
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে প্রশাসককে ক্ষমতা
এবার আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিতে ইতিমধ্যে নিয়োগ দেওয়া প্রশাসককে পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার পরিচালকের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে এমডি পদমর্যাদায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। গভর্নর স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাগত ও পরিচালনা পর্ষদের দুর্বলতার কারণে বিপুল পরিমাণের মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিপুল অঙ্কের শ্রেণিকৃত বিনিয়োগ, বড় অঙ্কের পুঞ্জিভূত লোকসান, ব্যবস্থাপনায় চরম অস্থিরতা ও প্রবল তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি কাজে পর্ষদ সম্পৃক্ত থাকায় জনস্বার্থে বিদ্যমান পর্ষদ বাতিল করা হলো। অপর এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মজিবুর রহমানকে একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা প্রয়োগ এবং দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১৯৮৭ সালে আল-বারাকা ব্যাংক নামে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৪ সালে ওরিয়ন গ্রুপ মালিকানায় এসে এর নাম দেয় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক। ওই সময় ব্যাংকটিতে বড় ধরনের অনিয়ম ঘটায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৬ সালে প্রশাসক বসায় এবং ওরিয়েন্টাল ব্যাংক পুনর্গঠন করে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক নামকরণ করা হয়। মালিকানায় আসে মালয়েশিয়া ভিত্তিক আইসিবি গ্রুপ। ২০১৩-২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মালয়েশিয়ার নাগরিক শফিক বিন আব্দুল্লাহ। তার সময়ে ব্যাংকটিতে নতুন করে বিভিন্ন জালিয়াতির তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে তিনি ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হন এবং মালয়েশিয়া চলে যান। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

মার্চে সর্বাধিক রেমিট্যান্স এলো যেসব দেশ থেকে
সদ্যবিদায়ী মার্চ মাসে দেশে এসেছে রেকর্ড ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।এতে বলা হয়, মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, ইতালি, কাতার ও সিঙ্গাপুর।দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে আরব আমিরাত থেকে। আর সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, ইতালি, কাতার ও সিঙ্গাপুর থেকে মার্চে যথাক্রমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার, ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার, ২৯ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার, ১৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার, ১৮ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার, ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার, ১১ কোটি ৭১ লাখ ৬০ হাজার ও ৯ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।মার্চে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৬০ কোটি ৭৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৫ কোটি ৪ লাখ ডলার, সিলেট বিভাগে ২৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, খুলনা বিভাগে ১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার, বরিশাল বিভাগে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, রাজশাহী বিভাগে ৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ও রংপুর বিভাগে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।এদিকে মার্চে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে যে কোনো এক মাসের সর্বোচ্চ। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৪০ হাজার ২০৬ কোটি টাকা।এর আগে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স (প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার) এসেছিল গত ডিসেম্বরে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে (প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার)।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে বেড়েছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ।গত জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার।আর সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ, জুলাইতে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ও ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।

সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে মিরসরাইয়ের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল
দেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম জেলঅর মিরসরাইয়ের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপন উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে দেড় হাজার একর ভূমি। ৫০০ একরে আসবে আন্তর্জাতিক মানের মাস্টার ডেভেলপার। নিশ্চিত করা হবে সব ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। পুরোপুরি চালু হলে কর্মসংস্থান হবে ১৫ লাখ মানুষের। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে ফেনীর সোনাগাজি পর্যন্ত ৩৩ হাজার একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বর্তমানে ১১ হাজার একরে চলছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ।বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিকে কাজে লাগিয়ে উপকূলে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে অপার সম্ভাবনাময় এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এরই মধ্যে উৎপাদনে গেছে কোলগেট, এশিয়ান পেইন্টস ও টিকে গ্রুপসহ ১৪টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন আরও ২৮টি।বরাদ্দ দেয়া ১৫২টি প্লটে বিনিয়োগ হতে পারে ১৯ বিলিয়ন ডলার। কর্তৃপক্ষ বলছে, দুইটি জোন আগামী দুই বছরের মধ্যে চালু হলে খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।মিরসরাই জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, ‘জোন দুইটিতে দেড় হাজার একরের মত জমি রয়েছে। জমিগুলোকে পুরোপুরি কাজের উপযোগী করা হবে। এর পাশাপাশি পাঁচশো একরে আসবে আন্তর্জাতিক মানের মাস্টার ডেভেলপার।’বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষে (বেজা) কনসালটেন্ট আবদুল কাদের খান বলেন, ‘আগামী ২ বছর কী কী কাজ করা হবে, তা নিয়ে কাজ চলছে।’সংকট নিরসনে মুহুরি প্রজেক্ট থেকে আনা হচ্ছে পানি। কেটে গেছে শ্রমিক জটিলতাও। সাগর পথে শিল্পপণ্য পরিবহনে নির্মাণ হচ্ছে জেটি।ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেয়া একদল বিনিয়োগকারী পরিদর্শন করেছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। তাই সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে বিনিয়োগ বান্ধব ও উৎপাদনমুখী নানা পদক্ষেপ।প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংকগুলো শাখা স্থাপন করেছে, আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।’চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। বেজার চাহিদা অনুযায়ী কাজগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।’প্রসঙ্গত, পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সচল হলে ৫০০ কারখানায় কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের।

তৈরি পোশাক রপ্তানিসহ সার্বিক বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
তৈরি পোশাক রপ্তানিসহ সার্বিক বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কার্যালয়ে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান। ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার জন্য ২০২০ সালের ২৯ জুন একটি আদেশ জারি করেছিল ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) মঙ্গলবার সেই আদেশ বাতিল করে। এই আদেশ বাতিল ইস্যুতে জরুরি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইপিবি কার্যালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার। বৈঠক শেষে শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির যে প্রক্রিয়া তাতে এ সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে সরকার তৈরি পোশাক রপ্তানিসহ সার্বিক বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দরের নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করে এ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এ বিষয়ে একটি অন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। সেখানে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ ২০২০ সালের ২৯ জুনের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের একটি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। গতকাল ভারত বলেছে, ‘যেসব পণ্যবোঝাই যানবাহন ইতিমধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে, সেগুলোকে দ্রুত ভারতের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে।’

