৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল


৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিনে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাসের কাছ থেকে ২০ ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির পরই এই বন্দিমুক্তির ঘটনা ঘটল।

কারাবন্দিদের এই মুক্তি দুই ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে প্রায় ২ হাজার বন্দিকে মুক্ত করা হয়েছে রামাল্লার পাশের ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত ওফের কারাগার থেকে। দুপুরের দিকে এসব বন্দি বাসযোগে পৌঁছান পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া শহরে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইসিআরসি) এদের পরিবহনের দায়িত্বে ছিল।

এদিকে একই দিনে দ্বিতীয় ধাপে মুক্তি পাওয়া ১ হাজার ৭১৮ জন বন্দি দক্ষিণ ইসরায়েলের নাগেভ কারাগার থেকে গাজার খান ইউনিস শহরে এসে পৌঁছান। কারা বিভাগ জানিয়েছে, “২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় অভিযান শুরুর পর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৭১৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন।”

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নাসার মেডিকেল কমপ্লেক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত সকল বন্দির প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

ফিলিস্তিনি জনগণ পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া এবং গাজার খান ইউনিসে বন্দিমুক্তি উদযাপনে রাস্তায় নেমে আসেন। শত শত মানুষ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে কারাবন্দিদের স্বাগত জানান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে নজিরবিহীন সহিংসতার সূচনা করেছিল প্রায় ১ হাজার হামাস যোদ্ধা। তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় গাজায়। ইসরায়েল বলছে, ১৯৪৮ সালে দেশটির প্রতিষ্ঠার পর এই হামলা ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।

পরদিন, ৮ অক্টোবর, হামলার জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)। গত দুই বছরে এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ।

যুদ্ধের মাঝে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির চেষ্টা হয়েছে। এসব অস্থায়ী বিরতির সময় হামাস কয়েক দফায় জিম্মি মুক্তি দিয়েছে, যার বিনিময়ে ইসরায়েলও অনেক ফিলিস্তিনিকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, হামাসের হাতে ৪০ জন ইসরায়েলি জিম্মি আটকে ছিল। তবে হামাস জানায়, তাদের মধ্যে জীবিত ছিলেন কেবল ২০ জন। সোমবার সেই ২০ জনকেই মুক্তি দেওয়া হয়।

এর বিনিময়েই ইসরায়েল ৩ হাজার ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “এই তালিকায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কেউ নেই। ইসরায়েল আগেই স্পষ্ট করেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারও মুক্তির সুযোগ নেই।”

এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি এসেছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে। ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষ সম্মতি জানালে গত শুক্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×