হাজতখানায় নিরাপত্তাহীনতা: গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানিতে অভিযোগ হাসানুল হক ইনুর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৪:৫৩ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫

দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানিতে হাজির হয়ে আদালতের হাজতখানায় নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদন মঞ্জুর করে ইনুকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। শুনানির সময় দুদকের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
শুনানিতে ইনুর আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম দাবি করেন, “আদালতের হাজতখানায় তার মক্কেল নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।” তিনি জানান, সকাল ৯টার দিকে ইনুকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হলে সেখানে প্রায় ৫০ জন অন্যান্য আসামির সঙ্গে রাখা হয়। তার মতো ভিআইপি আসামিকে এমন পরিবেশে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আলাদা হাজতখানার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।
জবাবে বিচারক বলেন, আসামিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশের, এবং আদালত চায় না এসব আসামিদের শারীরিকভাবে আদালতে হাজির করা হোক। তবে বিচার ব্যবস্থা এখনও ডিজিটাল না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পুরনো পদ্ধতিতেই চলতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “অনেক সংস্থার আধুনিক ভবন থাকলেও বিচার বিভাগের উন্নয়ন হয়নি। এই আদালতের ভবনটিও আমাদের নিজস্ব নয়, জেলা জজ আদালতের ভবন ব্যবহার করছি। এখানে এমনকি আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের বসার পর্যাপ্ত জায়গাও নেই।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-মন্ত্রী আইনজীবী ছিলেন, বর্তমান আইনমন্ত্রীও এখানে প্র্যাকটিস করেছেন। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।”
প্রাক্তন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাম্প্রতিক আদালত সফরের কথা উল্লেখ করে বিচারক বলেন, “তাকে বলেছি, যদি বিচার ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর করা হতো, তাহলে আজ এই ধরনের কষ্ট করতে হতো না। ভিডিও কলে আসামিদের শুনানি ও শনাক্তকরণ সম্ভব হতো।”
শুনানির একপর্যায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, “আমার মামলার বিষয়বস্তু পত্রিকায় আগেই দেখেছি। বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে রায় দিয়ে দিয়েছে দুদক।”
এ বক্তব্যের পর বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “আপনাকে পরে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। আজ কেবল গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি হচ্ছে।” এরপর আদালত তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন অনুমোদন করেন।
এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় ইনু বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এজলাসের ব্যবস্থা করেছেন, এজন্য ধন্যবাদ।”
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাসানুল হক ইনু নিজের জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০৭ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
এছাড়া তার নামে থাকা চারটি ব্যাংক হিসাবে মোট ১১ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ১৯ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন পাওয়া গেছে, যার সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদক দাবি করে, তিনি সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় অবৈধভাবে অর্থ ও সম্পদ অর্জন করেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এই মামলাটি গত ১৬ মার্চ দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী মুন্সা জেবিন।