
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর: ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক পরিস্থিতিকে “বিপর্যয়কর” বলে অভিহিত করেছেন। একইসঙ্গে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তীব্রভাবে নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (২৭ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধানদের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, “গাজায় মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের যৌথ চুক্তির পর্যালোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি জানান, ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এখন এই সংকটে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে “খোলামেলা সংলাপের” প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। এ সম্মেলনে কস্তা ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আরও সমন্বিত কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রে একই ধরনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা তৈরি করা প্রয়োজন নেই। বরং দক্ষতা ও ন্যায্যতা প্রয়োজন।” তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ককে সরাসরি ইউরোপের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে বলেন, ইউক্রেনকে সমর্থন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া এখন জরুরি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনও গাজার মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “গাজায় পরিস্থিতি ভয়াবহ ও সহ্যের বাইরে চলে গেছে। অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো দরকার। তিনি জানান, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। তবে একইসঙ্গে ইইউ ‘সমতা পুনঃস্থাপন তালিকা’ তৈরি করছে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়। ভন ডার লিয়েন বলেন, “আমরা একটি চুক্তির জন্য প্রস্তুত। তবে সন্তোষজনক সমাধান না এলে ইউরোপীয় স্বার্থ রক্ষায় আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ইউরোপীয় কাউন্সিল লিবিয়ার পরিস্থিতি এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও অভিবাসনের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ জানায়। বিশেষ করে তুরস্ক-লিবিয়া সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারককে তারা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে।

যুক্তরাষ্ট্রে কমছে ইসরায়েলের সমর্থন, বাড়ছে হামাসের প্রতি: জরিপ
ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকান জনগণের সমর্থন উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে। একই সঙ্গে দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের জনপ্রিয়তা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভ-এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত একটি নতুন জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজ পরিচালিত এই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছর ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকানদের সমর্থন ৮০ শতাংশ থেকে কমে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ইসরায়েলের বিরোধিতা করা মানুষের সংখ্যা ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। যা ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন কমার স্পষ্ট ইঙ্গিত। জরিপে আরও উঠে এসেছে, আমেরিকানদের মধ্যে হামাসের প্রতি সমর্থন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তরদাতাদের ২৫ শতাংশ হামাসকে ইসরায়েলের চেয়ে বেশি সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন, যা গত নভেম্বরে ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। এটি ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আমেরিকানদের দৃষ্টিভঙ্গির একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। হামাসের প্রতি সমর্থন তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে দেখা গেছে। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ হামাসকে ইসরায়েলের চেয়ে বেশি সমর্থন করার কথা বলেছেন। পঁচিশ থেকে চৌত্রিশ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার ৩৮ শতাংশ। এই জরিপের ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আমেরিকান জনসাধারণের মনোভাব পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। ইসরায়েলের জন্য এটি একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অবিচল সমর্থন তাদের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবার ইসরায়েলে সামরিক প্রযুক্তিতে হামলা, গোপন নথি ফাঁস
প্রো-রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধপন্থী) সাইবার ইউনিট ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রযুক্তি ফাঁস করে দিয়েছে। এর ফলে ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে এককভাবে নিজেদের অধীনে রাখা প্রযুক্তির দখলদারত্ব হারিয়েছে। এমনটা দাবি করে খবর প্রকাশ করেছে ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি। সাইবার সাপোর্ট ফ্রন্ট নামের প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি সাইবার হামলার মাধ্যমে দুটি প্রধান ইসরায়েলি সামরিক পণ্যের গোপন নথি প্রকাশ করেছে। প্রথমটি হলো হ্যাটোরিক্স (HattoriX)। এটি স্থলভিত্তিক গোয়েন্দা ও লক্ষ্য শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, যা দূরপাল্লার নিখুঁত হামলার জন্য ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয়টি হলো স্পাইক-এলআর ২ (SPIKE-LR2)। পঞ্চম প্রজন্মের মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম বিশিষ্ট একটি স্মার্ট গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যা আধুনিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ডিজাইন করা হয়েছে। এই দুটি প্রযুক্তিই সিআর কাস্টিং/এক্সাক্ট (CR Casting/EXACT) নামক একটি সামরিক-শিল্প প্রতিষ্ঠানের তৈরি। প্রতিষ্ঠানটি রাফায়েল এবং এলবিট সিস্টেমসের চুক্তিভিত্তিক সরবরাহকারী। আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রযুক্তিগুলো সম্প্রতি গাজা, লেবানন ও ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ব্যবহার করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। সাইবার সাপোর্ট ফ্রন্ট জানায়, তারা সিআর কাস্টিং/এক্সাক্ট-এর শিল্প অবকাঠামোতে প্রবেশ করে পূর্ণমাত্রার ডেটা ভাঙতে পেরেছে। তাদের এই সাইবার অভিযান মূলত ইসরায়েলের সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স ভেঙে ফেলার একটি বৃহৎ কৌশলগত অভিযানের অংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই একই সাইবার ইউনিট অতীতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক সরবরাহকারী বেন সিমন অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজেও হামলা চালিয়েছে। সাইবার ফ্রন্ট দাবি করে জানায়, তারা সেই প্রতিষ্ঠানের সব অপারেশনাল সিস্টেম অকার্যকর করে দিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলোর সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। তথ্যগুলো প্রতিরোধ আন্দোলনের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের কাছে ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই হামলার আগে রাফায়েলের সিস্টেমেও সাইবার আক্রমণ চালানো হয়েছিল, যার ফলে চলমান সামরিক প্রযুক্তিতে কার্যকরী বিভ্রাট ঘটে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ নেটওয়ার্কের ক্রমাগত দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের সামরিক প্রযুক্তি খাতে আরও ভয়াবহ হামলা আসতে পারে।

