যুদ্ধবিরতির মাঝেই ইসরায়েলি পার্লামেন্টে পশ্চিম তীর দখলের বিল পাস


যুদ্ধবিরতির মাঝেই ইসরায়েলি পার্লামেন্টে পশ্চিম তীর দখলের বিল পাস

আন্তর্জাতিক নিন্দা উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজেদের ভূখণ্ডে যুক্ত করার পথে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পার্লামেন্ট ‘নেসেট’ বিতর্কিত একটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে, যা কার্যত পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দখলের সমতুল্য বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

গত মঙ্গলবার ১২০ আসনের নেসেটে বিলটি মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে ২৫ বনাম ২৪ ভোটে পাস হয়। আইন হিসেবে কার্যকর হতে এটিকে আরও তিন ধাপের ভোটে অনুমোদন পেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার দল লিকুদ পার্টি বিলটির বিরোধিতা করলেও জোটের কয়েকজন সদস্য এবং কিছু বিরোধী এমপি এর পক্ষে ভোট দেন।

নেসেটের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনের উদ্দেশ্য হলো “ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব জুদিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে (পশ্চিম তীর) প্রয়োগ করা।” বিলটি এখন সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মাস আগেই ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার অনুমতি না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে ইসরায়েল সফর করছেন।

লিকুদ পার্টি এক বিবৃতিতে এই ভোটকে “বিরোধী দলের উসকানি” হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। দলটি আরও জানায়, “আসল সার্বভৌমত্ব আইন দেখানোর ভান করে নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়।” বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিম তীর সংযুক্তির উদ্যোগ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে প্রায় শেষ করে দিতে পারে।

বিলটি নিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, হামাস, কাতার, সৌদি আরব এবং জর্ডান তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা একক ভৌগোলিক ইউনিট, যার ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌম অধিকার নেই।”

হামাসের ভাষায়, “এই বিলগুলো দখলদার ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী চেহারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। পশ্চিম তীর দখলের এই প্রচেষ্টা অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য।” কাতার একে আখ্যা দিয়েছে “ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ” হিসেবে।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সব ধরনের বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে রিয়াদ।”

জর্ডান তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, “এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে বড় বাধা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ।”

বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে সাত লাখেরও বেশি ইসরায়েলি অবৈধ বসতিতে বসবাস করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে ঘোষিত।

সূত্র: আল জাজিরা

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×