যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে বড় ধস, বিপাকে ভারতীয় শিল্পখাত
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:৩৫ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের রপ্তানি ভয়াবহ হারে কমে গেছে, যা দেশটির শ্রমনির্ভর শিল্প খাতকে চরম চাপে ফেলেছে। সরকারি তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শুধু মার্কিন বাজারেই ভারতের রপ্তানি কমেছে ২০ শতাংশ। আগের চার মাস মিলিয়ে এই পতনের হার প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের নতুন করে আরোপ করা উচ্চ শুল্কই এই ধসের মূল কারণ। গত ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এই শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রাখায় অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা।
নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর বিশ্লেষক অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “শুল্ক বৃদ্ধির পর ভারতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে, যার লক্ষ্য আগামী মাসের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো।”
জিটিআরআই-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ভারতের শ্রমনির্ভর রপ্তানি খাতগুলোতে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বস্ত্র, গয়না, প্রকৌশল ও রাসায়নিক পণ্য খাত।
ভারতীয় বাণিজ্য পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি আয় ছিল ৮.৮ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, চার মাসে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৭.৫ শতাংশ।
এই রপ্তানি পতনের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের সামগ্রিক বাণিজ্য ভারসাম্যে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২.১৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
দীর্ঘ বিরতির পর গত মাসে আবারও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার জানান, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন।” ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে এবং তারা ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করার আগ্রহ দেখিয়েছে।”
তবে এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু দুই দেশের মধ্যে সমাধান হয়নি। কৃষি এবং দুগ্ধ খাতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার নিয়ে দুই দেশই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বহু বছর ধরেই ভারতীয় কৃষি বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ভারত বলছে, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকের জীবন-জীবিকা এবং কোটি কোটি ক্ষুদ্র চাষির স্বার্থে তারা এই খাতে বিদেশি প্রভাবের বিরোধিতা করছে।
এক সময় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প এবং মোদি সেই অঙ্ক বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই লক্ষ্য অর্জন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সূত্র: বিবিসি