বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের আয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে: গভর্নর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৭:৫২ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, জিডিপিতে বিদেশি সহায়তার অংশ কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি এখন নিজস্ব সম্পদ আহরণের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর এক হোটেলে কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার: ড্রাইভিং ডেভেলপমেন্ট উইথ মার্কেটস, ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, “আমাদের নিজস্ব সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যা করা পুরোপুরি সম্ভব।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তখন জিডিপির ১২ থেকে ১৪ শতাংশ আমরা বিদেশি সহায়তা হিসেবে পেতাম। এখন সেই হার অনেক কমে এসেছে। তাই আমাদের নিজের অর্থ জোগাড় করতে হবে।”
রাজস্ব আহরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখনও রাজস্ব সংগ্রহে অনেক পিছিয়ে আছে। সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের ধর্মঘট এর নেতিবাচক প্রভাব দেখিয়েছে। তারা মূলত বিদ্যমান অবস্থান ধরে রাখতে চেয়েছিল। তবে এটি কোনো সমাধান নয়। আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। ভারত যদি জিডিপির ১৮-২০ শতাংশ, নেপাল যদি ২০ শতাংশের বেশি রাজস্ব তুলতে পারে, তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?”
গভর্নর আরও বলেন, “বিদেশি অর্থায়ন শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (ওডিআই) মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বেসরকারি খাতেও এ ক্ষেত্রে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাও অনেক বেশি।”
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রথমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। দাম স্থিতিশীল না হলে কিছুই সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, যা বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমাদের একটি ধাপে ধাপে পরিকল্পনা রয়েছে, যা বাস্তবায়নে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। তবে এটি সম্ভব এবং আমরা করব।”
ড. মনসুর নতুন উদ্ভাবন ও আর্থিক শিক্ষার প্রসারকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঋণ গ্রহণে স্বচ্ছতা বাড়ানো হচ্ছে এবং ব্যাংকবহির্ভূত জনগোষ্ঠীর কাছে সেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা চলছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণও এখন ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) চালু হয়েছে এবং ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় চার হাজার ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বিকাশের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।”