বাংলাদেশের ওপর শুল্ক স্থগিত, ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭৫টিরও বেশি দেশের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড পেজে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আপনাকে ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সহযোগিতা করার জন্য আপনার প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।’আর বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে। আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে চীন ও অন্যান্য দেশ উপলব্ধি করতে পারবে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দিন আর থাকবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সমঝোতা আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।’পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, ‘আমি ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত অনুমোদন করেছি। একই সঙ্গে এই সময়ের জন্য পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এটাও অবিলম্বে কার্যকর হবে।’এর আগে গত ২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। যার মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।এতে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ সরকার। সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ। আপনার ঘোষণার পর আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছি যাতে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমেরিকান রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছি।’প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরাই প্রথম দেশ যারা রফতানির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আমাদের কর্মকর্তারা তখন থেকেই বাংলাদেশে আমেরিকান রফতানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের বিশদ কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন।’আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার ও পারস্পরিক শুল্ক ভারসাম্য তৈরির লক্ষ্যে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারকে একটি চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রফতানিতে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে সেটি দূর করতে আমরা উন্মুক্ত আলোচনা ও সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের শুল্ক তালিকায় ১৯০টি পণ্য শূন্য বা শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাচ্ছে এবং আরও ১০০টি পণ্যকে এ তালিকাভুক্ত করার বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কাছে আমিরাতের মতো মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের পরিকল্পনা
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আমাদের একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। আমরা চিন্তা ভাবনা করেছি যে, আমরা ফ্রি ট্রেড জোনের দিকে চলে যাবো। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জেবেল আলী পোর্ট আছে, সেটা আমিরাতের অর্থনীতিতে ২৫ শতাংশ অবদান রাখে। সেই বন্দরের মতো করে আমরা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কাছাকাছি কোনও এক জায়গায় এই ফ্রি ট্রেড জোনের কথা চিন্তা করছি। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিডা আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনের আয়োজনের ওপরে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। চৌধুরী আশিক মাহমুদ জানান, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়ম এসেছেন আমাদের প্রোগ্রামে অংশ নিতে। তিনি আমিরাতের একজন ভিআইপি, এমনকি রাজপরিবারের খুব কাছের লোক। উনি একটা ছোট্ট প্রোগ্রাম করেছেন এখানে। তবে তার প্রোগ্রাম ফুল ছিল, এমনকি অনেক দর্শককে আমরা জায়গা দিতে পারিনি। ডিপি ওয়ার্ল্ড থেকে কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়ে, বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে আমরা ফ্রি ট্রেড জোন করার চেষ্টা করছি। এটি ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানের সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল। উনি আজকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তারপর এই বিষয় নিয়ে আলাপ করবেন। এসময় তিনি জানান, এবারের সামিটে এমন সাড়া পাওয়া গেছে যে, অনেককে জায়গা দেওয়া যায়নি। অনেকে জায়গা না পেয়েও এসেছেন বিনিয়োগকারীদের দেখা পেতে। সেজন্য আমরা ভাবছি— আগামী সামিট চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে নিয়ে যাবো। এটার চাহিদা ওখানেই বেশি। প্রসঙ্গত, ডিপি ওয়ার্ল্ড একটি বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা, যা ২০০৫ সালে দুবাই পোর্ট অথরিটি এবং দুবাই পোর্টস ইন্টারন্যাশনালকে একত্রীকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

রেমিট্যান্সের জোয়ার কৃষি ব্যাংকের বড় অবদান
একক মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। বিপুল পরিমাণ এই রেমিট্যান্স আহরণ বড় ভূমিকা রেখেছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকে গত ১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩২ কোটি ৭৪ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যার প্রতি ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৪ টাকা হিসাবে ৪ হাজার ৬০ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রেমিট্যান্স উৎসব ২০২৫ (১ মার্চ-১৫ এপ্রিল) ১ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত ৪৬ দিনব্যাপী রেমিট্যান্স উৎসব পালন করছে। গত ১ মার্চ থেকে প্রতি ১৫ দিন পর পর লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ প্রতি পর্বে ১০টি পুরস্কার ১টি মেগা পুরস্কারসহ সর্বমোট ৩১টি পুরস্কার। উৎসব শেষে একজন ভাগ্যবান বিজয়ীর জন্য মেগা পুরস্কার মোটর সাইকেল। ১ম পুরস্কার রেফ্রিজারেটর, ২য় পুরস্কার ৩২" স্মার্ট টিভি ৩য় পুরস্কার বাইসাইকেল ৪র্থ পুরস্কার স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৫ম পুরস্কার ট্রলি ব্যাগ, ৬ষ্ঠ পুরস্কার ডিনার সেট, ৭ম পুরস্কার রিচার্জেবল ফ্যান, ৮ম পুরস্কার ইনডাকশন চুলা, ৯ম পুরস্কার ইলেকট্রিক রাইস কুকার ও ১০ম পুরস্কার প্রেসার কুকার। কৃষি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত মার্চ মাসে আমরা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৯ জন গ্রাহকের রেমিট্যান্স পৌঁছে দিয়েছি। গ্রাহকদের আস্থা এবং উন্নত সেবা ও রেমিট্যান্স কোম্পানির সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে ব্যাংকটিতে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাবে, কমবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়বে ৫.১ শতাংশে। অন্যদিকে পূর্বাভাস অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরের ৯.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ অর্থবছরে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাবে। পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব, বাজার সংক্রান্ত তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির ১.৪ শতাংশ থেকে কমে ০.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এডিবির ঢাকা অফিসে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও রাজনৈতিক উত্তরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি, শিল্প খাতে অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ। বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জেয়ং বলেন, ‘বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল রয়েছে। এই সহনশীলতা আরও শক্তিশালী করা সম্ভব কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আর্থিক খাতের সুশাসন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করা যেতে পারে। এডিবি বলছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ভোগ ও বিনিয়োগে কিছুটা গতি আসবে। তবে সংকোচনমূলক আর্থিক ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার কারণে এ গতি সীমিত থাকবে। বিশ্ববাজারে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবও বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। সরবরাহপক্ষে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর্থিক খাতের ঝুঁকি এবং ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সেবাখাতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে। বারবার বন্যার কারণে কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। তবে রপ্তানি খাতের সহায়তায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনটি ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ঘোষণার আগে তৈরি হওয়ায় সেসব শুল্কের প্রভাব এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে এডিও এপ্রিল ২০২৫-এ নতুন শুল্ক নীতির ফলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণ রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বর্তমানে ৬৯টি সদস্য দেশের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও সহনশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

