আদালতের ৫ তলায় যেতে লিফটে চড়তে চাইলেন ইনু-পলক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:১৫ পিএম, ০৪ আগস্ট ২০২৫

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাঁচতলায় উঠতে গিয়ে লিফট ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সোমবার সকালে শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ হত্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েন তারা।
ঢাকার কদমতলী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনু এবং সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ।
সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হাজতখানা থেকে তাদের আদালতে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সময় তিনজনের পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং মাথায় ছিল হেলমেট। আদালতের পঞ্চম তলায় উঠতে হবে জানতে পেরে ইনু ও পলক লিফট ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় ইনু বলেন, “আমার হার্টে সমস্যা। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারবো না।”
তবে শেষ পর্যন্ত লিফট ব্যবহারের অনুমতি না পেয়ে তারা পায়ে হেঁটেই উঠে যেতে থাকেন। তৃতীয় তলায় উঠে প্রথমবার বিশ্রাম নেন ইনু ও পলক। এরপর চতুর্থ তলায় আবারও কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। পুলিশ সদস্যরা তাদের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলেন।
প্রায় এক মিনিট বিশ্রামের পর তারা আবার হাঁটা শুরু করেন এবং সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে আদালতের কাঠগড়ায় পৌঁছান। সেখানে তাদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট এবং হাতকড়া খোলা হয়। এরপর তারা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন।
পলক জানতে চান পরিবারের খবর। তার আইনজীবীরা জানান, “সবাই ভালো আছে। ঠিকঠাক চলছে।” তিনি আরও একজন আইনজীবীর কাছে এলাকার মুরব্বিদের খবর নেন। তখন এক পুলিশ সদস্য বলেন, “এত কথা বলা যাবে না। এখনই কোর্ট শুরু হবে।” এতে পলক উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কে? আপনার পরিচয় কি?” পুলিশ সদস্য তখন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এ সময় আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি পলকের ব্যাকপেইন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যাকপেইনের ব্যথা প্রচুর। কারাগারে থেরাপি নেয়া হয়নি।”
একই সময়ে সাবেক মন্ত্রী ইনুকে কিছুটা দুর্বল দেখায়। তিনি তার আইনজীবী ও আত্মীয়ের সঙ্গে কিছু কথা বলেন। তবে রাশেদ খান মেননকে কাঠগড়ায় কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিচারক আদালতে প্রবেশ করেন। পুলিশ কদমতলী থানার মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। মাত্র দুই মিনিট পর, সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
আদালত শেষে এবার আর সিঁড়ি নয়, তাদের লিফটে করেই নিচে নামানো হয়। সাংবাদিকরা নানা প্রশ্ন করলেও কেউ কোনো বক্তব্য দেননি। কঠোর নিরাপত্তায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই তিনজনকে পুনরায় হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, গত বছরের ১৯ জুলাই তোলারাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ কদমতলী এলাকায় 'জুলাই আন্দোলনে' অংশ নেন। বিকাল ৪টার দিকে আসামিদের গুলিতে তার মুখে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। পরে ৮ নভেম্বর কদমতলী থানায় মামলা করা হয়। এজাহারে রাশেদ খান মেননকে ৭ নম্বর, ইনুকে ৮ নম্বর ও পলককে ৯ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ মামলায় ১৪ আগস্ট রাতে প্রথমে পলককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২২ আগস্ট মেনন ও ২৬ আগস্ট ইনুকে গ্রেপ্তার করা হয়।