১০০ বিলিয়ন ডলারের আরএমজি স্বপ্নে সাহস-অভিজ্ঞতা-তারুণ্যের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব চায় সম্মিলিত পরিষদ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:৪৫ পিএম, ২১ মে ২০২৫

তৈরি পোশাক শিল্পের সামনে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রয়োজন সময়োপযোগী নেতৃত্ব, যারা অভিজ্ঞতা, সাহস ও তারুণ্যের সমন্বয়ে শ্রমিক, উদ্যোক্তা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে এমন মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার মো. আবুল কালাম।
বুধবার (২১ মে) সকালে রাজধানীর ইন্টার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সাংবাদিকদের সামনে নিজের দলের ১২ দফা নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, “আমি শুধু প্যানেল লিডার নয় আপনাদের সহকর্মী, পোশাক শিল্পের একজন অংশীদার।” তিনি পোশাক শিল্পের সূচনা ও সাফল্যের ইতিহাস স্মরণ করে বলেন, মাত্র ১২ হাজার ডলারের রপ্তানি দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক।
ইশতেহারে উল্লেখযোগ্য ১২ টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে এসএমই সাপোর্ট সেল গঠন করা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার জন্য নীতিগত, আর্থিক ও কাঠামোগত সহায়তায় ‘এসএমই সাপোর্ট সেল’ চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্যানেল লিডার মো. আবুল কালাম বলেন, তারা ভ্যাট, এইচএস কোড, অর্ডার বাতিল, বিলম্বিত পেমেন্ট ও চুক্তি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিরসনে সরকারের সঙ্গে কাজ করবেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী নিরাপত্তা
সংকটকালে বিকল্প প্রণোদনার দাবি জানিয়ে আবুল কালাম বলেন, শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে উৎপাদন মৌসুমে গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রস্তুতি ও গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক সম্মিলিত পরিষদ পোশাক শিল্পর শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য AI, IoT, ERP, ESG ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
আবুল কালাম বলেন, সবুজ অর্থায়নের জন্য ‘গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক’ গঠন করে GCF, IFC সহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তিতে তারা সহায়তা করবেন।
পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ মার্কেট এক্সপ্যানশন ডেস্ক গঠন করে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় বাজার সম্প্রসারণ ও ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ থাকবে।
“আঞ্চলিক বাণিজ্য সংস্থা ও চেম্বারগুলোর সঙ্গে MoU স্বাক্ষর,B2B মিশন, এক্সপো ও সোর্সিং ফেয়ার-এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশনিশ্চিত করব।ইউরোপ ও আমেরিকার অতিনির্ভরতা কমিয়ে বৈশ্বিকবাণিজ্য ঝুঁকি হ্রাস করব।
EPB, বিদেশি মিশন ও প্রবাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন ক্রেতাসংযোগ এবং সিনথেটিক, ব্লেন্ড ও আউটারওয়্যার পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতেউদ্যোগ নেওয়া হবে। আমদানী কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুনপণ্যে প্রবেশ ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির বাজারে অবস্থান সুদৃঢ় করবে।”
LDC-পরবর্তী কৌশল
শুল্ক সুবিধা কমে যাওয়া ঠেকাতে স্মার্ট রাজস্ব নীতি ও প্রণোদনার মাধ্যমে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও মজুরি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আবুল কালাম বলেন, “এই নীতি স্মার্ট রাজস্ব ব্যবস্থা, ক্রেতা-সহযোগিতা ও খাতভিত্তিকসহায়তার মাধ্যমে সব ধরনের কারখানা—বিশেষ করে এসএমই—কেবৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে।”
বাণিজ্য সহায়তা ও এনবিআর সংস্কার
বন্ড সুবিধা, গ্রিন চ্যানেল চালু, সোর্স ট্যাক্স হ্রাসসহ কাস্টমস-বন্ড-ভ্যাট ব্যবস্থার যুগোপযোগী সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, জরুরি রপ্তানির জন্য নন-বন্ডেড কারখানায় অস্থায়ী বন্ড সুবিধা
* BGMEA–NBR–Customs যৌথ টাস্কফোর্স গঠন
* ভ্যাট ও করের নিয়ম সরলীকরন ভ্যাট ছাড় ও সোর্স ট্যাক্স হ্রাসBGMEA’র
* বন্দরে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য গ্রিন চ্যানেল সুবিধা চালুরউদ্যোগ
