নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

  • প্রকাশঃ ০১:৩০ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫’ উদযাপন করেছে। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, বিভিন্ন পেশাজীবী, সাংবাদিক, নতুন প্রজন্ম ও কমিউনিটি সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
 
দিবসটি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পড়া হয়। অনুষ্ঠানে ৫২’, ৭১ ও ২০২৪’-এর জুলাই-আগস্টের শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাদের  আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষ্যে ‘ইকোনোমিস্ট‘স কান্ট্রি অব দ্যা ইয়ার ২০২৪’ ও  ‘জুলাই অনির্বাণ’ নামে দুইটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘মূলত: ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের  ভিত্তি প্রোথিত হয় যা পূর্ণতা পায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।’

নাজমুল হুদা ৫২’র ভাষা শহিদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ সব ভাষা শহিদ, ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে সব শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও  ২০২৪’-এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান এবং জুলাই আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তাদের আশু সুস্থ্যতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, ‘ভাষা একটি একান্ত মানবিক বিষয়; যা মানুষের অস্তিত্বের প্রায় সমার্থক। এটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, একজন ব্যক্তির বোধগত, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দক্ষতার সঠিক পুষ্টি তার মাতৃভাষার মাধ্যমে বিকশিত হয়। তাই, নিজের মাতৃভাষা লেখা ও ব্যবহার করার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অপরিহার্য। ২১ ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল চেতনা হল পৃথিবীর সব ভাষা ও সংস্কৃতির নিজস্বতা রক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

নাজমুল হুদা আরো বলেন, ‘১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যা জাতি হিসেবে আমাদেরকে গৌরবান্বিত করেছে। এ বছর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর রজতজয়ন্তী।’ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসী ভাই-বোনেরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার চর্চা এবং প্রসারে, বিশেষতঃ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে, যে চমৎকার ভূমিকা পালন করছেন, তিনি তার প্রশংসা করেন।

কনসাল জেনারেল বলেন, ‘২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সংযোজন করেছে। ২০২৪ সালের ফ্যসিবাদ বিরোধী ও বৈষম্য বিরোধী গণ-অভ্যুথান বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা মেরামত তথা সংস্কারের এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার যে সংস্কার কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য তিনি সকলের  ঐকান্তিক সহযোগীতা কামনা করেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী ভাই-বোনদের অধিকতর অবদান রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

উন্মুক্ত আলোচনায় নিউইয়র্কস্থ বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটি শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়; যা দর্শকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদেরকে বিভিন্ন প্রকার ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবার দ্বারা আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে কনসাল জেনারেল শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন এবং বাংলাদেশ সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে একুশের প্রথম প্রহরে অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্মিত শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×