কথা বলে উত্তেজনা বজায় রাখা রাজনৈতিক কৌশল: পরিবেশ উপদেষ্টা


কথা বলে উত্তেজনা বজায় রাখা রাজনৈতিক কৌশল: পরিবেশ উপদেষ্টা

রাজনীতিতে অযথা উত্তেজনা সৃষ্টি এখন একটি পরিকল্পিত কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো স্পষ্ট অভিযোগ নেই, তবু আলোচনার নামে উত্তেজনা ধরে রাখাই অনেকের উদ্দেশ্য।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের প্রতিশ্রুতির জায়গা থেকে পরিষ্কার করতে চাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে।” তিনি আরও বলেন, “কথা বলে উত্তেজনা বজায় রাখা রাজনৈতিক কৌশল।”

পদ্মা সেতু নিয়ে জনগণের গর্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা খুব পুলকিত পদ্মা সেতু নিয়ে। ঢাকা থেকে রওনা হয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টায় খুলনা পৌঁছে যাচ্ছি, এটা আনন্দিত হওয়ারই বিষয়।” তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিপুল অর্থ ব্যয় করে বড় প্রকল্প করা হলেও নদীভাঙন এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সুরক্ষা নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

তার বক্তব্যে তিনি তুলনা টেনে বলেন, “আমাদের হাতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবছর ৪০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকা থাকে নদীভাঙন এলাকার মানুষকে সুরক্ষা দিতে। কিন্তু পুরোনো বাঁধ মেরামত ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজন ১১০০ কোটি টাকা।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমরা যদি বলি ৫৫০ কোটি টাকার বদলে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়া হোক নদীভাঙন এলাকার মানুষের পাশে থাকতে, তাহলে সেটা কি সম্ভব হবে? কিন্তু ছয় লেনের সড়কের মতো মেগা প্রকল্পের কথা উঠলে সেখানে দ্বিধা দেখা যায় না।”

তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কোথায় বরাদ্দ বাড়ানো হবে, সে সিদ্ধান্ত নৈতিকতার ভিত্তিতে নেওয়া উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন একটা বাস্তবতা। সেখানে যদি আমি উন্নয়নকে টেকসই করতে চাই তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য ইনভেস্টমেন্ট না বাড়িয়ে কিন্তু আমি আমার উন্নয়নকে টেকসই করতে পারবো না।” পদ্মা সেতুর এলাকায় ভাঙনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আজকে এত বড়ো একটা পদ্মা সেতু আমাদের হলো, হঠাৎ করে জাজিরাতে ভাঙন ধরা পড়ল, ওই ভাঙন আসলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মতো ব্যয় না করে কোনোভাবেই প্রতিহত করা সম্ভব না।”

তিনি জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মাইক্রো লেভেলে সক্ষমতা বৃদ্ধির যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি ম্যাক্রো লেভেলে উন্নয়ন দর্শণটার পরিবর্তন করার দরকার আছে।” তিনি উল্লেখ করেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, তাই অন্তর্বর্তী সময়ে ছোট ছোট ভাঙন রোধে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা কঠিন কিছু নয়।

দুর্নীতি ও অর্থ অপচয়ের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “কত টাকা সরকারের দুর্নীতি করেই তো পাচার হয়ে যায়, কত টাকা অব্যবহৃত থেকে যায়।”

শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের পানি সরবরাহ প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডে সেই অর্থ জমা হচ্ছে, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহের দায়িত্ব বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নয়, বরং স্থানীয় সরকারের।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×