নদী দখলে জাতীয় ঐক্য আছে, উদ্ধারে নেই: আনু মুহাম্মদ


নদী দখলে জাতীয় ঐক্য আছে, উদ্ধারে নেই: আনু মুহাম্মদ

দেশের নদীগুলো দখল ও দূষণে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে জাতীয় ঐক্য থাকলেও, সেগুলো উদ্ধার ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সেই ঐক্য দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নদী রক্ষা সংগঠন নোঙরের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “একটা প্রশ্ন প্রায় উঠে আসে যে, যৌথ নদী কমিশন কেন কাজ করে না? শুধু যৌথ নদী কমিশন না, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি যে বিভিন্ন দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য যে সব কমিটি বা কমিশন হয়; সেখানে প্রস্তুতি ও দক্ষতার বড় ধরনের ঘাটতি থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে সরকারগুলোর মধ্যে অভিন্ন প্রবণতা দেখি। তারা সবসময় আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। নদী নিয়ে যে ডেলটা প্ল্যান হচ্ছে, সে ডেলটা প্ল্যান নেদারল্যান্ডসের গোষ্ঠী এসে করছে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, “এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তারা বলছেন যে আমরা ক্ষমতা নিইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। সে দায়িত্ব নেওয়ার পর সবার প্রত্যাশা ছিল যে কিছু পরিবর্তনের সূচনা হবে। নদীকে নিয়ে কাজ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল। প্রথম তারা যেটা করতে পারত, নদী নিয়ে যারা এই দেশে কাজ করছেন, তাদের নিয়ে একটি নদী সংস্কার কমিটি তৈরি করা। দ্বিতীয় সহজ কাজ ছিল, জাতিসংঘের ১৯৯৬ সালের আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করা।”

আনু মুহাম্মদ বলেন, “ভারতের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ফারাক্কাবাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন এবং ভারতে বর্তমানে ফারাক্কাবাঁধ ভাঙার দাবিও উঠছে। সুতরাং ভারতের জনগণের মধ্যে যারা এই ধরনের চিন্তা করছেন তাদের সঙ্গে আমাদের একটা যোগাযোগ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বলেন, “আমাদের নদী বিপর্যয়ের তিনটা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে এক হলো ভারত। বাকি দুইটা কারণ আমাদের নিজের। একটি হলো উন্নয়ন প্রকল্প। বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিসেচের নামে এমন সব প্রকল্প করা হয়েছে, যেগুলোর কারণে বহু নদী আজকে বিপর্যস্ত। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের ভেতরে যারা ক্ষমতাবান গোষ্ঠী বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত, তারা নদী দখল করেন। অথচ এসব বিষয়ে আমরা সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ দেখিনি। দেশের ভেতরে নদী দখল বা দূষণের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য রয়েছে, কিন্তু উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য নেই।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে রাষ্ট্রে জনগণের ওপরে সারভেলেন্স বা নজরদারি চলে। আমাদের জনগণের পক্ষ থেকে সরকারের ওপরে কাউন্টার সারভেলেন্স বা পাল্টা নজরদারি চালাতে হবে সরকারের উপরে। এই নজরদারি চলবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ওপরে। রাজনৈতিক দলের যে জাতীয় ঐক্য তার বিপরীতে জনগণের জাতীয় ঐক্য তৈরি করে নদী রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।”

আলোচনায় অংশ নেন ওয়াটার কিপার বাংলাদেশ, রিভারাইন পিপল, আরডিআরসি, ক্যাপস, তুরাগ নদী সুরক্ষা কমিটি এবং নদী রক্ষা জোটের সদস্যরা।

আলোচনা সভার সভাপতি নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, বাংলাদেশের নদী সুরক্ষায় ২৩ মে দিনটিকে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা এবং একটি পৃথক নদী সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠনের প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, “নদীগুলোকে কার্যকরভাবে সুরক্ষা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। কেননা বর্তমানে নদীর কাজ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে বিভক্ত।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×