
নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী তারিনের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ
ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী তারিন হোসেনের নামে গুলশানে থাকা একটি ফ্ল্যাট, গ্যারেজ ও কমনস্পেস জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (২০ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম এ জব্দের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, মুজিবুর রহমান চৌধুরীর স্ত্রী তারিন হোসেনের নামে মোট ১০ কোটি ৩২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৮ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তকালে জানা যায়, মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী গুলশান আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা ৩ ছটাক জমির ওপর নির্মিত দি সেরেনিটি নামে দুটি বেজমেন্টসহ ১৩ তলা আবাসিক ভবনের ৭ম তলার (একটি গ্যারেজ ও কমনস্পেসসহ) সর্বমোট ৫১৭২ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট এবং অচিহ্নিত ১৭০ অযুতাংশ ভূমি রয়েছে। এই সম্পদ ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি বণ্টন চুক্তি মোতাবেক মজিবুর রহমান চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী মুনতারীন মুজিব চৌধুরীর নামে করা হয়। পরবর্তী সময় তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী তারিন হোসেনের নামে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়। যা মুজিবুর রহমান চৌধুরী তার অর্জিত অবৈধ অর্থ দ্বারা ক্রয় করেন। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের ব্যাংক হিসাবে তিন হাজার ১৬২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন এবং প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। পরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

নসরুল হামিদের ফ্ল্যাট-গাড়ি ও ৩৭ কোটি টাকা জব্দের নির্দেশ
সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের (বিপু) ঢাকায় ১টি ফ্ল্যাট, ৩টি অ্যাপার্টমেন্ট, ৩টি গাড়ি ক্রোক ও ৭০টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে ৩৭ কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪৭ টাকা রয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম এসব সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ চেয়ে আবেদন করেন। ক্রোক আদেশ হওয়া ফ্ল্যাটটি রাজধানী ঢাকার পরিবাগের প্রিয় প্রাঙ্গণে, আর তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট বনানীর পিপি টাওয়ারে। এসবের মূল্য ধরা হয়েছে, ৮৫ লাখ ৫ হাজার ৯৪৭ টাকা। দুদকের আবেদনে বলা হয়, নসরুল হামিদের নামে স্থাবর সম্পদ এবং অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তার অর্জিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর বা দলিল সম্পাদন বা অন্য কোনো পন্থায় মালিকানা পরিবর্তন বা হস্তান্তর করার সম্ভবনা রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নসরুল হামিদ এর নামে অর্জিত স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা আবশ্যক।

আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি জানা যাবে
জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালে গণহত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ তার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রতিবেদন দাখিলের পর জানা যাবে তার বিষয়ে তদন্ত শেষ নাকি আরও সময় প্রয়োজন। এর আগে, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মো. মিজানুর রহমান। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও গাজী এমএইচ তামিমসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর। আদালতে আসামির পক্ষে ওকালতনামা জমা দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। এ বিষয়ে ওইদিন শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। ২০ এপ্রিল সময় নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। এসব মামলায় গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্টে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। বিচারের জন্য আইন সংশোধন ও ভবন মেরামতের কাজও চলমান। গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ একশর বেশি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্যরা হলেন, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ সেলিম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ মামুন, ডিবি হারুন, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, সাবেক ডিএমপি হাবিবুর রহমান, সাবেক র্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আনাম সিদ্দিকী, সাবেক বিচারপতি মানিক, ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামসহ ৪৬ জন।

আজ ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনের হাজিরা
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ ১৬ আসামিকে হাজির করার জন্য আজকের দিন নির্ধারিত রয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ ১৬ আসামিকে হাজির করার জন্য আজ ২০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ। তবে কয়টার সময় তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হবে সেটি নিশ্চিত করেননি তিনি। এরও আগে গত ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ ১৬ আসামিকে হাজির করার জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটরের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর এই আদেশ দেন। এর আগে ওইদিন সকালে গ্রেফতার সাবেক ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ ১৬ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। যাদের হাজির করা হয়েছে তারা হলেন- আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর ১৬ জনের মধ্যে ৯ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে ওইদিন ১৩ জনকে কারাগারে পাঠান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালের কাছে আসামিদের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ জমা দেওয়ার জন্য দুই মাসের সময় চাইলে আদালত এক মাস সময় দেন। সে অনুযায়ী আসামিদের বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল।

