
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার: ভিসির অপসারণে এক দফা, ভাঙল ছয় হলের তালা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা ছয়টি হলের তালা ভেঙে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রবেশ করেছেন। একই সঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণ না করা পর্যন্ত এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়িত ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারাদেশ ও মামলা প্রত্যাহার, হল খুলে দেওয়াসহ ছয় দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রতিটি বিভাগের সামনে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে হল খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান। সাড়া না পেয়ে ছাত্ররা খানজাহান আলী, ড. এম এ রশিদ, শহীদ স্মৃতি, ফজলুল হক, অমর একুশে ও লালন শাহ হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা জানান, ছয় দাবি পূরণে সাড়া না পেয়ে ছাত্ররা তালা ভেঙে হলে অবস্থান নেন। ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে না ফেরায় তাদের হলের তালা ভাঙা হয়নি। এখন ছয় দফা নয়, দাবি একটি- উপাচার্যের অপসারণ। বহিষ্কৃত ৩৭ শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় নিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ কেউই মুখ খুলছেন না। হলে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের বিষয়ে উপাচার্যের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ হয়নি। তবে রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুয়েট প্রশাসন তালা ভেঙে হলে ঢোকাকে বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আইনের লঙ্ঘন আখ্যায়িত করেছে। জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সামাজিক মাধ্যমের তালিকা দেখে বিভ্রান্ত না হওয়া এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রাখতে শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করবেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ: কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। নেতারা কুয়েট উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিএনপি ও ছাত্রদলের দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়নের অভিযোগ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানান। এ ছাড়া বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংহতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে একই দাবি জানান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। চবির মূল ফটকে ১১ ঘণ্টা তালা: স্থানীয়দের মারধরের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মূল ফটকে প্রায় ১১ ঘণ্টা তালা ঝুলিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা জানান, গত সোমবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলক্রসিং এলাকায় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানুল আরেফিনকে মারধর করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে না পেলে রাত দেড়টার দিকে মূল ফটকে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ করার অভিযোগে চবির প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। সোমবার রাত ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার শাওন হোসেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। যদিও ছাত্রলীগ করার কথা অস্বীকার করেছেন শাওন।

হল গেটের তালা ভাঙলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রোববার (১৩ এপ্রিল) থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর আনুমানিক দুইটার সময় কুয়েট স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন এবং এরপর তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, যেহেতু ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছে, নেট-পানি অফ করে হল থেকে বের করে দিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন যুগিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে, সেহেতু আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি। এই ভিসিকে অপসারণ আমাদের একমাত্র দাবি। একইসঙ্গে নতুন ভিসির অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। এরপর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করার ঘোষণা দেন। এসময় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে খান জাহান আলী হলের দিকে যান। সেখানকার প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপর তারা অন্য হলের তালা ভাঙেন। এর আগে ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে দুপুর একটার দিকে সমাবেশ করে ‘মেক কুয়েট, ফ্রি এগেইন’ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। হল খুলে দেওয়ার দাবি সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করেন। তারা তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কাছে বহিষ্কার হওয়া ৩৭ শিক্ষার্থীর সবার নাম প্রকাশ করার দাবি জানান। এদিকে সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

ছাত্রলীগ কর্মীকে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রদল
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী শাওন হোসেনকে মারধর করে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিয়েছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকের সামনে থেকে তাকে আটক করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আটকৃত ছাত্রলীগ কর্মী শাওন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের সক্রিয় কর্মী।তিনি পূর্বে ছাত্রদলের এক কর্মী মারধরের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন ছাত্রদল নেতাকর্মীদের। স্থানীয়রা জানায়, শাওনকে আটকের পর অগ্রণী ব্যাংকের সামনে থেকে মারধর করে তাকে সেন্ট্রাল ফিল্ডে নিয়ে যান ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। পরে সেখান থেকে জিরো পয়েন্ট পুলিশ বক্সে নেওয়া হয়। পুরো সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। পুলিশ বক্সে থাকা দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নিয়ে যান।সেখানে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করে। মারধরের শিকার ছাত্রলীগ কর্মী শাওন বলেন, জুলাইয়ে আমি শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলাম। ৯ তারিখের পরে আমি বাড়িতে চলে যাই। এরপর আন্দোলন নিয়ে কোনো পোস্ট করিনি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কর্মী শামিম বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলে চবিতে ছাত্রদলের তেমন কোনো অবস্থান ছিল না। তবে ছাত্রদলের সঙ্গে আমার গোপন যোগাযোগ ছিল। এ বিষয়টি শাওন হোসেন জানতো। তাই সে আমাকে মারধর করে ও ক্যাম্পাসে আসাতেও বাঁধার সৃষ্টি করে। তাকে মারধর করা হয়নি। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ছাত্রলীগ করতো তা স্বীকার করে। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ভুক্তভোগীর প্যানিক ডিসঅর্ডারের কারণে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থেকে আমরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেছি। প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। সে বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সময়রেখ বা টাইমলাইন ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। টাইমলাইন অনুযায়ী মে মাসের শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া কোন মাসে চলবে, সে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন মনে করে, ডাকসু প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদেরও ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ আছে। সে কারণেই বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর এবং সুচারুভাবে আয়োজনের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ এবং অগ্রগতি সম্বলিত পথ নকশা প্রকাশ করা হলো। টাইমলাইন অনুযায়ী, ডাকসু নিয়ে অংশীজনদের আলোচনা শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বর। একই মাসে গণতন্ত্র চূড়ান্ত করে ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ছয়টি সভা করা হয়। এটি এখন সিন্ডিকেটে অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায় আছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে কোড অব কন্ডাক্ট রিভিউ কমিটি করা হয়। তারা সাতটি সভা করেছে। এটিও চূড়ান্ত হওয়ার পর সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কমিটি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ও সম্পন্ন করেছে। এসব কাগজ ছাত্র সংগঠনগুলোকেও দেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া চলতি মাসেই শেষ হবে। ডিন, প্রভোস্ট ও বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও এ প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ সম্পন্ন হবে মে মাসের প্রথমার্ধে। একই মাঝামাঝি সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করবে। তবে নির্বাচন কার্যক্রম কোন মাসে চলবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

