কর কমাতে থাকলে তো কিছুদিন পর বেতন-ভাতাও পাব না: অর্থ উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:২৪ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সবাই ট্যাক্স কমানোর দাবি করে, কিন্তু কেউ ট্যাক্স দিতে চায় না। ট্যাক্স কমাতে কমাতে এমন অবস্থা হবে, কিছুদিন পরে বেতন-ভাতাও পাব না মনে হচ্ছে, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) তিনি রাজধানীর ডিএসই ভবনে আয়োজিত বন্ড ও সুকুক মার্কেট সেমিনারে মন্তব্য করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বাইরের দেশে বেশি ট্যাক্স দিতে হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ভালো সেবা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ট্যাক্স দেয়, কিন্তু সেবা পায় না। তাহলে লোকজন তো একটু গোস্সা করবেই। ট্যাক্স দিলাম আর সেবা পেলাম না?
তিনি আরও যোগ করেন, এনবিআর সদস্যদের বলি, একটু সেবা দিন। সেবা ভালো দিলে আমরা ট্যাক্স ফি-ও বেশি দিতে পারি। সেবা দেবেন না, দশবার ঘোরাবেন, আপনি ফিও বেশি চাইবেন, এটা তো সম্ভব নয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স ও নন-ট্যাক্স রেভিনিউ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রাইভেট সেক্টরের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। বড় বড় প্রজেক্ট করতে বলেন, কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা খাত ও স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বরাদ্দ দিতে পারছি না। টাকা কোথায়?
তিনি দেশের অর্থায়ন ঘাটতির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সরকারি লোকজন মনে করে সবকিছু দেওয়া যাবে। প্রতিদিন বলে এই দেন, সেই দেন। অথচ অর্থের সামর্থ্য আমরা পাচ্ছি না।
ড. সালেহউদ্দিন আরও বিমা খাতের দুর্বলতার কথাও তুলে ধরেন এবং এটিকে বিশৃঙ্খল অবস্থায় উল্লেখ করে বলেন, এর জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, একটি গতিশীল আর্থিক খাতের জন্য শুধু ব্যাংক নয়, শক্তিশালী পুঁজিবাজার, বিমা খাত এবং বিশেষ ট্যাক্স ইনস্ট্রুমেন্টও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পুঁজিবাজারকে চিরস্থায়ী আয়ের উৎস হিসেবে দেখার ভুল ধারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, মূলধন বাজারে যেমন মুনাফার সুযোগ আছে, তেমনি ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সচেতন হোক শেয়ার ও বন্ডে বিনিয়োগ মানে কখনও কখনও ক্ষতির ঝুঁকিও ভাগাভাগি করা।
ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাত অতিমাত্রায় ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। প্রাইভেট ও সরকারি খাত উভয়ই ঋণ নেয়, প্রায়ই তা পরিশোধ না করে পার পেয়ে যায়। এটাই বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি। ঝুঁকি ভাগাভাগির জন্য কার্যকর পুঁজিবাজার ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি ছোট বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন। ডিএসই ও বিএসইসিকে উদ্যোগ নিতে বলেন, যাতে তারা বন্ড, ডিবেঞ্চার ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ঝুঁকি বুঝতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, দেশে কর-জিডিপি অনুপাত সোয়া ৭ শতাংশ, যেখানে ব্রাজিলে এটি ২৬ শতাংশ। তিনি বলেন, জনগণ কর দিলেও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বরাদ্দের কথা বলা হলেও অর্থ সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না।