স্কুলে বিস্ফোরণের পর আতঙ্ক, কমপক্ষে ২৯ শিক্ষার্থী নিহত
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাঙ্গুইয়ের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ২৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২৬০ জন আহত হয়। দুটি হাসপাতাল সূত্রের বরাতে রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার (২৫ জুন) বাঙ্গুইয়ের বার্থেলেমি বোগান্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থিত পরীক্ষা কেন্দ্রে ছয়টি স্কুলের ৫০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছিল। এমন সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, 'আমরা সত্যিই আশ্চর্য হয়ে পড়েছিলাম। এটা ভয়াবহ ছিল।' তবে আরেকটি মেডিকেল সূত্র মৃতের সংখ্যা ৩১ বলে দাবি করেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শব্দে শিক্ষার্থীরা ভেবেছিল ভবনটি ধসে পড়বে। তিনি রয়টার্সকে বলেন, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু শিক্ষার্থী প্রথম তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে। পরীক্ষার্থীদের বয়স প্রায় ১৮-২২ বছর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্কুলের মূল ভবনে অবস্থিত একটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়েছিল। এই ঘটনার ফলে আতঙ্কে 'অনেকজন গুরুতর আহত হয়েছেন, দুর্ভাগ্যবশত কিছু মৃত্যুও হয়েছে'। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলে আঘাত হানে অর্ধশত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র, সাইরেন বাজে ২০ হাজার বার
১২ দিনের সংঘাতে ইরান ও ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক খতিয়ান ও সার্বিক বিবরণ প্রকাশ করেছে তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু। এ সময় ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, তার মধ্যে অন্তত ৫০টি ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে সরাসরি দেশটির বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। এই সংঘাত শুরু হয়েছিল ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর হামলার মাধ্যমে, যার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা জবাব দেয় তেহরান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। দুই পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত এখন প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।ইসরায়েল এই পুরো সময়কালজুড়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ওপর কড়া সেন্সরশিপ আরোপ করে, যার ফলে দেশটির সামরিক ও নিরাপত্তা স্থাপনায় আঘাত সংক্রান্ত ছবি বা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ বন্ধ রাখা হয়। ফলে ইসরায়েলের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র এখনও অস্পষ্ট। তেল আবিবভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ জানায়, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, জরুরি সেবা সংস্থা মেগান ডেভিড এ্যাডম এবং স্বাস্থ্য, কল্যাণ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ইসরায়েলের দিকে মোট ৫৯১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার অন্তত ৫০টি সরাসরি লক্ষ্যভেদ করে। এছাড়া ইরান ১,০৫০টিরও বেশি ড্রোন পাঠায়, যার মধ্যে ৫৭০টি ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। তবে শুধু একটি ড্রোনই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যায় বলে দাবি করা হয়। এই হামলা চলাকালীন দেশব্যাপী প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ বার সাইরেন বাজানো হয় এবং ইসরায়েল দাবি করে যে তারা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৯৯ শতাংশ ড্রোন প্রতিহত করেছে। ইরানের এই হামলায় ইসরায়েলে ২৯ জন নিহত হয় এবং ৩ হাজার ৪৯১ জন আহত হন, যাদের মধ্যে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় আহত হন বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। লক্ষ্যবস্তু এলাকা থেকে প্রায় ১১ হাজার জনকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং কর্তৃপক্ষের কাছে ৩৮ হাজারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ জমা পড়ে। জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানে ১,৪৮০টিরও বেশি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, এই হামলায় ইরানের ২০টি যুদ্ধবিমান, প্রায় এক হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক (মিসাইল লঞ্চার) ধ্বংস করা হয়। তেহরান, তাবরিজ, কেরমানশাহ, লোরেস্তান ও মাশহাদসহ ইরানের অন্তত ২০টি শহরে বিমান হামলা চালানো হয়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এসব হামলায় ৬২৭ জন নিহত এবং কমপক্ষে চার হাজার ৮৭০ জন আহত হন।নিহতদের মধ্যে ইরানের অন্তত ২৫ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি এবং আইআরজিসির অ্যারোস্পেস কমান্ডার আমির আলি হাজিজাদে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুপ্তচররা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং তাদের বেশ কয়েকটি অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করে, যা নজিরবিহীন। ইরান ১১ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করলেও ইসরায়েল দাবি করে এই সংখ্যা ১৫ জনেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে ইরানের ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, ফোরদো কেন্দ্রটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে গেছে। সামরিক স্থাপনার বাইরেও ইসরায়েল ইরানের অবকাঠামোতে হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল রেড ক্রিসেন্ট, তেহরানের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, একটি বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের আটক রাখা এভিন কারাগার। ইরান জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে ৭০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া ইরান দাবি করে, তারা হাজার হাজার ড্রোন ও ইউএভি (কামিকাজে মডেলসহ) জব্দ করেছে এবং গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে পূর্বে দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তেহরান আরও জানায়, তারা ইসরায়েলের তিনটি হার্মেস ড্রোন ও একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে ইসরায়েল এখনও এফ-৩৫ ধ্বংসের দাবি নিশ্চিত করেনি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এখনো ইরানের কিছু অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে, এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সচল রয়েছে। ড্রোন দেখা যাওয়ার ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে।