শিক্ষার্থীর ওপর স্থানীয়দের হামলার প্রতিবাদে চবির মূল ফটকে তালা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে চবির মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিন পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্বাভাবিক আছে। এর আগে, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলক্রসিং এলাকায় এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর মধ্যরাত দেড়টায় প্রধান ফটকে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর বারবার হামলা করছে। অথচ এর কোনো সমাধান নেই। এটার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা মূল ফটকের তালা খুলবো না। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুলতানুল আরেফিন বলেন, 'আমি রেলক্রসিংয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় একটা সিএনজি আমার পায়ের ওপর দিয়ে চাকা চালিয়ে দেয়। তখন সিএনজি ড্রাইভারের সঙ্গে আমার কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর বাইরে থেকে কিছু ছেলে এসে আমার বাইকের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখা দেখেই গালাগালি ও মারধর শুরু করে।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রোক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের দ্বারা বারবার হামলার শিকার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চক্রাকার বাস চালু করা এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা। আমি তাদের বুঝিয়ে বলেছি গেট খুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অথরিটির কাছ থেকে আশ্বাস পেতে।'

নববর্ষেও হল খোলার দাবিতে কুয়েটেরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
হল খুলে দেওয়ার দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রশাসন ভবনের সামনে ২৪ ঘণ্টা ধরে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। হল না খোলা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থানের সিদ্ধান্তে অনঢ়। এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম ও হল খোলার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে।শিক্ষার্থীরা জানান, হল খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেল ৩ টায় তারা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন। রাতেও তারা সেখানে ছিলেন। এছাড়া নববর্ষের দিনেও তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনেই অবস্থান করছেন। তারা জানান, সোমবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দপ্তরের সহকারী পরিচালক রাজু আহম্মদ তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের চলে যেতে অনুরোধ জানান। তবে হল খুলে না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদুর পেতে সেখানে অবস্থান করছেন। প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাদের ব্যবহার্য কাপড় রোদে শুকাতে দেওয়া আছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, রোববার রাতে তারা ২২ জন প্রশাসন ভবনের সামনে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে এই ভবনের শৌচাগার ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের শৌচাগারে যেতে হচ্ছে। এদিকে ‘কুয়েট ১৯’ নামের একটি ফেসবুক পেজে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা সারাদেশের শিক্ষার্থীদের একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, ‘আগামীকাল ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অফিসগুলো খুলবে। সোমবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় কবে থেকে হল খোলা এবং একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া সভার আগে যদি তদন্ত কমিটি সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তাহলে সেই প্রতিবেদন নিয়েও আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জেরে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বছর সর্ববৃহৎ শোভাযাত্রা হয়েছে: ঢাবি উপাচার্য
এ বছরের আনন্দ শোভাযাত্রা সবচেয়ে বড় এবং বৈচিত্রপূর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। সোমবার (১৪ এপ্রিল) শোভাযাত্রা শেষে চারুকলা অনুষদে সাংবাদিকদের তিনি এই মন্তব্য করেন। উপাচার্য বলেন, এবার একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নববর্ষ আয়োজন করা হয়েছে। এবার সরাসরি নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেক যৌক্তিক-অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়া শেষ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেখানে তিনটি বিষয় উল্লেখ ছিল- প্রথমত, যত বেশি সংখক সাংস্কৃতিক এবং নৃতাত্তিক বৈচিত্র তুলে ধরা যায়। এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক নৃগোষ্ঠী, সমতল, পাহাড়ি এবং বাঙালি জাতিসত্তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয় ছিল আলাপ-আলোচনা করা। এবার আয়োজন করতে গিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। আমরা সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পেরেছি। তৃতীয়ত দৃষ্টিনন্দন করার কথা বলা হয়েছে। এবার সবচাইতে বর্ণাঢ্য বৈচিত্রপূর্ণ আয়োজন হয়েছে।’ অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান আরও বলেন, ‘ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, এবারের শোভাযাত্রায় আমরা তা প্রতিফলিত করতে চেয়েছি। এবারের প্রতিপাদ্যে দুইটি বিষয় ছিল- প্রথমত, নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারী সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার অবসানে জাতির উল্লাস এবং আনন্দ। আরেকটি ছিল- ঐক্য এবং সম্প্রীতির ডাক। এটি কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সমর্থন প্রকাশ করে।’

ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি পোড়ানো যুবক ‘ঢাবির’ শিক্ষার্থী
চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পোড়ানো যুবকের পরিচয় মিলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। সন্দেহভাজন ওই যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আরবি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ছবি পেয়েছি। বিষয়টি ভেরিফাই করার চেষ্টা করছি। যদিও তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতে পারছি না। ছবিটি নিয়ে বিভাগে কাজ চলছে। চেষ্টা করছি বিষয়টি অতি দ্রুত নিশ্চিত করতে।’ তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর জড়িত হওয়ার বিষয়টি সত্যি হলেও হতে পারে। কারণ গত জুলাইয়ে এমন অনেককে দেখেছি যাদের কল্পনাও করতে পারিনি যে, তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করবে।’ এ বিষয়ে আরবি বিভাগের ছাত্র ও প্রাথমিকভাবে সন্দেহের তালিকায় থাকা ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠী নাসির বলেন, ‘ক্লাসের যতজন এই আগুন লাগানো ফুটেজ দেখছে, প্রায় সবাই নিশ্চিত যে ওই শিক্ষার্থীই এ কাজ করেছে। সে কয়েক দিন আগেও ভোর বেলায় একাত্তর হলের সামনে গিয়ে ছাত্রলীগের পক্ষে স্লোগান দিয়ে গেছে এবং প্রকাশ্যে তার টাইমলাইনে পোস্টও করেছে। কিন্তু এ ঘটনার পর সে ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করেছে।’ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, জুলাইয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদে তাকে বিভাগ ও হল থেকে বয়কটও করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না তিনি। একই সুরে কথা বলেছেন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিল। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি না আমাদের ব্যাচের সবাই তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে। হলে থাকাকালীন ছাত্রলীগের সঙ্গে খুব সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল সে।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে সন্দেহের তালিকায় থাকা ওই শিক্ষার্থীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পহেলা বৈশাখে চবিতে বৈশাখী শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন
পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (১৪ এপ্রিল ২০২৫) উদযাপন উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে থাকছে নানা আয়োজন। চবি প্রশাসন আয়োজিত দিনব্যাপি কর্মসূচিতে থাকছে বৈশাখী শোভাযাত্রা, আলোচনা পর্ব, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আমন্ত্রিত ব্যান্ড দল ‘সরলা’এর পরিবেশনা, পুতুল নাচ (উন্মুক্ত মঞ্চ), নাগরদোলা (অগ্রণী ব্যাংকের সম্মুখে খোলা জায়গা), বলি খেলা (মুক্ত মঞ্চ), বউচি খেলা (চাকসু প্রাঙ্গন) ও কাবাডি খেলা (বুদ্ধিজীবী চত্বর)। এছাড়া দিনব্যাপি বৈশাখী ও লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে দশটায় চবি স্মরণ চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বৈশাখী উৎসবের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উদ্বোধন করবেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে চবি জারুলতলা মূল মঞ্চে গিয়ে শেষ হবে। এরপর মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন।

