মুসলিম নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক ফলপ্রসূ: এরদোয়ান
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:০৩ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ নেতারা। চলমান গাজা সংকটের সমাধান খুঁজতে আয়োজিত এই আলোচনাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ‘ফলপ্রসূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা আলোচনার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ নেন মিশর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ নেতারা। বৈঠক শেষে ট্রাম্প নিজেও এটিকে ‘সফল’ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, এই দেশগুলো মিলে গাজা ইস্যুর একটি কার্যকর রাজনৈতিক ও মানবিক সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে।
যদিও আলোচনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার মূল প্রতিপাদ্য হলো গাজায় মুসলিম দেশগুলোর সেনা মোতায়েন এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের জন্য পুনর্গঠন তহবিল গঠন। এই উদ্যোগ ইসরায়েলকে গাজা থেকে তার সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ করে দিতে পারে বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএম জানিয়েছে, আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে যুদ্ধ বন্ধ, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং চলমান মানবিক সংকট নিরসনের বিষয়গুলো।
এ প্রস্তাবনায় ইসরায়েল সরাসরি অংশ নেয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পরিকল্পনার খুঁটিনাটি অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রাখা হলেও ইসরায়েল বরাবরের মতো এমন কোনো ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার বিরোধিতা জানিয়েছে। পাশাপাশি, প্রস্তাবে হামাসের কোনো স্থান নেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল দু’পক্ষই গোষ্ঠীটিকে নিরস্ত্র ও নির্মূল করার পক্ষে মত দিয়েছে।
বৈঠকটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন বিশ্বজুড়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তুঙ্গে। বহু দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। গত দুই বছরে ৬৫ হাজার ৩৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, কারণ দেশটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে বিরূপভাবে দেখছে। ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, “ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের মতো দেশগুলোর ফিলিস্তিনকে সমর্থন চলমান সংঘাতকে উৎসাহিত করছে এবং হামাসকে তাদের ‘ভয়াবহ নৃশংসতার’ জন্য পুরস্কৃত করছে।”
অন্যদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস স্পষ্ট বক্তব্যে জানান, “ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্র একটি অধিকার, কোনো পুরস্কার নয়।”
আল জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেস বিশ্লেষণে বলেন, “অনেক কূটনীতিকের বিশ্বাস, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনো কখনো একপক্ষের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। জাতিসংঘে রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তার দিক দিয়ে ইসরায়েলের একমাত্র প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্পই।”
বৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, “গাজার জনগণের সাহায্য এবং এই যুদ্ধ শেষ করতে আমরা আপনার এবং আপনার নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছি।” তিনি গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে ‘খুব খারাপ’ বলেও উল্লেখ করেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বৈঠকে জানান, তার দেশ গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে।
এই সম্মেলনের মাধ্যমে গাজা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। যদিও সামনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তবে এই আলোচনা হয়তো সেই পথচলার গুরুত্বপূর্ণ এক সূচনা।