ইন্টারপোলে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার আসামি বিদেশে পলাতক ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। শনিবার (১৯ এপ্রিল) পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। শেখ হাসিনা ছাড়া আরও যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

এবার এস আলমের ২৬১৯ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ
আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ১ হাজার ৩৬০টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ২ হাজার ৬১৯ কোটি ৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদনে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দিয়েছে। দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এতে দেখা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামিক ব্যাংক পিএলসির বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন হিসাবের অর্থ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন তারা। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আগে এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে টাকা উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়বে। ফলে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধ করা আবশ্যক, বলা হয় আবেদনে। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক, যার মধ্যে অন্যতম এস আলম গ্রুপ। চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, টাকা পাচার, আয়কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরিয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেন। এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে শেয়ার লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৯ অগাস্ট এস আলমসহ ৭ আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এক দিন বাদে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বলে, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে তারা। এরপর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪ টি শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়, যার মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। ২৩ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়। ১০ মার্চ এস আলমের ১ হাজার ৬ বিঘা জমি জব্দের আদেশ আসে। এক মাস পর ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেয় আদালত, যার দলিল মূল্য ৩২ কোটি ১০ টাকা। একই দিন এস আলমের ঘনিষ্ঠদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।

কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহারের নামে কুমিল্লার মনোহরপুরে থাকা ১৫ শতক জমি ও একটি বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। এছাড়া বাহার ও তার স্বার্থ- সংশ্লিষ্ট ২৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আবেদনে জব্দ হওয়া বাড়ি নির্মাণের বিনিয়োগ ১৬ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জমির মূল্য ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করা হয়। আবেদনে বলা হয়েছে, আসামি আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন পলাতক অবস্থায় স্থাবর সম্পদ বিক্রি এবং ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছেন। মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সম্পত্তিগুলো জব্দ এবং অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।

অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘নিউক্লিয়াস’ হাসিনা: কৌঁসুলি তামিম
জুলাই-অগাস্টের গণ অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুল গাজী এমএইচ তামিম। বুধবার ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি আবেদনের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই আইনজীবী বলেন, “জুলাই গণ অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নিউক্লিয়াস হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনার নির্দেশে সব ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। “উনার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলে ওই তদন্তের ভেতরে তার সহযোগীদের অনেকখানি তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এ কারণে শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত শেষ করে বাকিগুলো এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে, যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত বছরের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হত্যার অভিযোগে বিভিন্ন থানায় ও আদালতে ডজন ডজন মামলা হতে থাকে। এর মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাইয়ে সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সময়ে গুমের অভিযোগেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে ট্রাইব্যুনালে। ইতোমধ্যে গণহত্যা, গুম, এবং শাপলা চত্বরে গণহত্যার তিন মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানালেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। কৌঁসুলি তামিম বলেন, “শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টপ কমান্ডারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক মামলা। এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং অপরাধ সংগঠনে তাদের ভূমিকা তদন্ত করা হচ্ছে, যা আইনের ভাষায় ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’ হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি, জুলাই-অগাস্টের ঘটনার বিভিন্ন স্থানের ওপর ভিত্তি করে কিছু মামলার তদন্ত চলছে। এর মধ্যে আশুলিয়া, রামপুরা এবং চানখারপুলসহ বেশ কয়েকটি স্থানের মামলা উল্লেখযোগ্য।” তিনি বলেন, “সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির মামলায় যারা গ্রেপ্তার বা পলাতক রয়েছেন, তাদের অনেকেই এরই মধ্যে ঘটনাস্থল কেন্দ্রিক মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। আর যেসব মামলায় নৃশংসতা বেশি, সেগুলোতে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ কারণে অন্যান্য মামলার তদন্ত কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। তবে এর মানে এ নয় যে মামলাগুলো থেমে আছে। প্রতিটি মামলার জন্য আলাদা তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে এবং তারা পৃথকভাবে তদন্ত পরিচালনা করছেন।” মহাখালীর মামলার প্রতিবেদন ২০ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মহাখালীতে ৫ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এই আদেশ দেয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন গাজী এমএইচ তামিম। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলা দাখিল করা হয়। এদিকে মোহাম্মদপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনসার সদস্য ওমর ফারুককে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২৭ এপ্রিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত সংস্থা।

চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার সেই যুবক রিমান্ডে
রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় এক প্রাইভেটকার থেকে ‘চাঁদা’ নেওয়ার ঘটনায় ভাইরাল ভিডিও'র সেই যুবক আশরাফুল আলমকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমএ আজহারুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এরআগে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক মো. মনির হোসেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ধানমন্ডি এলাকা থেকে আশরাফুলকে (২৩) আটক করে পুলিশ। এরপর তাকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার দেখায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরা এক যুবক রসিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। এ সময় প্রাইভেটকার মালিকের সঙ্গে ওই যুবকের কথা কাটাকাটি হয়। প্রাইভেটকারে বসা এক ব্যক্তি ওই যুবককে ‘মাস্তানি করার’ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তরে যুবক বলেন, ‘হ করতাছি, কোনও সমস্যা?’ এ সময় পাশে প্রাইভেটকার মালিকের স্ত্রী ওই যুবকের নাম জানতে চান। যুবক বলেন, ‘নাম দিয়ে কী হবে?’। ওই ভিডিওতে আরও দেখা যায়, প্রাইভেটকারের মালিক বলছেন, ‘রাস্তার ওপর গাড়ি রাখছিলাম, ওরে চাঁদা দিলাম। এরপর আমি দেখতেছি।’ এসময় গাড়ির ভেতর থেকে ভিডিও করা হচ্ছে দেখতে পেয়ে ওই যুবক চুল নাড়িয়ে বলেন, ‘চেহারাটা সুন্দর করে আইছে। একটা চুলও বাঁকা করতে পারবা না।’ এরপর যুবকটি সেখান থেকে চলে যান। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে অজ্ঞাতনামা এক প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা আদায়ের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হলে জনমনে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। গোপন সূত্রে জানা যায়, সে দীর্ঘ দিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে। পরবর্তীতে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক ইমরান হোসেন ৩৮৫ ও ৩৮৬ ধারায় তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।

তরুণীকে মারধর: আপন কফি হাউজের দুই কর্মচারী রিমান্ডে
ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসানের আদালতঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসানের আদালত রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলায় ‘আপন কফি হাউজে’ এক তরুণীকে মারধরের ঘটনায় কফি হাউজের দুই জনকে একদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিরা হলেন- আপন কফি হাউজের ম্যানেজার আল আমিন ও কর্মচারী শুভ সূত্রধর। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান এ আদেশ দেন। এর আগে আসামিদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রামপুরা থানার উপপরিদর্শক মো. মহসিন। আদালতে আসামিপক্ষের একাধিক আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১১ এপ্রিল খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় ক্যাফের সামনেই ওই দুই কর্মচারী এক তরুণীকে লাঞ্ছিত করেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আপন কফি হাউজের সামনে এক তরুণীর সঙ্গে প্রথমে খারাপ আচরণ করছেন ক্যাফের কর্মচারী। পরে লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করতে দেখা যায়। পরে এ ঘটনায় গতকাল তাদের আটক করে আজ ১৫ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ও ৩২৩ ধারায় মামলা দেয় রামপুরা থানা পুলিশ। মামলার সূত্রে জানা গেছে, আপন কফি হাউজে গত ১১ এপ্রিল বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আসামিরা তরুণীকে লাঠি দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।

