রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে রেলের শত শত ওয়াগন, ক্ষতির মুখে কোটি টাকা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:৫৬ এম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন ইয়ার্ডে প্রায় দেড় যুগ ধরে ৩০০টির বেশি মালবাহী ওয়াগন পড়ে আছে, যা খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি ও পরিবেশের প্রভাবের কারণে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ওয়াগন রয়েছে সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুর ইয়ার্ডে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকরা বলছেন, এসব ওয়াগন কারখানায় নিয়ে মেরামত করলে পুনরায় চলাচলের যোগ্য করা সম্ভব। এতে রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারত। তবে প্রয়োজনীয় মেটালিসটিক রাবার ইউনিট–এর অভাব এবং কম চাহিদার কারণে ওয়াগনগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইয়ার্ডে ফেলে রাখা হয়েছে। তদুপরি, নতুন ওয়াগন কোটি কোটি টাকায় কেনা হচ্ছে। অন্যদিকে রেল কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়ায় এখন এসব ওয়াগন স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন ইয়ার্ডে যেমন সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার ৩২৯টি বিসি ধরনের ওয়াগন পড়ে আছে। প্রতিটির আমদানি মূল্য ৫০–৫৫ লাখ টাকা। দীর্ঘ সময় খোলা আকাশের নিচে থাকায় এগুলো নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈয়দপুর রেলওয়ের এক উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, অতি প্রয়োজনীয় মেটালিসটিক রাবার ইউনিটের সরবরাহ না থাকার কারণে দেড় যুগ ধরে বিসি ধরনের মালবাহী ওয়াগন মেরামত করা হচ্ছে না। সান্তাহার জংশন ইয়ার্ডে ৯০টি বিসি ও ২৫টি বিসিএফজি বা হপার ওয়াগন রয়েছে। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী ইয়ার্ড থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ আরও ৫০টি ওয়াগন সান্তাহার ডিপোতে রাখা হয়েছে। একই কারণে পার্বতীপুর ওয়াগন ডিপোতে ১২০টি ওয়াগন পড়ে আছে।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ। পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান জানান, একটি ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল সাধারণত ৪০–৪৫ বছর। কিন্তু পড়ে থাকা ওয়াগনগুলো প্রায় ৭০ বছরের পুরানো। বডি, চাকা, বেয়ারিংসহ বেশির ভাগই নষ্ট। মেরামত করা সম্ভব নয়।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, একদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, রেলে মালবাহী ওয়াগনের চাহিদা নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রতি ভারত থেকে ৪২০টি মালবাহী ওয়াগন আমদানি করেছে। কিন্তু স্বল্পমূল্যের মেটালিসটিক রাবার ইউনিট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে ইয়ার্ডে পড়ে থাকা ওয়াগনগুলো মেরামত করা হচ্ছে না। কাগজে-কলমে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হলেও অবকাঠামো ঠিক থাকলে ওয়াগনগুলো মেরামত করা সম্ভব। যেমন অর্থনৈতিক মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচগুলোকে জিওএইচ বা প্রকল্পের মাধ্যমে মেরামত করে নতুন প্রাণ দেওয়া হয়। একইভাবে মেটালিসটিক রাবার ইউনিট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে ওয়াগনগুলো আধুনিক রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান আরও জানান, পড়ে থাকা ওয়াগনের ভবিষ্যৎ ঠিক করার জন্য ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।