৫২ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ পতনের মুখে মার্কিন ডলার
মার্কিন ডলার ভয়াবহ পতনের মুখে পড়েছে। বছরের প্রথমার্ধ শেষ হতে না হতেই বৈশ্বিক মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলার সূচক ১০ শতাংশের বেশি হারিয়েছে-যা ১৯৭৩ সালে ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট চালু হওয়ার পর প্রথমার্ধে সবচেয়ে বড় ধস। খবর রয়টার্স। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে প্রকাশ্যে ‘ব্যর্থ’ আখ্যা দেয়া এবং আসন্ন নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের ঘোষণার প্রভাবেই এই ধস নেমেছে। এর ফলে ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বাজারে। এছাড়া ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনীতির কিছুটা পুনরুত্থান এবং জার্মানির বাজেট বৃদ্ধি, ন্যাটো দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণাও ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইউরোর মান চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১.১৭ ডলার ছাড়িয়েছে, সুইস ফ্রাঁ এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ব্রিটিশ পাউন্ড ২০২১ সালের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। ট্রাম্প ন্যাটো সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে বলেন, তিনি শিগগিরই জেরোম পাওয়েলের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য নতুন ফেড চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘পাওয়েল একজন ভয়ানক চেয়ারম্যান, তাকে সরাতে হবে।’ ফেড চেয়ারম্যানের ওপর এমন রাজনৈতিক চাপ ফেডের স্বাতন্ত্র্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ইতিমধ্যে মার্কেট ফিউচার ইঙ্গিত দিচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে সুদের হার কমে ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে। তেলবাজারেও দেখা গেছে নাটকীয় পরিবর্তন। ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম ২০ শতাংশ কমে গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের ওপর আরোপিত তেল বিক্রির নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হতে পারে। এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও বিশ্ববাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ডলারের পতনের মাঝেও শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এমএসসিআই’র অল-কান্ট্রি সূচক নতুন রেকর্ড গড়েছে। নাসডাক ১০০-ও সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এস\এন্ড পি (S\&P) ৫০০ সূচকও সর্বোচ্চ থেকে মাত্র ১ শতাংশ দূরে রয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে মে মাসের বাণিজ্য ঘাটতি, টেকসই পণ্যের অর্ডার, বেকার ভাতার দাবি, পেন্ডিং হোম সেলস এবং করপোরেট আয়ের একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হবে। এছাড়া ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ফেড কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখবেন। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা ডলার ও বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। আর তারই প্রাথমিক প্রমাণ হচ্ছে, এই বছরের প্রথম ছয় মাসে ডলারের রেকর্ডধর্মী পতন।

ন্যাটোর ব্যয় বৃদ্ধি রাশিয়ার নিরাপত্তার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না: ল্যাভরভ
প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ন্যাটোর নতুন সিদ্ধান্ত রাশিয়ার নিরাপত্তার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। বুধবার ন্যাটো জোট রাশিয়ার 'দীর্ঘমেয়াদী হুমকি এবং নিজেদের বেসামরিক ও সামরিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার' কথা উল্লেখ করে আগামী দশকে তাদের সম্মিলিত ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা মোট জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করতে সম্মত হয়। ল্যাভরভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমাদের নিরাপত্তার ওপর এই ৫ শতাংশ লক্ষ্যের প্রভাব সম্পর্কে - আমি মনে করি না এটি তাৎপর্যপূর্ণ হবে।' তিনি বলেন, 'আমরা জানি আমরা কোন লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করছি, আমরা সেগুলো গোপন করি না, আমরা প্রকাশ্যে সেগুলো ঘোষণা করি। জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলোর যে কোনো ব্যাখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো সম্পূর্ণ বৈধ এবং আমরা জানি কোন উপায়ে আমরা সর্বদা এই লক্ষ্যগুলো নিশ্চিত করব। এদিকে, রাশিয়া এই বছরের বাজেটের ৪০ শতাংশেরও বেশি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করছে। তারা ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণের কোন ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশে ইসরায়েলের হামলা
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটিতে পৃথকভাবে দুটি হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল দুটি পৃথক বিমান হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শাকরা ও বারাশিত শহরের মাঝে একটি বুলডোজারে ইসরায়েল ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেইত লিফ শহরে একটি মোটরসাইকেলে ড্রোন হামলা হয়েছে। এতে আরও একজন নিহত হয়েছেন। গত বছরের নভেম্বরে ইসরায়েল ও লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে এরপরও দেশটি নিয়মিতভাবে লেবাননে হামলা চালিয়ে আসছে। এতে একের পর এক মানুষ প্রাণ দিচ্ছেন। এর আগে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যায় ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। ট্রুথ স্যোশালে এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে চূড়ান্তভাবে সম্মতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে, এরপরই যুদ্ধকে সমাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’ ট্রাম্প আরও জানান, প্রথমে ইরান যুদ্ধবিরতি শুরু করবে, এরপর ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যোগ দেবে। মোট ২৪ ঘণ্টা পর এই ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বিশ্বব্যাপী সমাপ্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। তিনি লেখেন, যুদ্ধবিরতির সময় দুপক্ষই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখবে। আমরা ধরে নিচ্ছি, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে যা অবশ্যই হবে। এ জন্য আমি ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশকে সাহস, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার জন্য অভিনন্দন জানাই। এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারত এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বছর বছর ধরে চলতে পারত, কিন্তু তা হয়নি এবং কখনোই হবে না!’

ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন নেতানিয়াহু
নিজের ও দেশের প্রতি সমর্থনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের আদালতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলা বন্ধে ট্রাম্পের আহ্বানের পর এই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে নেতানিয়াহু লিখেছেন, আমার, ইসরায়েল ও ইহুদি জাতির প্রতি আপনার চমৎকার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সাধারণ শত্রুদের পরাজিত, বন্দিদের মুক্ত এবং দ্রুত শান্তির পরিসর বিস্তৃত করতে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’’ পরে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের বক্তব্যটি ট্রুথ সোশ্যাল থেকে শেয়ার করেন। ওই পোস্টে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলাকে ‘‘হাস্যকর ষড়যন্ত্র’’ বলে আখ্যায়িত করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে নরক থেকে ফিরে এসেছি। ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের চতুর ও কঠিন শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। বিবির (নেতানিয়াহু) চেয়ে ভালো, তীক্ষ্ণ ও শক্তিশালী কেউ পারতো না। পবিত্র ভূমির প্রতি তার ভালোবাসা অতুলনীয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘অন্য কেউ হলে ক্ষতি, অপমান আর বিশৃঙ্খলার মুখে পড়তো! কিন্তু নেতানিয়াহু একজন যোদ্ধা। সম্ভবত ইসরায়েলের ইতিহাসে এমন আর কেউ ছিল না।’’ সূত্র: আল জাজিরা।

ইসরায়েল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, এই ভয়ে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ায়: খামেনি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দাবি করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল যে যদি তা না করে, তাহলে ইসরায়েল “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে”।’ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। এ নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে আল জাজিরা ও দ্য টাইমস অব ইসরায়েল। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আরও বলেন, ‘ যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এখানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বিজয় লাভ করেছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের মুখে এক কঠিন থাপ্পড়।’ খামেনি যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করেছে। কারণ তারা মনে করেছিল ইহুদিবাদী শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। ইহুদিবাদী সরকার কার্যত ইসলামি প্রজাতন্ত্রের আঘাতে পরাজিত ও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে।’ এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির পর প্রথম বার্তা দিয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। এ বার্তায় তিনি বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ভ্রান্ত ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন। ইসরায়েলকে উদ্দেশ করে তিনি এমন বার্তা দিয়েছেন। তিনি শিগগিরই জাতির উদ্দেশে ভিডিও বার্তা দেবেন জানিয়েছে আল জাজিরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তেহরানে তার নিয়মিত বাসভবনে অবস্থান না করে নিরাপদ বাংকারে অবস্থান করছেন। তবে যুদ্ধবিরতির পর থেকে তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিবিসি জানিয়েছে, দীর্ঘ এ যুদ্ধে দেশটির পরিবেশ অনেকটাই বদলে গেছে। ফলে প্রকাশ্যে এসেই দেশের পরিস্থিতি দেখে বড় ধাক্কা খাবেন খামেনি।

মেক্সিকোয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গুলিতে নিহত ১১, আহত ২০
মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য গুয়ানাহোয়াতোয় খ্রিস্টান ক্যাথলিকদের ধর্মীয় উদযাপন অনুষ্ঠানে গুলিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে রাজ্যটির ইরাপুয়াতো শহরে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার গুয়ানাহোয়াতোর অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর জানিয়েছে, গুলিতে জখম ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম বুধবার সকালে জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে শিশুও আছে। পরে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর নিশ্চিত করে, নিহতদের মধ্যে শুধু একজনের বয়স ১৮-এর নিচে, তার বয়স ১৭ বছর। শেইনবাউম বলেন, যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সেইন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্টের জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে রাতে একটি অনুষ্ঠান চলার সময় সেখানে গুলির ঘটনাটি ঘটে। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি হাউজিং কমপ্লেক্সের প্রাঙ্গণে লোকজন নাচছেন; আর তাদের পেছনে একটি ব্যান্ড বাজনা বাজাচ্ছে, এরমধ্যে সেখানে গুলির শব্দ শোনা যায়। রয়টার্স জানিয়েছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। অনেক বছর ধরেই মেক্সিকোর সবচেয়ে সহিংস অঞ্চলগুলোর একটি গুয়ানাহোয়াতো। এখানে প্রায়ই মাদক চোরাচালানের রুটগুলোর দখল নিয়ে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রাণঘাতী লড়াই হয়। এসব গোষ্ঠীগুলো অন্য অপরাধও করে। অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাজ্যটির আরেকটি স্থানে সহিংসতার আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

আমেরিকার মুখে কঠিন থাপ্পড় মেরেছে ইরান: খামেনি
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ অবসানের পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে প্রবেশ করেছে। কারণ তারা মনে করেছিল, যদি তা না হয়, তাহলে ইহুদিবাদী শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। ভাষণের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে কোনও সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ইরান বিজয়ী হয়ে উঠতে পেরেছে এবং আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় দিয়েছে। ইংরেজি ভাষার এক বার্তায় খামেনি বলেন, ‘‘আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় মেরেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।’’ তিনি বলেন, ট্রাম্প এক ভাষণে বলেছিলেন, ইরানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। ট্রাম্প সেই সত্য উন্মোচন করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইরানের আত্মসমর্পণে সন্তুষ্ট হবে। কিন্তু ইরান কখনই আত্মসমর্পণ করবে না। আমাদের জাতি শক্তিশালী। ইরানের বিরুদ্ধে যদি কেউ যদি আবারও আগ্রাসন দেখানোর চেস্টা করে তাহলে এরজন্য চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের মূল্য চড়া হবে। ইহুদিবাদীরা (ইসরায়েল) কখনও ভাবেনি তারা ইরানের কাছ থেকে এমন ধাক্কা খাবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শত্রুদের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তাদের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে আঘাত হেনেছে। সূত্র: আল জাজিরা।

