‘বোবায় ধরা’ আসলে কী, কেন হয়, প্রতিকার কীভাবে
- লাইফস্টাইল ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:১১ এম, ২৬ আগস্ট ২০২৫

মাঝরাতে আচমকা ঘুম ভাঙতেই টের পেলেন বুকের ওপর অজানা ভারী চাপ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, অথচ চিৎকার করতেও পারছেন না। শরীর একদম অসাড় হয়ে গেছে, নড়াচড়ার ক্ষমতাও নেই। এই অবস্থাকেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’, আর সাধারণ ভাষায় যাকে অনেকে বলেন ‘বোবায় ধরা’।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা আসলে ভৌতিক কোনো ঘটনা নয়, বরং ঘুম আর জাগরণের মধ্যবর্তী এক ধরনের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এমন সময় শরীর তখনো ঘুমের মধ্যে থাকে, কিন্তু মস্তিষ্ক আংশিক জেগে ওঠে। ফলে অনেকে বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশনের শিকার হন কারও মনে হয় ঘরে অদ্ভুত কিছু আছে, কেউ ভয়ানক প্রাণী দেখতে পান, আবার কারও কাছে গন্ধ বা অস্বাভাবিক শব্দ শোনার অভিজ্ঞতা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন বলেন, বোবায় ধরার সঙ্গে ভূতে ধরা বা জিনে ধরার মতো কুসংস্কারের কোনো সম্পর্ক নেই। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ অবস্থাকে বলা হয় ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’ বা ঘুমজনিত পক্ষাঘাত।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ঘুম মূলত দুটি ধাপে বিভক্ত নন-রেম স্লিপ এবং রেম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) স্লিপ। স্লিপ প্যারালাইসিস ঘটে মূলত রেম স্লিপের ব্যাঘাত হলে। এর সঙ্গে নারকোলেপসি, মাইগ্রেন, উদ্বেগজনিত সমস্যা বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো কিছু মানসিক ও স্নায়বিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে।
ডা. হাসানুল হকের মতে, মস্তিষ্কে গ্লাইসিন ও গামা অ্যামাইনোবিউটারিক অ্যাসিড নামক দুটি রাসায়নিক পদার্থ পেশিকে অসাড় করে দেয়। রেম স্লিপ চলাকালীন মস্তিষ্ক জেগে উঠলেও শরীর যদি তখনো ঘুমের পর্যায়ে থেকে যায়, তখনই স্লিপ প্যারালাইসিস শুরু হয়।
স্লিপ প্যারালাইসিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলোঃ
জেগে ওঠার পর শরীর নাড়াতে বা কথা বলতে না পারা
বুকের ওপর চাপ অনুভূত হওয়া
ফিসফিস, গুঞ্জন বা অদ্ভুত শব্দ শোনা
শ্বাসকষ্ট বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
অতিপ্রাকৃত কোনো উপস্থিতি বা প্রাণীর চাপ অনুভব করা
তীব্র ভয়, আতঙ্ক ও ঘাম হওয়া
প্রতিকার ও চিকিৎসা ঃ
চিকিৎসকরা জানান, স্লিপ প্যারালাইসিস গুরুতর রোগ নয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে যদি ঘন ঘন ঘটে সপ্তাহে একাধিকবার বা প্রতিদিন ঘুমের সময় তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে নিউরোলজিস্ট, হেড-নেক সার্জন বা অটোলারিংগোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হয়।
ডা. হাসানুল হক বলেন, চিকিৎসার অংশ হিসেবে রোগীকে কাউন্সেলিং করতে হবে, জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ধূমপান, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত ক্লান্তি, মানসিক চাপ বা অনিয়মিত ঘুম এড়াতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধও দেওয়া হতে পারে।
তিনি আরও জানান, সঠিক ঘুমের অভ্যাস, মানসিক স্বস্তি ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমেই এ সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।