শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার দায়ে ৬ মাসের সাজা, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:০৫ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত অবমাননার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসিনার বক্তব্য ভুক্তভোগী, সাক্ষী ও সংশ্লিষ্টদের হুমকি দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) প্রসিকিউশন সূত্র এই পর্যবেক্ষণের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানিয়েছেন, রায়ের কপি ইতোমধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ২ জুলাই এই মামলায় আদালত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে, মামলার অপর আসামি গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে দুই মাসের বিনাশ্রম সাজা প্রদান করা হয়।
প্রসিকিউটর তামিম বলেন, “ট্রাইব্যুনাল মনে করেছে যে শেখ হাসিনার বক্তব্য বিচারব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল। তার মন্তব্যে মামলার সাক্ষী ও ভুক্তভোগীরা ভয় পেতে পারেন। এমনকি, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার বিষয়েও তার কথোপকথনে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “যদি শেখ হাসিনা আবার এই ধরনের ‘হেইট স্পিচ’ ছড়াতে থাকেন, তাহলে তাকে আবারও আদালত অবমাননার মামলার মুখোমুখি হতে হবে।” আদালত এই ধরনের বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন। ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার এবং মামলার বাদী ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে এই সাজা প্রদান করা হয়।
এর আগে, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” পরে সিআইডি ফরেনসিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত করে যে ওই কণ্ঠস্বর হাসিনারই।
ট্রাইব্যুনাল এই বক্তব্যকে আদালত অবমাননাকর বিবেচনা করেছে। অভিযুক্তদের বারবার নোটিশের পরও হাজির না হওয়ায় ২ জুলাই রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে উল্লেখ রয়েছে, অভিযুক্তরা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বা গ্রেফতার হলে সাজা কার্যকর হবে।
উল্লেখযোগ্য, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাজা প্রদান করেছে। এছাড়াও, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। আগামী ১৭ আগস্ট ওই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।