ডাকসু নেতাদের জন্য নিয়ম ভেঙে এসি বসাচ্ছেন ভিসি
- শিক্ষা ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:৩৬ এম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক ঘাটতি চললেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে প্রায় ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে বসানো হচ্ছে ৯টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অফিস ছাড়া অন্য কোথাও এসি স্থাপনের অনুমতি নেই। তবু উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ ডাকসু নেতাদের চাপের মুখে অনুমোদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সিদ্ধান্তকে ‘অনিয়ম’ বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব বাজেট থেকেই গত সপ্তাহে এসি বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমোদনের সময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিদেশে ছিলেন, তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিল সংকুচিত, ছাত্রাবাস ও শ্রেণিকক্ষ সংকট চলমান, এমনকি পার্টটাইম শিক্ষার্থীদের নামমাত্র সম্মানীও সময়মতো দেওয়া যাচ্ছে না—এ অবস্থায় বিলাসবহুল খরচের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসন সূত্রের দাবি, প্রথমে উপাচার্য অনুমতি না দিলেও ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বারবার ফোন করে চাপ সৃষ্টি করেন, পরে পুনরায় ফাইল এনে অনুমোদন দেওয়া হয়।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি ছুটিতে থাকা অবস্থায় এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নাও কোন এখতিয়ারে, কোন নিয়মে এটি অনুমতি দেওয়া হয়েছে– আমি জানি না। আমি থাকলে অবশ্যই প্রশ্ন তুলতাম, এটা হওয়ার কথা না। সব কিছু একটি জবাবদিহির মধ্যে থাকা উচিত।”
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, “আমি রুটিন দায়িত্বের অংশ হিসেবে ফাইলটি উপাচার্যের কাছে ফরোয়ার্ড করেছি। আমি অনুমোদন করিনি, উপাচার্য করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আমি উদার হতে রাজি আছি। কিন্তু কোনো ফ্যান্সি কিছু দিতে হয়, এসি দিলে সে সুন্দর করে ঘুমাতে পারবে, এখানে আমি উদার হতে পারব না।”
সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুযায়ী (পিপিআর ৯৭ ধারা), কেবল জরুরি বা দুর্লভ পণ্য ক্রয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করা যায়। তবে এসি কেনায় সেই বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা (বিদ্যুৎ) আমিনুল ইসলাম জানান, “ডাকসু থেকে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে। প্রশাসন অনুমোদন দেওয়ায় আমরা ‘গ্রি’ কোম্পানির ৯টি এসি বসানোর কাজ করছি।”
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পরও এসি লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু প্রশাসন তখন অনুমতি দেয়নি। পরে তৎকালীন জিএস গোলাম রাব্বানী স্পন্সরের মাধ্যমে নিজ কক্ষে এসি বসালে সমালোচনার মুখে তা খুলে ফেলা হয়।
চলতি অর্থবছরে ডাকসুর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভবনের সংস্কার, সৌন্দর্য বর্ধন, সাউন্ড সিস্টেম ও ফিল্টারসহ বিভিন্ন খাতে ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। শুধু এসির জন্য খরচ হচ্ছে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, অনুমোদন অনুযায়ী ডাকসু ভবনে আসবাব, পর্দা, শৌচাগার, ওয়ার্কস্টেশন ও রং করার কাজ চলছে। সবগুলো কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) সম্পন্ন করা হচ্ছে।
ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এইচ এম মোশারফ হোসেন বলেন, “ডাকসু নেতারা সরাসরি প্রশাসনের কাছে এসি চেয়েছেন, প্রশাসন বরাদ্দ দিয়েছে। আমার মাধ্যমে এটি হয়নি।”
অন্যদিকে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “আমি এটা খোঁজ নেব, এটা কীভাবে হয়েছে। খবর নিয়ে দেখব যে, এসি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধিকারের কোনো ব্যাপার যদি থাকে, আমাকে দেখতে হবে।”
তবে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ডাকসুতে বসার অবস্থা ছিল না। আমরা শুধু দ্রুত একটা ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্ট তৈরির কথা বলেছিলাম, এসির বিষয়ে আলাদা কিছু বলিনি।”
ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, “আমরা পুরো সংস্কারকাজে চাপ দিয়েছি। এসি যদি বিলাসবহুল হয়, বিশ্ববিদ্যালয় না দিক। বাজেট ঘাটতির কারণে আমরা নিজের উদ্যোগে সিসিটিভি স্থাপন করেছি এবং পুরোনো জিনিস সংস্কার করে ব্যবহার করছি।”