অর্থ পাচারকারীদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার এবং ভবিষ্যতে অর্থপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যারা অর্থপাচার করেছে, তাদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পায়।’ এ লক্ষ্যে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (৯ এপ্রিল) মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গভর্নর। বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরী। গভর্নর বলেন, ‘ইসলামি ব্যাংকিং খাতে মৌলিক সংস্কার আনা হবে। বর্তমানে অনেকগুলো ছোট ও সমস্যাগ্রস্ত ইসলামি ব্যাংক রয়েছে। এগুলো একীভূত করে দুটি বড় ইসলামি ব্যাংক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইসলামি ব্যাংকের জন্য পৃথক আইন ও তদারকি কাঠামো তৈরি করা হবে। আন্তর্জাতিক উত্তম রীতিনীতির আলোকে এই খাতকে পুনর্গঠন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব ব্যাংকে অনিয়ম ধরা পড়েছে, সেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩টি ব্যাংকে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে এবং আরও একটি ব্যাংক স্বেচ্ছায় পরিবর্তন এনেছে। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধনী এনে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ এবং তাদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হচ্ছে।’ ড. মনসুর স্বীকার করেন, ব্যাংক খাতের সমস্যার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও দায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর রাজনৈতিক ও আর্থিক চাপ রয়েছে। ব্যাংক খাতে দ্বৈত শাসন বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও শক্তিশালী ও স্বায়ত্তশাসিত করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আগাম অনিয়ম শনাক্ত করা সম্ভব হয়।’ তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রমকে আরও আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় করা হচ্ছে। রিপোর্টিং সিস্টেম পুরোপুরি অনলাইনে আনা হবে এবং ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে। গভর্নরের ভাষায়, ‘রাজনীতির পালাবদল হলেও ব্যাংক খাতের সংস্কার থেমে থাকা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন অপরিহার্য।’

ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে দুইটি ব্যাংকে রূপান্তর করা হচ্ছে: গভর্নর
সব ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে দুইটি ব্যাংকে রূপান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ‘ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে, যাতে কেউ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে না পারে।’ আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীতে বিআইবিএম কার্যালয়ে ১০ম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ‘অনিয়ম, কেলেঙ্কারি ও সুশাসনের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য প্রয়োজন সংস্কার। যার জন্য গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টাস্কফোর্স গঠন, নতুন আইন প্রবর্তন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের মতো বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ ব্যাংকিং খাতের একগুচ্ছ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলস্বরূপ লুটপাট করা কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও কোমর ভেঙে আছে বেশ কিছু ব্যাংকের।’ সব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ নয়, তবে যেগুলো খারাপ সেগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা লোপাট করে আর কাউকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না এবং ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকের স্বার্থে ব্যাংকের বোর্ডে হস্তক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও একটি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে।’

কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা বাড়াতে লালদিয়ার চরেই আস্থা চট্টগ্রাম বন্দরের
দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়তি ১৫ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় লালদিয়ার চরেই ভরসা খুঁজছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। আর তাই চরের একটি অংশ ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মার্কস লাইনকে দিলেও অপর অংশে নিজস্ব কনটেইনার ইয়ার্ড করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর মাত্র ছয়টি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা চট্টগ্রাম বন্দর এখন বছরে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করছে। একইভাবে বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজারে। কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়তি ১৫ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতার চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে লালদিয়ার চরকেই বেছে নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।চবকের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বে টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ি বন্দর চালু হওয়ার আগে নতুন করে কনটেইনার ইয়ার্ড তৈরি করতেই হবে। এর জন্য লালদিয়ার চর খুবই সহায়ক হবে।’একেবারে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় এই লালদিয়ার চরের অবস্থান। এরই মধ্যে চরের ৬৪ একর জায়গাকে দুইটি অংশে বিভক্ত করে উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে ৩২ একরের প্রথম অংশে বন্দরের জন্য তৈরি হবে নিজস্ব কনটেইনার ইয়ার্ড। যেখানে কনটেইনার ধারণক্ষমতা হবে ১৫ হাজারের বেশি। আর দ্বিতীয় অংশে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ডেনমার্ক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মার্কস লাইন।চবকের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘কনটেইনার সুবিধা বাড়ানোর জন্য গ্রাউন্ড ডেভেলপমেন্ট কাজ চলমান রয়েছে। বেশকিছু কাজ এরই মধ্যে হয়ে গেছে। বাকিগুলোও দ্রুতগতিতে চলছে।’বিশ্বজুড়ে ৫০ শতাংশের বেশি কনটেইনার পরিবহন এবং হ্যান্ডলিং করছে মার্কস লাইন। আর তাই চট্টগ্রাম বন্দরে মার্কস লাইনের বিনিয়োগকে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিপিং ব্যবসায়ীরাবাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘মার্কস লাইনের বিনিয়োগের ফলে দেশের আমদানি-রফতানির পরিমাণ অনেক বাড়বে। যা দেশের জন্য ইতিবাচক।’এর আগে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়েকে। লালদিয়ার চরে ক্ষেত্রে রেডিমেড টার্মিনাল হস্তান্তরের পরিবর্তে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘তৈরি টার্মিনাল না দিয়ে বিনিয়োগকারীকেই দিয়ে যদি টার্মিনাল নির্মাণ করানো যায়, সেটি দেশের জন্য বেশি উপকারী হবে।’চলতি বছরেই লালদিয়ার চর কনটেইনার ইয়ার্ড ও টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক চুক্তিসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চবক।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধি: গভর্নরকে ধন্যবাদ ডিবিএর
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তফসিলি ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে শেয়ারবাজারের স্টক ব্রোকারদের একমাত্র সংগঠন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। বুধবার (৯ এপ্রিল) ডিবিএ থেকে পাঠানো র্তায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম তাঁকে এই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বার্তায় সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে তফসিলি ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুরোধ করে আমরা ডিবিএর পক্ষ থেকে গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছিলাম। গভর্নর আমাদের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে এই বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় আমরা তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আশা করি, এই তহবিলের যথাযথ ব্যবহার ও বিনিয়োগ বাজারের তারল্য প্রবাহ বৃ্দ্ধিতে সহায়তা করবে এবং দৈনিক শেয়ার লেনদেনে গতি এনে বাজারকে ইতিবাচক ধারায় নিয়ে যাবে।’ ‘গভর্নর পুঁজিবাজারের প্রতি সর্বদা সুদৃষ্টি রাখবেন এবং এর উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত রাখবেন।’বার্তায় বলা হয়, ‘এছাড়াও, ওই কাজে সহযোগীতা প্রদানের জন্য আমরা ডিবিএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানাই।’ ‘পুঁজিবাজারের সার্বিক স্বার্থে আমরা অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে একযোগে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করছি এবং এর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সব ধরণের সহযোগীতার আশ্বাস দিচ্ছে।’

