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।

এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ
এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সোমবার (২৩ জুন) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৫ সালের এইচএসসি, এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), ডিপ্লোমা ইন কমার্স ও আলিম পরীক্ষা আগামী ২৬ জুন থেকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। যেহেতু পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন, সেহেতু আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/১৯৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর ২০০ (দুইশত) গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত জনসাধারণের অনধিকার প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। এই আদেশ আগামী ২৬ জুন থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনগুলোতে পরীক্ষা চলাকালীন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

জুলাই বিপ্লবে স্কাউট সদস্যের আত্মাহুতি, এ নজির বিশ্বে আর নেই: প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের স্কাউট সদস্যদের অংশগ্রহণ গৌরব ও অহংকারের উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, এটি সারাবিশ্বের স্কাউটস এর জন্য বিশেষ গৌরবের। স্কাউট সদস্যরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছে। নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্যে তাদের এই আত্মাহুতি। বিশ্ব স্কাউটসের ইতিহাসে এ নজির আর নেই। বাংলাদেশের যে স্কাউট সদস্যরা জীবন দিয়ে এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে তিনি অভিনন্দন জানান । আজ সোমবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে বাংলাদেশ স্কাউটস এর কাব কার্নিভালের উদ্বোধন ও শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস ১৯৫৫ সালে কানাডায় গ্লোবাল স্কাউটস জাম্বুরিতে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি তুলে ধরে বলেন,‘শৈশব ও কিশোর বয়সে স্কাউটস আমার আদর্শিক পোশাকে পরিণত হয়েছিল। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে এই যাত্রা আমার শুরু। তা আর থামেনি। স্কাউটিংয়ের সুবাদে কানাডা, ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে।অন্য দেশের মানুষ সম্পর্কে জেনেছি।’ স্কাউটিংয়ের ব্যবহারিক দিক ও সৃজনশীলতা তাঁকে খুব আকর্ষণ করতো উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘এখানে নতুন কিছু করার সুযোগ থাকে। নতুন কিছু করার সুযোগের কারণে আনন্দ পেতাম। প্রতিযোগিতা করারও সুযোগ রয়েছে এখানে।’ বর্তমান স্কাউটিং কর্মসূচিতে বিশ্বভ্রমণের সুযোগ রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমান স্কাউটিংয়ে পৃথিবীকে দেখার, অন্য দেশের মানুষকে চেনার এবং তাদের ভাষা জানার সুযোগ রাখতে হবে। বিশ্ব নাগরিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার সুযোগ যেন থাকে। এর মাধ্যমে একজন কিশোর নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কিশোর বয়সে দুনিয়াকে দেখা এবং ভিন দেশের মানুষ সম্পর্কে জানা প্রতিটি মানুষের জীবনে অতি মূল্যবান বলে তিনি উল্লেখ করেন। স্কাউট সদস্যদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্কাউটিং তোমার জীবনে একটা বড় দরজা খুলে দিয়েছে। এখন তোমার দায়িত্ব হলো অন্যের জন্য দরজা খুলে দেওয়া। অন্যের দরজা তোমাকে খুলতে হবে, যেহেতু তুমি অনেক দূর এগিয়ে এসেছো তাই এই দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া আট স্কাউট সদস্যের পরিবারের হাতে গ্যালানট্রি অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। এছাড়া তিনি স্কাউটিং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করেন। আজ সারাদেশে ৫২৭টি স্থানে একযোগে কাব কার্নিভাল শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস এর এডহক কমিটির আহ্বায়ক মো. এহছানুল হক এবং সদস্য সচিব মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বক্তব্য রাখেন।

মব সৃষ্টিতে পুলিশের ভুল থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশে এখন মব নেই। যারা মব সৃষ্টি করছে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব এবং মব সৃষ্টিতে পুলিশ বাহিনীর কোনো ভুল থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) একাডেমি ভবন পরিদর্শন ও বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচনে কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে সে বিষয় নিয়ে পুলিশদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। নির্বাচন তো অনেক দূরে, তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তা ছাড়া আগের তুলনায় পুলিশ ভালো কাজ করছে। এ সময় মির্জাপুর মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্ট্রার পরিদর্শনকালে পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।