গুলশানের ফ্ল্যাট দখল : মামলার আসামি টিউলিপসহ ৩
অবৈধ সুবিধা নিয়ে রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আসামিরা হলেন- টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেন। এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ পারিতোষিক হিসাবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে গুলশান-২ এর ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং বি/২০১, বাড়ি নং ৫এ ও ৫বি (পুরাতন), বর্তমানে- ১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নং ৭১) দখল নিয়ে ও পরে রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ বা প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব সাত সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক আটটি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। যা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

৭১ টিভির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যায় উসকানি দেওয়ার ঘটনায় ৭১ টেলিভিশন ও মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালসহ দুজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অপর আসামি হলেন- ৭১ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মোস্তফা। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মুশফিকুর রহমান এ অভিযোগ দাখিল করেন।

হাসিনা-জয়সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
রাজধানীর পূর্বাচলে প্লট অনিয়মের অভিযোগে দুদকের পৃথক দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের দেওয়া চার্জশিট আমলে গ্রহণ করে আসামিরা পলাতক থাকায় এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম মামলায় গৃহায়ন ও রাজউকের কর্মকর্তাসহ মোট আসামি ১২জন। জয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা এবং গৃহায়ন ও রাজউকের কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য শফি উল হক। দুদকের আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেফতার করা গেলো কি না সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য ২৮ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। মামলার এজাহারে বলা হয়, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ মালিকানায় ও তার ছেলে, মেয়ে, বোন, বোনের মেয়ে ও বোনের ছেলের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করেন এবং পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন-বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করেছেন। তার দফতরসহ প্রকল্পের বরাদ্দবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করে নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ও বহাল থাকা অবস্থায় নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের অতি মূল্যবান কূটনৈতিক এলাকায় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ৯ নম্বর প্লট নিজ নামে বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিমূলে গ্রহণ করে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন আসামিরা। গত মাসের প্রথমার্ধে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। গত ১০ এপ্রিল প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন একই আদালত। ১৩ এপ্রিল একই আদালত ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে ৩০ কাঠা প্লট গ্রহণের পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ ৫৩ বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

১১৭ বারের মতো পেছালো সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১১৭ বারের পিছিয়ে আগামী ২১ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য থাকলেও এদিন তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম প্রতিবেদনের জন্য নতুন এই দিন ধার্য করেন। আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে সরিয়ে দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।

