দর স্থিতিশীল রাখতে আরও ১৩০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক


দর স্থিতিশীল রাখতে আরও ১৩০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আবারও নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ১২১.৭৫ টাকা দরে মোট ১২৯.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে চলতি বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে মোট ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর একই দরে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মাত্র এক সপ্তাহ ব্যবধানে একই রেট ধরে রেখে পুনরায় নিলাম করা হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১.৭৫ টাকা দরে ডলার কিনেছে, যা বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের রেফারেন্স রেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের দরে স্থিতিশীলতা জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে সেই স্থিতিশীলতা বজায় রাখছে। বাজারে যদি অতিরিক্ত ডলার সরবরাহ থেকে যায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা না কিনে, তবে ডলারের দর পড়ে যেতে পারে। আবার হঠাৎ করে দর বাড়াও অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

বর্তমানে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনায় রেমিট্যান্স প্রেরক ও রপ্তানিকারকরা উপকৃত হচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবাহ বজায় রাখতে এ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি রিজার্ভও বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ডলার কেনার এ উদ্যোগ কার্যকর। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করছে।

তিনি বলেন, "এ মূহুর্তে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য এ পদ্ধতি ইতিবাচকভাবে কাজ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় চেষ্টা করে ডলার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে। কারণ হঠাৎ করে ডলারের দর উঠানামা করলে তা অর্থনীতির জন্য সমস্যা। সঙ্গে আমদানিকারকদের যেন অসুবিধা না হয়; সেদিকটাও বিবেচনায় রেখে যাতে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে, তেমনভাবে ডলারের দর রাখা উচিত।"

কয়েকজন ব্যাংকার জানান, বর্তমানে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি অনেক কমেছে, ফলে ডলারের চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এই খাতে এলসি খোলা কমেছে প্রায় ২৫.৫ শতাংশ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় ডলারের প্রয়োজন কমে এসেছে।

অন্য একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় ব্যাংকগুলো জ্বালানিসহ বিভিন্ন আমদানি দায় মেটাতে পেরেছে। ফলে এখন আমদানি চাপে কিছুটা স্বস্তি এসেছে এবং ডলারের চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি, যার ফলে দরও কমেছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ কার্যক্রমের জন্য ডলারের দর স্থিতিশীল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, "ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাজারভিত্তিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনে রিজার্ভও বাড়ানো হচ্ছে। এ পদ্ধতি অন্যান্য দেশ যেমন ভারতেও করা হয়। আবার যখন বাজারে ডলার সংকট তৈরি হবে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছাড়বে। এভাবে বাজারে এক রকমের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।"

"একটু একটু করে দাম বাড়া কিংবা কমা তা ঠিক রয়েছে, তবে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়- কারণ এমন পরিবর্তন বাজারকে আরো বেশি অস্থির করে তোলে" - বলেন তিনি।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×