গাজায় ত্রাণ বিতরণ যেন এক ভয়াবহ মৃত্যুর ফাঁদ, চার সপ্তাহে নিহত ৫৪৯
গাজা উপত্যকায় ত্রাণ বিতরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে গত চার সপ্তাহে ত্রাণ নিতে গিয়ে কমপক্ষে ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৬ মে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাদের খোলা চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর এই ‘মৃত্যুর ফাঁদে’ এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৬৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই তথাকথিত “ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে” যা ঘটছে তা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ, যার জন্য ইসরায়েলি দখলদারিত্ব প্রাথমিক এবং প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। আমরা এই চলমান অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাই, যেখানে ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের প্রলুব্ধ করা হয় এবং তারপর পূর্ব-নির্ধারিত সময়সূচী অনুসারে প্রতিদিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।’ গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আরও জানিয়েছে, ‘দখলদাররা খাদ্যকে গণহত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যাকে তারা “সহায়তা” বলে দাবি করে কিন্তু ধ্বংস ও আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ারে পরিণত করছে।’ প্রসঙ্গত, ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে অবরোধের পর আন্তর্জাতিক চাপে গত ২৬ মে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় জিএইচএফ— ত্রাণ বিতরণ সংস্থা খোলার ঘোষণা দেয় ইসরায়েলি। জাতিসংঘসহ অন্যান্য খাদ্য সংস্থা জিএইচএফর এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, এই উদ্যোগ মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে এবং ত্রাণকে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি করে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এই ত্রাণ কার্যক্রম শারীরিকভাবে দুর্বলদের পিছে ঠেলে দেবে এবং মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে, বিপদের মুখে ফেলবে এবং বৈশ্বিকভাবে ত্রাণ বিতরণের জন্য একটি খারাপ নজির তৈরি করবে। ইসরায়েল অবশ্য বলছে, হামাস যাতে ত্রাণ চুরি না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। যদিও ইসরায়েলের এই চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস। সূত্র: আলজাজিরা

যুদ্ধবিরতির পর খামেনির প্রথম বার্তা, বিজয়ের ঘোষণা
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর প্রথম বার্তা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। এ বার্তায় তিনি বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানে হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ভ্রান্ত ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন। ইসরায়েলকে উদ্দেশ্য করেই তিনি এমন বার্তা দিয়েছেন। আলজাজিরা জানিয়েছে, তিনি শিগগিরই জাতির উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তা দেবেন। এর আগে সংবাদমাধ্যম জানায়, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তেহরানে তার নিয়মিত বাসভবনে অবস্থান না করে নিরাপদ বাংকারে অবস্থান করছেন। তবে যুদ্ধবিরতির পর থেকে তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিবিসি জানিয়েছে, দীর্ঘ এ যুদ্ধে দেশটির পরিবেশ অনেকটাই বদলে গেছে। ফলে প্রকাশ্যে এসেই দেশের পরিস্থিতি দেখে বড় ধাক্কা খাবেন খামেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খামেনি যখন প্রকাশ্যে আসবেন, তিনি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দেশ দেখতে পাবেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত, ক্ষতবিক্ষত এবং গভীরভাবে ক্ষুব্ধ এক ইরান দেখবেন। ৮৬ বছর বয়সী খামেনি যুদ্ধের সময় প্রাণনাশের ভয়ে গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নেন। সেখানে সকল ধরনের ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন তিনি। এমনকি শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায় ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করেননি। যখন তিনি প্রকাশ্যে আসনে তখন মৃত্যু ও ধ্বংসের একটি দৃশ্য দেখতে পাবেন। তিনি সম্ভবত রাষ্ট্রীয় টিভিতে দাবি করবেন যে তিনি এই সংঘাতে বিজয়ী হয়েছেন। তবে, তিনি নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হবেন। যুদ্ধে ইরানের সামরিক অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অনেক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইরানের বেশিরভাগ পারমাণবিক স্থাপনাও বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির অর্থনীতি বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় ভেঙে পড়েছে। এক সময়ের প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশ এখন দরিদ্র হয়ে গেছে। অনেক ইরানি আয়াতুল্লাহ খামেনিকে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘাতের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করবেন। তারা তাকে ইসরায়েল ধ্বংসের আদর্শিক লক্ষ্য এবং পরমাণু অস্ত্র অর্জনের মাধ্যমে শাসনকে অজেয় করার বিশ্বাসের জন্য দোষারোপ করবেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার প্রফেসর লিনা খাতিব বলেন, ইরানী শাসন আর কতদিন টিকবে তা অনুমান করা কঠিন, তবে এটি শাসনের শেষের শুরু বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খামেনি সম্ভবত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শেষ ‘সর্বোচ্চ নেতা’ হবেন।

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করে ফ্রান্স
ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরানের সামরিক বাহিনীর ছোড়া ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি জানিয়েছে ফ্রান্স। ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ চলাকালীন ফ্রান্সের সামরিক বাহিনী তেহরানের একাধিক ড্রোন ভূপাতিত করেছিল বলে দাবি করেছে প্যারিস। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ফ্রান্সে সংসদীয় বিতর্কের সময় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লিকোর্নু বলেন, অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ১২ দিনের সংঘর্ষ চলাকালীন ইরান থেকে ইসরায়েলে হামলার উদ্দেশ্যে পাঠানো ড্রোনগুলোকে বাধা দিয়েছিল ফরাসি সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত করতে পারি, গত কয়েক দিনে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চালানো বিভিন্ন সামরিক অভিযানের সময় ফরাসি সেনাবাহিনী ১০টিরও মতো ড্রোন প্রতিহত করেছে। এসব ড্রোন কখনও স্থল থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার, আবার কখনও আমাদের রাফাল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ধ্বংস করা হয়েছে।’’ পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিতর্কের একটি ভিডিও শেয়ার করে লিকোর্নু লিখেছেন, ‘‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ইরানে হামলায় অংশ নেয়নি। তবে আমরা বৈধ আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে ওই অঞ্চলে আমাদের ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘ইরান থেকে ছোড়া কয়েকটি ড্রোন আমাদের ঘাঁটির ওপর দিয়ে ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল। আমরা সেসব ড্রোন মাঝপথেই আটকে দিয়েছি।’’ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত চলাকালে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান প্রায় ৫৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১ হাজারের মতো ড্রোন নিক্ষেপ করেছিল। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মাঝে অস্ত্রবিরতি হয়। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের সংঘাতের অবসান ঘটে। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল।

নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়া জোহরান মামদানি ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ ধন্যবাদ জানালেন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি। ৩৩ বছর বয়সী এই প্রার্থী নির্বাচিত হলে হবেন নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র এবং প্রথম মুসলিম ব্যক্তি যিনি এই পদে আসীন হবেন। এখনো ৪ নভেম্বরের নির্বাচনের জন্য সময় বাকি থাকলেও এরই মধ্যে তিনি ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। বামপন্থি রাজনীতিতে বিশ্বাসী জোহরান তার রাজনৈতিক এজেন্ডা ও কর্মসূচির মাধ্যমে নিউইয়র্কের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্বল্পমূল্যের সরকারি মুদিদোকান, দুই লাখ নতুন ভাড়ানিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ, আগামী চার বছর অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি, শিশুদের জন্য বিনা খরচে ডে-কেয়ার এবং গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিনা ভাড়ার বাস চালু করার পরিকল্পনা তার প্রচারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।এই নির্বাচনী যাত্রায় বাংলাদেশি অভিবাসী কমিউনিটির অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন জোহরান। প্রার্থী হওয়ার পর ২৪ জুন মধ্যরাতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক আবেগঘন ভাষণে তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালানো বাংলাদেশি নারীদের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশি আন্টিরা আমার হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে শ্রম দিয়েছেন, তাতে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।' নিউইয়র্কের একমাত্র বাংলাদেশি কাউন্সিলর শাহানা হানিফও এই প্রচারণায় পাশে ছিলেন জোহরানের। সম্প্রতি বাংলায় প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় তিনি ও শাহানা অভিবাসী কমিউনিটির কাছে ভোট চেয়েছেন। ২৪ জুন অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে শাহানা নিজেও ডেমোক্রেটিক পার্টির কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন। এই নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় জোহরানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হলো সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে প্রার্থিতা নিশ্চিত করা। তার এই সাফল্য মার্কিন রাজনীতিতে তরুণ, অভিবাসী ও মুসলিম প্রার্থীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জোহরান মামদানির আরেকটি ব্যতিক্রমী দিক হলো, তার ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরির সক্ষমতা। তিনি ধনী নন, রাজনীতির ঘরোয়া পরিবেশেও নতুন। এ কারণেই তার ক্যাম্পেইনে নীতিনির্ধারণের পাশাপাশি সামাজিক সহানুভূতি ও অন্তর্ভুক্তির বার্তা গুরুত্ব পেয়েছে। জোহরান মামদানি শুধু একজন প্রার্থী নন, তিনি নিউইয়র্কের বহুজাতিক, বহু-ভাষিক এবং বহু-সংস্কৃতির প্রতিনিধি। বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরা তার প্রতি যে সমর্থন দেখাচ্ছেন, তা প্রমাণ করে, রাজনীতির শক্তি কখনো কখনো একতার মধ্যে নিহিত থাকে। পাঁচ মাস পরের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, ইতোমধ্যেই জোহরান নিজের মতো করে একটি ইতিহাস তৈরি করে ফেলেছেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা জোরদার করেছে মধ্যস্থতাকারীরা: হামাস
ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত থাকলেও গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির চেষ্টা জোরদার করেছে মধ্যস্থতাকারীরা–– হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সম্প্রতি এ নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ইসরায়েল ও ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে ‘বড় অগ্রগতি’ হচ্ছে এবং তার দূত স্টিভ উইটকফ মনে করেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন ত্রাণ নিতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, মঙ্গলবার বোমা হামলায় সাত সৈন্য নিহত হয়েছে, যে হামলার দায় স্বীকার করেছে হামাস। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বিমান হামলার কথা উল্লেখ করে বুধবার ট্রাম্প বলেছেন, আমি মনে করি গাজায় দারুণ অগ্রগতি হচ্ছে, আমার মনে হয় এই হামলার কারণেই এটি ঘটছে। ‘আমি মনে করি আমরা খুব ভালো কিছু খবর পাবো। আমি স্টিভ উইটকফের সাথে কথা বলছিলাম এবং তিনি আমাকে বলেছিলেন যে গাজার বিষয়টিও খুব কাছাকাছি,’ তিনি আরও বলেন। ট্রাম্পের কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই, হামাসের েএক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তবে, তিনি এটাও বলেন, সংগঠনটি এখন পর্যন্ত নতুন কোনো প্রস্তাব পায়নি। মে মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতা চুক্তির প্রচেষ্টা থেমে গিয়েছিল, যখন উইটকফ বলেছিলেন হামাস ইসরায়েলের সমর্থনে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রস্তাবে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ সংশোধনী চেয়েছে, যেখানে অর্ধেক জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং যারা মারা গেছেন তাদের অর্ধেকের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান ফের শুরু করে, যার ফলে ভেঙে যায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি। তখন তারা বলেছিল, জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য তারা হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। ৫০ জন এখনো গাজায় রয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলেও তারা মনে করে। মার্চের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। মার্কিন মিত্রদের চাপ এবং পাঁচ লক্ষ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি হচ্ছে- বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের এমন সতর্কবার্তার ১১ সপ্তাহ পরে আংশিকভাবে তা শিথিল করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামরায় কমপক্ষে ৫৬ হাজার ১৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