টিকটকার হুর-ই জান্নাতের স্বামী তোহা কারাগারে
ফেসবুক ও টিকটকে জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রমোশন করার অভিযোগে দায়ের করা সাইবার আইন ও প্রতারণার মামলায় টিকটকার তোহা হোসাইনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে তোহাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মিরপুর মডেল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রোববার (১৩ এপ্রিল) টিকটকার তোহা হোসাইন (২২) ও তার স্ত্রী হুর-ই জান্নাতের (১৯) নামে মিরপুর থানায় সাইবার সিকিউরিটি আইন ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলার পর সোমবার তোহাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তোহা হোসাইনের ফেসবুক পেজ ও টিকটকের আইডি থেকে জুয়ার সাইট প্রমোশন করে অল্প টাকায় অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে যুব সমাজকে জুয়া ও অনৈতিক আয়ে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। তার প্রমোশন করা আইডির মাধ্যমে প্রলুব্ধ হয়ে যুব সমাজ ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ প্রতারিত হয়ে অল্প টাকায় অধিক মুনাফার আশায় সর্বস্ব হারিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির
জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে হত্যার পর তাদের মরদেহে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফীসহ তিন কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বাকি দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম ও সাবেক ডিবি পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। গত ৮ এপ্রিল প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারিক প্যানেল তাদের ১৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে হাজির করার আদেশ দেন। এদিন ট্রাইব্যুনালে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। সেই সময় প্রসিকিউট বি এম সুলতান মাহমুদসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। লাশ পোড়ানোর নৃশংস ঘটনার বিষয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন লাগিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। যখন এসব মরদেহে আগুন দেয়া হচ্ছিল, তখন একজন জীবিত ছিলেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হয়।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিনেত্রী ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমের ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রোববার (১৩ এপ্রিল) বিচারপতি রাজিক আল জলিলের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইনজীবী জাহেদ ইকবাল। এর আগে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিনেত্রী ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমের ৩০ দিনের আটকাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মেঘনা আলমের বাবা এ রিট দায়ের করেন। গত ১০ এপ্রিল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে রাখার আদেশ দেন আদালত। গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেঘনা আলমকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। পরে আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে তাকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদেশে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(এফ) ধারায় জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার পরিপন্থি ক্ষতিকর কার্য থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। পরে মেঘনা আলমকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাকে ৭ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন চেম্বার আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (১৩ এপ্রিল) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হজ। এর আগে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নার আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। গত ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জানা যায়, গত ১৫ মার্চ রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে ঘুরাঘুরি করার সময় সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী শারমিন তামান্নার ফেসবুক লাইভে এসে দেওয়া একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়।৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তামান্নাকে বলতে শোনা যায়, ‘কাড়ি কাড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে (স্বামী) নিয়ে আসবো।’ ওই ভিডিওতে প্রতিপক্ষ গ্রুপকে হুমকিও দিয়েছেন শারমিন। বলেছেন, ‘খেলা শুরু করছো তোমরা, শেষ করবো আমরা।’ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ তাকে ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন। গত ২৯ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশ কমিশনার। তার আগের দিন সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। এতে দুই আরোহী নিহত হন। ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ও সাজ্জাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার জেরে তার অনুসারীরা সরোয়ারের সহযোগীদের ওপর হামলা চালান বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে পুলিশ। এ ঘটনায় গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় নিহত বখতিয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাবন্দি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে হুকুমের আসামি করা হয়।

দুদকের মামলায় খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালুকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, তার বিরুদ্ধে এ মামলার কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। আর তার অবৈধ সম্পদ যদি থাকে, সেটা তো অবরুদ্ধ করতে হতো। সেটাও তো করা হয়নি। সুতরাং এ মামলা থেকে তাকে খালাস দেওয়া হলো। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমদ আলী সালাম এ তথ্য জানান। এদিন স্ত্রীসহ আদালতে উপস্থিত ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। রায়ের পর তিনি হাসিখুশি মেজাজে নেতাকর্মীদের অভিনন্দন গ্রহণ করেন। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। সাবেক সংসদ সদস্য ফালুর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৮ জুলাই মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক। এরপর ২০১৮ সালের ২৭ অগাস্ট মামলাটির অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এর পাঁচবছর পর ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, দুদকের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পেয়ে ২০০৭ সালের ১ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব দাখিল করেন ফালু। এ নিয়ে তদন্তে তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ৪৫ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮৬৬ টাকার সম্পদ এবং ১০ কোটি ৬০ লাখ ৪২ হাজার ৫১৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পায় দুদক। ২০০৪ সালে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ফালু ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। পরে আওয়ামী লীগ সরকার থাকার সময় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

দীপু মনি ও স্বামীর ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধ
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির ১৮টি এবং তার স্বামী তাওফিক নেওয়াজের ৪টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ছয় কোটি ১৭ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭১ টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। যার মধ্যে দীপু মনির ১৮টি হিসাবে রয়েছে ছয় কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৬ টাকা। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুদকের আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবসমূহে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। তারা অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন মর্মে তদন্তকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।

