আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে কি না সন্দেহ আছে: রিজভী


আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে কি না সন্দেহ আছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে কি না, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, কোনো কারিগরি বা ইঞ্জিনিয়ারিং হবে কি না এ নিয়ে সন্দেহ আছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজবাড়ী সদরের পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলা বাড়িয়া গ্রামের জন্মান্ধ গফুর মল্লিকের (৭৯) বাড়িতে তারেক রহমানের নির্দেশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষর হলো, যখন স্বাক্ষর করেছে সব রাজনৈতিক দল। সেই স্বাক্ষরের কাগজটি চূড়ান্তভাবে জামা দিলেন ঐকমত্য কমিশনের যারা দায়িত্বে আছেন তাদের কাছে। কিন্তু দেখা গেল সেখানে বিএনপি যে পাতা স্বাক্ষর করেছে, সেটা নেই। অন্য পাতা সেখানে যুক্ত হয়েছে। এটা দুঃখজনক কথা। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ড. ইউনূস সাহেবকে সবাই সম্মান করি, তিনি একজন গুণীজন। তার নেতৃত্বে যে সরকার, তাকে তো বিএনপিসহ আন্দোলনরত সব দল সমর্থন করেছে। তার গঠিত বিভিন্ন কমিশনের মধ্যে এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজ হবে, সেটা মানুষ আশা করে না।”

রিজভী দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেন, “দেশ এক ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে অতিক্রান্ত হচ্ছে। এক সময়ের ফ্যাসিবাদী আমল, গুম-খুন, বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করা—সবই ছিল শেখ হাসিনার আমলের বৈশিষ্ট্য। ১৬ বছর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আপসহীন সংগ্রাম করা হয়েছে। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, মুক্ত কণ্ঠে মিছিল করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা লড়াই করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন অসুস্থ হন, বন্দি হন, চিকিৎসা বন্ধ করা হয়, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বন্ধ করা হয়, কারাগারে নেওয়া হয়—তখন তারেক রহমান ভার্চুয়াল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বিজয়ের পথকে সুগম করেছেন। ৫ আগস্ট সেই ভয়াবহ রক্ত পিপাসু শেখ হাসিনার পতন হয়। মানুষ চেয়েছে তার স্বাধীনতা, অধিকার প্রয়োগ করতে। শেখ হাসিনার আমলের চেয়ে একটু বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন।”

রিজভী আরও বলেন, “জুলাই সনদে ৪৭-৪৮টি ধারা রয়েছে। কিছু ধারা আইনি করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এখন এক কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট আছে, দ্বিকক্ষ করতে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। যে প্রস্তাবগুলো আছে, এতে সংবিধান বাতিল করতে হবে। নতুন সংবিধান করতে হবে না, বরং সংবিধান সংশোধন করা উচিত। জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন, তা করতে হবে। কিন্তু ২৭০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট গঠনের পর পাস না হলে সেটা অটোমেটিক পাস হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের ঘটনা নেই।”

তিনি বলেন, “আমরা নিরাশাবাদী নই, আমরা আশাবাদী। জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, সংবিধান অনুযায়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগ একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন চালায়। বাকাশাল করেছেন, সমস্ত দল নিষিদ্ধ করেছেন, সংবাদপত্র বন্ধ করেছেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয়, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। সংবিধানে আল্লাহর নাম সংযোজন করেন। শেখ হাসিনা সেই বিশ্বাস ও আস্থা মুছে দিয়েছেন।”

শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এবারের এইচএসসির রেজাল্টে দেখা গেছে, আগে খাতায় না লিখলেও পাস করানো হতো, জিপিএ-৫ দেওয়া হতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় দেখা যেত কিছু লিখতে পারছে না। এবার মেধা ও প্রস্তুতির প্রতিফলন ঘটেছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরও নজর দিতে হবে। আড়াই শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রী যারা ভালো রেজাল্টের যোগ্য ছিল, তারা ভালো করতে পারেনি। খাতা ভালোভাবে না দেখার কারণে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীর রেজাল্ট ভালো হয়নি। এটা একটি গুরুতর সমস্যা।”

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল আলম, রাজবাড়ী-১ আসনের ধানের শীষ মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আসলাম মিয়া, রাজবাড়ী-২ আসনের ধানের শীষ মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ পাভেলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×