বাংলাদেশে চাকরির বন্যা বয়ে যাবে: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘প্রফেসর ইউনূস বারবার বলেছেন যে, বাংলাদেশে প্রচুর চাকরি তৈরি করতে হলে আমাদের জন্য ব্যাপক পরিমাণে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন। আর এর জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হবে, দরজায় দরজায় গিয়ে বলতে হবে, ‘আমরা প্রস্তুত, আসুন, বিনিয়োগ করুন।’ এ জন্য যেখানে-সেখানে তিনি এই বার্তা প্রচার করেন, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, নিউইয়র্ক, ডাবলিন- যেখানেই যাওয়া, তার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করা এবং বিনিয়োগের আহ্বান করা। আর এমনটা যদি হয় তাহলে বাংলাদেশে জবের বন্যা বয়ে যাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শফিকুল আলম বলেন, ‘বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে নানা বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের অর্জনগুলো তুলে ধরবেন এবং এই অঞ্চলে আরও বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করবেন।’ উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূসের মতে, বিদেশি বিনিয়োগ আসলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। যদি বিনিয়োগ আসে, তাহলে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য ব্যাপক পরিমাণে চাকরি সৃষ্টি হবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী হবে।’ তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘চাকরি হওয়া উচিত মানসম্মত, কোনো অকার্যকর চাকরি নয়। এর জন্য আমাদেরকে আমাদের পরিকাঠামো এবং লজিস্টিক সাপোর্ট আরও শক্তিশালী করতে হবে। একটি কার্যকর পোর্ট, উন্নত অবকাঠামো এবং ভালো লজিস্টিক সাপোর্টের মাধ্যমে আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।’ শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নতির জন্য শুধু সরকারের একার কাজ নয়, এটা সবার কাজ। আমাদের সকলের উচিত বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছানো, যাতে আন্তর্জাতিকভাবে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছি। ইতোমধ্যে আমরা আট মাসের মতো একটি স্থিতিশীল জায়গায় পৌঁছেছি, এবং আমরা আরও ভালো অবস্থানে যেতে চাই, যাতে আমাদের গল্প পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ইউনুস আরও বলেছেন- বাংলাদেশকে তিনি একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চান। যদি এটি সফল হয়, তাহলে বাংলাদেশের প্রচুর ফ্যাক্টরি গড়ে উঠবে এবং শুধু দেশীয় বাজারের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বাজারের জন্যও পণ্য উৎপাদন হবে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’

