নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা


নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা

বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। শিগগিরই আবেদন আহ্বান করা হবে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে আগামী ২৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় আলোচনা হবে।

এর আগে, গত ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় কিছু সদস্য ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় নতুন কোনো ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন না দেওয়ার পক্ষে মত দেন। পাশাপাশি, আগের সরকারের সময় অনুমোদন পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংক ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তথ্য না থাকায় তাদের লাইসেন্স অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে, ২০২৩ সালের জুনে নগদ ব্যাংক পিএলসিকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে ২০২৩ সালের আগস্টে নগদ ও কড়ি ব্যাংককে এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) দেওয়া হয়। তবে সরকারের পতনের পর অভিযোগ ওঠে, বিদেশে পাচার করা অর্থে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মাধ্যমে এসব ব্যাংকের মালিকানা গড়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ ব্যাংকের লাইসেন্স স্থগিত করে। আর কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক এখনও লাইসেন্স পায়নি।

জানা গেছে, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনায় যে অবকাঠামো প্রয়োজন, তা বাংলাদেশে এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে, বর্তমানে কয়েকটি ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালক নতুন আবেদন আহ্বানের বিষয়ে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবু, বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভার এজেন্ডায় রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে যেভাবে ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল রাজনৈতিক প্রভাবাধীন। নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানায় যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত পাঁচটি কোম্পানির সম্পৃক্ততা রয়েছে— ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড (সিঙ্গাপুর), ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস, অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স, জেন ফিনটেক ও ট্রুপে টেকনোলজিস (যুক্তরাষ্ট্র)। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে তথ্য জানতে ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, ঠিকানা, মালিকানা কাঠামো, নাগরিকত্ব, কর-পরবর্তী নিট মুনাফা, সম্পদ ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির তথ্য চাওয়া হয়।

একই রকম সমস্যায় পড়েছে প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি। সরকার পরিবর্তনের পর প্রতিষ্ঠানটি এখনও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্ম পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নিতে পারেনি। কড়ির মালিকানা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত চারটি কোম্পানির হাতে, যাদের তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি। কড়ির প্রধান উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান টেকনোহেভেন, যার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম, সাবেক অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্বামী।

ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২৩ সালে। ওই বছরের ২০ জুন আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মোট ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। তিন ধাপে যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব পরিচালনা পর্ষদের সভায় পাঠানো হয়।

তবে নগদ ও কড়ি ছাড়া, স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংককে এলওআই দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে বিকাশ, ডিজি টেন এবং ডিজিটাল ব্যাংককে আলাদা ব্যাংক লাইসেন্স না দিয়ে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং’ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স–এর আবেদন বাতিল করা হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×