
ডিএসই’র চেয়ারম্যানের সাথে ডিবিএর বৈঠক
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিএসইসি’র ৯৫৭তম কমিশন সভায় বহুল প্রতিক্ষিত দেশের পুঁজিবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের মেইনটেইন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করা, সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) হতে অর্জিত সুদ আয়ের ২৫ শতাংশ স্টক এক্সচেঞ্জের ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে জমা দিয়ে বাকি অর্থ ব্রোকাররা ব্যবহার করতে পারা, চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কমোডিটি মাকেট চালু এবং বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড-এর রাইট শেয়ার অনুমোদন বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ায় আজ (২৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম ডিবিএ’র সদস্যদের সাথে ডিএসই’র বোর্ডরুমে মিলিত হয়ে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান, কমিশনারবৃন্দ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহযোগীতার জন্য ডিএসই’র চেয়ারম্যান বিশেষ ধন্যবাদ জানান মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র পরিচালক মোঃ শাকিল রিজভী, মিনহাজ মান্নান ইমন, রিচার্ড ডি রোজারিও, ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সহ ডিবিএ’র পরিচালকবৃন্দ ও ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।বৈঠকে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, গতকাল বিএসইসির কমিশন সভায় ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপনাদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে বিও হিসাবের মেইনটেন্যান্স ফি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, ব্রোকারেজ হাউজ এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সিসি একাউন্টের ইন্টারেস্ট ব্রোকারদের ব্যবহার করা এবং চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কমোডিটি মাকেট চালুর প্রবিধানমালা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও গতকালের বৈঠকে বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড-এর রাইট শেয়ার অনুমোদিত হয়েছে। উল্লেখিত সুবিদাধি বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারে অনুকূল সাড়া পড়বে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও সার্বজনীন বিনিয়োগের ক্ষেএ তৈরী হবে বলে আশা করি৷জনাব মমিনুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চোধুরীর মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা রেখেছি যে আমাদের আগামী বাজেটে টার্নওভারের উপর অগ্রিম যে আয়কর রয়েছে তা ১ লক্ষ টাকায় ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা করার জন্য। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের ব্যবধান ন্যূনতম ১০% করা। ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীর জন্য সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া। ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারী থেকে কর্তনকৃত ডিভিডেন্ড ট্যাক্স চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচনা করা। ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড ট্যাক্সকে কর মুক্ত রাখা।পরে পুঁজিবাজারের এই ক্রান্তিকালে স্বল্পমেয়াদে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনার আহবান জানান ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। আলোচনায় ডিবিএ’র সদস্যবৃন্দ বর্তমান বাজার পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ এবং ভবিষ্যতে বাজারকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে ডিএসইর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট টিম গঠন, মার্কেট কমিউনিকেশন স্ট্রাটেজি প্রনয়ণ, তারল্য সংকট, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, পলিসি সাপোর্ট, নগদ উত্তোলনের সুবিধা দেওয়া, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, আইপিও পদ্ধতির সংস্কার (ডিজিটালাইজড), মন্দ আইপিও না আনা, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম পর্যালোচনা, বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা, নতুন বিনিয়োগকারী আনা, ডিএসই মনিটরিং কার্যক্রমে প্রযুক্তির অর্ন্তভূক্তি, টি+১ এবং ডে ট্রেডিং চালু, সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনা, প্রান্তিক পর্যায়ে শেয়ারব্যবসার সম্প্রসারণ, প্রাইমারি মার্কেটকে গতিশীল করা, আইপিও প্রসেসকে সহজিকরণের মাধ্যমে ভালো আইপিও আনার জন্য ডিএসই মার্কেটিং কার্যক্রম গতিশীল করা, জাতীয় বাজেটে বিশেষ প্রনোদনা সংযোজন করা, নেগেটিভ ইক্যুইটির সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন।ডিএসই’র চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের একটি বিশদ কমিউনিকেশন স্ট্রাটেজি তৈরী ও সে অনুযায়ী মার্কেট স্টেক হোল্ডারদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করতে হবে৷ সরকার, বিএসইসি, ডিএসই, ডিবিএ সবাই মিলে কিভাবে মার্কেটকে পজেটিভলি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ঈদ পরবর্তী সময়ে বাজার উন্নয়নে আমাদের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ, কিছু সম্ভাবনাময় কোম্পানি এবং বাংকের প্রধান নির্বাহীদের সাথে বৈঠক, তা আমরা পর্যায়ক্রমে করে যাবো। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভার্নমেন্ট ট্রেজারি বিল বন্ডের প্রাইমারি অকশনটা যেন স্টক মার্কেটের মাধ্যমে করা হয়, তার জন্য আমরা প্রস্তাব রেখেছি।পরিশেষে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়ন নিয়ে খুবই আন্তরিক৷ তাই বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হয়ে উত্সাহের সাথে ভালো শেয়ারে নতুন বিনিয়োগ করার আহবান জানান৷ তিনি উপস্থিত অতিথীবৃন্দদের মার্কেটের আস্থা বাড়াতে একযোগে কাজ করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান।

অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকগুলোকে ‘এআই’ প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত লেনদেনে কড়া নজরদারি এবং তদারকির জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট বুধবার (২৮ মে) এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত কোনও মার্চেন্ট বা গ্রাহক রয়েছে কিনা তা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, যাতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে অনলাইন জুয়ার সন্দেহভাজন লেনদেন শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা যায়। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত গ্রাহক বা মার্চেন্ট শনাক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, গ্রাহকদের মধ্যে অনলাইন জুয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও, ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে, যেসব মার্চেন্ট কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবসা নিবন্ধন করেছেন, তারা সঠিক ভৌগলিক এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন কিনা। এই পদক্ষেপ গ্রহণের সময় চলতি বছরের প্রণীত ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর বিধানগুলো অনুসরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনাটি অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

