ঢাকায় কাবাডি বিশ্বকাপ, প্রথমবারের মতো আসছে আর্জেন্টিনাও
- খেলাধুলা ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:০৪ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

কাবাডির বিশ্বমঞ্চ এবার ঢাকায়। জাতীয় খেলা কাবাডির নারী বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, যেখানে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে আর্জেন্টিনাও। আগামী ১৫ থেকে ২৫ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে ১৪টি দেশ অংশ নেবে এই টুর্নামেন্টে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন।
এর আগে নারী কাবাডি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ভারতের হায়দরাবাদে, ৩ থেকে ১৩ আগস্ট। সেই আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের দল ঘোষণাও হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়। তিন মাসের ব্যবধানে নতুন আয়োজক হিসেবে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ।
এই বিষয়ে কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, “ভারতে বিশ্বকাপ স্থগিত হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়। কাবাডি ফেডারেশন সেটা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও অনুমোদনের পরই আমরা স্বাগতিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক সম্মতি প্রকাশ করি। আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনও বাংলাদেশকে স্বাগতিক হিসেবে সম্মত হয়েছে।”
বিশ্বকাপ আয়োজনের সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকা দিচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাকিটা আসবে স্পন্সরদের সহায়তায়। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খেলোয়াড়দের বিমান ভাড়া বহন করবে আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন। তবে ঢাকায় নামার পর থেকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সব খরচের দায়িত্ব থাকবে আয়োজক বাংলাদেশের।
এ বিষয়ে নেওয়াজ সোহাগ বলেন, “আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অংশগ্রহণকারীদের বিমান ব্যয় বহন করবে। তারা ঢাকা বিমানবন্দরে আসার পর থেকে আবার দেশে ফেরা পর্যন্ত এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সকল ব্যয় বহন করতে হবে কাবাডি ফেডারেশনকে। আমরা ফেডারেশনের গচ্ছিত ফান্ড ব্যবহার করব না। আমাদের লক্ষ্য পৃষ্ঠপোষকতা এনে আরও ফেডারেশনের রাজস্ব বৃদ্ধি করা।”
বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা বরাবরই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিতে পারেন না অর্থের অভাবে। আবার অনেক ফেডারেশন আন্তর্জাতিক আসর আয়োজন করতে গিয়ে সংকটে পড়ে। এই বাস্তবতায় কাবাডি বিশ্বকাপে মন্ত্রণালয়ের ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া এক ইতিবাচক দিক।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে নিঃসন্দেহে। এরপরও বিশ্বকাপের আলাদা একটি মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে যা অন্য সকল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের চেয়ে অবশ্যই ভিন্ন। কাবাডি ফেডারেশনের চাহিদার ভিত্তিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রাথমিক মূল্যায়ন করেছে। এরপর ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তাদের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় এটা অনুমোদন দিয়েছে।”
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজন করেছে। যদিও এশিয়ান গেমসের মূল আসরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক, তবুও ফেডারেশনের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ডাটাবেজভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করছে।
এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামে, যা সাধারণত রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “আমরা আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের নিরাপত্তা ও স্টেডিয়াম গাইডলাইন অনুসরণ করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা সবার আগে। আমরা সেটা নিশ্চিত করব এবং স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসরণ করেই খেলা এবং অনুশীলন হবে।”
২০১২ সালের পর আবারও হচ্ছে নারী কাবাডি বিশ্বকাপ। স্বাগতিক বাংলাদেশের পাশাপাশি এবার অংশ নিচ্ছে ভারত, আর্জেন্টিনা, চাইনিজ তাইপে, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইরান, জাপান, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড, উগান্ডা এবং জাঞ্জিবার। পাকিস্তান ও পোল্যান্ডকে রাখা হয়েছে রিজার্ভ তালিকায়।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদী কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নারী এশিয়া কাপ কাবাডিতে আমরা ব্রোঞ্জ জিতেছি সম্প্রতি। ফলে বিশ্বকাপেও আমাদের শীর্ষ তিনের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”
১৪ দলের এই প্রতিযোগিতা হবে দুই গ্রুপে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। ম্যাচ ড্র এবং গ্রুপ ভাগ সংক্রান্ত বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে টুর্নামেন্ট শুরুর ২-৩ দিন আগে, আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী।