খেলাপি ঋণ বেড়েছে শেখ হাসিনার আমলে চুরির কারণে: প্রেস সচিব
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:০৩ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে নতুন করে তীব্র সমালোচনা উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেছেন, ব্যাংক লুটপাটের ফলে বর্তমান সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশে। তিনি সরাসরি ইঙ্গিত করেন, শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বড় পরিসরে দুর্নীতির কারণেই এ সংকট তৈরি হয়েছে।
“শেখ হাসিনার আমলে যে বড় আকারে চুরি হয়েছে, ব্যাংকগুলো যেভাবে খালি করে দেওয়া হয়েছে, সেই কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে,” বলেন তিনি। “এ কারণেই দেশের ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য আমরা এখনও পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করতে পারিনি, তবে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।”
বুধবার, ৮ অক্টোবর, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকটি ছিল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করার জন্য গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান শফিকুল আলম।
বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে পূর্ব ইউরোপে নতুন শ্রমবাজার তৈরির প্রসঙ্গও। শফিকুল আলম জানান, জাতিসংঘ সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং কসোভোর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে তারা বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে এসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায়, ভিসার আবেদন করতে অনেককেই দিল্লি যেতে হয়, যা বড় এক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। “ভিসা জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পথ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে, আরও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে,” জানান তিনি।
এছাড়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মালয়েশিয়াসহ একাধিক দেশের সঙ্গে আলোচনার কথাও তুলে ধরেন প্রেস সচিব। “ট্রেড নেগোসিয়েশনের জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছে, তবে এতে সফল হতে হলে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির সহযোগিতা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে,” বলেন তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও অগ্রগতি দৃশ্যমান বলে মন্তব্য করেন শফিকুল আলম। “আইসিটিতে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেটা আগে চোখে পড়েনি। আগে এই খাতে ছয় শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন যেহেতু এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ বাড়ছে, যারা এই খাতে কাজ করছেন, তাদের জন্য প্রণোদনা কিছুটা বাড়ানো হবে।” তিনি আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা আইসিটি খাত নিয়ে দ্রুত একটি রোডম্যাপ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্য তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, কিছু ক্ষেত্রে অর্থনীতি ইতিবাচক অগ্রগতি দেখিয়েছে। “আমাদের এখন পাঁচ মাসের আমদানির সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। মূল্যস্ফীতিও কমেছে—১২.৫ শতাংশ থেকে তা নেমে এসেছে ৮.৩ শতাংশে,” বলেন গভর্নর। গত এক-দুই মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা থাকলেও চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এখন চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির হার আরও হ্রাসে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানান গভর্নর। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে খেলাপি ঋণের হার ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার। তিনি আরও জানান, পাঁচটি ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া চলছে এবং ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই সব উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান প্রেস সচিব।