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’-র নাম পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলেন শিক্ষার্থীরা
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তনের প্রকৃত কারণ জানানোর দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৩ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ দাবি জানান। এ সময় চারুকলার বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম মূল আকর্ষণ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দিয়ে ফের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা এ তথ্য জানানো হয়। নতুন নামের ঘোষণা দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি বলেন, এবার নববর্ষ উদযাপনে একপেশে সংস্কৃতি চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে ইনক্লুসিভ সাংস্কৃতিক চর্চা হবে। এর মধ্যে শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ আগুনে পুড়ে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মাস্ক পরা একজন আগুন দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখা হয়। বক্তব্যে বলা হয়-সাংবাদিক বন্ধুগণ,আমরা জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ও ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর সকল নিপীড়িত মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের আন্দোলন সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন শুরু করছি। আপনারা অবগত আছেন যে, শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরের সময় চারুকলায় কী ঘটেছে এবং প্রশাসন ও নিরাপত্তার কী বেহাল দশা! আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই পুরো ঘটনায় প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এ নিয়ে আমরা হতাশ। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীকে শনাক্ত না করা হচ্ছে, সেটা চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য ভীতির সঞ্চার করে। কারণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের বিভিন্ন ট্যাগের শিকার করছেন যার কিছু দলিলিক প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। সেটা আমরা আপনাদের হাতে প্রমাণস্বরূপ পরবর্তীতে তুলে ধরবো।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা ঐতিহ্যগতভাবে চারুকলার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মিলে প্রতিবার বৈশাখের আয়োজন করার চেষ্টা করে থাকি। বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখে এসেছি, আওয়ামী লীগের স্বার্থরক্ষার্থে বিরুদ্ধ মত দমনের মাধ্যমে বৈশাখ উদযাপন স্বতন্ত্রতা হারিয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পরে আমাদের কাম্য ছিল স্বতন্ত্র ও স্বতঃস্ফূর্ত একটি বৈশাখের আয়োজন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এবারও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে ফ্যাসিস্ট রেজিমের মতোই বৈশাখ শেকল মুক্ত নয় এবং আমরা যখন এই বিষয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেছি, আমাদেরক আওয়ামী দোসরসহ অনলাইনে, অফলাইনে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, যেটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও অগ্নিসংযোগকারী অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে শাস্তির আহ্বান করছি। আমরা দেখতে পাই যে, এর আগে, এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জানানো হয় যে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদযাপিত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। যেই সিনেটের মাধ্যমে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, সেটা মোটেই কাম্য ছিল না। কারণ, চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে বৈশাখের আয়োজনে শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্যতম ভূমিকা রাখে শিক্ষার্থীরা। চারুকলার এই আয়োজন ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে হয়ে এলেও একটা অসংলগ্ন যুক্তি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত ও কোনোরকম আলোচনা বা মতামত গ্রহণ না করে ফ্যাসিস্ট আমলের প্রস্তাবনাকে সম্মতি দিয়ে এই আয়োজন শিক্ষকেরা ছাত্রদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছেন। তবুও শিক্ষার্থীরা বিগত ২৭ মার্চ শিক্ষকদের কাছে বৈশাখের আয়োজনের জন্য ফিলিস্তিনের প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি রেখে এক ফালি তরমুজের কাঠামো বানানোর জন্য শিক্ষার্থীরা প্রস্তাব করে। কিছুদিন নানা অজুহাতে ঘুরিয়ে আমাদের প্রস্তাবকে নাকচ করে দেয়া হয়। মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করা যাচ্ছে না বলে আনঅফিশিয়ালি জানানো হয়। এই ঘটনার পরও শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে দুইবার প্রস্তাব করা হয়, যাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি স্থাপনে এই শোভাযাত্রায় তরমুজের কাঠামো বানানো হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবারও কোনো কিছু না জানিয়ে হুট করে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, তরমুজের কাঠামো বানানো হবে। আমরা এই ধরনের রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তের পূর্ণ বিরোধিতা করছি। তরমুজের কাঠামো বানানো হচ্ছে এখন। তবে আমাদের প্রস্তাবে সমর্থন না করে বারংবার রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট আমলের আওতা থেকে শিল্পীরা বের হয়ে কাজ করতে পারছেন না। এই ধরনের কার্যকলাপ আমাদের বিগত রেজিমের কথাই মনে করিয়ে দেয় যেখানে চাইলেই আমরা শিল্পচর্চা ও এমন গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো স্বাধীনভাবে করতে পারতাম না, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ সেখানে মুখ্য ভূমিকা রাখতো। বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের চারুকলার ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন যে বৈশাখ আয়োজন কে একাডেমিক ক্রেডিটে অন্তর্ভুক্ত করবেন, কিন্তু সেই সময়েই চারুকলার শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফূর্ত এই আয়োজনকে ক্রেডিটে অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে অবস্থায় নিলে তিনি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারেন নি। আমরা জুলাই আন্দোলনের পরে দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত ফ্যাসিস্ট আমলের প্রস্তাবনা- অগুরুত্বপূর্ণ দুই ক্রেডিটের কোর্স হিসেবে এই আয়োজন শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের উপর আবার ক্লাস হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা এই কারিকুলামের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক মত নই। ফ্যাসিস্ট আমলের নেয়া সিদ্ধান্ত বর্তমমানের সোকল্ড ফ্যাসিবাদী বিরোধী প্রশাসন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা বিগত ১৩ই মার্চ একটি বৈশাখ প্রস্তুতির সাধারণ সভার আয়োজন করে, যেখানে তারা এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করে। শিক্ষকদের ভাষ্য মতে তারা এই সাধারণ সভায় সবার সম্মতি ক্রমেই ব্যাচ ভিত্তিক আয়োজক কমিটি না বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এই জায়গায় আমরা দ্বিমত করছি, কেননা এই "সকল শিক্ষার্থী" বলতে মূলত ১ম বর্ষ (যারা এই আয়োজন সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানেনা)এবং ২য় বর্ষ (যারা বিগত কয়েক বছর রমজান মাসের মধ্যে এই আয়োজন থাকায় ফুল স্কেলে বৈশাখ আয়োজন দেখেনি), ফলত এমন জুনিয়র ব্যাচদের বিভ্রান্ত করা সহজ।এই জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মতামত দেওয়ার মতো সঠিক জানা বোঝা হওয়ার আগেই তাদের মতামত নেওয়াটা প্রহশন মূলক। অন্যান্য সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ২৬ এর কেউ সেই মিটিং এ ছিলো না। আরেকটা প্রহশন হলো, অধিকাংশ বিভাগেই এই সাধারণ সভা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সঠিক সময়ে জানানো হয়নি, এমন কি কয়েকটি বিভাগে জানানো হয় সভা শুরুর পরে। এই প্রহসহনমূলক সাধারণ সভাকে শিক্ষার্থীদের মতামত হিসেবে দেখিয়েই চারুকলার ৭০ তম ব্যাচ প্রকারান্তে ২৬ তম ব্যাচকে বৈশাখের আয়োজন করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২৬তম ব্যাচ যখন এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে বিবৃতি প্রদান করে, সেসময় ২৬তম ব্যাচ এর সাথে একটি মিটিং করে প্রশাসন ও বলা হ্য় ২৬তম ব্যাচের ১৮ জনকে উপকমিটিতে বিশেষ বিবেচনায় আয়োজক হিসেবে জায়গা দেওয়া হবে।কিন্তু শিক্ষকদের দিক থেকে জুলাইয়ের আন্দোলনে স্বক্রিয় থাকা শিক্ষার্থীদেরো অহেতুক আওয়ামীলীগ ট্যাগিং থেকে শুরু করে বিবৃতিতে কি লিখতে হবে তা প্রিন্ট করে হাতে ধরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতার দাপট দেখানোর এমন সব অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে ২৬ তম ব্যাচ উপকমিটিতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। আমরা আশা করেছিলাম জুলাই গনঅভ্যুত্থানের পরে বর্তমান প্রসাশন ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কার্যকলাপ বিগত আমলের ফ্যাসিস্ট রেজিম থেকে ভিন্ন হবে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখ আয়োজনের মত একটি স্বতন্ত্র ও স্বতস্ফূর্ত আয়োজনকে এভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা জুলাই আন্দোলনে প্রত্যেকে স্বতন্ত্র ভূমিকা রাখার পরবর্তীতে এই ধরনের রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ববিদ্যলয়ের নিন্দাজনক কার্যাদির বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় যা কিনা গড়ে ঊঠেছে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে, সেখানে প্রতিটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অংশিজন হিসেবে শিক্ষার্থীদের মতামত থাকবে। এর ব্যতিক্রম হলে, এভাবে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ জারি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বলে আর কিছু থাকে না। আমরা আগামী দিনে এমনটা আর দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীদের ওপর ভবিষ্যতে যেন এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে না পারে প্রশাসন সে লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে। এবং এখন থেকে আমাদের দাবী থাকবে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডাকসু কার্যকর করা হোক। মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যেন না হয় তার জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আলোচনার মাধ্যমে একটা নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব রাখছি। জাতিকে আমরা নিরুৎসাহিত করবো না, মঙ্গলশোভাযাত্রায় সকলের উপস্থিতি আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও কামনা করি। কিন্তু অনুষদের শিক্ষার্থীদের সাথে যেই অন্যায় হলো, প্রশাসনের কাছে আহবান থাকবে প্রশ্নবিদ্ধ সমস্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিবেন, প্রয়োজনে উপযুক্ত সময়ে একটি বাহাস আয়োজনের জন্যেও আমরা প্রস্তুত। আর যদি কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এড়িয়ে যান, বিগত সময়ের ছাত্রলীগের মতো সুবিধাভোগী ছাত্রদের যদি আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, তাহলে আপনাদের স্বরণ করিয়ে দিতে চাই বিগত ফ্যাসিস্টের পরিনতি। বিবৃতি: চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা সকাল ৯টায় শুরু
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আগামীকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ কর্মসূচি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হবে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে। সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। এতে বলা হয়, শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ এবং সাতটি ছোট মোটিফ। ঢাবির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদের সামনে ছবির হাটের গেট এবং বাংলা একাডেমির সামনের রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেট বন্ধ থাকবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষের সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘোষণা কুয়েট শিক্ষার্থীদের
কর্তৃপক্ষের নিষেধ উপেক্ষা করে বন্ধ থাকা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েটে) ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর ২টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ও হলে প্রবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছে। ছাত্রদের প্রবেশ ঠেকাতে ক্যাম্পাসের প্রধান দুই ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিয়ে কুয়েটে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে আজ ‘লং মার্চ টু কুয়েট’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাতে খুবি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। এদিকে শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোববার দুপুর ২টায় বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে হলে উঠার ঘোষণা দিয়ে আসছে। তা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিক সভা, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি, বিজ্ঞপ্তি জারি ও অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে শিক্ষার্থীদের কুয়েটে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় দেড় মাস হল বন্ধ থাকায় লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেকের টিউশনিসহ আয়ের উৎস নষ্ট হচ্ছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে ক্যাম্পাসে ঢুকবেন। তারা যাতে ক্যাম্পাসে ফিরতে না পারেন সেজন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষ নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উসকানি দিয়ে তাকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে না ফেরে সেজন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে বোঝানো হয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকেও অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (নর্থ) আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, কুয়েটের পরিস্থিতি তারা অবগত আছেন। ক্যাম্পাসের ২টি গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যান এক তরুণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে নবববর্ষের শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য বানানো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফে আগুন দেওয়া একজনকে শনাক্ত করা গেছে। কালো টি-শার্ট, ব্রাউন প্যান্ট, কালো স্যান্ডেল পরা ও পেছনে চুলে ঝুঁটি করা এক তরুণ চারুকলার মাঝখানের গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং আগুন দিয়ে একই পথে পালিয়ে যান। তবে এখনো তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। শনিবার (১২ এপ্রিল) সিসিটিভি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ সিসিটিভি ফুটেজে এসব তথ্য পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘কালো টি-শার্ট, ব্রাউন প্যান্ট, কালো স্যান্ডেল পরা ও পেছনে চুলে ঝুঁটি করা একটি ছেলে চারুকলার মাঝখানের গেট (৩ নম্বর গেট) টপকে প্রবেশ করে। কোথা থেকে ছেলেটা এসেছে তা বোঝা যায়নি।’ প্রক্টর আরও বলেন, ‘প্রবেশ করে প্রথমে সে লিকুইড (দাহ্য পদার্থ) দিয়েছে, তারপর সে পর্দার আড়ালে চলে গেছে। তারপর ফুটেজে আমার দেখলাম, সেখানে ফ্লেম (অগ্নিশিখা) হয়েছে। এর মানে হয়তো সে সেখানে লাইটার চালিয়ে পরীক্ষা করেছে। তারপর সেখানে গিয়ে ফায়ার করেছে। ছেলেটা যেই গেট দিয়ে প্রবেশ করেছে, সেই গেট দিয়েই বেরিয়ে ছবির হাটের দিকে গেছে।’ ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তি খুবই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি বলেন, ‘এটা উদ্দেশ্যপ্রণেদিত, খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পক্ষের একটা শক্তি এখানে ঘাপটি দিয়ে আছে। তারাই এই কাজ করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছি। সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং আইনিভাবে শক্ত হাতে দেখা হবে।’ এ ঘটনায় ইতোমধ্যে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান। সদস্য হিসেবে রয়েছেন আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার, চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল ও বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী। শনিবার ভোরে ঢাবির চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য বানানো দুটি মোটিফে আগুন পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানিয়েছে, তারা শনিবার ভোর ৫টা ৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায়। পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ৫টা ২২ মিনিটে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

ঢাকার রাস্তায় ট্রাম্প-নেতানিয়াহু, হাতে রক্তের দাগ!
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের হামলায় নিশ্চুপ থাকার ঘটনা নিয়ে প্রদর্শনী করেছেন কয়েকজন ছাত্র। শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে এক মিছিলে এমন প্রদর্শনী দেখা যায়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ ঘুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে দেখা যায়। প্রদর্শনীতে দেখা যায়, নেতানিয়াহুর মুখোশ পড়া একজন রক্তের বাটি হাতে নিয়ে হাঁটছেন যার পুরো শরীরে ফিলিস্তিনি মানুষের রক্ত। তার পাশেই ট্রাম্পের মুখোশ পড়া একজন নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তারও শরীরজুড়ে রক্তের দাগ। অন্যদিকে আরব নেতারা তাদের দুজনের আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন এবং তাদের হাতে চুমু খাচ্ছেন, আনুগত্য প্রকাশ করছেন। তাছাড়া, তাদের ঠিক পেছনেই সাদা কাফনে মোড়ানো অসংখ্য লাশের প্রতিকৃতি রাখা হয় যা নেতানিয়াহু, ট্রাম্প ও তার সহযোগী আরব বিশ্বের নেতারা টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আয়োজনের সাথে থাকা একজন বলেন, আমরা দেখছি ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে যার প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাছাড়া আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা এসব দেখেও একেবারে নিশ্চুপ। অর্ধ লক্ষাধিক নিরীহ মুসলিমের রক্তেও তাদের ঘুম ভাঙছে না। তাই আমরা এর প্রতিবাদ হিসেবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।

‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পুড়ে যাওয়া নিয়ে চারুকলার দুঃখ প্রকাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বানানো দুটি মোটিফ কে বা কারা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এ জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ নামের মোটিফ দুটিতে আগুন দেওয়া হয় বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ। এ ঘটনায় সকালে চারুকলা অনুষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপনের লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতীকী মোটিফ বানান। অন্যান্য মোটিফের সঙ্গে প্রতীকী দানবীয় ফ্যাসিস্টের মোটিফ বানানো হয়। অনুষদের দক্ষিণ পাশের গেট–সংলগ্ন জায়গায় প্যান্ডেলের ভেতরে এই মোটিফগুলো রাখা হয়। কে বা কারা এর মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির মোটিফটি পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় শান্তির পায়রা মোটিফটিও আংশিক পুড়ে গেছে। ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ওই আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তখন দায়িত্বরত মোবাইল টিমের সদস্যরা ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য গিয়েছিলেন। তখনই হয়ত এ কাজ করা হয়েছে।

ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার উদ্দেশ্যে তৈরি ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি ও কবুতরের মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। শনিবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দফতর থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কর্তৃক পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনের লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের চেষ্টায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী মোটিফের সঙ্গে ফ্যাসিস্টের মোটিফ তৈরি করা হয়। এ ঘটনা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দুঃখপ্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১২ এপ্রিল ভোরের দিকে শোভাযাত্রার জন্য নির্মিত বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী মোটিফের মধ্যে ফ্যাসিস্টের প্রতীকীকে কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

গাজায় ইসরাইলের বর্বর ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে চবির বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় চবির শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। চবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন, চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী, মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষ, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আবদুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চবি তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. মো. শহীদুল হক। বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিশেষ দোয়ায় চবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। ইয়াহ্ইয়া আখতার সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনে শহীদ হওয়া সকল মুসলিম শিশু ও নারী-পুরুষের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং গাজায় নারী, শিশু ও মুসলিম ভাইবোনদের উপর ইসরাইলি বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান। তিনি বলেন, “গাজায় যে আক্রমণ চালানো হচ্ছে, তা নতুন কিছু নয়; আমরা বাল্যকাল থেকেই এটি দেখে আসছি। কিন্তু এ আক্রমণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বের দায়িত্বশীলরা নিরব ভূমিকা পালন করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গাজাবাসীর পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে হবে যে, গাজাবাসীর ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হস্তক্ষেপ মানবতা-বিরোধী অপরাধ।” “শুধু দোয়া করলেই হবে না, আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চরম উন্নতি সাধন ও ঐক্যের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বুদ্ধি ও জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজ গড়ে তুলতে হবে, যাতে রাষ্ট্রও মজবুত হয়। শিক্ষিত ও যোগ্য ছাত্র-শিক্ষক তৈরির মাধ্যমে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।” তিনি ইসরাইলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। শামীম উদ্দিন খান বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছি, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। মানবসভ্যতায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এমন অত্যাচার পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। পৃথিবীর ১৪৮টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও জাতিসংঘ ও ওআইসি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ওআইসি যদি গাজার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ সংগঠন ভেঙে দেওয়া উচিত।” তিনি স্বীকৃতিদানকারী ১৪৮টি রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। কামাল উদ্দিন বলেন, “চবি পরিবার আজ মানবাধিকার রক্ষায় একত্রিত হয়েছে।’ এ জন্য তিনি সবাইকে চবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। কামাল উদ্দিন বলেন, “আজ আমাদের একমাত্র এজেন্ডা-যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে, শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করবে, তাদের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় অবস্থান নেয়া। একজন শিশুর কী অপরাধ? একজন শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো নরপিশাচও এ ধরনের নৃশংসতা চালাতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “যারা ইসলামী সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়, মানবতাকে ধ্বংস করতে চায়, শিশুকে হত্যা করে রক্ত নিয়ে খেলতে চায়, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আজ আরব বিশ্ব ব্যর্থ। মুসলিম সমাজ বিভক্ত। তারা রাজনৈতিক কৌশলের কারণে প্রতিবাদ করতে পারছে না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

