যশোরে চাঁদা না পেয়ে কৃষককে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে


যশোরে চাঁদা না পেয়ে কৃষককে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে

যশোরের মনিরামপুরে চাঁদা না দেওয়ায় এক কৃষককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

আহত কৃষকের নাম আহাদ আলী দফাদার (৭০)। তিনি শ্যামকুড় ইউনিয়নের পাড়দিয়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পরিবারের দাবি, স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা তাঁর ছেলে সবুজ আহম্মেদের কাছে চাঁদা না পেয়ে প্রতিশোধ হিসেবে আহাদ আলীর ওপর হামলা চালিয়েছে। সবুজ আহম্মেদ শ্যামকুড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যদিও দলে তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক পদ ছিল না।

সবুজ আহম্মেদ জানান, “আড়াই মাস আগে কাশীপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি (৪৫) এবং পাড়দিয়া গ্রামের আনোয়ার পারভেজ (৩০)সহ কয়েকজন বিএনপি কর্মী আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তাঁরা আমার বাড়ির কাচের জানালা ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁদের ভয়ে আমি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকছি, মাঝেমধ্যে বাড়িতে যাই।”

সবুজের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শফিকুল, আনোয়ার, নূর আলী (২৪), নাঈম হোসেন (২৭), রাকিব হোসেন (২৫) ও মশিয়ার রহমান (৪৬) তাঁর খোঁজে বাড়িতে আসে। তখন তিনি ও তাঁর বাবা বাড়িতে ছিলেন না। তাঁকে না পেয়ে অভিযুক্তরা তাঁর স্ত্রী ও চার বছরের সন্তানের উপস্থিতিতে ঘর তল্লাশি চালিয়ে ঘেরের মাছের খাবারের ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং তাঁর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। যাওয়ার সময় তাঁরা সাত লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে হুমকি দেয়।

সন্ধ্যায় বাজারে যাওয়ার পথে আহাদ আলীকে বিদ্যালয় মাঠে ডেকে নেয় শফিকুল ও আনোয়ারের নেতৃত্বে থাকা ৮–৯ জন। সেখানে তাঁকে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। একই রাতে হামলাকারীরা আহাদের ভাই জালাল উদ্দিনকেও (৭২) মারধর করে, তিনি বর্তমানে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

সবুজ আহম্মেদ বলেন, “চাঁদা না দেওয়ায় আমার বাবার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় মামলা করব।”

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক অনুপ বসু বলেন, “আহাদ আলীর পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

শ্যামকুড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন জানান, “আনোয়ার পারভেজ বিএনপির কর্মী। তবে শফিকুল, নূর আলী, নাঈম, রাকিব ও মশিয়ার আগে আওয়ামী লীগে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তাঁরা নিজেদের বিএনপি কর্মী দাবি করলেও দলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই।”

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন, “আওয়ামী লীগের সময় সবুজ আহম্মেদের বিরুদ্ধে এলাকায় হয়রানির অভিযোগ ছিল। ঘটনাটি ঘটেছে তাঁকে খুঁজতে গিয়ে। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তবে চাঁদাবাজির কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×