সাবেক এমপি হাবিবের ৩১০ কোটি টাকা লেনদেন, দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও ব্যাংকে বিপুল পরিমাণে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা -১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকারও বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা নিজ ভোগ দখলে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও তার নিজনামীয় ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ২৮টি ব্যাংক হিসাবে ৩১০ কোটি টাকারও বেশি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আন্দোলনে শামীম হত্যার মামলায় কারাগারে মোরশেদ আলম
সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে ঢাকার ধানমন্ডিতে মো. শামীম নামে কিশোরকে হত্যার মামলায় বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি মোরশেদ আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই শাহীন মিয়ার আবেদনে বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজা তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নোয়াখালী-২ আসনের তিনবারের এমপি মোরশেদ আলমকে মঙ্গলবার রাতে গুলশান-২ থেকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করলে আসামিপক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করে বলেন, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নাই। জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “আসামি ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী। হাসিনার আনুকূল্য নিয়ে ভোট চুরি করে নিজেকে এমপি ঘোষণা করেন। হাসিনা যখন এমপি, মন্ত্রীদের নিয়ে মিটিং করে আন্দোলন দমাতে নির্দেশ দেন, তখন এ আসামি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শুধু তিনি না, সব এমপি-মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। ষড়যন্ত্র করেন। “তারা মানুষের অধিকার হরণ, আয়নাঘর সৃষ্টি, ভোট হরণ, নির্বাচনের নামে তামাশা, রাতে ভোট করে বাংলাদেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে তৈরি করতে তারা সহযোগিতা করেছে। তাদের পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তারা ব্যবসায়ী। আমার প্রশ্ন এরা কেন রাজনীতিতে আসবেন। তাদের উদ্দেশ্য সরকারি কর ফাঁকি, শুল্ক ফাঁকি, ঋণ ফাঁকি দিয়ে নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করানো। এসব কবে তারা ২০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছেন।” ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “তারা অবৈধ অর্থ আন্দোলন দমাতে সহযোগিতা করেছেন। হাসিনা, তার মন্ত্রী-এমপিরা সব পালিয়ে গেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি, এমনকি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ইমামও পালিয়ে গেছেন। তারা কেন পালিয়ে গেছেন? কারণ তারা অপরাধী। এ আসামিও আত্মগোপনে ছিলেন।” এ বক্তব্যের পর আসামি পক্ষে এক আইনজীবী বলেন, “তিনি আত্মগোপনে ছিলেন না। বয়স্ক অসুস্থ মানুষকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হসপিটালাইজড ছিলেন।” উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে মোরশেদ আলমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের গণআন্দোলনে ধানমন্ডিতে মো. শামীম নামে এক কিশোরকে হত্যার মামলায় মোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বিকালে আন্দোলন চলাকালে ধানমন্ডিতে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখানে দগ্ধ হন শামীম। পরদিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় পরে ৩ অক্টোবর তার মা জাহানারা বেগম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২৮ জনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন গ্রুপের অন্যতম কোম্পানি বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। গণমাধ্যম, খাদ্য পণ্য, সিমেন্ট, ইস্পাত, আবাসনসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে বেঙ্গল গ্রুপের। মোরশেদ আওয়ামী লীগের টিকেটে নোয়াখালী-২ আসন থেকে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

এস আলমের ৯০ বিঘা জমি জব্দ
আলোচিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব জমি চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী, ডবলমুরিং, কোতোয়ালি, পটিয়া, বাকলিয়া, বায়েজিদ, সীতাকুণ্ড, শ্রীপুর ও হাটহাজারী থানায় রয়েছে। এছাড়াও কিছু জমি রয়েছে গাজীপুর জেলার সদর থানায়। বুধবার (৯ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে উপপরিচালক তাহাসীন মুনাবিল হক এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সত্তা ও সত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আগে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীকালে সেটি উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের স্থাবর সম্পত্তিগুলো জরুরি ভিত্তিতে জব্দ করা প্রয়োজন। গত বছরের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একই আদালত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এস আলমের ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত। এছাড়াও গত ১২ ফেব্রুয়ারি এস আলমের ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের আট হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। গত ১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।

