শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায়ের দিন ধার্য হবে ১৩ নভেম্বর


শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায়ের দিন ধার্য হবে ১৩ নভেম্বর

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণা করবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই তারিখ ঘোষণা করেন।

এদিন মামলার প্রসিকিউশনের যুক্তি উপস্থাপনের পর সমাপনী বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আগেরদিন (২২ অক্টোবর) বিকেলে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, “এ মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে আমরা জবাব দেবো। তবে কিছু অংশ আমরা উপস্থাপন করে জবাব দিয়েছি। চিফ প্রসিকিউটর ও অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য রাখবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।”

একই দিনে বিকেল সোয়া ৩টার পর আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিন দিনের যুক্তিতর্ক শেষে তিনি তার মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে তাদের খালাস চেয়ে আবেদন করেন।

টানা তিন দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিচারিক প্যানেল শুনানি পরিচালনা করেন, যার নেতৃত্ব দেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন সাক্ষীদের জবানবন্দির ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বিশেষভাবে রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য তুলে ধরে তাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “এ মামলার রাজসাক্ষী মামুন বাঁচতে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।” এছাড়া, মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যকে ভিন্ন মতাদর্শের কারণে প্রভাবহীন দাবি করেন। পরে রাজসাক্ষী মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদও তার খালাসের আবেদন করেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহম্মদ, মঈনুল করিম, সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা।

২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনের যুক্তিতর্কের দ্বিতীয় দিনে (২১ অক্টোবর) তিনি ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ বিষয়ে বর্ণনা দেন। তার যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের শাসনামল, একাত্তরের পটভূমি ও শাপলা চত্বরে হত্যাযজ্ঞসহ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রসঙ্গও উঠে আসে।

এর আগে, ১৬ অক্টোবর পাঁচ দিনব্যাপী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আদালতের উপর ছেড়ে দেন তিনি। প্রসিকিউশন তাদের শাসনামল ও মানবতাবিরোধী ঘটনাগুলোর বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করেন।

মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে গত ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের পক্ষ থেকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা করা হয়। এরপর বিচারিক প্যানেল যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেন।

এই মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজে রাজসাক্ষী হয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১০ জুলাই এই মামলায় শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে মামলায় পাঁচটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণ চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা জুড়ে। এই মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষী করা হয়েছে। ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×