বাণিজ্যকে অস্ত্রে রূপান্তর করেছেন ট্রাম্প: রেহমান সোবহান
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায্য শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে পারে। দুই দেশের বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় বিলিয়ন ডলারের যে ঘাটতি রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় আমদানি দিয়ে তা মেটানো সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প বাজার সন্ধান করতে হবে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে উদীয়মান পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশের পণ্যের ভালো বিকল্প বাজার হতে পারে। এজন্য রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বৈচিত্র্য আনতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের প্রভাব-সংক্রান্ত এক আলোচনায় সভায় গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের সমালোচনায় তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যের বিষয়টিকে এখন অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছেন। এটিকে তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান। এ ধরনের শুল্ক আরোপ অন্যায্য এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির প্রতি চরম অবহেলা। এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে কেউ লাভবান হবে না। খোদ যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপ থেকে কোনো সুফল পাবে না। শেষ পর্যন্ত এ শুল্ককাঠামো টেকসই নাও হতে পারে।’ আলোচনা সভার আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। রাজধানীর বনানীর নিজস্ব কার্যালয়ে সভা পরিচালনা করেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার। অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান ও গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। রেহমান সোবহান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ‘ঘোর’ কাটাতে হবে। ওই বাজারটি গতকালের জন্য ছিল, আগামী দিনের হবে না। সময় এসেছে অতীত ভুলে আগামীর দিকে তাকানোর। কীভাবে নতুন বাজার সৃষ্টি করা যায়, সে কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। পূর্বমুখী নীতি নিতে হবে। কারণ, এর মধ্যে ভূ-অর্থনীতি, ভূ-রাজনীতির বিষয় আছে। যুক্তরাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ পণ্য এবং বাজার সুরক্ষা দেওয়ার নীতি নিয়েছে। তবে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুধু শুল্কই নয়, উন্নয়ন সহায়তা, জলবায়ু তহবিল- এ রকম অন্যান্য ইস্যুতেও আলোচনা দরকার।’ ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নির্ধারণের পদ্ধতির সমালোচনা করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘এক সময় যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বায়নের ধারণা সৃষ্টি করেছিল, আজ তারাই সে ব্যবস্থা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। এ বাস্তবতার মধ্যে টিকে থাকতে হবে। এত দিন বিশ্বব্যবস্থা একভাবে চলেছে; এখন বিশ্বব্যবস্থা আরেকভাবে চলবে। অর্থনীতির সমস্যা এখন আর অর্থনীতির নিয়মে সমাধান করা হচ্ছে না, বরং যারা সবচেয়ে ভালো আলোচনা বা চুক্তি করতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘ট্রাম্প যে প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান, সেভাবে ঘাটতি কমানো একটা অসম্ভব ব্যাপার। বাংলাদেশও যেভাবে উচ্চ শুল্কের খড়্গ থেকে বাঁচতে রপ্তানি বাড়ানোর কথা বলেছে, তা বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কছাড় সুবিধা দিলে অন্য উন্নয়ন অংশীদাররাও একই সুবিধা চাইতে পারে। এছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কেউ কাউকে বাণিজ্যের জন্য চাপ দিতে পারে না। যেখান থেকে পণ্য প্রতিযোগিতামূলক হয় সেখান থেকে পণ্য আনবে। হুকুম দিয়ে আমদানি বাড়ানো সম্ভব নয়।’ সভায় জাইদী সাত্তার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বড় অর্থনীতির দেশ, সেটি ঠিক। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করতে হবে, তা আবশ্যক নয়। রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনতে পণ্যেরও বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। এছাড়া সহায়ক শুল্কনীতি দরকার। বর্তমান শুল্কনীতি রপ্তানি সহায়ক নয়, বরং উল্টো। রপ্তানির চেয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাত করতে মুনাফা ও সুবিধা এখানে বেশি। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, শুল্কের বাইরে কিছু অশুল্ক বাধা আছে। নিয়মনীতিতে স্বচ্ছতা নেই। দুর্নীতি আছে, মেধাস্বত্ব অধিকার নেই- এ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া দরকার।’ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে শুল্ক কমানো হলে ৩ বিলিয়ন ডলারের মতো অপ্রয়োজনীয় আমদানি করতে হবে; যা একরকম ‘ঘুষ দিতে বাধ্য’ করার মতো। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে নীতির ভিত্তিতে শুল্ক আরোপ করেছে তার ভিত্তি নেই। সারা পৃথিবীর ওপর গড়ে ২২ শতাংশ ট্যারিফ বাড়িয়েছে তারা। এতে দেশটিতে পোশাকের দাম ১০ শতাংশ বাড়বে ও চাহিদা ৩২ শতাংশ কমবে। হোয়াইট হাউসের প্রতিবেদন বলছে, এতে পোশাকের চাহিদা ৩২ বিলিয়ন ডলার কমতে পারে। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প হয়তো শুল্কখড়গ নীতি ধরে রাখতে পারবেন না। তাঁকে সরে আসতে হবে। তবে এ ধরনের প্রবণতা আগামীতেও থাকবে। অসম দরকষাকষি চলতে থাকবে। চীনকে শায়েস্তা করতে দেশটির পণ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিযোগী সক্ষমতা কমায় চীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দিকে নজর দেবে এবং সস্তায় এ অঞ্চলে পোশাক সরবরাহ করবে। তখন ইইউর বাজারে বাংলাদেশি রপ্তানি কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে।’ সেলিম রায়হান বলেন, ‘আকস্মিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করেনি। উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ ও শুল্ক আরোপ একই সূত্রে গাঁথা। বিশ্ব হয়তো নতুন বিশ্বব্যবস্থায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আগামীতে এ ধরনের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ আসতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শুল্কনীতির সংস্কার করছে। শুধু শুল্কনীতি সংস্কার যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে অন্য নীতিগত ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন আছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প ডব্লিউটিওকে পাত্তা দিচ্ছেন না। সংস্থাটির আপিল কার্যক্রম অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। এ অবস্থায় দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা এবং দরকষাকষির মাধ্যমে এগোতে হবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হতে পারে একটি অস্ত্র। বাংলাদেশ এখানেও পিছিয়ে আছে। ভিয়েতনাম ১৫ দেশের সঙ্গে এফটিএ করেছে। বাংলাদেশ করেছে শুধু ভুটানের সঙ্গে।’ উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের মুহূর্তে এখন রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে নতুন বাজার খোঁজা এবং পণ্য বহুমুখীকরণে নজর দিতে হবে।’ তিনিও নতুন বাজার হিসেবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কথা বলেন। রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং ইভিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে কোনো সুবিধা আদায়ে লবিস্ট নিয়োগ করতে হয়। অন্যান্য দেশ তাই করছে। বাংলাদেশকেও ভাবতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা থাকায় তিনি নিজে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।’ শাশা ডেনিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, ‘দুই মাস আগে শুল্কনীতি বিষয়ে ট্রাম্প ধারণা দিলেও বাংলাদেশ তা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।’

বিশ্বকে বদলানোর মত দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের: ড. ইউনূস
বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার মতো দুর্দান্ত সব আইডিয়া আছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসার ভালো সুযোগ রয়েছে। এ ব্যবসা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। একসময় ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র গ্রামে শুরু হলেও এখন এটি আমেরিকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।’ বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার কণ্ঠ রোধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী এ বিনিয়োগ সম্মেলন গত সোমবার (৭ এপ্রিল) শুরু হলেও বুধবার প্রধান উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগে অবদান রাখার জন্য চার ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হল ওয়ালটন (দেশি বিনিয়োগকারী) বিকাশ (বিদেশি বিনিয়োগকারী), স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস ও ফেব্রিকস। এছাড়া বিশেষ ক্যাটাগরিতে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং-কে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