* UP অর্ডার সচল রাখা ও বন্ডেড সরবরাহকারীদের সমন্বয়
* সোলার ও জ্বালানি-দক্ষ যন্ত্রপাতির আমদানিতে সবুজ প্রণোদনা
* সিন্থেটিক, আউটারওয়্যারসহ নতুন পণ্যে বিশেষ সহায়তাপ্যাকেজ
EPIC-ওয়ান স্টপ এক্সপোর্ট সাপোর্ট চালু
রপ্তানিতে নতুন উদ্যোক্তা, নারী নেতৃত্ব ও এসএমই-দের জন্য তথ্যনির্ভর, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা কাঠামো চালু করা হবে।
তিনি বলেন বিজিএমইএ তে রেজিস্ট্রেশন, কাস্টমস ও ডকুমেন্টেশনে সহায়তা রপ্তানি প্রস্তুতি ডেস্ক, বাজার, ক্রেতা মানদণ্ড ও ট্রেন্ডসবিশ্লেষণে নীতিনির্ধারণ পর্যবেক্ষণ সেল, উৎপাদন দক্ষতা পরিমাপ ও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণে ডিজিটাল ফ্যাক্টরি টুলস এবং প্রযুক্তি গ্রহণে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাস্টমগাইডলাইন দিতে স্মার্ট ফ্যাক্টরি রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।
ইউনিফায়েড কোড অব কন্ডাক্ট চালু
কালাম বলেন, বিভিন্ন ক্রেতা অডিট একত্র করে একটি একক নীতিমালা তৈরি করা হবে যাতে এসএমই কারখানার কমপ্লায়েন্স সহজ হয়।
“আমরা BGMEA অনুমোদিতএকটি "Unified Code of Conduct" চালু করব, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতা, ILO ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রণয়ন করা হবে।
এই উদ্যোগ বিশেষভাবে এসএমই কারখানার জন্য কমপ্লায়েন্স সহজ ও কার্যকর করে তুলবে।”
আবুল কালাম বলেন, ভবিষ্যৎ সংকট ব্যবস্থাপনার জন্য শ্রমিক সেবা ফান্ডে বাধ্যতামূলকমাসিক সঞ্চয় ব্যবস্থা করা হবে।
সবুজ শিল্পায়ন
সার্কুলার ইকোনমি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ডিকার্বনাইজেশনের জন্য কারখানাভিত্তিক রোডম্যাপ ও অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো হবে।
সার্কুলার ইকোনমি: সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়নে একটি পুর্নাংগগাইডলাইন প্রনয়ন করা হবে এবং সকল প্রকার নীতি সহয়তাপ্রনয়ন করা হবে।
আবুল কালাম বলেন, সৌর প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে দেশি ও বিদেশিউৎস থেকে সহজ লভ্য ঋণ এর নিশ্চিত করা ও শেয়ারড মডেলেরুফটপ সোলার ব্যাবস্থা করা।
এছাড়া এনার্জি অডিট, দক্ষতা উন্নয়ন ও কারখানাভিত্তিক ডিকার্বোনাইজেশন রোডম্যাপ প্রনয়নে সহায়তা এবং জ্বালানি সাশ্রয়, বর্জ্যহ্রাস, ক্লাইমেট একশন ও ESG সমন্বয়ে সার্টিফিকেশন ও ব্র্যান্ডিংসহায়তা প্রদান করা হবে।
‘Made in Bangladesh-প্রিমিয়াম এডিশন’
বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে প্রিমিয়াম পণ্যের প্রচারণা, ডিজাইন-ভিত্তিক প্রদর্শনী ও ভিজ্যুয়াল ব্র্যান্ডিং সাপোর্টে আমরা ‘Made in Bangladesh – প্রিমিয়াম এডিশন’ নামে একটিগ্লোবাল ব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করব, যেখানে বাংলাদেশকে কেবল সস্তাউৎপাদনের দেশ নয়, বরং আধুনিক, টেকসই ও মূল্যনির্ভর সোর্সিংডেস্টিনেশন হিসেবে পরিচিত করা হবে।
প্রিমিয়াম ক্রেতাদের জন্য কাস্টমাইজড কনটেন্ট তৈরী ও প্রচার, সদস্যদের জন্য ব্র্যান্ড বিল্ডিং সাপোর্ট – ফটোশুট, ক্যাটালগ, ভার্চুয়ালশোরুম তৈরী করা এবং হাই-এন্ড নিটওয়্যার, আউটারওয়্যার ও সার্কুলার কালেকশন নিয়েডিজাইন-ভিত্তিক প্রদর্শনী করা হবে।
এতে বাংলাদেশের রপ্তানি ভাবমূর্তি ও বাজার অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার।
অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসি ও এক্সিট পলিসি
তিনি বলেন আমরা নির্বাচিত হলে একদিকে GSP সুবিধা আদায়ের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, অন্যদিকে দায়িত্বশীলভাবে কারখানা বন্ধের সুযোগ ও পুনর্বিনিয়োগে সহায়তা থাকবে।
প্যানেল লিডার বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি নির্বাচনী ইশতেহার নয়, এটি হলো সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী রোডম্যাপ, যা পোশাক শিল্পকে একটি স্মার্ট ও ফিউচার ফিট শিল্পে রূপান্তর করবে।”
এছাড়া অনুষ্ঠানের শুরুতে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত পরিষদের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক ফারুক হাসান তাদের নেতৃত্বে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য তাদের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরেন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ হাসনাত আলম সামগ্রিক অর্থনীতি ও তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।