১ লক্ষ টাকা ইসলামী ব্যাংকে রাখলে মাসিক মুনাফা কত?
চলতি বছরে হাতে থাকা নগদ অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে নিরাপদে মুনাফা অর্জনের বিষয়ে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে ইসলামী শরিয়াহ্-ভিত্তিক ব্যাংকিং সিস্টেমে বিনিয়োগ করতে চাওয়া গ্রাহকদের জন্য "ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি" একটি জনপ্রিয় নাম। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—ইসলামী ব্যাংকে ১ লক্ষ টাকা রাখলে মাসে কত মুনাফা পাওয়া যায়? চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। দুই ধরণের স্কিম, ভিন্ন মুনাফা হার ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে মূলত দুটি ধরনের মুনাফাভিত্তিক স্কিম চালু রয়েছে: মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট স্কিম (মেয়াদী হিসাব) মুদারাবা মান্থলি প্রফিট ডিপোজিট স্কিম (মাসিক মুনাফা হিসাব) মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট স্কিম এই স্কিমে ১ লক্ষ টাকা ৬% বার্ষিক সম্ভাব্য মুনাফা হারে ব্যাংকে রাখলে: মাসিক মুনাফা: ৫০০ টাকা উৎসে কর (১৫%) কেটে হাতে পাবেন: ৪২৫ টাকা ৩ মাসে মুনাফা: প্রায় ২,১২৫ টাকা ৬ মাসে মুনাফা: প্রায় ৪,৩৭৮ টাকা ১ বছরে মুনাফা: প্রায় ৮,৯২৫ টাকা তবে, নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ না করে আগেভাগে ভাঙলে কোনো মুনাফা পাওয়া যাবে না। মুদারাবা মান্থলি প্রফিট ডিপোজিট স্কি এই স্কিমে তিন বছর বা পাঁচ বছরের জন্য টাকা রাখলে প্রতি মাসে মুনাফা পাওয়া যায়: ৩ বছরের জন্য (১১% সম্ভাব্য মুনাফা): মাসে মুনাফা: ৯১৬ টাকা কর কেটে হাতে পাবেন: প্রায় ৭৭৯ টাকা ৫ বছরের জন্য (১২% সম্ভাব্য মুনাফা): মাসে মুনাফা: ১,০০০ টাকা কর কেটে হাতে পাবেন: প্রায় ৮৫০ টাকা গুরুত্বপূর্ণ: যদি নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হবার আগেই টাকা উত্তোলন করেন, তবে ইতোমধ্যে প্রাপ্ত মুনাফার পরিমাণ মূল টাকা থেকে সমন্বয় করে কেটে নেওয়া হতে পারে। একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খোলার সময় নিচের কাগজপত্র সাথে নিতে হবে: গ্রাহকের ছবি ও পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, লাইসেন্স বা ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন) নমিনির পরিচয়পত্র ও ছবি সকল ডকুমেন্টস সত্যায়িত করতে হবে (ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার কাউন্সিলর কর্তৃক) অটো রিনিউ সুবিধা মেয়াদ শেষে ফিক্সড ডিপোজিট অটোমেটিকভাবে নবায়ন হয়। তবে গ্রাহক চাইলে লাভ উত্তোলন করে নিতে পারবেন, অথবা একাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারবেন। ইসলামী ব্যাংকে ১ লক্ষ টাকা রাখলে আপনি নির্দিষ্ট স্কিম অনুযায়ী মাসে ৪২৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা পেতে পারেন। তবে প্রতিটি স্কিমের শর্তাবলি ও মেয়াদ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সময় ব্যাংক মুনাফার হার পরিবর্তন করতে পারে, তাই হালনাগাদ তথ্যের জন্য নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করাই শ্রেয়। নোট: এই প্রতিবেদনটি সম্ভাব্য মুনাফার ভিত্তিতে তৈরি। সঠিক তথ্যের জন্য ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা শাখায় যোগাযোগ করুন।

দেশের মানুষের এখন মাথাপিছু আয় ২৮২০ ডলার
বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এই মাথাপিছু আয় এযাবৎকালের রেকর্ড। গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৩৮ ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার।আজ মঙ্গলবার বিবিএস ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাময়িক হিসাব দিয়েছে। মাথাপিছু আয় ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ আয়ের পাশাপাশি প্রবাস আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।বিবিএসের তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরের মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। গত অর্থবছরে তা আরো কমে ২৭৩৮ ডলার হয়। মূলত ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিবিএসের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য হয়। চলতি অর্থবছরের বিবিএসের মাথাপিছু আয় হিসাব করতে প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২০ টাকা ২৯ পয়সা। গতবার এই বিনিময় হার ধরা হয়েছিল ১১১ টাকা ৬ পয়সা।

দেশে মোট রিজার্ভ ছাড়াল ২৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার
দেশে মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, এখন দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে ছিল দুই হাজার ৫৬ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। তবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, দেশের মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত ২২ মে দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে ছিল দুই হাজার ২৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, দেশের মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৫৬৪ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গত ১৯ মে দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে ছিল দুই হাজার সাত কোটি পাঁচ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, দেশের মোট রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৫৪৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত ৭ মে দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে হয়েছিল দুই হাজার ২৯ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার ডলার। আর দেশের মোট রিজার্ভ হয়েছিল দুই হাজার ৫৬৭ কোটি ৭২ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এর আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় ১৮৮ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ।

দেশের ১৮-২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে: গভর্নর
দেশের ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তবে এসব ডকুমেন্টেড করা সময় সাপেক্ষ। এখন সেই কাজ চলছে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার বিএফআইইউর বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সময় বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যৌথ তদন্ত দল কাজ করছে। প্রয়োজনে আরও দল করা হবে।