গভর্নরের নেতৃত্বে লন্ডনে টাস্কফোর্স: পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে জোরাল কূটনীতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ১৭-২১ মার্চ পর্যন্ত লন্ডন সফর করেন। এ সফরে তার ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম ছিল চুরি হওয়া বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আন্তঃসংযোগ (ইন্টারঅপারেবিলিটি) বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ। এই সফরের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার- বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরো স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্য নতুন গতি পায়। চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারে উদ্যোগ: আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে ব্যাংকিং খাত এবং সরকারি দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে, যা উদ্ধার করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এর প্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একটি ‘সম্পদ পুনরুদ্ধার পর্যালোচনা বৈঠক’ করেন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেন। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, যিনি সম্পদ পুনরুদ্ধার টাস্কফোর্সের প্রধানও, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ মার্চের কর্মসূচি: যুক্তরাজ্যের সংসদ ভবনে দুর্নীতিবিরোধী অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপে (এপিপিজি) বৈঠক: যুক্তরাজ্যের সংসদ ভবনের পোর্টকুলিস হাউসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে গভর্নর প্রধান অতিথি ছিলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য জো পাওয়েল, রূপা হক, ব্যারোনেস উদ্দিন এবং সাবেক লর্ড চ্যান্সেলর ও বিচারমন্ত্রী অ্যালেক্স চক। এছাড়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, স্পটলাইট অন করাপশনসহ বিভিন্ন দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন, গণমাধ্যম এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন। গভর্নর যুক্তরাজ্য সরকারের কারিগরি সহায়তা, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কেন্দ্রের (আইএসি সিসি) সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধার শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্বও। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি সংস্থা বাংলাদেশকে আরও বেশি সহায়তা দিতে আহ্বান জানায় এবং প্রয়োজনে পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দেয়।’ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টের সঙ্গে বৈঠক: গভর্নর বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার সংস্কার, সমস্যা জর্জরিত ব্যাংকের সম্পদ গুণগত পর্যালোচনা (এএকিউআর) এবং আইসিএআরের আইনগত সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। ১৯ মার্চ: সম্পদ পুনরুদ্ধার সেমিনার: লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রায় ৩০টি আইন ও তদন্ত প্রতিষ্ঠান এবং ১০০ জনের বেশি অংশগ্রহণ করেন। গভর্নর বলেন, এই উদ্ধারপ্রক্রিয়া ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এবং জটিল। এতে বেসরকারি আইনজীবী, তদন্তকারী এবং আর্থিক সহায়তাকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বব্যাংকের স্টার ইনিশিয়েটিভ এবং আইসিএআরের সহায়তায় এপ্রিলের মধ্যে একটি শর্তাবলি (টার্মস অব রেফারেন্স) প্রকাশ করা হবে। সাবেক চ্যান্সেলর অ্যালেক্স চক বলেন, ‘লন্ডন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইনগত কেন্দ্র হওয়ায় ‘লিগ্যাল লন্ডন’-এর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করতে পারে।’ গণমাধ্যম ও কৌশলগত যোগাযোগ: গভর্নর আল জাজিরা, ফিনান্সিয়াল টাইমস, গার্ডিয়ান ও ডেইলি মেইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ উদ্ধার প্রচেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যের দুটি কৌশলগত যোগাযোগ সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করেন, কীভাবে আন্তর্জাতিক মহলে এই উদ্যোগকে আরও দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করা যায়। বড় তিনটি আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডারের সঙ্গে আলোচনা: এই সংস্থাগুলো জানায়, যথাযথ প্রমাণ পেলে তারা প্রাথমিকভাবে ৫ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। তারা শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আন্তঃসংযোগের অগ্রগতি: গেটস ফাউন্ডেশন কর্মশালা (১৮-২১ মার্চ): বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরসহ ১২ জন কর্মকর্তার অংশগ্রহণে চারদিনব্যাপী কর্মশালায় কয়েটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এগুলো হল তাৎক্ষণিক অর্থ লেনদেন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির মৌলিক বিষয়; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় ভূমিকা; মোজালুপ নামক আন্তঃসংযোগ প্রযুক্তি পদ্ধতির সম্ভাব্য প্রয়োগ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প আর্থিক কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা: কর্মশালায় ছায়া ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে এজেন্ট ব্যাংকিং বিস্তারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় একটি নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ কেন্দ্রিক বিকল্প ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি কেন্দ্র’ গঠনের ভাবনা উঠে, যা প্রযুক্তি, নীতি ও নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কারে কাজ করবে। জিএসএমএর সঙ্গে কর্মশালা: ৭৫০টির বেশি মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধিত্বকারী জিএসএমএ-এর সঙ্গে আলোচনা হয় কীভাবে ‘নগদবিহীন অর্থনীতি’ গড়ে তোলা যায়। কিউআর কোড, ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের প্রসার ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক: অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্র আইজিসি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জনাথন লিপ এবং গবেষণা পরিচালক ড. টিম ডোবারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হয়। তারা বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, পরিসংখ্যান বিভাগ পুনর্গঠন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জলবায়ু ঝুঁকির মতো বিষয়গুলোতে যৌথ গবেষণা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই সফর শুধু আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করেই থেমে থাকেনি, বরং বাংলাদেশের জন্য আর্থিক ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির পথও সুগম করেছে। চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, আর ভবিষ্যতের আর্থিক ব্যবস্থায় এটি বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিনিয়োগ সম্মেলনে আলো ছড়াচ্ছে ডুবুরি রোবট-ইলেকট্রিক গাড়ি
পানিতে উদ্ধার কাজ সহজ করতে উন্নত প্রযুক্তির রোবট ডুবুরির প্রদর্শন করা হয়েছে চার দিনব্যাপী আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে। এই রোবট পানির নিচে হারিয়ে যাওয়া বস্তু খুঁজে বের করতে পারে। এছাড়া প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ ছিল ইলেক্ট্রিক গাড়ি-পালকি। উদ্যোক্তাদের মত, যথেষ্ট বিনিয়োগ পেলে এসব প্রযুক্তিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা আরও সহজ হবে। নদীমাতৃক দেশে প্রতিবছরই লঞ্চ কিংবা নৌকা ডুবি হয়। হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। মৃতদেহ খুঁজে পেতে লাগে সময়। এক্ষেত্রে ডুবুরি যদি হয় রোবট, তাহলে সহজে ও দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব।অক্টোপাস ও টুনা নামে এমন ডুবুরি রোবট নিয়ে চলমান বিনিয়োগ সম্মেলনে এসেছেন কয়েকজন তরুণ উদ্ভাবক। দূর থেকে রোবটগুলো রিমোটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করে পানির নীচ থেকে যেকোনো বস্তু খুঁজে পেতে সক্ষম।উদ্যোক্তারা জানান, পানির নিচে নির্দিষ্ট গভীরতায় যেখানে একজন সাধারণ মানুষ পৌঁছাতে পারে না, সেখানে গিয়ে যেকোনো বস্তু খুঁজে নিয়ে আসবে রোবটগুলো।বিনিয়োগ সম্মেলনে স্টার্ট আপ প্রদর্শনীর আরেক আকর্ষণ ইলেক্ট্রিক গাড়ি-পালকি। বাংলাদেশে তৈরি প্রথম এই যান্ত্রিক গাড়িতে থাকছে নানা ধরনের উন্নত ফিচার।তবে আরও উন্নত করার পরামর্শ এসেছে বিনিয়োগকারীদের থেকে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিদেশি পণ্যের ওপর চাপ কমাতে ধরনের উদ্যোগগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।উদ্ভাবকরা আশাবাদী চারদিনের এই সম্মেলনে তাদের স্টার্টআপগুলো বিকশিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের সংস্থান হবে। তারা বলছেন, যথেষ্ট বিনিয়োগ পেলে বিশ্ব অঙ্গনে নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরা আরও সহজ হবে।উল্লেখ্য, রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গত সোমবার (৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন’। যা চলবে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত।

‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেল চার প্রতিষ্ঠান
বিনিয়োগ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় দেশের ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।বিনিয়োগ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা ফেব্রিক লাগবে, ওয়ালটন, বিকাশ ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়েছে।এরমধ্যে উদ্ভাবনী ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ফেব্রিক লাগবে, টেকসই ক্যাটাগরিতে ওয়ালটন, বিদেশি বিনিয়োগে বিকাশ ও স্থানীয় বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।এছাড়া বিনিয়োগ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়েছে কোরিয়ান এক্সপার্ট প্রসেসিং জোনকে। বাংলাদেশে ব্যবসায় অসামান্য অবদান রাখায় কোরিয়ান বিনিয়োগকারী কি হাক সুন'কে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইয়াং ওয়াও এর সিইও এবং বাংলাদেশে কোরিয়ান ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা তিনি ।উল্লেখ্য, রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গত সোমবার (৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন’। যা চলবে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত।

বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে’ যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৯ এপ্রিল) মুহাম্মদ ইউনূস 'বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫' এর উদ্বোধন করবেন।হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিজনেস সামিটের তৃতীয় দিনে স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহারও উদ্বোধন করবেন মুহাম্মদ ইউনূস। এর মাধ্যমে মহাকাশ ভিত্তিক কৃত্রিম উপগ্রহের ইন্টারনেটের ব্যবহারের এগিয়ে এগোবে বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নেট সেবার প্রত্যাশা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।বুধবারের সেশনে যুক্ত হয়ে ড. ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরবেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবেন তিনি।চারদিন ব্যাপী বিজনেস সামিটের দুইদিনে ইতোমধ্যে চীন, কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কয়েকটি বিদেশি ব্যাংক ইতোমধ্যে লোনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বাংলাদেশকে।এরই মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অফিশিয়াল কার্যক্রম শিথিল ও জ্বালানি নীতি তৈরির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সম্মেলনের তৃতীয় দিন বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূস।

৯ এপ্রিল, ২০২৫: স্বর্ণের আজকের বাজারদর
টানা ৪ দফা বাড়ানোর পর এবার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ (বুধবার, ৯ এপ্রিল) থেকে স্বর্ণ বিক্রি হবে নতুন দামে। তবে আগের দামেই বিক্রি হবে রুপা। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাজুস। এবার স্বর্ণের ২২ ক্যারেটের এক ভরিতে ১ হাজার ২৪৮ টাকা কমিয়েছে সংগঠনটি।নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৮ হাজার ১৪১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৫ হাজার ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত ট্রাম্পের শুল্কারোপের ঘোষণায় অস্থির হয়ে উঠেছে স্বর্ণের বিশ্ববাজার। নতুন শুল্কহার ঘোষণার পর রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যায় প্রতি আউন্স (৩ হাজার ১৬৭ ডলার) স্বর্ণের দাম। তবে এরপরই বড় পতন দেখে স্বর্ণের বিশ্ববাজার। বর্তমানে বিশ্ববাজারে দাম কমে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১৪ ডলারে। বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে। এর আগে, সবশেষ গত ২৮ মার্চ দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় ভরিতে ১ হাজার ৭৭৩ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি। ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৯ হাজার ১৬৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৬ হাজার ৫৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছিল গত ২৯ মার্চ থেকে।এ নিয়ে চলতি বছর ১৮ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো স্বর্ণের দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ বার, আর কমেছে মাত্র ৫ বার। আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার। স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

১৩০০ কোটি টাকার সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ পেয়েছে ‘শপআপ’
বাংলাদেশের বৃহত্তম বিটুবি কমার্স প্ল্যাটফর্ম শপআপ ও গালফ অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় বিটুবি মার্কেটপ্লেস ও সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম সারি জোট বেধে গঠন করলো সিল্ক গ্রুপ। এর ফলে এশিয়া ও গালফ অঞ্চল মিলে গঠিত হল একটি অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম, যা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে উঠা ভোক্তা বাজারকে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। যাত্রার শুরুতেই সিল্ক পেয়েছে সৌদি সরকারের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ তহবিল পিআইএফের সানাবিল ইনভেস্টমেন্ট ও পিটার থিয়েলের ভালার ভেঞ্চারসের কাছ থেকে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। এর মধ্যে রয়েছে ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট ও সিল্ক ফাইন্যান্সিয়ালের জন্য অর্থায়ন সুবিধা। এই বিনিয়োগ এসএমই ভিত্তিক জিডিপি বৃদ্ধির মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে। শপআপ ও সারি এখন পর্যন্ত ছয় লক্ষাধিক খুচরা বিক্রেতা, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এবং পাইকারদের সেবা দিয়েছে, যা থেকে উপকৃত হয়েছে লক্ষ লক্ষ খুচরা ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার। যৌথভাবে তাদের প্ল্যাটফর্মে ইতোমধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি লেনদেন হয়েছে এবং এমবেডেড ফাইন্যান্স হিসেবে ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থছাড় হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা বাজারে ১০ কোটি পণ্য সরবরাহ করেছে। এই সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে সিল্ক এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যা আর্থিক, বাণিজ্যিক, এবং লজিস্টিক পরিষেবা দিয়ে ব্যবসায়ে দক্ষতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। একীভূত হওয়ার পরেও শপআপ ও সারি তাদের নিজ নিজ ভৌগোলিক অঞ্চলে নিজস্ব নামেই কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তবে সিল্কের অবকাঠামো ব্যবহার করবে উভয় প্রতিষ্ঠানই। পাশাপাশি, সিল্ক ফাইন্যান্সিয়ালকে গ্রুপটির অর্থায়ন শাখা হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যা দুই দেশের বাজারেই এমবেডেড ফাইন্যান্সিং এবং পয়েন্ট-অব-সেলস (পিওএস) ব্যবসায়ের স্কেল বাড়াবে। শপআপের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আফিফ জামান সিল্ক গ্রুপ সিইও পদে থাকবেন ও শপআপের সহ প্রতিষ্ঠাতা আতাউর রহিম চৌধুরী শপআপ (বাংলাদেশ) সিইও হিসেবে এ অঞ্চলের সকল ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন। ‘সারি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোহাম্মদ আলদোসারি হবেন সিল্ক ফাইন্যান্সিয়ালের সিইও। আফিফ জামান বলেন, ‘এই জোট তৈরির মাধ্যমে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক করিডোরগুলোর একটিতে প্রবেশ করছি, যার আকার ৬৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই অঞ্চলের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ও ভোক্তাদের কাছে আমরা বৈশ্বিক পণ্য পৌঁছে দিতে পারব - ভবিষ্যতের বৈশ্বিক বাজারে সিল্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।’ মোহাম্মদ আলদোসারি বলেন, ‘আমাদের শক্তিগুলো একত্রিত করে আমরা শুধু আমাদের ব্যবসায়ের পরিসর বাড়াচ্ছি না - বরং গালফের ব্যবসায়ী ও দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদকদের জন্য ডিজিটাল বাণিজ্যের সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছি। এই অংশীদারিত্ব দুই দেশের বিস্তৃত আঞ্চলিক অভিজ্ঞতা ও বিশ্বমানের প্রযুক্তির মত সেরা দিকগুলোকে একত্র করেছে। এর ফলে আমাদের ইকোসিস্টেমের প্রতিটি ব্যবসায় উপকৃত হবে যার মূল উপাদান হিসেবে থাকবে আর্থিক সেবা।’ ভালার ভেঞ্চারসের প্রতিষ্ঠাকালীন পার্টনার জেমস ফিটজজেরাল্ড বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি চমকপ্রদ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার গল্প রয়েছে। এই একীভূত হওয়া একটি সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন; যা এই বাজারগুলোকে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত একটি নতুন বাণিজ্যিক ইকোসিস্টেমের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করবে। একদল সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সিল্ক গঠিত হয়েছে। সিল্ক এই অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে এই খাতকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সম্ভাবনা রাখে।’ সানাবিল ইনভেস্টমেন্টসের মুখপাত্র বলেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে সিল্ক একটি শীর্ষস্থানীয় বিটুবি কমার্স প্লেয়ারে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। এটি এমন একটি পূর্ণাঙ্গ প্ল্যাটফর্ম যা আর্থিক, লজিস্টিকস ও কমার্স সেবাকে একত্রিত করে বিটুবি ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করে। এই একীভূত হওয়ার মাধ্যমে সিল্ক’-এর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। এটি যেন সব অংশীজনের জন্য উপকার বয়ে আনে সেজন্য আমরা কোম্পানির নেতৃত্বকে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ সিল্কে বিনিয়োগ করেছেন সৌদি আরবের সরকারী বিনিয়োগ তহবিল পিআইএফের সানাবিল ইনভেস্টমেন্ট, পিটার থিয়েলের ভালার ভেঞ্চারস, কুয়েতের পিআইএফএসএসের মালিকানাধীন ওয়াফরা ইনভেস্টমেন্ট, কাতার সরকারের মালিকানাধীন কাতার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আরও অনেকে। ভবিষ্যতে কাতারে সম্প্রসারণেরর মাধ্যমে সেখানকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছেও নিজেদের সেবা পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সিল্ক’-এর।

