আসিফ মাহমুদের জবানবন্দি: আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:০১ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

চানখারপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন এলজিআরডি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জানান, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন।”
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই সাক্ষ্য নেওয়া হয়। শুনানি শেষে আসিফ মাহমুদের বাকি জবানবন্দির জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ তুলে ধরেন ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ছাত্র ও গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, “আমি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ছিলাম।”
আন্দোলনের সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চাপের কথাও উঠে আসে তার বক্তব্যে। তিনি জানান, “ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার সময় আমাদের বারবার বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের সেখানে আনা হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবে- এমন নির্দেশ রয়েছে। তবে তারা (ডিবি) দয়া করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।”
চানখারপুলে নিহতদের প্রসঙ্গে আসিফ বলেন, “পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শর্টগান ব্যবহার করে। সেদিন বেলা দেড়টার দিকে আমরা জানতে পারি, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।”
আসিফ মাহমুদ তার সাক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও কমান্ড পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন।
এই মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামীমসহ আরও কয়েকজন। একইসঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
২০২4 সালের ৫ আগস্ট ঢাকার চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। এই মামলায় গত ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-১ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে।
এতে অভিযুক্ত করা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন এবং পুলিশ সদস্য মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলামকে। এদের মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক, বাকি চারজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
গত জুলাই-আগস্টে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র ও জনতার বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং প্রশাসনের একটি অংশের বিরুদ্ধে একাধিক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দুটি শাখায়।
সূত্র: বাসস