পদত্যাগ করেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি
পদত্যাগ করেছেন বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, একান্তই ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। এখানে অন্য কোনো চাপ নেই। বোর্ড এটা গ্রহণ করেছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে আশা করছি তারা গ্রহণ করবে। সেলিম হোসেন ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি অ্যান্ড সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। টানা দুই দফা তাকে পুনর্নিয়োগ দেয় ব্যাংকটি। ২০২৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তার মেয়াদ ছিল। কিন্তু চাকরির ১০ মাস বাকি থাকতেই তিনি পদত্যাগ করলেন। বর্তমানে ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কর্পোরেট ও ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান তারেক রেফাত উল্লাহ খান ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আর্থিক বিবরনী সম্পর্কে ধারনা না থাকলে কোম্পানিগুলো নিয়ে ভাল রিপোর্ট সম্ভব নয়
আর্থিক বিবরনী সম্পর্কে একজন সাংবাদিকের ধারনা না থাকলে কোম্পানিগুলো নিয়ে ভাল রিপোর্ট করা সম্ভব নয়। আর্থিক বিবরণী সম্পর্কে সঠিক ধারণা কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের নিরপেক্ষভাবে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পেতে সহযোগীতা করবে বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, আর্থিক বিবরনী খুবই স্পর্শকাতর ও জটিল বিষয়। তাই এসব বিষয়ে অর্থনৈতিক সাংবাদিক ও পুঁজিবাজারে নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদেরকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ থাকা প্রয়োজন। দরকার সম্যক জ্ঞান। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) এবং পুঁজিবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) এর যৌথ উদ্যোগে 'ফরেনসিক এনালাইসিস অব ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বিআইসিএম-এর মাল্টিপারপাস হলে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বিআইসিএম-এর প্রভাষক ফাইমা আক্তারের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিআইসিএম-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুছ সালেহীন, সিএমজেএফ-এর সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভুইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী। প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন বিআইসিএম-এর প্রভাষক ইমরান মাহমুদ ও প্রভাষক মো. আদনান আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিআইসিএম-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুছ সালেহীন বলেন, এই ধরনের যৌথ কর্মশালা সিএমজেএফ'র সদস্যদের আরো বেশি সম্মৃদ্ধ করবে। যা তাদের পেশাগত জীবনে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। লেখার মানকে আরো উন্নত ও তথ্য সম্মৃদ্ধ করবে। সিএমজেএফ সভাপতি এস এম গোলাম সামদানি ভুইয়া বলেন, ফরেনসিক এনালাইসিস অব ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস' সম্পর্কে ধারনা থাকা সিএমজেএফসহ পুঁজিবাজার নিয়ে যারা সাংবাদিকতা করছেন তাদের জন্য জরুরী। সঠিক ধারনা না থাকলে সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে ভুল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কর্মশালা অবশ্যই পেশাগত কাজে অনেক কাজে দেবে। সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলী বলেন, সাংবাদিকদের মূল কাজ হচ্ছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা। সেটি নিশ্চিত করতেই ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের কাজ করে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন। এক্ষেত্রে জানার এবং প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার জন্য আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ জরুরি। আশাকরি আজকের কর্মশালা আমাদের পেশাগত কাজে বড় ভূমিকা রাখবে।

সিডিবিএলকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার দাবি
শেয়ারবাজারে ইলেকট্রনিক সিকিউরিটিজ ট্রেডিং, বিতরণ, হস্তান্তর এবং সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়ার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-কে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে পুঁজিবাজারের স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। তালিকাভুক্তির জন্য প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার সংঠনের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল গনি স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।ডিবিএ জানিয়েছে, সোমবার (২৬ মে) ডিবিএর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বরাবর তার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। একই চিঠির কপি যথাক্রমে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানকে প্রদান করা হয়। চিঠিতে ডিবিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিডিবিএল ২০ আগষ্ট ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কারিগরি সহায়তায় এবং জাতীয়করণকৃত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ (এনসিবি), ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ (পিসিবি) বিদেশী ব্যাংকসমূহ, মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ, পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিসমূহ, বীমা কোম্পানিসমূহ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের অর্থায়নে গঠিত হয়। তাই স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো সিডিবিএল’র মালিকানায় রয়েছে। সিডিবিএল গঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, প্রথমত: পেপার সিস্টেম থেকে ইলেকট্রনিক সিস্টেমে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশের সিকিউরিটিজ মার্কেটকে আধুনিকীকরণ এবং সুবিন্যস্ত করে এর দক্ষতা বৃদ্ধি, ঝুঁকি হ্রাস এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করা। দ্বিতীয়ত: কোনপ্রকার মুনাফালোভী উদ্দেশ্য ও মনোভাব ব্যতিরেকে স্টেকহোল্ডারদের সুবিধার জন্য কাজ করা, এবং তৃতীয়ত: সিডিবিএলকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করে বৃহত্তর জনসাধারণের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা। তবে, প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পার হয়ে গেলেও সিডিবিএল এখন পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জের অতালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটি তার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশা থেকে বিচ্যুৎ। যদিও সিডিবিএল-এর আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে ইস্যুয়ার কোম্পানি, স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার, কাস্টোডিয়ান, বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের কাছ থেকে। এমতাবস্থায়, সিডিবিএল যাতে তার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আরও কার্যকর অবদান রাখতে পারে এবং পুঁজিবাজারের অংশীজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মুনাফার অংশ ভাগ করে নিতে পারে, সে জন্যে অবিলম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে এর তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটি, বিএসইসি ও ডিএসই’র হস্তক্ষেপ ও নির্দেশনা চেয়েছে ডিবিএ।

