কঠিন শর্তে ১০৬ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে সরকার
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:৫০ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সরকার প্রায় ১০৬ কোটি ডলার অনমনীয় বা কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে সাতটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে। গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পক্ষ থেকে ৩৬টি ঋণনির্ভর প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে চীনের অনুদান ও ঋণভিত্তিক বেশ কিছু প্রকল্পও রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পেয়েছে মাত্র সাতটি প্রকল্প, যেগুলো অনমনীয় ঋণের আওতায় পড়বে।
অনমনীয় ঋণ সাধারণত বাজারভিত্তিক উচ্চ সুদে দেওয়া হয় এবং এসব ঋণের রেয়াতকাল ও পরিশোধের মেয়াদ কম হয়ে থাকে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ অবকাঠামো এবং গুরুত্বপূর্ণ আমদানি সংক্রান্ত প্রকল্পে নমনীয় ঋণ সহজে না মেলায়, সরকারের জন্য কঠিন শর্তে ঋণ নেওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নমনীয় ঋণের উৎস কমে আসছে। ফলে বর্তমানে দেশের বৈদেশিক ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনমনীয় শর্তে আসছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহজ শর্তের ঋণ কমে যাওয়াও এর পেছনে বড় কারণ।
বৈঠক সূত্র জানায়, যেসব সাতটি প্রকল্পে ঋণ অনুমোদন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: রাজধানীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীল সেতু নির্মাণ, উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, ঢাকার এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প এবং খুলনা ও নেসকো এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত প্রকল্প।
ময়মনসিংহে পাঁচটি জলবায়ু সহনশীল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) দেবে ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা অনমনীয় ঋণ হিসেবে।
ঢাকা ওয়াসার দুটি প্রকল্পের একটি, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেইজ-৩), যেখানে ব্যয় হবে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) এই প্রকল্পে দিচ্ছে ৮ কোটি ইউরো বা প্রায় ৯ কোটি ডলার, যা পুরোপুরি অনমনীয় ঋণ।
আরেকটি প্রকল্প, ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’, যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পেও ইআইবি ৮ কোটি ইউরো বা প্রায় ৯ কোটি ডলার অনমনীয় ঋণ দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে এডিবি ঋণ দেবে ৭ হাজার কোটি টাকা। খুলনার পানি সরবরাহ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এডিবি।
অন্যদিকে, নেসকো এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা, যেখানে ৯৬৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এডিবি।