ইরানকে দেখে শিক্ষা, আর থামবেন না কিম
ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। এ নিয়ে দরকষাকষি ও সম্ভাব্য চুক্তির আলোচনার মধ্যেই তেহরানে হামলা করে বসল তেলআবিব। ইরানের পাল্টা প্রতিরোধে ইসরায়েল যখন কোণঠাসা তখন যুক্তরাষ্ট্র বি-২ বোম্বার পাঠিয়ে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বাঙ্কার-বাস্টার ফেলল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব মোড়লের এমন আগ্রাসী কাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিরোধী শক্তি। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের চাপে থাকা উত্তর কোরিয়া ইরানের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে আমেরিকান বি-২ বোমারু বিমানের হামলা বিশ্বের উদীয়মান শক্তিকে নাড়িয়ে দেয়। পূর্ব এশিয়ার নীতিনির্ধারক এবং বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যেই ঘটনার মূল্যায়ন শুরু করেছেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সমাধানের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই ঘটনা উত্তর কোরিয়ার কাছে কী সংকেত পাঠাবে, যে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রাগার ইরানের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত? বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ওয়াশিংটনের সামরিক পদক্ষেপ পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্র কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার এবং রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করার সংকল্পকে আরও শক্ত করতে পারে। পাশাপাশি কিম জং উনের পশ্চিমা বিশ্ব বিরোধী বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। উত্তর কোরিয়ার মনে করা স্বাভাবিক যে, কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে মার্কিন-প্ররোচনার বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রই চূড়ান্ত প্রতিরোধক। উত্তর কোরিয়াকে তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ করতে রাজি করার জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কিম সরকারের কাছে একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। সেই সঙ্গে এমন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা সম্ভাব্যভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারে। যার অর্থ কোরিয়ান উপদ্বীপে যে কোনো সম্ভাব্য সামরিক হামলার ঝুঁকি অনেক বেশি হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর কোরিয়ান গবেষণার অধ্যাপক লিম ইউল-চুল বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হামলা নিঃসন্দেহে উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা টিকে থাকার এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দীর্ঘস্থায়ী নীতির বৈধতাকে আরও জোরদার করবে। উত্তর কোরিয়া সাম্প্রতিক মার্কিন বিমান হামলাকে একটি পূর্ব-সামরিক হুমকি হিসেবে দেখে এবং সম্ভবত পূর্ব-সামরিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করবে। শুধু উত্তর কোরিয়া নয়; রাশিয়াও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বাড়াতে পারে। প্রভাবশালী রুশ রাজনৈতিক দার্শনিক এবং ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার ডুগিন বলেন, কেউ কেউ এখনো এই ভ্রমের মধ্যে আছেন যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোনোভাবে আমাদের পাশ কাটিয়ে যাবে। তা হবে না। আমরা এরই মধ্যে এর গভীরে রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মিত্র ইরানের বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালিয়েছে। কিছুই তাদের থামায়নি। যদি কিছুই তাদের ইরানে বোমা হামলা থেকে না থামায়, তবে পরে আমাদের লক্ষ্যবস্তু করা থেকেও কিছুই তাদের থামাবে না। কোনো এক সময় তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, রাশিয়া ইরানের মতো পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়া উচিত নয়—অথবা হামলার জন্য অন্য কোনো অজুহাত খুঁজে পেতে পারে। কোনো ভুল করবেন না। আমরা যুদ্ধে রয়েছি।

চীন সফরে গেলেন ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দুই দিন পর, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ দুই দিনের সফরে চীন গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিস জানিয়েছে, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে এবং চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা ও আলোচনা করতে চীন সফর করছেন তিনি। বিবিসি বলছে, এমন এক সময়ে তার এই সফর হচ্ছে, যখন ইরানের সামরিক ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা বাড়ছে। ইসরায়েলি আক্রমণের প্রথম ঘণ্টায় দেশটি কীভাবে সহজেই তার আকাশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

যুদ্ধের সময় দৃঢ়ভাবে পাশে থাকায় ভারতকে ধন্যবাদ জানাল ইরান
ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় ভারতের জনগণ ও নানা প্রতিষ্ঠান পাশে দাঁড়ানোয় দেশটির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ইরান। ভারতে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস এক বিবৃতিতে এই সহমর্মিতা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানায়। ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে বুধবার (২৫ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের জনগণ, রাজনৈতিক দল, সংসদ সদস্য, এনজিও, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীরা ইরানের পাশে দৃঢ়ভাবে ও স্পষ্টভাবে দাঁড়িয়েছেন। এই আন্তরিক সহানুভূতির জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।” ভারতে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস আরও বলেছে, “যখন ইসরায়েলের নৃশংস হামলার মুখে ইরানি জনগণ চরম সংকটে ছিল, তখন ভারতের জনগণের প্রকাশ্য বিবৃতি, শান্তিমূলক সমাবেশে অংশগ্রহণ এবং নৈতিক সমর্থন আমাদের জন্য বড় প্রেরণা হয়েছে। এটা প্রমাণ করে, বিশ্বমানবতার বিবেক এখনো জাগ্রত এবং তারা ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বিবৃতিতে ভারত-ইরান সম্পর্কের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বন্ধনকে স্মরণ করে বলা হয়, “এই সংহতি শুধুই রাজনৈতিক অবস্থান নয়, এটি ন্যায়, আইন ও বৈশ্বিক শান্তির প্রতি সমর্থন।” ইরান আরও জানায়, তারা সবসময় আন্তর্জাতিক আইনের মর্যাদা রক্ষার পক্ষে এবং আগ্রাসী ও সম্প্রসারণবাদী নীতির বিরুদ্ধে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসমূহের ঐক্য ও সংহতি যুদ্ধ, সহিংসতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ। বিবৃতির শেষাংশে ভারতের জনগণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থনের জন্য আবারও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। ইরান বলেছে, “এই ঐতিহাসিক ও মানবিক বন্ধন আমাদের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের পথে আরও দৃঢ় করবে।”