এক হচ্ছে ছয় ইসলামী ব্যাংক
ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আলোকে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ছয়টি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্য নিয়ে গত জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই শুরু হয়, যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এখন ব্যাংকগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই ছয়টি ব্যাংক হলো– সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক মিলে একটি এবং এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক মিলে আরেকটি ব্যাংক করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে– এ রকম ১৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন কোনোমতে টিকে থাকা ব্যাংকগুলোকে আর সামনে না টেনে একটি সমাধানে আনতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যেই ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির কারণে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ছয়টি বেসরকারি ব্যাংককে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একীভূত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো একীভূত করে সাময়িক সময়ের জন্য সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, ছয়টি ব্যাংককে জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের মালিকানায় এনে প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়ে রেখেছে। তবে সরকারের হাতে ব্যাংকগুলো সাময়িক সময়ের জন্য থাকবে। এরপর পর্যাপ্ত মূলধন জোগান দিয়ে ব্যাংকগুলোর ভিত্তি শক্ত করা হবে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হবে। দেশে বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে ১০টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব ইসলামী ব্যাংক মিলে দুটি করা হবে, এমন নয়। গত জানুয়ারিতে যে ছয়টি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) বা সম্পদের গুণগত মান যাচাই শুরু হয়, সেগুলো নিয়েই দুটি ব্যাংক করার আলোচনা রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে খুব দুর্বল গ্লোবাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এক করে দেওয়া হতে পারে। এই তিনটি ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নের কাজ দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াংকে। অপর তিন ব্যাংকের মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে খুবই দুর্বল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করার আলোচনা রয়েছে। এই তিনটি ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়ন করছে আরেক বৈশ্বিক অডিটর কেপিএমজি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, সম্পদ যাচাই প্রক্রিয়ায় থাকা ছয় ব্যাংক নিষ্পত্তির শেষ ধাপে আছে। ব্যাংকগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সুপারিশ করা হবে। সেই সুপারিশের আলোকে ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলে আলোচনা করে এরপর সিদ্ধান্ত।

সিঙ্গাপুরে কমার্শিয়াল এসি রপ্তানি শুরু করছে ওয়ালটন
এবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে সর্বাধুনিক ও উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন চিলার টাইপ কমার্শিয়াল এসি রপ্তানি করছে গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন। এর মধ্য দিয়ে উন্নত দেশটির বাজারে সম্প্রসারণ হবে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস। এটি শুধু বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্যই এক বিরাট সুসংবাদ নয়; বিশ্ব দরবারে হাই-টেক পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সক্ষমতা প্রকাশের ক্ষেত্রেও এক বিরাট মাইলফলক। সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসে সিঙ্গাপুরের এয়ার কন্ডিশনিং খাতের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ফ্লেয়ার এমঅ্যান্ডই প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির এক ডিস্ট্রিবিউটরশিপ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় সিঙ্গাপুরে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের পরিবেশক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে ফ্লেয়ার এমঅ্যান্ডই। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকধাপে ওয়ালটন থেকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের চিলার টাইপ কমার্শিয়াল এসি নিচ্ছে। চুক্তিতে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাক্ষর করেন ফ্লেয়ার এমঅ্যান্ডই’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর টে ডেজহান চার্লস এবং ওয়ালটন হাই-টেকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এএমডি) ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. জিয়াউল আলম, এফসিএ, এসিএ (আইসিএইডব্লিউ)। সেসময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানে ফ্লেয়ার এমঅ্যান্ডই’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর টে ডেজহান চার্লস বলেন, “বাংলাদেশের টেক জায়ান্ট ওয়ালটনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের এই যৌথ পথ চলা শুরুর মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুরের ক্রেতারা বাংলাদেশি পণ্যের উচ্চ গুণগতমান সম্পর্কে জানতে পারবেন। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ড শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।” ওয়ালটন হাই-টেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, ফ্লেয়ার এমঅ্যান্ডই প্রাইভেট সিঙ্গাপুরের এয়ার কন্ডিশনিং খাতের স্বনামধন্য এক প্রতিষ্ঠান। তাঁদের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ওয়ালটনের চিলার এসি। এসব এসি তাঁরা সিঙ্গাপুরের সুউচ্চ স্থাপনাগুলোর এয়ার কন্ডিশনিং এ ব্যবহার করবে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের খ্যাতনামা মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওয়ালটনের চিলার এসি স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ। ওয়ালটন এবং ফ্লেয়ার এমঅ্যান্ডইর পথচলা অনেক দীর্ঘায়িত হবে এবং সিঙ্গাপুরের বাজারে উভয় প্রতিষ্ঠানই অত্যন্ত সফল হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। অনুষ্ঠানে ওয়ালটন এসির সিবিও মো. তানভীর রহমান জানান, আগে এক সময় সিঙ্গাপুর থেকে এসির বেসিক কাঁচামাল আমদানি করা হতো। এখন বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের বাজারে এসি রপ্তানি করবে ওয়ালটন। এটা শুধু ওয়ালটনের জন্যই নয়; বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত সম্মানের ও গর্বের বিষয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেকের এএমডি নজরুল ইসলাম সরকার ও মো. ইউসুফ আলী, চিফ মার্কেটিং অফিসার জোহেব আহমেদ, গ্লোবাল বিজনেস শাখার প্রধান আব্দুর রউফ প্রমুখ।

সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে দুর্বল ৬ ব্যাংক
দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সংস্কারের অংশ হিসেবে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে বেসরকারি খাতের ৬টি ব্যাংককে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে। এরপর ধীরে ধীরে আরও ১৮ ব্যাংককে সংস্কারের আওতায় আনা হবে। সোমবার (২৬ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রথম ধাপে সরকারের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া ৬ ব্যাংক হচ্ছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। গত দেড় দশকে লুটপাট আর অনিয়মে যে পরিমাণ অর্থ খোয়া গেছে, তা ইতিহাসে বিরল। এ কারণে ভয়াবহ অবস্থায় এক সময়ের ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোও। তুলনামূলক ছোট ব্যাংকের অবস্থা আরও খারাপ। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আসছে জুলাইয়ের মধ্যে এসব ব্যাংককে সরকারি মালিকানায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পুঁজি জোগান দেওয়া হবে। এরপর ভিত্তি শক্ত হওয়ার পর বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে।