বুঝলাম না, আমি কোন পক্ষের লোক: আদালতে তুরিন আফরোজ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়ালেও তিনি নিজেই নিজের পক্ষে শুনানি করেন। আদালতে তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, আমি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করলাম— আবার তার আমলেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ৬ বছর ধরে চাকরি থেকে বঞ্চিত। বুঝলাম না আমি কোন পক্ষের লোক।’ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন দুপুর ১টার দিকে তুরিন আফরোজকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর ২টা ৩০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করার উদ্দেশ্যে হাজতখানা থেকে হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হাত কড়া পরানো হয়। ২টা ৪০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। কিছুক্ষণ পর বিচারক আসেন। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আব্দুল জব্বার নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কর্মকর্তা সুমন মিয়া আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে রাষ্ট্র পক্ষের প্রসিকিউটর বলেন, ‘তুরিন আফরোজ বাংলাদেশে আলোচিত ও ঘৃণীত একজন মানুষ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে তাকে তুমুল বক্তব্য রাখতে আমরা দেখেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজম কায়েম করতে যারা সহযোগির ভূমিকা এবং সুপ্রিম কোর্টকে হাসিনার কলোনিতে পরিণত করার জন্য যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অন্যতম তুরিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে একটা ন্যাক্করজনক ঘটনা আমরা দেখেছি। সেখানে তিনি আসামিদের পক্ষে সুবিধা দেওয়ার জন্য টাকা গ্রহণ করেন। যার কারণে তাকে পাবলিক প্রসিকিউটর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের আইন সমাজের ওপর সাধারণ মানুষের যে আস্থা, সেটি নষ্ট করেছেন তুরিন আফরোজ। তার বিরুদ্ধে নীলফামারীর জলঢাকায়ও মামলা আছে। ৫ আগস্টের পর কিছু মানুষ পুনরায় দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। যে আসামিদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, তাদের মধ্যে তুরিন আফরোজ রয়েছেন। ’ এদিন তুরিন আফরোজের পক্ষে শুনানি করতে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন। তবে তুরিন আফরোজ জানান, তার আইনজীবী আছে। তখন বিচারক জানতে চান, কে আপনার আইনজীবী। তুরিন আফরোজ বলেন, ‘সাইফুল করিম।’ তবে তখন তাকে খুঁজে পাননি তুরিন আফরোজ। তখন তুরিন আফরোজ বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি আপনার অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চাই। আদালত তাকে অনুমতি দেন। তখন বিচারককে উদ্দেশ করে তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমি দুই, তিন, পাঁচ মিনিট, কতটুকু সময়ে শেষ করবো বললে ভালো হয়। বিচারক বলেন, বলেন আপনি।’ তখন তুরিন আফরোজ বলেন, ‘৪ আগস্ট আমার বিরুদ্ধে নীলফামারীতে মামলা। পরদিন ৫ আগস্ট ঢাকায় মামলা।’ তখন আদালত বলেন, ‘ঢাকায় মামলা হয়েছে ২৭ মার্চ। ঘটনা ৫ আগস্টের। নীলফামারীর তথ্য এখানে নেই।’ তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আচ্ছা, যাই হোক।’ আমার লার্নেড ফ্রেন্ড (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) সাংঘর্ষিক কথা বলেছেন। নীলফামারীতে ৪ আগস্ট এবং ঢাকায় ৫ আগস্টের ঘটনায় মামলা। মামলাগুলো ফেব্রিকেটেড। ৫ আগস্টের আগে পুরো সময় কোথায় ছিলাম সব ডকুমেন্ট দিতে পারবো। এসময় আমার টিউমারের অপারেশন হয়।’ তুরিন আফরোজ বলেন, ‘গত চার বছর আমি মিডিয়াতে কিছু বলিনি, কিছু লিখিনি। বলা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করলাম— আবার তার আমলেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ৬ বছর ধরে চাকরি থেকে বঞ্চিত। বুঝলাম না আমি কোন পক্ষের লোক।’ তিনি বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি আস্থাশীল। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। আপনি ২০ দিন দিলেও দিয়ে দেন। কারণ আমি জানি, আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমি ন্যায়বিচার পাবো।’ পরে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।