এক মাঘে শীত যায় না, মব সৃষ্টি করে মারার বিচার হবে, বললেন শাজাহান খান
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মব সৃষ্টি করে মারা হচ্ছে। এসবের বিচার হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক নৌমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। আজ সোমবার আদালতে হাজিরার এজলাস থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। শাজাহান খান বলেন, ‘এটি ঠিক হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মব সৃষ্টি করে মারা হচ্ছে। এই যে মব জাস্টিস করে মানুষ হত্যা করলো...। ১৬২ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী...। এক মাঘে শীত যায় না, এর বিচারও হবে। এর বিচার হবে না, এটা মনে করো না।’ এ সময় দেশ কেমন চলছে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা তো দেখছেনই। এক হাতে তালি বাজে না।’ তারপর তিনি সাংবাদিকদের ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করেন হাসিমুখে। এদিন সকাল ১০টার দিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ, বুকে বুলেট প্রুভ জ্যাকেট, ও মাথায় হেলমেট পরানো ছিলো। কাঠগড়ায় তোলার পর পুলিশ তাদের হ্যান্ডকাফ ও হেলমেট খুলে দেন। তারপর শাহজান খান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একে অপরের সঙ্গে গল্প করতে থাকেন। নিজ নিজ আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করেন তারা। পরবর্তীতে বিচারক এজলাসে এলে তারা নিশ্চুপ হয়ে যান। এদিন আদালতের দিকে মুখ করে সারিবদ্ধ লাইনের প্রথমে আনিসুল হক ও শাজাহান খানকে কাঠগড়ার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে একদম পিছনের সারিতে দাড়িয়ে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আদালতে পুরোটা সময় সালমান এফ রহমানকে চুপচাপ ও নিরিবিলি থাকলে দেখা যায়। এদিন তার পরনে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি ও পায়ে দুই ফিতার বার্মিজ সেন্ডেল দেখা যায়। আদালত শেষে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলেও কোন উত্তর দেননি তিনি। এদিন সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলায় সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম। রিমান্ড শুনানিকালে কথা বলেন শাজাহান খান। তিনি পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিজ্ঞ পিপি সাহেব উনি বিএনপির বড় নেতা। ভুতুড়ে মামলায় বারবার আমাদের রিমান্ডে নিচ্ছেন কেন?’ এ সময় উত্তরে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে তারা গণভবনে বসে নীতিনির্ধারণী বৈঠক করেছে। তিনি (শাজাহান খান) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তারা সাধারণ আসামি নয়। তারা মিডিয়ায় এসে স্বীকার করেছেন, আন্দোলনকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না, দমন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো এসব ঘটনায় কোনো মামলা করিনি। ভুক্তভোগীদের আত্মীয়রা করেছেন। রিমান্ডেও তো আমরা নেই না। আমাদের শুনানি করার কাজ। সেটা আমরা করি।’ এরপর শুনানি শেষে এ মামলায় শাজাহান খান, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে আনিসুল-সালমান-শাজাহানসহ ৫ জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন একই থানা এলাকায় রিটন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে এক দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। তবে যাত্রাবাড়ী থানায় করা রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টা মামলায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানরিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাইলের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। আনিসুল হক, শাজাহান খান, সালমান এফ রহমানের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইর এসআই আমিরুল ইসলাম মীর। মনিরুল ইমলাম মনুর দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পিবিআই। সোহাইলের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই বিমান তরফদার। শুনানি শেষে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেন। সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২১ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন সাজেদুর রহমান ওমর। বিকেলে আসামিদের আক্রমণে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় সৈয়দ তানভীর আহমেদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকারের গুম, খুন, নিপীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দল মহাসমাবেশের ডাক দেয়। ভুক্তভোগী গণ অধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনও সমাবেশে অংশ নেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আসামিরা অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় আসামিদের ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে সায়মন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন তিনি। এ ঘটনায় গত ২৯ এপ্রিল ভুক্তভোগী বদরুল ইসলাম সায়মন বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন মডেল থানা হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪৫ জনকে আসামি করা হয়। রিটন হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন রিটন উদ্দিন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই দিন সকাল ৮ টার দিকে যাত্রাবাড়ী ফুটওভার ব্রিজের নিচে গুলিবিদ্ধ হন রাসেল। পরে তিনি মারা যান। এদিকে মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর পল্টন থানায় করা রমজান মিয়া জীবন হত্যা মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সাবেক সিইসি লাঞ্ছিত : জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা
সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে মব সৃষ্টি করে লাঞ্ছনার ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, মব সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রোববার (২২ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এই বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থি ও ফৌজদারি অপরাধ। ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ সময় ‘মব’ কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। সরকার দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল নাগরিককে সহনশীল ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ করা হয় বিবৃতিতে।