নতুন নোটে ফুটে উঠেছে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি আরও ঘনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করতে বাজারে আনছে নতুন ডিজাইনের টাকার নোট। এসব নোটে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সব নোটে রয়েছে নতুন গভর্নর আহসান হাবিব মনসুরের স্বাক্ষর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশে আসছে নতুন ডিজাইনের টাকা। এসব টাকায় কোনো ব্যক্তির ছবি থাকছে না। এর বদলে থাকছে দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সাংস্কৃতিক প্রতীক। জানা গেছে, প্রথম ধাপে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হবে, যা পবিত্র ঈদুল আজহার আগেই – জুনের ২ অথবা ৩ তারিখের মধ্যে সাধারণ মানুষ হাতে পাবে। পর্যায়ক্রমে অন্য মূল্যমানের নোটও বাজারে আসবে। তবে এখনই সব নোট পুরোপুরি বাজারে না এলেও সীমিত পরিসরে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক অনুষ্ঠানে জানান, নতুন নোটে দেশের প্রকৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘নতুন ডিজাইনে কোনো ব্যক্তির ছবি রাখা হয়নি। নোটগুলোতে দেশের চিত্র ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে।’ জানা গেছে, নোটগুলো বাজারে ছাড়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নোট নিয়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ‘নতুন নোটের ডিজাইন কেমন হবে, তা গভর্নর স্যার আগেই জানিয়েছেন। এসব নোটে কোনো ব্যক্তির ছবি থাকছে না। বরং দেশের ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনকে গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ঈদের আগে – জুনের ২ বা ৩ তারিখের মধ্যে – ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে যাবে। ছাপার কাজ চলছে পুরোদমে। প্রথমে এই তিনটি নোট বাজারে আসবে, পরে ধাপে ধাপে অন্য মূল্যমানের নোট ছাড়া হবে। ইতোমধ্যে নতুন ডিজাইনের কয়েকটি নোটের ছবি সংগ্রহ করেছে, যেখানে সুন্দরবন, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতীক দেখা গেছে। এসব নোটে দেশের পরিচিতি ও গৌরবময় ইতিহাসের ছাপ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ১০০ টাকার নতুন নোটে সুন্দরবনের ছোঁয়া ১০০ টাকার নতুন নোটে এক পাশে রয়েছে বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ ও জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জলছবি। অপর পাশে দেখা যাবে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ‘সুন্দরবন’, যেখানে রয়েছে এক ঝাঁক হরিণ ও একটি বাঘের ছবি। সাদা অংশে বাঘের জলছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। ২০০ টাকার নোটে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতিফলন নতুন ২০০ টাকার নোটে হালকা হলুদ রঙে দেখা যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্য। অপর পাশে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় পোশাক ও উপাসনালয় সহ উপস্থাপিত হয়েছে। মাঝখানে সবুজের মধ্যে রয়েছে দেশের মানচিত্র। ৫০০ টাকার নোটে শহীদ মিনার ও সুপ্রিম কোর্ট নতুন ৫০০ টাকার নোটে একপাশে স্থান পেয়েছে জাতীয় চেতনায় অনন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। অপর পাশে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ছবি। ১০০০ টাকার নোটে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও সংসদ ভবন সবচেয়ে বড় মূল্যমানের ১০০০ টাকার নোটে একদিকে রয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, যা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। অপরদিকে রয়েছে জাতীয় সংসদ ভবন, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। নতুন ডিজাইনের এই নোটগুলো বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ।

রোববার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক চীন-বাংলাদেশ সম্মেলনে থাকবেন ইউনূস
আগামী ১ জুন রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ের বিনিয়োগ ভবনে চীন-বাংলাদেশ ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে চীনের ১০০ প্রতিষ্ঠানের ২৫০ বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে দেশের ও চীনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ এবং দেশে খাতভিত্তিক বিনিয়োগ সুবিধার বিষয়ে আলোচনার ব্যবস্থা থাকবে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ(এফডিআই) আকর্ষণ ও বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের বিনিয়োগ সুবিধা উপস্থাপন এ সম্মেলনের লক্ষ্য। সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সম্মেলনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও বাংলাদেশ সফর করবেন। এসময় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ও বিনিয়োগকারীরা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এলডিসি গ্রুপ পরিদর্শন করবেন। বিডা ও বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সম্প্রতি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রস্তুতিমূলক সভায় বলেন, চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তিতে দু’দেশের বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল। এ সম্মেলনে চায়না চেম্বার অব কমার্স ফর ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অব মেশিনারিজ অ্যান্ড ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টস (সিসিসিএমই), চায়না চেম্বার অব কমার্স ফর ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অব ফুডস্টাফস, নেটিভ প্রোডাক্টস অ্যান্ড অ্যানিমাল বাই প্রোডাক্টস(সিসিসিএফএন), চায়না চেম্বার অব কমার্স ফর ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অব টেক্সাটাইলস(সিসিসিটি), চায়না চেম্বার অব ইন্টারন্যাশনাল কমার্স ফর দ্য প্রাইভেট সেক্টরসহ(সিআইসিসিপিএস), জ্বালানি, যন্ত্রপাতি উৎপাদন, পরিবহন, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, খাদ্য, কৃষিপ্রযুক্তি, বস্ত্র, গৃহসজ্জা ও ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি খাতের বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করবেন।

সরকারি বিনিয়োগে সুশাসন জোরদারে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ আজ বলেছেন, বাংলাদেশ আর্থিক পরিষেবার দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সরকারি বিনিয়োগে সুশাসন জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তিনটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত: জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং নৈতিক সুশাসন। এগুলো কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়, বরং বাস্তব প্রয়োজন। মূল্যায়ন, নিরীক্ষা এবং অনুশীলন হলো সেই সব মাধ্যম, যা এই স্তম্ভগুলো নির্মাণে সহায়তা করে। এগুলো আমাদের নীতিমালা ও প্রকল্পগুলোকে কাগজে সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের জন্য বাস্তব ও দৃশ্যমান উপকারে পরিণত করে।’ অর্থ উপদেষ্টা রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়নের রূপান্তর: মূল্যায়ন, নিরীক্ষা ও নৈতিকতার মাধ্যমে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) স্বাধীন মূল্যায়ন অফিস (আইইও) অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ এবং সম্মতি ও তদন্ত বিভাগ যৌথভাবে উচ্চ পর্যায়ের সেমিনারটি আয়োজন করে, যেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির অগ্রাধিকার অর্জনের মূল স্তম্ভ হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে জবাবদিহিতা, মূল্যায়ন এবং সততা স্থাপনের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেমিনারে এনডিবির টেকসই উন্নয়নের কৌশল হিসেবে মূল্যায়ন, নিরীক্ষা এবং কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থার একীভূত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়। এতে ১৫০-এর বেশি অংশগ্রহণকারী, যার মধ্যে ছিলেন উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ। এটি উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি সক্রিয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অধীনে এশিয়া, জেইসি এবং এফএন্ডএফ-এর অতিরিক্ত সচিব ও উইং প্রধান স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং এনডিবি-র স্বাধীন মূল্যায়ন অফিসের (আইইও) মহাপরিচালক আশ্বিনী কে. মুথু সূচনা বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব মো. কামাল উদ্দিন এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘এনডিবি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বিশেষজ্ঞ ও অংশীদারদের উপস্থিতি সংলাপ ও জ্ঞান বিনিময়ের জন্য একটি মূল্যবান সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বৈশ্বিক সেরা চর্চাগুলো আমাদের প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করতে হবে।’ আশ্বিনী কে. মুথু বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে এনডিবি আগ্রহী।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ‘জাতীয় প্রকল্প মূল্যায়ন নীতি’ প্রণয়নের পথে রয়েছে। এই নীতিমালা চূড়ান্ত করতে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ একদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে উন্নয়ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দের মূল প্রবন্ধ তুলে ধরা হয়। সেমিনারটি বাংলাদেশ ও এনডিবির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ ২০২১ সালে এনডিবির সদস্য হয়, যা ছিল প্রথম কোনো নন-ব্রিকস দেশ। অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী উদ্যোগকে সামনে রেখে এ দিনের আলোচনায় সুশাসন, মূল্যায়নযোগ্যতা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের ওপর জোর দেয়া হয়। একইসাথে, এনডিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য এবং এসডিজির প্রতিশ্রুতির সহায়তায় অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

বাংলাদেশকে ২৭ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশকে ২৭ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ১২১ টাকা ৬০ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। রোববার (২৫ মে) নগরীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে এ ঋণচুক্তি সই হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ইআরডি জানায়, প্রকল্পটিতে মন্ত্রণালয়-বিভাগভিত্তিক ৫টি কম্পোনেন্ট রয়েছে। প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) বাস্তবায়ন করবে। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে এটি। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো গত আগস্টে বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, বাঁধ মেরামত এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তা ও পুনর্বাসন করা। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে এ ঋণ গ্রহণ করা হবে এবং গৃহীত ঋণ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের তোলা অর্থের ওপর বার্ষিক ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে। উত্তোলন না করা অর্থের ওপর বার্ষিক সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। তবে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরসহ দীর্ঘদিন ধরে কমিটমেন্ট ফি অব্যাহতি দিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা গভীর করেছে। বর্তমানে, বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জ্বালানি খাতের উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে ৪৭টি চলমান প্রকল্পের জন্য ১৩ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করছে।

এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেন্জ মোকাবেলা ও এফবিসিসিআই’র আসন্ন নির্বাচন
বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েট হওয়ার পর বাংলাদেশ অনেক গুলো নতুন চ্যালেন্জের মুখে পড়বে। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু এলডিসি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের পর এই সুবিধাগুলো আর থাকবে না। সম্প্রতি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত ‘Expanding and Diversifying Exports in Bangladesh: Challenges and the Way Forwards’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫.৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া এলডিসিভুক্ত হওয়ার কারণে ডব্লিউটিওর ‘Agreement on Trade Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS)’ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেধাস্বত্ব হিসেবে ওষুধ আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। ট্রিপস চুক্তি অনুযায়ী ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলো এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। অন্যদিকে কৃষিতে ভর্তুকি সুবিধা সীমিত করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নে প্রাধিকার থাকবে না। চ্যালেন্জ গুলোকে মোটাদাগে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি ১) বিভিন্ন দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারানো।২) মেধাস্বত্ত্ব আইন থেকে ছাড় রহিত করণ।৩) কৃষি,রপ্তানিসহ অন্যান্য খাতে বিভিন্ন ভর্তুকি রহিত করণ। এসকল সমস্যা গুলো সমাধানের প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। কেননা বিভিন্ন দেশের বিশেষত ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধীকার হারালে তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। তাছাড়া রপ্তানি ভর্তুকি উঠিয়ে দিলে অনেক রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাবে। সামগ্রিক রপ্তানি খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল প্রায় ১৪.২৩%। কৃষি খাত বাংলাদেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% কর্মসংস্থান সরবরাহ করে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষি খাতের উপর থেকে ভর্তুকি উঠিয়ে নিলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ সকল চ্যালেন্জ মোকাবেলার জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এফবিসিসিআই বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ও দেশের ৪.৫ কোটি ব্যবসায়ীদের অভিভাবক হিসাবে কাজ করে। বিগত দিনের থেকে এলডিসি গ্রাজুয়েট পরবর্তী বাংলাদেশ অর্থনীতি আরো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবে। বিগত ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থপাচার ও দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ খাদের কিনারায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এবং বিভিন্ন ঋণপ্রদান কারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত ভাবে কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে, বিশেষত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বৈদেশিক দেনা ছিল প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা টাকা। এখন তা নেমে ১০ হাজার কোটি টাকায় এসেছে। অর্থাৎ দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার। এরপরেও শিল্পে গ্যাস সংকট, বৈদেশিক বিনিয়োগ,কর্মসংস্হান কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা সরকারকে চ্যালেন্জের মুখে ফেলে দিয়েছে । স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য সংগঠনের অনেক ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ( মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ) এফটিএ করা জরুরি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুঁকিতে পড়বে, বিদ্যমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে অগ্রাধিকার মূলক বাণিজ্য চুক্তি ( পিটিএ) হলেও করা জরুরি। পোশাক রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগি দেশ ভিয়েতনামের প্রায় ৪০ টির অধিক দেশের সাথে এফটিএ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের কোন দেশের সাথে এফটিএ নেই শুধু ভুটানের সাথে পিটিএ রয়েছে। এফবিসিসিআই এর সাধারণ সদস্য তথা সন্মানিত ভোটাররা অনেক সচেতন । ব্যবসায়ী নেতৃত্বকে এমন টীম গঠন করতে হবে যেন আগামী দিনের বিশ্ববাণিজ্য ও বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেন্জ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে এবং সে সকল চ্যালেন্জ মোকাবেলা করার জন্য সরকারের সাথে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সহযোগী হিসাবে কাজ করতে পারে। কেননা এফবিসিসিআই এর সদস্যরা ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ব্যবসায়ী সমাজের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ক্ষতির মুখে পড়বে। আমাদের সকলের সততা, দায়িত্বশীলতা ও দেশপ্রেমই পারে আগামীর স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে। লেখক: আতিকুর রহমানআহবায়ক, মিডিয়া ও লিয়াজোঁ কমিটিবৈষম্য বিরোধী সংষ্কার পরিষদ (এফবিসিসিআই)

