‘যে আসবে, সে ক্রিকেটের জন্য কাজ করবে’
- খেলাধুলা ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:২৩ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদের শেষ দিনের দুপুরটা ছিল শান্ত, কিন্তু বাতাসে ছড়িয়ে ছিল নির্বাচনী উত্তেজনা। আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বোর্ডের বহুল আলোচিত নির্বাচন। ভোটযুদ্ধের আগের দিন বিসিবি সভাপতি ও সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তার সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি নাজমুল আবেদীন ফাহিম। দুজনই বিগত মেয়াদে নিজেদের অর্জন, সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
নির্বাচন ঘিরে নানা বিতর্ক থাকলেও, দুজনই মন্তব্যে ছিলেন সতর্ক। তবে অভিযোগ পুরোপুরি এড়িয়ে যাননি বুলবুল। তিনি বলেন, “নির্বাচিত হই বা না হই— যারা দায়িত্ব নেবেন, তারা অবশ্যই ক্রিকেটের জন্য কাজ করবেন।”
গতকাল বিসিবি কার্যালয়জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। রাস্তা থেকে প্রধান ভবন পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টার। একইসঙ্গে কিছু ক্লাব নির্বাচনের স্থগিতের দাবি তোলে। ঢাকা মহানগরের কয়েকটি ক্লাবের পক্ষ থেকে সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। চিঠিতে বর্তমান নির্বাহী পর্ষদের মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন তফসিল ঘোষণা ও বিতর্কিত কাউন্সিলরশিপ নিরসনের আহ্বান জানানো হয়। বিকল্প হিসেবে অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
এদিকে নির্বাচন বর্জনের ধারাবাহিকতায় আরও একটি নাম যুক্ত হয়েছে। জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর এবং ঢাকা বিভাগের পরিচালক পদপ্রার্থী এস এম আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এর আগে ক্যাটাগরি-২-এর লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের লুতফর রহমান বাদল, কাঁঠালবাগান গ্রিনক্রিসেন্টের মেজর ইমরোজ ও রাজশাহীর প্রার্থী হাসিবুল আলম একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে নির্ধারিত সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় তাদের নাম ব্যালটে থাকছে।
বিকেলে বিসিবি ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে রেদুয়ান বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের রাতের ভোটকেও হার মানিয়েছে এবারের বিসিবি নির্বাচন। রাতের ভোটে তবু তো ব্যালট বাক্স ভরেছে, কিন্তু এখানে ব্যালট বাক্সকেও হার মানানো কৌশল চলছে।”
ঢাকা বিভাগে পরিচালক পদে রেদুয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও পরিচালক বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম। রেদুয়ান সরে দাঁড়ানোয় তারা দুজনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন ঘিরে ওঠা অভিযোগে বুলবুলের বক্তব্য ছিল সংযত— “আমার ওপর অনেক কিছু এসেছে, কিন্তু আমি আইন মেনে, সংবিধানের মধ্যে থেকেই কাজ করেছি।”
তামিম ইকবাল ও তার সমর্থকদের সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমরা প্রক্রিয়া মেনেই এগোচ্ছি।”
ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রভাব নিয়ে প্রশ্নে বুলবুল বলেন, “তিনি সবসময় সহযোগিতা করেছেন। আমার মনে হয়েছে, তিনি স্থিতিশীল ও ঐক্যবদ্ধ বোর্ড চান। কোনো প্রভাব ছিল না, বরং ধারাবাহিকতা রক্ষাই ছিল মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “ক্লাবগুলোর বিকল্প নেই, তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই, সংঘাত নয়।”
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, “শুরুটা সহজ ছিল না। ভুল বোঝাবুঝি ছিল, দূরত্বও ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পেরেছি।” তিনি জানান, তাদের হাতে নেওয়া অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের সুফল শিগগিরই দেখা যাবে।
বুলবুল বলেন, “মাত্র চার মাস সময় পেয়েছিলাম। এই সময়েই জাতীয় দলের ধারাবাহিক সাফল্য, মেয়েদের বিশ্বকাপগামী দল, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অর্জন—সব মিলিয়ে আমরা দল হিসেবে কাজ করেছি, এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
তিনি জানান, সময়ের অভাবে কিছু অবকাঠামোগত কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। তবে ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্রিকেট বিস্তারের উদ্যোগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন ছাড়াও কোচ, আম্পায়ার ও কিউরেটরদের প্রশিক্ষণে যুক্ত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সাইমন টফেল ও টনি হ্যামিংকে।
বুলবুলের ভাষায়, “বাংলাদেশ ক্রিকেটের শক্তি অপরিসীম। এই শক্তি ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে।”
নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “৪৮টি ক্লাব নির্বাচন বর্জন করেছে, কিন্তু এটা আমাদের হাতে নেই। নির্বাচন কমিশন ও আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। আমি সংবিধান মেনেই কাজ করেছি।”
গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগহীনতার অভিযোগে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “ব্লক না, সময়ের অভাব। আইসিসি ও এসিসির কাজেই ব্যস্ত থাকি। যদি দিনটা ৩০ ঘণ্টার হতো!”
তবে তিনি আশ্বাস দেন, “মিডিয়া আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা করুক, সেটাই শেখার পথ।”
প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভোট চাইতে গিয়ে বুঝেছি— ঢাকার বাইরেও বিশাল ক্রিকেট শক্তি রয়েছে।”
শেষে বুলবুলের প্রত্যয়ী বক্তব্য— “যেই দায়িত্বে আসুক না কেন, সবাই ক্রিকেটের জন্য কাজ করবে— একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে।”