এবার গ্রেফতার সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল
সাবেক সিইসি এ কে এম নুরুল হুদাকে গ্রেফতারের পর এবার গ্রেফতার হলেন আরেক প্রধান কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। রোববার রাতে তাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র তার গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সূত্রটি জানায় রোববার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। তবে ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ডিবির কোনো টিম তাকে গ্রেফতার করেনি।’ আওয়ামী লীগের দলীয় ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ২০২৪ সালে নির্বাচন করে ‘আমি-ডামি ভোট’ উপাধি পায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ওই কমিশনের বেশিরভাগ কার্যক্রম নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়। ভোটের দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ ভাগ ভোট পড়ে বলে জানানো হলেও এক ঘণ্টার ব্যবধানে ভোটের হার ৪০ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য ভোটের হার ঘোষণার সময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রথমে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলে পরে তা সংশোধন করে ৪০ শতাংশের কথা বলেন। যে কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। একই মামলা অতীতের জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা ও এই তিন নির্বাচনে ‘জয়লাভ’ করা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নামেও করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের পর হাবিবুল আউয়াল লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থান করছিলেন। আজ তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরায় স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

বিদ্যুৎহীন ঢাকার অনেক এলাকা, যা জানা গেল
হঠাৎ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে রাজধানীর বেশকিছু এলাকা। রোববার (২২ জুন) রাত পৌনে ১০টার পর থেকে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। জানা গেছে, রামপুরা গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাত পৌনে ১০টার পর থেকে রামপুরা, হাতিরঝিল, ফার্মগেট, বনানী, গুলশান ও মগবাজারসহ রাজধানীর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুতই এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

ভারতের ‘রিপাবলিক বাংলা’র প্রচার বন্ধে রুল
বাংলাদেশে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’র কনটেন্ট নিষিদ্ধ এবং ব্লক করতে কেন নিদের্শনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চরোববার এ রুল জারি করেন। রিটে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইসিটি বিভাগের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর আগে রিপাবলিক বাংলার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তাদের নিউজ ও কনটেন্ট নিষিদ্ধ এবং ব্লকের আবেদন জানিয়ে রিট করেছিলেন আইনজীবী মাহমুদুল হাসান। তিনি জানান, রিপাবলিক বাংলা স্যাটেলাইট সম্প্রচারের পাশাপাশি তাদের নিউজ, কনটেন্টগুলো ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই চ্যানেল ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সম্প্রচার করছে এবং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। চ্যানেলটি বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে চট্টগ্রাম বিভাগকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ছাড়া রিপাবলিক বাংলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাহমুদুল হাসান বলেন, এর আগে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার ওই টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে চ্যানেলটির কনটেন্ট ব্লকসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে এই রিট করা হয়।

স্বাধীন ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাধীন ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ বিষয়ক এক জাতীয় সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বক্তব্য রাখেন।

ইরানে চলমান সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। রোববার (২২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ ধরনের পরিস্থিতি ইতোমধ্যে নাজুক একটি অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আরও বিঘ্নিত করার ঝুঁকি তৈরি করে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। বিবৃতিতে বলা হয়, যেকোনো সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পক্ষে বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়তে পারে এমন যেকোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতি নিরসনে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে গঠনমূলক আলোচনা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলাই দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনের একমাত্র টেকসই পথ।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা গ্রেফতার
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নুরুল হুদাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরায় স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। উত্তরা-পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাবেক সিইসি এ কে এম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এদিকে আজ রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। মামলার আবেদন জমা দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করা হয়, তাদের মধ্যে আছেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ ও তৎকালীন নির্বাচন সচিবসহ প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা। এই তালিকায় আরও আছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা। অভিযোগে আরও আসামি করা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে। অভিযোগে একই সময়ে দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত) এবং পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল আলমের নাম উল্লেখ আছে।

সাত পুলিশ সুপারকে বদলি
পুলিশ সুপার পদমর্যাদার সাত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। রবিবার (২২ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে রাজি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ বদলি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান। এতে বলা হয়েছে, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম রফিকুল ইসলামকে পিবিআইয়ে, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার এ কে এম এমরান ভূঞাকে শিল্পাঞ্চল পুলিশে, সিলেট এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সজীব খানকে সিআইডিতে, এপিবিএনের সুদীপ্ত রায়কে সিলেট এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার, এসবির পুলিশ সুপার সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে পুলিশ সদর দফতরে, চট্টগ্রাম সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহামদ্দ বদরুল আলমকে সিআইডিতে এবং ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ রাহাত গাওহারীকে বান্দরবান ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়েছে। জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।