ইরান সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছে : ট্রাম্প
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাত শেষে ইরানের প্রশংসা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘ইরান সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে’ বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (২৫ জুন) নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা ওয়াশিংটনের আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘ইরান মাত্রই একটি যুদ্ধ শেষ করল এবং তারা সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে।’ ‘যদি তারা (ইরান) তেল বিক্রি করতে চায়, চীন চাইলে ইরানের কাছ থেকে তেল কিনতে পারে। কারণ, দেশটির (ইরানের) আবার ঠিক হওয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন’, বলেন তিনি। এ সময় ইরানে মার্কিন হামলাকে হিরোশিমায় বোমা ফেলার সঙ্গে তুলনা করেন ট্রাম্প। বলেন, গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো মার্কিন হামলায় দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি দশক পিছিয়ে গেছে। পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্প বলেন, আমি হিরোশিমা বা নাগাসাকির উদাহরণ দিতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেই একই ধরনের ঘটনা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। এই হামলাই ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বন্ধ করেছে।

‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান ঐশ্বরিক বিজয় পেয়েছ’
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান ‘ঐশ্বরিক বিজয়’ অর্জন করেছে বলে দাবি করেছে লেবাননের প্রভাবশালী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। বুধবার (২৫ জুন) এক বিবৃতিতে ইরানকে এই ‘গৌরবময় ও ঐতিহাসিক বিজয়’-এর জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে গোষ্ঠীটি। খবর মেহের নিউজ এজেন্সির। হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে বলা হয়, এই বিজয় প্রকাশ পেয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পরিচালিত সুনির্দিষ্ট ও ব্যথাতুর হামলায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিপরীতে ইরানের দ্রুত ও দৃপ্ত প্রতিক্রিয়ায়। সংগঠনটি আরও বলেছে, এটি কেবল একটি সামরিক সাফল্য নয়, বরং আমেরিকান আধিপত্য ও ইহুদি দম্ভের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক নতুন ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৩ জুন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকার দাবি করে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তবে হামলার জবাবে ইরানও পাল্টা আঘাত হানে, যা পরবর্তী ১২ দিন জুড়ে রূপ নেয় এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতে। এই সংঘর্ষের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। জবাবে ইরান কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সংঘাতে দেশটিতে অন্তত ৬১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৭০০ জনের বেশি। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের হামলায় তাদের অন্তত ২৮ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। সবশেষে, উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর মঙ্গলবার (২৪ জুন) কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি। যদিও সাময়িক শান্তি ফিরেছে, বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন- এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সূচনা হতে পারে।

পরমাণু স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা জানাল ইরান
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রভাব নিয়ে নানা মূল্যায়ন চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হামলা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তেমন কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাঘেই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েও অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বুধবার (২৫ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাঘেই বলেন, গত সপ্তাহে মার্কিন হামলায় দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। আল জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাঘেই এ মন্তব্য করেন। তবে তিনি হামলার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাননি। তিনি বলেন, মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করে বাঙ্কারভেদী বোমা দিয়ে চালানো হামলাগুলো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করেছে। এতে আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এটি নিশ্চিত। এদিকে ট্রাম্প বলেন, গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো মার্কিন হামলায় দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি দশক পিছিয়ে গেছে। মার্কিন ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) জানিয়েছে, ফোর্দো, নাতানঞ্জ ও ইসফাহানে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এসব স্থাপনা ধ্বংস হয়নি। এগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। বুধবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমি হিরোশিমা বা নাগাসাকির উদাহরণ দিতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেই একই ধরনের ঘটনা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। এই হামলাই ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বন্ধ করেছে। ট্রাম্প আরও বলেন, যদি এই হামলা না হতো তাহলে এখনো যুদ্ধ অব্যাহত থাকত। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা আসলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানে না। ইসরায়েলের মূল্যায়ন পাওয়ার আগে ইরানের স্থাপনার ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে না।

এবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল জাপান
জাপান প্রথমবারের মতো তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে ভূমি থেকে জাহাজে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই পরীক্ষামূলক মহড়া বর্তমান কঠিন নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় হোক্কাইডো দ্বীপের একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে জাপানের গ্রাউন্ড সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (জিজিএসডিএফ) ‘টাইপ-৮৮’ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রশিক্ষণমূলকভাবে নিক্ষেপ করে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে আঘাত হানে। জাপান সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে এ ধরনের লাইভ-ফায়ার মহড়া পরিচালনা করে থাকে। তবে সেসব মহড়া ব্যয়বহুল এবং অংশগ্রহণকারী সেনাসদস্যদের সংখ্যা সীমিত হয়। জাপানি ইয়েনের অবমূল্যায়নের কারণে এই ব্যয় আরও বেড়ে যাওয়ায় দেশটি এখন থেকে ঘরোয়াভাবে মহড়া চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, নিজ দেশে এমন লাইভ-ফায়ার মহড়া বেশি সংখ্যক সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে এবং দ্বীপ ও অন্যান্য এলাকার প্রতিরক্ষায় সহায়তা করে। যদিও তিনি জানান, এই মহড়া কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে নয়, তবুও জাপান পূর্ববর্তী বিবৃতিতে চীনকে তাদের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেইজিংয়ের আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াস, বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতে আগ্রাসী অবস্থানের কারণে জাপান তার প্রতিরক্ষা কৌশলে বড় পরিবর্তন এনেছে। উল্লেখ্য, জাপান বর্তমানে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়ে জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ডের সমান। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক জোট আরও জোরদার করা হচ্ছে, যাতে আঞ্চলিক উত্তেজনা ও সম্ভাব্য হুমকির জবাবে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয়।