পাবিপ্রবির নির্মাণাধীন হল থেকে যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) নির্মাণাধীন হল থেকে গলায় রশীসহ অজ্ঞাতনামা এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পাবিপ্রবির নির্মাণাধীন হলের ১০ম তলা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েকদিন আগে মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। যদিও লাশটি মেঝেতেই পড়েছিল। পুলিশ সুপার আরো জানান, মৃত ব্যক্তির গলায় দড়ি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা করার কয়েকদিন যাওয়ার পর লাশের ওয়েট বৃদ্ধি পেয়ে দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেছে। এখানো লাশের নাম পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন টিম কাজ করে যাচ্ছে। সাথে একটি স্মার্ট ফোন পাওয়া গেছে, পরবর্তী তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে। এ বিষয়ে পাবিপ্রবির উপ-পাচার্য অধ্যাপক ড. মো: নজরুল ইসলাম বলেন, "আমরা খবর পেয়ে সাথে সাথেই পুলিশকে অবহিত করি। পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে।"

হামলার শিকার ঢাবি ছাত্রের অভিযোগ, ‘ভিড়ের মধ্যে আমাকে ইচ্ছেমতো মারধর করা হয়’
নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্রীরের ব্যানার নামানোর কথা বলায় হামলা করে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সানি সরকার। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সানি সরকার ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। সোমবার (৭ এপ্রিল) ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরও হেনস্তার শিকার হন। এ ঘটনায় বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী কর্মসূচি ডেকেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা সানি সরকারের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম ঢাবির ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন করবেন। লিখিত অভিযোগে সানি সরকার উল্লেখ করেন, দুপুর একটার দিকে টিএসসিতে গিয়ে দেখেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রোগ্রাম করছে। সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের পতাকা ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে তিনি বাধা দেন। সানি অভিযোগপত্রে লেখেন, ‘আমিও একজন মুসলমান, তবে অনুরোধ করব এই নিষিদ্ধ পতাকাটি নামিয়ে ফেলুন। রাজু ভাস্কর্যের সামনে যেকোনো আন্দোলন বা প্রোগ্রাম অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এসবের ছবি বা ভিডিও যদি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তবে তা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।’ অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অনুরোধের পর দু–একজন পতাকা নামিয়ে পকেটে রেখে দেন। এরপর কাদের ভাই (আব্দুল কাদের), খালেদ ভাই ও তানভীর ভাইয়েরাও বাকিদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কিছু (নিষিদ্ধ সংগঠন) হিযবুত তাহ্রীরপন্থি বিষয়টি বুঝতেই চায়নি। তারা আমাদেরকে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে মারতে আসে। ভিড়ের মধ্যে আমাকে ইচ্ছেমতো মারধর করা হয়।’ প্রক্টর অফিসে দেওয়া অভিযোগে সানি সরকার আরও উল্লেখ করেন, ‘স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন কীভাবে প্রোগ্রাম করতে পারে? যেখানে বহিরাগতদের কোনো কর্মসূচি করার অধিকার নেই, সেখানে আমরা এতটাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছি যে বাইরের কেউ এসে প্রোগ্রাম বা তাদের প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’ সানির ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন নিয়ে কর্মসূচিগুলোতে বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের পতাকা উড়তে দেখা গেছে। এর আগেও ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে এ ধরনের পতাকা উত্তোলন আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘটনার পরপরই প্রক্টরিয়াল টিমকে জানানো হলেও তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয় এবং আহত শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের উপস্থিতি ও কার্যক্রম প্রতিহত করতে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এ দিকে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, তারা একটি অভিযোগপত্র পেয়েছেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

গাজায় গণহত্যা বন্ধের প্রতিবাদে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নিপীড়ন ও ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেন এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান৷ এর আগে শিক্ষার্থীরা কলেজ চত্বরে জড়ো হয়ে র্যালি বের করেন। যা ক্যাম্পাস ঘুরে সামনের রাস্তায় গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’, ‘সেইভ চিলড্রেন অব প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা যায়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গাজায় শিশু, নারী, সাধারণ মানুষ নির্বিচারে হত্যার শিকার হচ্ছে। এটি মানবতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অপরাধ। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আরও সোচ্চার হতে হবে। একইসঙ্গে তারা বাংলাদেশ সরকারসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের পথে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করা হয়। রুহান ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই না, আমাদের নীরবতা আর কারও রক্তের কারণ হোক। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছি। রাশেদুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ব যখন নীরব, তখন আমাদের তরুণদেরই সামনে এসে মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে হবে। গাজায় যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই সভ্য দুনিয়ার সঙ্গে যায় না। এটা শুধু কোনো ধর্ম বা জাতির বিষয় না, এটা মানবতার ইস্যু। আজ ফিলিস্তিন, কাল হয়ত অন্য কেউ। তাই এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হবে উল্লেখ করে আরেফিন কবির নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছোট ছোট শিশুদের নিথর দেহ আর বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ছবি আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চাই, এই সহিংসতা বন্ধ হোক, ফিলিস্তিনের জনগণ স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার পাক। আমরা মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। মূলত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চলমান রয়েছে। যার ফলে এরই মধ্যে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ও শিশু নিহতের ঘটনা ঘটেছে। তার প্রতিবাদে আজ সারাদেশেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পালন করেছেন।