এনবিআরে কর্মবিরতি স্থগিত
আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সব সংশোধনীসহ অধিকাংশ দাবির বিষয়ে একমত হওয়ায় আন্দোলন স্থগিত করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। রোববার সন্ধ্যায় সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য ও এনবিআরের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেস রিলিজ দিচ্ছি আমরা। সরকার আমাদের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সব সংশোধন করার কথা বলেছে। আমরা কাজে যোগ দিচ্ছি। এর আগে রোববার বিকাল সোয়া ৬টার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২২ মে অর্থমন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রেসনোটে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সরকার আশা করেছিল যে, অধ্যাদেশের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট সার্ভিসের সব উদ্বেগের অবসান ঘটবে। কিন্তু এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সাম্প্রতিক প্রেস রিলিজ থেকে এ বিষয়ে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। যা আরও স্পষ্ট করা হয়েছে বিবৃতিতে। যেখানে বলা হয়েছে - এনবিআরকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালীকরণ এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি পৃথকীকরণের কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে তা রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এবং এনবিআর শক্তিশালীকরণ এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম পৃথকীকরণের লক্ষ্যে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সব সংশোধনী আনা হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না। এই ঘোষণার মাধ্যমে কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব উদ্বেগের অবসান ঘটবে এবং দেশের রাজস্ব আহরণ ও রাজস্ব সেবা প্রদানকারী সব দপ্তর অবিলম্বে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করবে বলে প্রত্যাশা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে, এদিন বিকেলে এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের নিচে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এবং ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি-রপ্তানি ছাড়া সোমবার (২৬ মে) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, উপ কমিশনার আব্দুল কাইয়ুম এবং উপ-কর কমিশনার মিজ রইসুন নেসা উপস্থিত ছিলেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে; রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

২৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৭৪০১ কোটি টাকা
দেশে বৈধ পথে বাড়ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ। কমছে হুন্ডির দৌরাত্ম্য। বিশেষত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লাগে। প্রবাসী আয়ে একের পর এক রেকর্ড হতে থাকে। এরমধ্যে দেশের ইতিহাসে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে গত মার্চ ও এপ্রিলে। চলতি মে মাসেও রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে। মে’র প্রথম ২৪ দিনে দেশে ২২৪ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স (প্রায় ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার) এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা ১১৪২ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে নতুন রেকর্ড হতে পারে। অর্থাৎ পুরো মাসে প্রবাসী আয় আসতে পারে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে ২২৪ কোটি ৬০ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটির (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। চলতি মাসের ২৪ দিনে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটটি। যার মধ্যে রয়েছে বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি খাতের কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

১০ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি সাড়ে ৭১ হাজার কোটি টাকা
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস (জুলাই-এপ্রিল) শেষে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। তবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১০ মাসের শুল্ক-কর আদায়ের হালনাগাদ তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে (১০ মাসে) রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এনবিআরকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। চলতি মে মাস শেষে রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এনবিআর বিলুপ্ত করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে সংস্থাটির কার্যক্রম। এনবিআর অধ্যাদেশ বিলুপ্তির বিরুদ্ধে গত ১৪ মে থেকে আন্দোলন শুরু করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল পর্যন্ত এক লাখ ২৭ হাজার ৬৮০ কোটি ৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আহরণ করতে পেরেছে ৯৪ হাজার ৯৩৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯০ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। স্থানীয় পর্যায়ে মূসক (ভ্যাট) আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক লাখ ১১ হাজার ২০২ কোটি টাকা আহরণ করতে পেরেছে এনবিআর। আলোচ্য সময়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের ১০ মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব আহরণেও বড় ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এপ্রিল পর্যন্ত এক লাখ এক হাজার ৬৩০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা আহরণ করতে পেরেছে এনবিআর। এ খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে ১০ মাসে শুল্ক খাত থেকে আদায় হয়েছিল ৮২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকার রাজস্ব। একক মাস হিসেবে শুধু এপ্রিলে রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৫৮০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আহরণ হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। এসময়ে ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ৮১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে এ মাসে আহরণ হয়েছিল ২৮ হাজার ৬৫০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে এপ্রিলের আহরণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হবে। এমন সময়ে কলমবিরতি শেষে এনবিআরের কর অঞ্চল, ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউসগুলোয় এখন চলছে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি। এনবিআর বিলুপ্ত করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন এখনো চলমান রয়েছে।

