‘আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে’ শুনেই সাংবাদিককে ডেকে প্রশ্ন নিলেন উপদেষ্টা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:১৮ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

সাংবাদিকের প্রশংসামূলক মন্তব্য শুনেই তাকে মাইকের সামনে ডেকে নিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উদ্দেশ্য ছিল সবাই যেন প্রশ্নটি শুনতে পারে; আর সেটির জবাবও সরাসরি মিলল তার কাছ থেকে।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার, ৮ অক্টোবর বিকেলে, যখন রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) ২০টি নতুন গাড়ি হস্তান্তরের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানের সূচনাতেই নতুন গাড়িগুলোর চাবি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর হাতে তুলে দেন উপদেষ্টা। পরে তিনি বলেন, “পুলিশের যানবাহনের সংকট বহুদিনের। এবার সরকারি উদ্যোগে ২০০টি গাড়ি কেনা সম্ভব হয়েছে। তবুও প্রয়োজনের তুলনায় যানবাহনের ঘাটতি রয়ে গেছে। আশা করি, এ বছর আরও কিছু গাড়ি যুক্ত করা যাবে।”
তিনি আরও জানান, পুলিশের যানবাহন সংকট ছাড়াও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে অর্ধেকই এখনো ভাড়া ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে পাঁচটি থানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে, আরও দুটি থানার কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার স্বল্প জনবল নিয়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।”
এই মন্তব্য শুনেই উপদেষ্টা সাংবাদিককে থামিয়ে ডেকে নেন এবং বলেন, “প্রশ্নটা মাইকে করুন, সবাই শুনুক।”
সাংবাদিক তখন প্রশ্ন করেন, “ডিএমপি কমিশনার স্বল্প জনবল নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। থানার ওসি বদলের পর মোহাম্মদপুর এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে একটি মহল এখনও ঝটিকা মিছিলের মতো নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এসব ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?”
উপদেষ্টা হেসে বলেন, “আপনারা দেখছেন? ভাই একটা ভালো কথা বলতে গিয়েও একটা খারাপ কথা চলে আসল! অভ্যাসটা দূর হতে সময় লাগে।” তার কথায় পুরো অনুষ্ঠানস্থলে হাসির রোল পড়ে যায়।
উত্তরে তিনি বলেন, “ভাই, কথাটা ঠিকই বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ঝটিকা মিছিলের সংখ্যা কমেছে। সম্প্রতি ২৪৪ জনকে একযোগে হাতেনাতে ধরা হয়েছে, এরপর থেকে এসব কমছে। আপনারা যদি গণমাধ্যম থেকে সহযোগিতা করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। এক সময় হয়তো এসব থাকবে না। অপরাধের হারও কমছে।”
তিনি আরও বলেন, “যখন সবাই নির্বাচনমুখী হবে, তখন এমন কার্যক্রম অনেকটাই কমে যাবে। তখন রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়বে, সেটা স্বাভাবিক। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, এরপর প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর নির্বাচন সম্ভব।”
জনগণের ভূমিকাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণ হচ্ছে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। তারা যখন নির্বাচনমুখী হবে, তখন কেউ কিছু ঠেকাতে পারবে না। আমাদের দেশে জনগণ নির্বাচন নিয়ে খুবই সচেতন। এখন থেকেই চায়ের দোকানগুলোতে নির্বাচনী আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আপনারা প্রচার চালিয়ে যান, যত সময় যাবে আলোচনা আরও বাড়বে। আমরা চাই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, সেটি যেন হয় শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে।”
অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নে উঠে আসে - যেখানে আইনশৃঙ্খলার উন্নতির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এখনো পুলিশের ওপর হামলা ও নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে। এর জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “এই ধরণের ঘটনার হার কমছে। কিছুদিন আগে নরসিংদীতে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এখন এসব ঘটনা তুলনামূলক কমে এসেছে। আপনারা যদি প্রচার চালান, তবে তা আমাদের জন্য সহায়ক হবে এবং জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়বে। কারণ জনগণই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। তারা যখন বুঝবে এগুলো খারাপ, তখন এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটবে না।”