কন্যাশিশুদের অন্ধকারে রেখে সুষ্ঠু সমাজ কাঠামো সম্ভব নয়: উপদেষ্টা শারমীন
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:৫৯ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

দেশের উন্নয়ন ও টেকসই সমাজ বিনির্মাণে কন্যাশিশুদের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, “আজকের কন্যাশিশুরা আগামীর নারী” এবং “কন্যাশিশুদের অন্ধকারে রেখে একটি সুষ্ঠু সমাজ কাঠামো গড়ে তোলা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি দেশকেও আলোকিত করা সম্ভব নয়।”
রবিবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
বক্তব্যে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে বলেন, “২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে তোমাদের জয়ধ্বনি শোনা যায়, তোমাদের সংগ্রামের স্বীকৃতি হবে, তোমাদের বিজয়ের আনন্দ হবে এবং আগামী দিনে তোমরাই এ দেশের নির্মাতা হবে।”
তিনি আরও বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য “আমি কন্যাশিশু-স্বপ্নে গড়ি, সাহসে লড়ি, দেশের কল্যাণে কাজ করি” কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং এটি কন্যাশিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব ও স্বাবলম্বিতা গঠনের আহ্বান। শারমীন মুরশিদের ভাষায়, “এই প্রতিপাদ্যের মূল তাৎপর্য হলো, কন্যাশিশুদের আত্মমর্যাদা, দক্ষতা, সাহসিকতা ও নেতৃত্বে উদ্বুদ্ধ করা এবং তাদের বিকাশের জন্য ইতিবাচক ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।”
উপদেষ্টা জানান, কন্যাশিশুরা এখন আর সমাজের বোঝা নয়, বরং তাদের মধ্যে রয়েছে অগাধ সম্ভাবনা। “তারা প্রমাণ করেছে- সুযোগ পেলে তারাও দক্ষ, যোগ্য ও নেতৃত্বে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ভুলে গেলে চলবে না, একজন নারী এক মানবসম্পদ, আর কন্যাশিশুরা সেই সম্পদের অঙ্কুর। বাংলার নারীরা আজ ঈর্ষণীয় সাফল্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে; শিক্ষিত হচ্ছে, নতুন নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছে, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলছে, নারীরা এভারেস্ট জয় করছে; আজ তারা কোথায় নেই! যখন মেয়েরা, শিশুরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তখন দেশও মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।”
শারমীন মুরশিদ বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মন্ত্রণালয়ে গৃহীত অবকাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশু নির্যাতন ও নারী নিপীড়নের মতো সমস্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। “নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে যদি কোনো মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, আমার মন্ত্রণালয়ের টিম সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে,” জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, কন্যাশিশুদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য তার ফেসবুক পেজে একটি বারকোড সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে শিশুরা সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। “আজ থেকে তোমাদের সঙ্গে আমার সংযোগ তৈরি হলো,” বলেন তিনি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কাজী গোলাম তৌসিফ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম এবং শিশু বক্তা মোছাম্মদ আনিকা ও নুসরাত জাহান এমি।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার ডলি।
অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় এবং শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।
দিনের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল গেট থেকে শিশু একাডেমি পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। শারমীন এস মুরশিদ সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। র্যালিতে অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গার্ল গাইডসের রেঞ্জার সদস্য এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সদস্যরা।