আগামী বাজেটে এসি ও ফ্রিজের দাম বাড়ার আশঙ্কা
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ফ্রিজ ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) দাম বাড়তে পারে। বাজেট প্রস্তাবে দেশি এসব পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট হার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশীয়ভাবে উৎপাদিত ফ্রিজ ও এসির ওপর কারখানা পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে এই হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে এসি ও ফ্রিজের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। জাতীয় বাজেট আগামী ২ জুন উপস্থাপন করা হবে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা করবেন। বাজেট বক্তৃতায় শুল্ক ও কর কাঠামোর পরিবর্তনগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাট মূলত উৎপাদন পর্যায়ে আরোপ করা হয়। প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে উৎপাদকরা ‘ইনপুট ভ্যাট’ রেয়াত সুবিধা নিতে পারবেন। কারণ, এসি ও ফ্রিজ তৈরির অধিকাংশ যন্ত্রাংশ বা উপাদান সরবরাহ হয় ভ্যাট পরিশোধিত উৎস থেকে। জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এসি ও ফ্রিজের ওপর ভ্যাট হার ছিল ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বাড়িয়ে করা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। এবার এই হার আবার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে দেশের বাজারে ওয়ালটন, ইলেক্ট্রোমার্ট, এসকোয়্যার, ট্রান্সকম, সিঙ্গার, বাটারফ্লাই, র্যাংগ্স, মিনিস্টার, ভিশন, এলজি ও ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দেশীয়ভাবে এসি ও ফ্রিজ উৎপাদন ও বিপণনে সক্রিয় রয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে এসির বাজারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দেশীয় ব্র্যান্ডের দখলে। শহরাঞ্চলে বিদেশি ব্র্যান্ডের কিছুটা উপস্থিতি থাকলেও মফস্বল ও গ্রামীণ বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য লক্ষণীয়। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কমদামে সহজলভ্যতা ও সহজ সার্ভিস সুবিধা। প্রতিবছর দেশে গড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ এসি বিক্রি হয়, এবং এই খাতে চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে ফ্রিজের ক্ষেত্রে দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ ইউনিট বিক্রি হয়। এতে ওয়ালটনসহ বেশ কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় অবস্থান বজায় রয়েছে। ভ্যাট হার দ্বিগুণ হলে দেশীয় এই শিল্পে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে ভোক্তা পর্যায়ে বাজার চাহিদায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সাতক্ষীরায় ইসলামী ব্যাংকের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির আয়োজনে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)উদ্যোগে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা শনিবার (২৪ মে) সাতক্ষীরার একটি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ-এর ডাইরেক্টর মোহাম্মদ আনিসুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। ইসলামী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও ক্যামেলকো ড. এম. কামাল উদ্দীন জসীমর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মোঃ শরীফ উদ্দিন প্রামাণিক, বিএফআইইউ-এর জয়েন্ট ডাইরেক্টর মোঃ রোকন-উজ-জামান ও মোঃ মাহমুদুল হক ভুঁইয়া এবং ডেপুটি ডাইরেক্টর মোঃ জামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখাপ্রধান মোঃ সাদেক আলী। সাতক্ষীরা অঞ্চলের ৩৪টি তফসিলভুক্ত ব্যাংকের মোট ৮০ জন নির্বাহী ও কর্মকর্তাবৃন্দ এ কর্মশালায় অংশ নেন।

এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নীতির পুনর্মূল্যায়ন জরুরি
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতিগুলো পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। এই পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম এবং কাঠামোগত সংস্কার এখন থেকেই শুরু করতে হবে। তা না হলে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সক্ষমতা হারাবে। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা : এলডিসি পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয়তা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত অধ্যাপক লুৎফে সিদ্দিকী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধে ড. সেলিম রায়হান বলেন, রাজস্ব খাতে সংস্কারের অভাব এবং প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে কর বৃদ্ধিতে সরকারের ব্যর্থতার ফলে পরোক্ষ কর ও আমদানি করের ওপর ব্যাপক নির্ভরতা দেখা দিচ্ছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক হার অনেক বেশি। রপ্তানি খাতও শুধু তৈরি পোশাকে সীমাবদ্ধ। তাও আবার পোশাকের প্রবৃদ্ধি নগদ প্রণোদনা ও কর ছাড়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চাপ সামলাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি নতুন রপ্তানি পণ্য ও নতুন বাজার খোঁজা উচিত। প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যকার কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। তবে যে গতিতে বর্তমানে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। সত্যিকার অর্থে শিল্প খাতসহ অন্য সেক্টরে কোনো দীর্ঘমেয়াদে রোডম্যাপ নেই, যা হতাশার বিষয়। এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ করতেই হবে। এখান থেকে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। তবে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের উচ্চমানের তৈরি পোশাক, ওষুধ এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের ওপর বেশি হারে মনোযোগী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, এলডিসি উত্তরণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিল্প-কারখানা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা মধ্যে সমন্বয় ও পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের জয়েন্ট চিফ (ইন্টারন্যাশাল কো-অপারেশন ডিভিশন) মসিউল ইসলাম, বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জাকির হোসেন এবং ফকির ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ প্রমুখ।

নতুন ঠিকানায় ন্যাশনাল ব্যাংকের গাজীপুর শাখা
ন্যাশনাল ব্যাংকের গাজীপুর শাখার নতুন ঠিকানায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৪ মে ২০২৫ তারিখে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) কাজী কামাল উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) মোঃ আব্দুর রহিম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুর শাখার ব্যবস্থাপক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তাপস চন্দ্র চক্রবর্তী, শাখার অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, প্রখ্যাত ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরের ফলে গ্রাহকসেবার মান এবং পরিসর আরও উন্নত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা।