এখন গাজাকে পুনর্গঠন করার সময়: শান্তি সম্মেলনে ট্রাম্প
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:৪৯ এম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

গাজার দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এখন ইতিহাসের পাতা। দুই বছর ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের পর এবার সামনে এসেছে এক নতুন সূচনা, পুনর্গঠনের পথচলা। এমনটাই মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিসরের শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত ‘গাজা শান্তি সম্মেলন’-এ দেওয়া তাঁর বক্তব্যে।
মিসরের উপকূলীয় পর্যটন নগরীর এক বিলাসবহুল রিসোর্টে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর। এতে প্রধান অতিথির আসনে থেকে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তিনি বলেন, “আজ আমরা এখানে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছি। একটি দীর্ঘ, ভয়াবহ, যন্ত্রণাদায়ক এবং ক্লান্তিকর দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে। ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি; উভয়ের জন্যেই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে এ যুদ্ধবিরতি। তবে এটা এত চ্যালেঞ্জিং ছিল… আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না… এই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য যে পরিশ্রম-প্রচেষ্টা আমাদের দিতে হয়েছে, তা তিন হাজার বছরের পরিশ্রমের সমান।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এর আগেও বেশ কয়েকটি বড় সমস্যার সমাধান করেছি, কিন্তু এই যুদ্ধ ছিল সেগুলোর চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। অনেক বাধা, বিবাদ, চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে অবশেষে আমরা কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে পেরেছি। ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি, এই যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব এই যুদ্ধবিরতিতে খুশি, তারা সবাই একে স্বাগত জানিয়েছেন।”
গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, “এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে পুনর্গঠন ও পুনঃনির্মাণের সময়। আমি আশা করছি শিগগিরই তা শুরু হবে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, প্রায় ১ হাজার হামাস যোদ্ধা ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে আকস্মিক হামলা চালায়। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তারা প্রাণ নিয়ে নেয় অন্তত ১,২০০ জনের এবং ২৫১ জনকে করে বন্দি। ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে সেটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
পরদিন, ৮ অক্টোবর, জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। দুই বছরের সেই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আনুমানিক ১ লাখ ৭০ হাজার।
এই সময়ে একাধিকবার যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করা হলেও, তা ছিল স্বল্পস্থায়ী। কয়েক দফা যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে কিছু জিম্মি ছাড়া পেলেও, পুরো প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলিদের মধ্যে শেষ দিকে ৪০ জন ছিলেন কাগজপত্র অনুযায়ী, যদিও সংগঠনটি জানিয়েছিল, তাদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন মাত্র ২০ জন।
এই সংকট নিরসনে নতুন এক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত ২৯ সেপ্টেম্বর উপস্থাপন করা সেই পরিকল্পনায় সম্মতি দেয় ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই। এর ফলে ১০ অক্টোবর, শুক্রবার থেকে গাজায় কার্যকর হয় নতুন যুদ্ধবিরতি।
যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিন, ১৩ অক্টোবর, হামাস মুক্তি দেয় অবশিষ্ট ২০ ইসরায়েলি জিম্মিকে। প্রতিদানে, একই দিনে ইসরায়েল ছেড়ে দেয় ৩ হাজার ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে।
জিম্মি বিনিময়ের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তেই শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত হয় ‘গাজা শান্তি সম্মেলন’। যুদ্ধের অবসান এবং গাজার পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বিবিসি