চলতি বছর ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক: বিডা
ব্রিক্স দেশগুলোর (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) প্রতিষ্ঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) চলতি বছর বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) হোটেল ইন্টার কন্টিন্টোলের রুপসী বাংলা হলে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫ এর ২য় দিনের সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বাংলাদেশে সোমবার (০৭ এপ্রিল) চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৬ শতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। জানা গেছে, সোমবার সম্মেলনের প্রথম দিন দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠানটি হয়েছে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যায়। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইতে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ঢাকায় ফিরে আসে তারা। সম্মেলনের ২য় দিন মঙ্গলবার সকালের দিকে বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা সেখানের কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখেছেন। বুধবার (৯ এপ্রিল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়া সারাদিনই একাধিক (৩-৪টা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিছু বিনিয়োগকারীকে পুরস্কৃত করা হবে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। একইসঙ্গে কিছু সংখ্যক বিদেশি বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। পরবর্তীতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন। দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।

বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের আগ্রহ দ. কোরিয়ার
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এ প্রচেষ্টায় সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা। আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সং-এর নেতৃত্বাধীন কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদল। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য যেকোনো বিনিয়োগ-সম্পর্কিত উদ্বেগ দূর করতে এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ দ্রুততর করার জন্য একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন। প্রতিনিধিদলে এলজিসহ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল, ফ্যাশন, স্পিনিং, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সোমবার প্রতিনিধি দলটি চট্টগ্রামে অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) পরিদর্শন করে। ইয়াংওয়ান করপোরেশন পরিচালিত এই শিল্প পার্কে তাৎক্ষণিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলছি, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ সহজ এবং ঝামেলামুক্ত।গত ১৬ বছরে যেসব কঠিন সময় গেছে, আমরা সেই ক্ষতিপূরণ এখন দিতে চাই। আমাদের দায়িত্ব হলো আপনাদের জন্য পথকে মসৃণ করে তোলা।’ শ্রম, শিল্প, জ্বালানি ও বিনিয়োগ নীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। কিহাক সং ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসেন।প্রধান উপদেষ্টার ব্যবসাবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো দেশের ব্যবসার সামগ্রিক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।’ ড. ইউনূস বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশকে আপনার ব্যবসার গন্তব্য এবং অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে ভাবুন। আপনারা কোটি কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেন।’ কিহাক সং জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইয়াংওয়ান করপোরেশন চট্টগ্রামে একটি টেক্সটাইল ও ফ্যাশন কলেজ স্থাপন করবে, যা দেশের টেক্সটাইল খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে সহায়ক হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে প্রধান উপদেষ্টার লেখা চিঠিরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘চিঠিটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে লেখা হয়েছে।’ (মার্কিন শুল্কারোপের কারণে) তিনি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। কোরিয়ান ফ্যাশন ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের সরবরাহ শৃঙ্খল অত্যন্ত দক্ষ এবং সমন্বিত। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পও দ্রুত বিকাশমান। বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে দেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। একজন বিনিয়োগকারী এখানে একটি এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) প্ল্যান্ট স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলে থাকা একজন শীর্ষ কোরিয়ান সার্জনকে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেন অধ্যাপক ইউনূস। বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক কো-অর্ডিনেটর লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন। তারা সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক নীতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে ফিনল্যান্ডের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট (ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) জারনো সিরিয়ালাবাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে ফিনল্যান্ডের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট (ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) জারনো সিরিয়ালা। ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ফিনল্যান্ডের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট (ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) জারনো সিরিয়ালার নেতৃত্বে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এই আহ্বান জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। এ সময় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তারা। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের উত্তম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বিশেষ করে সৌরশক্তি ও বায়ু শক্তি উৎপাদনে ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারে।’ এ সময় তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের এনগেজমেন্ট বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ফিনল্যান্ডের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট (ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) জারনো সিরিয়ালা বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান ও ভারতের দিল্লিতে নিযুক্ত ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কিম্মো লাহেদিভিরতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।