আদালতে ব্যারিস্টার সুমনের ক্ষোভ, সালমানকে ঘিরে ‘চোর’ স্লোগান


আদালতে ব্যারিস্টার সুমনের ক্ষোভ, সালমানকে ঘিরে ‘চোর’ স্লোগান

ঢাকার আদালতে সোমবার সকালটা ছিল নাটকীয়তা ও উত্তেজনায় ভরপুর। মুগদা থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে। একইদিনে আদালতে হাজির হন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যাকে লক্ষ্য করে আদালত প্রাঙ্গণে ছুটে আসে জনতার ‘চোর’ স্লোগান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক পুলিশি আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। সকাল ১০টা ৭ মিনিটে তাকে পুলিশি পাহারায় হাজতখানা থেকে আদালতের এজলাসে নিয়ে আসা হয়। বিচারক প্রবেশ করেন ১০টা ১১ মিনিটে। এরপর শুনানির মধ্য দিয়ে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন এবং তাকে আবার হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

শুনানি শেষে ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আপনারা বেইমানি করছেন, ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। দেশটাকে ভালো রাখুন।” তিনি আরও বলেন, “দেশটাকে পুড়িয়ে ফেলছে ওরা, দেশটাকে রক্ষা করেন।”

এজলাসে উপস্থিত অবস্থায় ব্যারিস্টার সুমন ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল ও আত্মবিশ্বাসী। নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করেন এবং আদালতের ডাকে কাঠগড়ার পেছন থেকে সামনে এসে হাত নাড়িয়ে হাজিরা দেন। শুনানিকালীন সময়েও তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যান।

তিনি বলেন, “সুষ্ঠু বিচার হলে এসব মিথ্যা মামলায় আমার কিছু হবে না। ন্যায়ের পক্ষে লড়েছি সবসময়। ন্যায্য কথা বলার কারণেই আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।” এসময় আদালতে থাকা তার এক আত্মীয় খোঁজখবর নিতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা তাকে এজলাস থেকে বের করে দেন।

ব্যারিস্টার সুমনের আইনজীবী মো. লিটন আহমেদ বলেন, “শারীরিকভাবে উনি সুস্থ আছেন। আমরা জানতে চাইছিলাম কারাগারে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। উনি তেমন কোনও সমস্যার কথা বলেননি। আগের মতোই আছেন বলে জানিয়েছেন। ব্যারিস্টার সুমন সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছেন।”

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই, ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ চলাকালে ঢাকার জজকোর্ট থেকে কাজ শেষে ফিরছিলেন আইনজীবী আব্দুল আছেত শামীম। পথিমধ্যে মুগদা থানার বাবু ডাক্তারের গলিতে রাবার বুলেটের আঘাতে তার হাতে, কপালে, বুকে, চোয়ালে ও পেটে ক্ষত হয়। পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন তিনি। এ ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর, ১ সেপ্টেম্বর তিনি মুগদা থানায় মামলা দায়ের করেন, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫১ জনকে আসামি করা হয়। ব্যারিস্টার সুমন এ মামলার ২৫ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি। তাকে ২১ অক্টোবর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অন্যদিকে, সালমান এফ রহমানকে আদালতে নিয়ে এলে প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা একাধিকবার “চোরা সালমান, চোরা সালমান” বলে স্লোগান দেন এবং বলেন, “এই চোর সালমান, চোরা সালমান দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। টাকা পয়সা গিইলা খাইছে।” সালমান এফ রহমান তখন ছিলেন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও হাতকড়াসহ; তিনি শুনানিকালীন ছিলেন নীরব।

সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় মোহাম্মদপুর থানার শাহরিয়া হোসেন রোকন হত্যাচেষ্টা মামলায়। একইসঙ্গে, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ১১০০ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব। অভিযোগ অনুযায়ী, ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। দুদক তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে, যেখানে নাম রয়েছে সালমান, তার ছেলে এবং সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানসহ মোট ৩৮ জনের।

সোমবার শুধু ব্যারিস্টার সুমন বা সালমান এফ রহমানই নয়, একইদিনে আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান।

আনিসুল, মেনন, ইনু, আতিকুল এবং সালমানকে মোহাম্মদপুর থানার রোকন হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন আদালত। অন্যদিকে সাদেক খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে দুটি মামলায়—মুগদা থানার আইনজীবী আছেত শামীম ও মোহাম্মদপুর থানার রোকন হত্যাচেষ্টা মামলা।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই সকালে মোহাম্মদপুরের ময়ূর ভিলার রাস্তায় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন শাহরিয়া হোসেন রোকন। সেসময় আসামিদের ছোঁড়া গুলি তার বাম পায়ে লাগে এবং তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে ৩ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×