শিক্ষার্থীদের ‘ডাবল এবসেন্ট’ দেওয়ার হুমকি, ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষক বরখাস্ত
‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ক্লাস বর্জন করলে শিক্ষার্থীদের ‘ডাবল এবসেন্ট’ দেওয়ার হুমকি দেওয়া সেই শিক্ষক তাহমিনা রহমানকে বরখাস্ত করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এবং এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তাহমিনা রহমান বিশ্ববিদ্যালয়টির জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। অধ্যাপক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, তাহমিনা রহমানকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে। জানা যায়, ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলের চলমান নৃশংস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি পালন করতে সোমবার ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নেন ড্যাফোডিলের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানার পর প্রভাষক তাহমিনা শিক্ষার্থীদের গ্রুপে জানান, ক্লাসে না আসলে ডাবল অ্যাবসেন্ট দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি কথপোকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও তাহমিনা রহমান রোববার দিবাগত রাতে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন।

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
এ সময় তারা জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের পূর্ণ অধিকার আছে বলে মন্তব্য করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দাবি করেনএ সময় তারা জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের পূর্ণ অধিকার আছে বলে মন্তব্য করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দাবি করেন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবি ও ‘ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৭এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের পূর্ণ অধিকার আছে বলে মন্তব্য করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দাবি করেন। মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। এ সময় তারা-‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, ইসরাইল নিপাত যাক’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, আল আকসা জিন্দাবাদ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, গাজায় নিরীহ শিশু, নারী এবং সাধারণ মানুষের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হচ্ছে, তা শুধু একটি রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি একটি চরম মানবিক ও নৈতিক সংকট। এমনকি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, মানবিক করিডোরে হামলা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো ধ্বংসের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সভ্যতার চরম অবক্ষয়। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান অমানবিক সহিংসতা, নির্বিচারে হত্যা, বোমাবর্ষণ, রাসায়নিক হামলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তারা বলেন, আমরা এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, সংগঠিত হতে এবং কার্যকর অবস্থান নিতে সর্বদা নৈতিকভাবে একতাবদ্ধ। শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোই যথেষ্ট নয়, এখন সময় এসেছে রাস্তায় দাঁড়াবার, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে মানবতার পক্ষে আওয়াজ তোলার। ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র অংশ হিসেবে আমরা আজ বিশ্বের অন্যান্য সচেতন মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। মানববন্ধনে বুয়েটের উপ-উপাচার্য ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ফিলিস্তিনের দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী পৌনে শতাব্দী ধরে দখলদারত্ব বজায় রেখেছে, গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আরব বিশ্ব ও অন্যান্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো নীরব রয়েছে। আমি মনে করি, অতি শিগগিরিই ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের উত্থান ঘটবে এবং এই উত্থানই সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশবাদের ঐতিহাসিক পরাজয়ের সূচনা করবে। এ সময় তিনি ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে উত্তাল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এসময় নানান প্ল্যাকার্ডে ইসরায়েলি বর্বরতার বিপক্ষে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, অনতিবিলম্বে এই হত্যা বন্ধ করতে হবে। এসময় ইসরাইলকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে গণহত্যার দায়ে মুছে ফেলার আহ্বান করেন তারা। সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে বাড্ডা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনে এই বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন’, ‘ট্রাম্পের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘নেতানিয়াহুর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘ইসরায়েলের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’—ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমেরিকার মতো যেসব দেশ এমন গণহত্যা দেখে নিশ্চুপ তাদেরও বয়কট করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলো কাপুরুষতার পরিচয় দিচ্ছে, যার জন্যই সুযোগ পাচ্ছে ইসরায়েল। অনতিবিলম্বে মুসলিম দেশগুলোকে এককাতারে এসে এই গণহত্যার প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। এসময় বাংলাদেশ সরকারকে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান কবির বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন বর্বরতার পরও আমরা আর নিরব থাকতে পারি না। এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের উচিত প্রতিবাদে শামিল হওয়া। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলো কাপুরুষতার পরিচয় দিচ্ছে, যার জন্যই সুযোগ পাচ্ছে ইসরায়েল। অনতিবিলম্বে মুসলিম দেশগুলোকে এককাতারে এসে এই গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে হবে। গাজায় যা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ। এর প্রতিবাদে আজ কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া হবে না। আরেক শিক্ষার্থী তাসনিম ফারহা বলেন, গাজার শিশুরা যখন প্রতিদিন বোমার শব্দে ঘুম ভাঙছে, তখন আমাদের নীরবতা মানে হচ্ছে সেই অন্যায়ের অংশীদার হওয়া। আমরা আওয়াজ তুলে বলছি—গণহত্যা বন্ধ করো। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফরোজা জামান বলেন, এই আয়োজন শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের ছোট্ট সহায়তা হয়তো কারও জন্য একফোঁটা বাঁচার আলো হতে পারে।

জবিতে ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি, ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষকরা ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জবি প্রশাসন। রোববার (৬ এপ্রিল) জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বর্বর হামলার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির গৃহীত সব কর্মসূচির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাত্মতা ঘোষণা করছে। গাজায় মুসলমানদের ওপর চলমান বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে জানিয়ে ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস)। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন বলেন, গাজায় মুসলমানদের ওপর এ বর্বরোচিত হামলা সহ্য করা যায় না। আমরা গাজাবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এ কর্মসূচি নিয়েছি। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের এ উদ্যোগে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।