নিত্যপণ্যের আমদানিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক: গভর্নর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:২১ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বাজারদর আমদানিকৃত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা জরুরি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তাঁর মতে, চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি আরও অন্তত এক শতাংশ পয়েন্ট কমানো সম্ভব।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ ২০ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন গভর্নর। আলোচনায় নিত্যপণ্যের আমদানি, বিশেষ করে আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে আগাম প্রস্তুতির বিষয়টি গুরুত্ব পায়। ব্যবসায়ীরা এলসি খোলা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি (NOC) প্রক্রিয়ার ধীরগতি, কাস্টমস ডিউটি এবং বড় অঙ্কের এলসি খোলায় সীমাবদ্ধতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এজন্য নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, আর নীতি বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডলার সরবরাহ ও ব্যাংকিং খাতে যেকোনো সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রস্তুত বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়।
বৈঠকে চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী, স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির, নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম স্বপনসহ সিটি গ্রুপ ও টি কে গ্রুপের প্রতিনিধি।
গভর্নর বৈঠকে বলেন, ডলারের দাম দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে এবং সরবরাহে কোনো সংকট নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের স্বস্তির জন্য খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমানো এখন জরুরি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। এ জন্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ২৪২টি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। সঠিকভাবে আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা করা গেলে বাজারদর কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, টানা দুই অঙ্কে থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কমে আগস্টে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা গত ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বৈঠকে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল লিখিত বক্তব্যে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী কোনো কোম্পানি এক দিনে একই পণ্যের জন্য একই সরবরাহকারীর বিপরীতে ৩০ লাখ ডলারের বেশি এলসি খুলতে পারে না। অথচ তাঁদের প্রতিষ্ঠান র-সুগার, সয়াবিন সিড, ক্রুড অয়েল ও গম জাহাজ চার্টার করে একসঙ্গে আমদানি করে, এতে খরচ কম হয়। আবার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একটি জাহাজের কাঁচামালের মূল্যই দাঁড়ায় দুই থেকে তিন কোটি ডলার। তাই বড় অঙ্কের এলসিতে আরোপিত সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পোর্টালে এলসির তথ্য জমা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনাপত্তি দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক সময় তা পেতে চার থেকে পাঁচ দিন লেগে যায়। ছুটির দিন বাদ দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনাপত্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
বৈঠক শেষে স্বপ্নের এমডি সাব্বির হাসান নাসির সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন পর ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে এবং সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য রিজার্ভ ধরে রেখে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নামানো এবং পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা।